অপু এবং ব্রহ্মদৈত্য (দ্বিতীয় পর্ব)।। মে -২১/০৫/২০২৩।।

in hive-129948 •  2 years ago 

☬নমস্কার সবাইকে☬

হ্যালো বন্ধুরা,

কেমন আছেন সবাই আপনারা... ? আশাকরি সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন সুস্থ আছেন। প্রত্যেকে তার পরিবার নিয়ে সুখে আছেন। আজকের নতুন একটা ব্লগে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।

আগের পর্বে যেখানে শেষ করেছিলাম -

এই বয়সেও অপু একবার চিন্তা করেছিল যে ঘর ছেড়ে চলে যাবে অন্য কোথাও। কিন্তু কোথায় যাবে..?, কার কাছে যাবে...? এই কথা দু'একবার চিন্তা করে আবার থেমে গেছে।

পরদিন স্কুলে যেতেই শিক্ষক মহাশয়ের কাছে প্রচুর পরিমাণে বকুনি খেলো অপু এবং তার ক্লাসের সমস্ত বন্ধু-বান্ধব তাকে দেখে হাসাহাসি করতে লাগলো। কারণ সেই একমাত্র ছিল যে গণিতে ডাবল জিরো পেয়েছে। তবে অপুর একটা বিশেষ গুণ ছিল যে, সে পড়ালেখার প্রতি অমনোযোগী হলেও খেলাধুলার প্রতি ছিল তার তীব্র আগ্রহ। যেকোনো প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার তার ধরা থাকতো। তবে সেই বিষয়ে কেউ তেমন বেশি লক্ষ্য করেনি। এতে করে তার মন মানসিকতা আরো বেশি খারাপ হয়ে গেল। যেখানে বন্ধুরা তাকে উৎসাহ দেয়ার কথা, তার পরিবর্তে তাকে নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করছে। আর তাদের স্কুলের হেডমাস্টার দুলাল বাবু হয়েছে আর একজন, তিনি তো অপুকে রীতিমতো হেসে হেসে অপমান করছে। এটা সহ্য না করতে পেরে বেশ কিছু সময় অপু বেঞ্চে মাথা নিচু করে কান্না করল। তারপর স্কুল ছুটি হলে চলে আসলো বাড়িতে। অপুকে দেখে তার মা বুঝতে পারল যে স্কুলে কিছু একটা হয়েছে তার সাথে। তবে যখন তাকে জিজ্ঞাসা করতে গেলো, অপু কোন উত্তর দিল না তার পরিবর্তে মন খারাপ করে বিছানায় উল্টো হয়ে শুয়ে রইলো। এদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে, অপুর খাওয়া দাওয়ার কোন নাম গন্ধ নেই। সে তো রাগ করে শুয়েই রয়েছে।

phobia-5073521_1280.jpg
সোর্স

সন্ধ্যার দিকে অপুর বাবা কাজ সেরে এসে অপুর মায়ের কাছে সমস্ত ঘটনা শুনলো, যে অপু দুপুরে স্কুল থেকে এসে কিছু খায়নি। তার পরিবর্তে উলটো হয়ে খাটের উপর শুয়ে রয়েছে। এদিকে অপু কখন রাগ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিল সেটা টেরই পাইনি সে নিজে। একে তো সারাদিন বাবা ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরেছে তার উপর আবার এসে তার মায়ের মুখে অপুর নামে কথা শুনে অপুর বাবার মাথায় রক্ত চড়ে গেল। গজ গজ করতে করতে অপু রুমে গিয়ে অপুকে কান ধরে টেনে তুলল, আর বলল বেয়াদব ছেলে একে তো পড়াশোনা করবে না তার উপর যদি শিক্ষক কিছু বলে তাহলে নিজেকে পরিবর্তন না করে রাগ করে শুয়ে থাকা হচ্ছে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল, এখন পর্যন্ত খাওয়ার নাম নেই। ভগবান যে তোর মত ছেলে কেন আমাকে দিয়েছে সেটাই বুঝিনা। পারিস তো কোন একদিন রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে, আমার আর তোর মুখ দেখতে ইচ্ছা করছে না। এই কথা শুনে অপুর মন আরো খারাপ হয়ে গেল। সে এবার মন স্থির করে নিল যে সন্ধ্যা হলেই সে ঘর থেকে পালিয়ে চলে যাবে তার মামাবাড়ি।

horror-2028165_1280.webp
সোর্স

একটু সন্ধ্যা গড়াতেই অপুর বাবা চলে গেল ভাত খাওয়ার জন্য রান্নাঘরে। এই সুযোগে অপু তার বাবার তিন ব্যাটারির টর্চ লাইট টা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল ঘর থেকে। অপুর মামা বাড়ি খুব বেশি একটা দূরে নয়। তাদের গ্রাম ছেড়ে মাঝখানে আর একটা গ্রাম পড়ে তারপরে হল অপুর মামাবাড়ি। এখন যদি ঘর থেকে বেরিয়ে যায় তাহলে ঘন্টা দুয়েক এর ভিতরে মামাবাড়ি পৌঁছে যাবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যে মাঝখানে একটা জায়গা রয়েছে যেটা অনেক গভীর জঙ্গল এবং সেই জঙ্গল নিয়ে রয়েছে নানা গল্প, নানা রটনা। তবে অপুর উপর মাথায় এতটাই জেদ চেপে গেছিল যে এইসব তার কাছে কিছুই মনে হচ্ছিল না। একবার তো চিন্তা করেছিল যে ওই জঙ্গলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে, তারপর যদি কোন লোক সেখান দিয়ে যায় তাহলে তার সাথে জঙ্গল পাড়ি দিয়ে সামনের গ্রামে চলে যাবে। মোটামুটি ঘন্টা খানে হাঁটার পরে অপু ক্লান্ত হয়ে গেল, তাই গ্রামের একটা টিউবয়েল থেকে কিছুটা জল খেয়ে আবার রওনা দিল তার মামা বাড়ির উদ্দেশ্যে। কিছুদূর হাঁটতেই সে সেই জঙ্গলের কাছে চলে আসলো যেটার জন্য এত সময় সে ভয় পাচ্ছিল।

comic-1296118_1280.webp
সোর্স

কিন্তু কিছু করার নেই কারণ সে অলরেডি মাঝ পথে চলে এসেছে। এখন যদি সে বাড়ি ফিরে যায় তাহলে তার বাবা-মা তাকে আবার মারবে তাই ভয়ে ভয়ে জঙ্গলের একটা সাইডে গাছের নিচে বসে থাকলো, এই আশা নিয়ে যে যদি কেউ এখান দিয়ে যায় তাহলে তার সাথে করে জঙ্গল পাড়ি দিয়ে যাবে সামনের গ্রামে। এদিকে প্রায় আধা ঘন্টা অপেক্ষা করার পরেও কেউ সেখানে আসলো না। তারপর আবার শিয়ালের ডাক আর নিস্তব্ধ গাছেদের এক পলকে তার দিকে তাকিয়ে থাকাটা বেশ ভীতিকর মনে হচ্ছিল তার কাছে। এমনিতেও বয়স কম তারপর আবার গভীর জঙ্গল সব মিলিয়ে বেশ ভয় করছিল অপুর। যাইহোক আর কিছু সময় অপেক্ষা করার পরও বুঝতে পারল যে তাকে জঙ্গল পার করে দেওয়ার মতো কেউ আসবে না। তাই সে নিজেই সাহস নিয়ে ঢুকে পড়লো জঙ্গলে। একে তো ঘন জঙ্গল তার উপর আবার বিভিন্ন বন্য জীবজন্তুর ডাক বেশি ভয়ংকর একটা পরিবেশ তৈরি করেছিল তখন। কিছু দূর হাটার পরেই সে বুঝতে পারল কে হয়তো তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। কিন্তু সে অনুমান করতে পারলেও দেখতে পারছে না তাকে। এইবার তো অপু কান্না করে ফেলল আর বলল, প্লিজ আমাকে ভয় দিও না। আমি মামার বাড়ি যাবো।

চলবে.......🏃

পোস্ট বিবরণ


শ্রেণীস্টোরি রাইটিং।
যাইহোক আজকের পর্ব এই পর্যন্তই ছিল। আশাকরি আপনাদের ভালো লেগেছে আজকের পর্বটি। আর ভালো লাগলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করতে ভুলবেন না। কারণ আপনাদের একটি কমেন্ট আমাকে নতুন এবং ভালো কিছু করার উৎসাহ যোগায়। ভালো থাকবেন সবাই।

🎯ধন্যবাদ সবাইকে🎯

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

সত্যি বলতে আমার বেশ মজার লাগছে গল্পটা পড়তে। এটার অন্যতম কারণ অবশ্য আপনার লেখনী। তবে অপু চরিত্র টা সমাজের বাস্তব চিত্র লাগে আমার কাছে। পুঁথিগত বিদ্যার কদর করতে জানে শুধু এই সমাজ। অন্য গুণাবলীর বিন্দু মাত্র দাম নেই কারোর কাছে। আর ছোট বেলায় পড়াশোনার জন্য যখন বকা খেতাম আমারও ইচ্ছে করতো এমন দূরে কোথাও চলে যাই। যাই হোক দেখা যাক পরবর্তীতে কি অপেক্ষা করে আছে অপুর জন্য।

দুই একজন লোকের জন্য গল্পটা লিখছি,তার মধ্যে আপনি একজন। বেশির ভাগ লোক তো জেনারেল রাইটিং বা গল্প দেখলে স্কিপ করে। ভালো লাগে আপনার মন্তব্য পড়তে।

ভাই আমার ব্যক্তিগত মতামত বলে এখানে যারা ব্লগিং করছে, তাদের বেশির ভাগের কাছে প্যাশন এর থেকে পয়সা টা বড়। আর সেটা যত সহজে করা যাবে তত লাভ বেশি। তাই এই ধরনের কোয়ালিটি পোস্ট সবাই স্কিপ করে। ও হ্যাঁ আরো একটা ট্রেন্ড আছে, আপনি অন্যের পোস্টে কমেন্ট না করলে সেও করবে না কমেন্ট। সেটা আপনি যতোই ভালো লিখেন না কেন। হাহাহাহাহা,, কথা শুনতে খারাপ হলেও , আমার কাছে মনে হয় এটাই সত্যি। সে যাই হোক, সবই মনের ব্যাপার। যে যেই ভাবে হ্যাপি থাকবে, সে সেই ভাবেই থাকুক 😊😊

হা হা হা.... 😂 আমার মনের কথা আপনি বলে দিলেন। আমি সব কিছুই নোটিশ করি ভাই।

এসব কারণেই কাজের মজা টা হারিয়ে ফেলছি কেন যেন দিন দিন, আর নিজেকেও গুটিয়ে নিচ্ছি।

একদম চলে যেয়েন না। ভালো মানের ব্লগার খুব দরকার ভাই।😰😰

"অপু এবং ব্রহ্মদৈত্য"গল্পটির প্রথম পর্বটি আমি পড়েছিলাম, আর সেটা পড়ে আমার ভয়ের বদলে মজা লাগছিল।আজকের পর্বটি পড়ে অপুর জন্য খারাপ লাগছে, সবাই তাকে নিয়ে স্কুলে ঠাট্টা তামাশা করছে, এটা তো খুবই দুঃখজনক একটি বিষয়। শেষ পর্যন্ত জঙ্গল পাড় করে দেওয়ার জন্য কোনো লোক না পেয়ে অপু জঙ্গলে ঢুকতে শুরু করলো, আর এখান থেকেই মনে হচ্ছে রহস্য শুরু হলো। পর্বটি পড়ে ভালো লাগলো। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।

পরের পর্ব দুই একদিনের মধ্যে দিয়ে দেবো, পড়ে নিও। আশাকরি ভালো লাগবে। পোস্ট পড়ে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।

অবশ্যই পড়বো দাদা ।তোমার লেখাগুলো আমার কাছে বেশ ভালো লাগে।

তোমাদের জন্যই তো লিখি,যারা আমার পোস্ট পড়ে।