ছোট বেলায় আমাদের পুকুরের মাছ চোর ধরার গল্প।। এপ্রিল -০৮/০৪/২০২৩।।

in hive-129948 •  2 years ago 

☬নমস্কার সবাইকে☬

হ্যালো বন্ধুরা,

কেমন আছেন সবাই আপনারা... ? আশাকরি সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন সুস্থ আছেন। প্রত্যেকে তার পরিবার নিয়ে সুখে আছেন। আজকের নতুন একটা ব্লগে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।

এরপর কি হয়েছিল সেটা সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে বাবার কাছে জিজ্ঞাসা করতে গেলে বলে যে ওই দিন রাতে কেউ চুরি করতে আসেনি। সুতরাং আমাদের আরো দুই একদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে এইবার চোর ধরার প্রস্তুতি ছিল জবরদস্ত। ঠিক তার দুদিন পর আবারো সিদ্ধান্ত নিলাম যে আজকে একটু অন্যরকম পন্থা অবলম্বন করব চোর জন্য। যদি আসে চুরি করতে তাহলে আমাদের হাত থেকে ছুটে যাওয়ার কোন অপশন নেই চোরের।

এরপর মাঝখানে দুইদিন পুকুর পাহারা দেওয়া বন্ধ করলাম। তবে মাঝে মাঝে দেখেছি যে জেঠু ঘুম থেকে উঠে লাইট নিয়ে বেরিয়ে গেছে পুকুর পাড়ে। তবে চোর এসেছে বা মাছ ধরছে কেউ এরকম কোন আভাস পাওয়া যায়নি দুই দিনের মধ্যে। মোটামুটি এটুকু বুঝতে পেরেছিলাম যে চোর আমাদের নিজেদের গ্রামের, কারণ অন্য কোন গ্রাম থেকে যদি মাছ চুরি করতে আসতো তাহলে এই তিন দিনের ভিতর একদিন তো অবশ্যই আসতো।যেহেতু আমরা বাড়ি এসেছি জানতে পেরেছে এবং আশেপাশের লোকজনও বলেছে যে পুকুরের মাছ কেউ নিয়ে যাচ্ছে এজন্য সে নিজেও সতর্ক হয়ে গেছে। তবে যে চোর তার তো আর চুরি করা থেমে থাকবে না, সেটা অভ্যাসের বসেই হোক বা স্বভাবের। আমাদের একটা ধারণা ছিল যে তিন চারদিন পরে অবশ্যই চুরি করতে আসবে। আমাদের পুকুরের মাছগুলো আসলে অনেক বড় বড় থাকতো কারণ বছরে হয়তো দুই একবার জাল টানা হত, আর সারা বছর তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হতো না মাছ ধরার জন্য। এজন্য মাছ বাড়ার সুযোগ পেত। যাই হোক তিনদিন পর আবার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো যে আজ একটু অন্যরকম পদ্ধতি অবলম্বন করা যাক, তাহলে যদি কাজ হয়।

ঐদিন আর আমাকে পুকুরপাড়ে নিল না। তবে আমার বাবা জেঠুর কথোপকথনের মাধ্যমে এইটুকু বুঝতে পেরেছিলাম যে তারা আমাদের বাড়ির অপজিটের পুকুর পাড়ে যে বড় তেঁতুল গাছটা রয়েছে তার উপরে উঠে বসে থাকবে। কারণ চোর তো চুরি করার আগে পুরো পুকুর পাড় চেক করে নেয় কেউ আছে কিনা। খুব কম সংখ্যক লোকই আছে যারা গাছে লাইট মেরে দেখে যে কেউ আছে কিনা। আর যদিও রাত বারোটার সময় কেউ গাছে উঠে বসে থাকাটা অস্বাভাবিক ছাড়া কিছুই না। যাই হোক রাতে খেয়েদেয়ে বাবা আর জেঠু পুকুর পাড়ে পাইচারি দিতে লাগলো এবং ঠিক রাত একটা কি দুটো নাগাদ বাবা আর জেঠু দুজনে মিলে দুটো লাইট নিয়ে তেতুল গাছে উঠে বসে থাকলো চুপটি করে। প্রচন্ড পরিমাণে মশা কামড়াচ্ছিল তাই আবার দেখলাম বাড়ি এসে গামছা আর কি কি যেন নিয়ে গেল।

thief-6733125_1280.png
সোর্স

এরপরের কিছু সময় কি হয়েছিল সেটা তো আমি নিজে চোখে দেখিন। তবে ঘন্টা দুয়েক যেতে না যেতেই দেখলাম পুকুর পাড়ে, জোরে জোরে চিৎকার শুরু হয়ে গেছে যে চোর ধরেছি তোরা কে কোথায় আছিস চলে আয়। যাই হোক সেখানে ঘটনাটা কি ঘটেছিল এখন বলছি। ঠিক রাত দুটো নাগাদ যখন বাবা আর জেঠু তেতুল গাছের উপর গুপটি মেরে বসে ছিল ঠিক তার কিছু সময় পরেই ছোট্ট একটা চোরাই লাইট এবং সাথে এক গাচ ছোট জাল নিয়ে আমাদের পুকুর পাড়ে আসে একজন লোক। তবে আমার বাবার নাকি অন্ধকারেও লোকটাকে চেনা চেনা লাগছিল কিন্তু সেটা চুরি করতে এসেছে সেটা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ধরা যাবে না তাই আর কিছু সময় অপেক্ষা করতে লাগলো। মোটামুটি পুরো পুকুর সে এক চক্কর দিয়ে এসে তেঁতুল গাছের নিচে দিয়ে নেমে পড়ল পুকুরে জাল নিয়ে। তবে তারপরও বাবা জেঠু কিছু না বলে সেখানে চুপচাপ বসে থাকলো এবং দেখতে লাগলো যে সে শেষ পর্যন্ত কি করে।

এরপর দেখা গেল যে ১০ মিনিট পরে ক্ষেপ দিয়ে জাল ভর্তি মাছ নিয়ে পাড়ে এসে হাজির হলো। এটা দেখে বাবারা আর সেখানে বেশি সময় অপেক্ষা করলো না কারণ অলরেডি প্রমাণ হতে চলে এসেছে হঠাৎ করেই চোখে লাইট মারতে দেখা গেল যে লোকটা আমাদের অতি পরিচিত এবং সম্পর্কে আমাদের কাকু হয়। আমাদের বাড়ি থেকেই দুই দিন বাড়ি দূরে থাকে। গতদিন যে দিদি টা একজন লোককে সন্দেহ করেছিল এই ব্যক্তি সে। তবে লোকটা এত ভালো ছিল যে আমরা তার কথা বিশ্বাস করতে পারিনি কিন্তু লোভ মানুষকে কতটা নিচে নামাতে পারে সেটা এই লোককে দেখে বুঝতে পেরেছিলাম।

thief-4173477_1280.jpg
সোর্স

যাই হোক মুখে লাইট মারতেই সে সেখান থেকে দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করল। তবে বাবা নাকি লোকটার নাম ধরে ডাক দিয়েছিল তাই কিছুদূর গিয়ে আবার থেমে গেল এবং রীতিমতো কান্নাকাটি করতে লাগলো। তবে বাবা জেঠু তখনও তাকে কিছু বলেনি তার পরিবর্তে বললো, আমরা কেউ গ্রামের বাড়ি থাকি না তাই তোদের উপর আমাদের যত সহ-সম্পত্তি এবং পুকুর দেখতে দিয়ে যাই। সত্যি কথা বলতে তোদের উপর ভরসা করেই আমি রেখে যাই এত কিছু। কারণ তোরা গ্রামের মানুষ ছাড়া আমরা অন্য কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না। আর সেখানে তোরাই যদি চুরি করিস তাহলে আর কি হলো। এরপর ওই কাকুটা যে মাছগুলো জালে ধরেছিল ওগুলো সবগুলোই দিয়ে দিল বাবা। প্রথম দিকে তো সে নিতে চাচ্ছিল না তবে কষ্ট করে ধরেছে তাই দিয়ে দিল আর কি। এরপর কিছু কাল ঐ লোকটা কখনো আমাদের সামনে মুখ দেখাতে পারিনি। বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা অন্তত দুই তিন বছর এই লোকটা আমাদের পরিবারের কাউকে দেখলে মাথা নিচু করে চলে যেত। তবে এখন মাঝেমধ্যে দেখা হলে একটু কথা বলে।

burglar-4925202_1280.jpg
সোর্স

🧘পোস্ট বিবরণ🧘


শ্রেণীগল্প।
লোকেশনকলকাতা, ইন্ডিয়া।
----
যাইহোক আজকের পর্ব এই পর্যন্তই ছিল। আশাকরি আপনাদের ভালো লেগেছে আজকের পর্বটি। আর ভালো লাগলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করতে ভুলবেন না। কারণ আপনাদের একটি কমেন্ট আমাকে নতুন এবং ভালো কিছু করার উৎসাহ যোগায়। ভালো থাকবেন সবাই।

🎯ধন্যবাদ সবাইকে🎯

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

আসলে বিশ্বাস করে হয়তো অনেকেই নিজের পৈত্রিক ভিটেবাড়ি রেখে আসে। গ্রামের মানুষজন অনেক সময় সেই সুযোগটা কাজে লাগায়। তবে সেই লোকটি ধরা পড়ে কিন্তু বেশ লজ্জা পেয়েছে। তাই তো আপনার পরিবারের সবার সামনে মাথা নিচু করে চলেছে। তবে মনে মনে কিন্তু ঠিকই অনুতপ্ত হয়েছে। আর তাকে যদি শাস্তি দেওয়া হতো তাহলে কখনোই সে অনুতপ্ত হতো না। ভালো লাগলো ভাইয়া আপনার লেখাগুলো পড়ে।

কিছুকাল আগে গ্রামের মানুষগুলো সহজ সরল ছিল এবং টুকটাক চুরি করলেও তাদের ভিতর একটা কৃতিত্ববোধ ছিল। কিন্তু এখন গ্রামের পরিস্থিতি সেরকম নেই, এখন চোর তো হয়েছে তারপর আবার এমন এমন কাজ করে যেটা শুনলেও খুব কষ্ট লাগে।

আসলে এরকম পুকুর থেকে কাছের লোকজনই চুরি করার সাহস পায়। দূরের লোকজন এতটা সাহস পায় না। আমার শ্বশুরবাড়িতে দেখা যায় গ্রামের পুকুর একটু দূরে হওয়ার কারণে মাঝেমধ্যে মাছ চুরি হয়। কিন্তু আপনার বাবা জেঠুর তো সেরকম সাহস। রাত ১২ঃ০০ টায় তেঁতুল গাছে ওঠে বসেছিল চোর ধরার জন্য। যাই হোক তাদের কষ্ট সফল হয়েছে অবশেষে চোরকে ঠিকই ধরতে পেরেছে। মানুষের মধ্যে অনুশোচনা বোধ তৈরি হওয়াটাই আসল। আপনাদের ওই চোরের সেই বোধটা এসেছিল জন্যই আপনাদের দেখে মাথা নিচু করে চলে যেত।

আসলে সম্পর্কে আমাদের কাকু হত এই জন্য আর কি বেশি লজ্জা পেয়েছিল। তবে তারপর থেকে আর কখনো আমাদের পুকুরে মাছ ধরতে আসে না। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু পোস্টটা পড়ার জন্য।

আপনার পুকুর চুরির গল্পটা পড়ে আমারও একটা কথা মনে পড়ে গেল আমাদের গ্রামের বাড়িতে একটা পুকুর আছে। সেই পুকুরে কখনো মাছ দিয়ে আমরা খেতে পারি না। আমাদের পাশের বাড়ির একটা ছেলে সব সময় মাছগুলো চুরি করতো। আমরা কিন্তু হাতেনাতে প্রমাণও পেয়েছিলাম।এসব চুরি টুরি কিন্তু কাছের মানুষেরাই করে। ঘরের মানুষের প্রতি অতি বিশ্বাস করা হয় আর তারাই এমন কাজ করে। অনেক ধন্যবাদ গল্পটি পড়ে অনেক ভালো লেগেছে।

এটা আপনি ঠিকই বলেছেন, চেনাশোনা লোকরাই আসলে এগুলো করে, তবে এখন আর কিছু বলি না। আমরা তো আর কেউ গ্রামে থাকি না তাই এখনো শুনি মাঝেমধ্যে যে পুকুর থেকে মাছ ধরে নিয়ে গেছে। যদিও এখন আগের মত আর পুকুরে মাছ ছাড়া হয় না।

চোর ধরার জন্য এত রাত্রিতে আপনার বাবা ও জেঠু তেতুল গাছে ওঠে চোর পাহারা দিয়েছে ব্যাপারটি সত্যিই খুবই মজার ছিল। কেননা এত রাত্রিতে গাছে ওঠা তো দূরে থাক, গাছের নিচে যেতেও আমার কাছে ভীষণ ভয় লাগে। যাক তাদের গাছে চড়ার কষ্টের বিনিময়ে হলেও শেষ অব্দি চোর ধরতে পেরেছে এটা জেনে খুব ভালো লেগেছে। তার চেয়ে বেশি ভালো লেগেছে আপনার বাবার মনের উদারতা দেখে, যে কিনা মাছ চুরি করল, সেই চোরকে আবার মাছ গুলো দিয়ে দেয়া। পুকুরের মাছ চোর ধরার গল্পটি বেশ সুন্দর ছিল, আর আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

এখনো সেই গাছটা আছে, তবে আগে দেখতে যেমন ভয়ঙ্কর ছিল এখন গাছটা আর সেরকম ভয়ঙ্কর নেই, ডালপালা ভেঙে অর্ধেক হয়ে গেছে। তবে গ্রামের লোক বলাবলি করত ওই গাছে নাকি পেত্নী বসবাস করে। যদিও সেই কথা এখনকার যুগের লোক বিশ্বাস করবে না।

আপনার বাবা মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে। আসলে সবাইকে একবার শুধরানোর সুযোগ দেওয়া উচিত। আর এমন একটা ঘটনা আমাদের পুকুরেও ঘটেছিল একদম সেম টু সেম।🤗

তাহলে আপনিও আপনার সেই ঘটনাটা শেয়ার করে ফেলেন কোনো একদিন। পড়লে যথেষ্ট মজা পাওয়া যাবে।😁 ধন্যবাদ আপনাকে পোস্ট পড়ার জন্য।

চোর ধরার আগের পর্ব পড়েছিলাম,আর আজকে দ্বিতীয় পর্ব পড়লাম। অবশেষে আপনার বাবা এবং জেঠু গাছে উঠে বসেছিল চোর ধরার জন্য এবং তারা সফল হয়েছে।তবে চোরটি আপনাদের কাছের মানুষ হওয়াতে বেশ লজ্জা পেয়েছিল। তাই দুই তিন বছর আপনাদেরকে দেখলে মাথা নিচু করে থাকতো। যাইহোক গল্পটি পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাই। আশা করি সামনে অন্য কোন গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করবেন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

ওই সময় তো তেমন কিছু বুঝতাম না। তবে এখন সেই কথা মনে পড়লে বুঝতে পারি যে লোকটা আসলেই খুব লজ্জা পেয়েছিল। তবে সে যেটা করেছিল সেটাও তো ছিল যথেষ্ট অন্যায় কাজ।