বন্ধুদের নিয়ে ইফতারের আয়োজন।

in hive-129948 •  6 months ago 

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


গত বেশ কয়েক বছর যাবত রমজান মাসের শেষ ইফতারটা আমরা কিছু বন্ধু-বান্ধব মিলে একসাথে করার চেষ্টা করি। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও সেভাবে ইফতারের আয়োজন করেছিলাম। যদিও এবার ইফতারের আয়োজন করতে গিয়ে কিছুটা কনফিউশন তৈরি হয়েছিলো। কারণ রোজা ৩০ টা না ২৯ টা হবে সেটা বুঝতে পারছিলাম না। তবে আমরা ২৯টা ধরেই ইফতারের ডেট ঠিক করেছিলাম। এর ভিতরে আমি আর ফেরদৌস গিয়ে বন্ধু রাফসানের সাথে ইফতারের আয়োজনের ব্যাপারে কথাবার্তা বলে এসেছিলাম। আর রাফসানকেও দেখলাম এ ব্যাপারে বেশ আগ্রহী। এবার ইফতারের পুরো আয়োজনটার দায়িত্ব রাফসানের ঘাড়েই ছিলো। আমরা যখন ইফতারের পরিকল্পনা করেছিলাম তখনও বন্ধু রাসেল ফরিদপুরে এসে পৌঁছায়নি। পরদিন রাসেল ফরিদপুরে এলে তখন ওকে ইফতারের কথা জানালাম। যাইহোক পরদিন বিকেলে আমি আর ফেরদৌস নির্ধারিত সময় রাফসানের শোরুমের ওখানে পৌঁছালাম।

IMG_20240409_175623.jpg

আমাদের আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিলো সব বন্ধু-বান্ধব মিলে রাফসানের শোরুমের ওখানে হাজির হবো। তারপর ওখান থেকে আমাদের যে স্থানে বসে ইফতার করবো সেখানে রওনা দেবো। আমি আর ফেরদৌস সেখানে পৌঁছে দেখি তখনো কেউ আসেনি। অবশ্য তার কিছুক্ষণ পরেই বন্ধু রাসেল সেখানে এসে উপস্থিত হোলো। সেই সাথে দেখতে পেলাম রাফসানদের এলাকার কিছু ছোট ভাই কিছু ফল কিনে এনেছে ইফতারে খাওয়ার জন্য। আমাদের প্রত্যেকটা প্রোগ্রামে এই ছেলেগুলি থাকে। কিন্তু আমরা সবাই সেখানে উপস্থিত হলেও রাফসানের শোরুম ছিলো তালা দেয়া। রাফসানদের এলাকার ছেলেগুলো ওকে ফোন দিচ্ছিলো কিন্তু ও ফোন ধরছিলো না। আমরা তখন কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলাম। কারণ রাফসানের যে অতীত রেকর্ড তাতে করে ওর উপরে ভরসা করা খুব মুশকিল। দেখা গেলো শেষ পর্যন্ত এসে বলবে কোন কিছুই আয়োজন করা হয়নি। তবে আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে আমি রাফসানকে ফোন দিলে ও আমাকে জানালো ও শোরুমের আশে পাশেই আছে। আমি বুঝতে পারলাম ও মিথ্যা কথা বলছে। আমি তখন ওকে জানালাম আমি আধাঘন্টা যাব তোর শোরুমের সামনে দাঁড়ানো। ও আমাকে তখন বললো আমি দুই এক মিনিটের ভেতরেই চলে আসছি।


IMG_20240409_180942.jpg

এই কথা বলার কিছুক্ষণ পরে দেখলাম ও মোটরসাইকেল নিয়ে আসছে। তারপর সবাই মিলে গিয়ে ওর শোরুমে বসলাম। পরবর্তীতে ওর কাছে ইফতারের আয়োজন এর আপডেট জানতে চাইলে ও বললো সব কিছু সময় মতো হবে। চিন্তা করার কোনো দরকার নেই। আমরা প্রতিবার ইফতার করি হাজীগঞ্জ নদীর ঘাটে ট্রলারের ছাদে বসে। এবারও আমি মনে করেছিলাম সেটাই হবে। কিন্তু রাফসান জানালো ভেন্যু পরিবর্তন হয়েছে। যেহেতু লোকজন এবার কিছুটা বেশি আর এবার সাথে রান্না করা খাবার নিয়ে যাবে। তাই অতোদূর না গিয়ে ওদের এলাকার নদীর পাড়ে বসে আমরা ইফতার করবো। আমার প্রথমে আইডিয়াটা খুব একটা পছন্দ হয়নি। পরে বাকিদের আগ্রহ দেখে রাজি হয়ে গেলাম। তারপর সবাই রাফসসনের শোরুমে আসলে আমরা রওনা দিলাম নদীর পাড়ের উদ্দেশ্যে। আমরা চার-পাঁচটা মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলাম। আর সাথে ছিলো একটা ভ্যান। কারণ সেই ভ্যানে করে রান্না করা খিচুড়ি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো। আমরা এর আগে যেখানে তাবু দিয়ে ক্যাম্পিং করেছিলাম সেখানেই গিয়ে ইফতারের জন্য বসে ছিলাম। দেখলাম সবাই মিলে সেই জায়গাটাই পছন্দ করেছে। যদিও সেই জায়গাটার চেহারায় কিছুটা পরিবর্তন এসেছিলো। কারণ নদীর থেকে বালু উত্তোলন করে সেটা রাখা হয়েছিল সেই জায়গাটার পাশেই। যার ফলে সেখানকার সৌন্দর্য কিছুটা নষ্ট হয়েছিলো।


IMG_20240409_181023.jpg

যাইহোক সেখানে পৌঁছে আমরা ইফতারের আয়োজন করতে শুরু করলাম। এর ভিতর খেয়াল করলাম আরও দু তিনটে গ্রুপ আশেপাশেই এসেছে ইফতার করার জন্য। আমি কিছুটা অবাক হলাম। কারণ এই অজোপাড়া গায়ে আর কেউ ইফতার করতে আসবে এটা আমার মাথাতেই ছিলো না। আমরা তৈরি হয়ে বসে আযানের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এবার আমাদের ইফতারের আয়োজনে ছিল মুরগির মাংস দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি, সেই সাথে পেঁয়াজু, তরমুজ, খেজুর, আখের রস, আর মোজো। আমরা খেজুর খেয়ে রোজা ভাঙলাম। তারপর ঠান্ডা আখের রসের ক্লাসে চুমু দিতেই প্রাণটা জুড়িয়ে গেলো। আখের রস খাওয়া হলে আমি অন্য কিছু না খেয়ে খিচুড়ি খেতে শুরু করলাম। দারুন গরম গরম খিচুড়ি সাথে ছিলো পেঁয়াজ, টমেটো, শসা আর লেবু। খিচুড়ির সাথে এগুলো হলে আমার আর কিছু চায় না। বেশ মজা করে সবাই খাওয়া-দাওয়া শেষ করলাম। খাওয়া-দাওয়া শেষে আমরা চিন্তা করতে লাগলাম কোথায় নামাজ পড়বো? পরবর্তীতে আমরা কয়েকটা মোটরসাইকেলে করে কাছের একটা মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়লাম। নামাজ পড়া শেষ হলে আমরা দেখতে পেলাম আমাদের সাথের লোকজন এক এক করে সবাই রাফসানের শোরুমের দিকে ফিরে যাচ্ছে। আমরাও সেই পথে রওনা দিলাম। আর এভাবেই এ বছরের ইফতার আয়োজন শেষ হোলো।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসHONOR 90
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানফরিদপুর

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

বন্ধুদের সাথে ইফতার করার সুন্দর মুহূর্তটা আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। তবে নদীর পাড়ে লোকেশন টা বেশ ভালো ছিল আপনার বন্ধু রাফসান ভালো লোকেশন টাই সিলেক্ট করেছে। তবে যদি সেখানে বালু উত্তোলন করা না হতো তাহলে জায়গাটা আরো বেশি সুন্দর লাগতো একদম পুরোপুরি পারফেক্ট হতো।

Posted using SteemPro Mobile

আপনার বন্ধু রাফসানের সাথে আমার বন্ধু লিখনের মিল আছে। দুজনের উপরেই পুরোপুরি ভরসা করা যায় না হা হা। এবং দুজনই অপেক্ষা করাতে অভ‍্যস্ত হা হা। বন্ধুরা সবাই মিলে ইফতার করার ব‍্যাপার টা ভালো ছিল। এবং আপনাদের ইফতারের আইটেম গুলো তো বেশ ছিল ভাই। আমার কাছে একেবারে পারফেক্ট মনে হয়েছে। মোটামুটি ২৯ রোজা রাত ১২-১ টা পযর্ন্ত সবাই কনফিউজড ছিল আসলে ঈদ কবে।।

Posted using SteemPro Mobile

যেখানে তাবু দিয়ে ক্যাম্পিং করেছিলেন সেই জায়গায় আপনারা বন্ধুরা মিলে বছরের শেষ ইফতার করলেন।এবারের ইফতারে বাসায় রান্না করা চিকেন খিচুড়ি ছিল বলে সাথে করে ভ্যান ও আনতে হলো।এমন জায়গায় অন্য কোন এক দল ও ইফতার করার জন্য এসেছিলো।যাই হোক সবাই মিলে ইফতার করে কাছের মসজিদে নামাজ আদায় করে চলে এলেন রাফসান ভাইয়ার শোরুমে। সত্যি কথা বলতে বন্ধুরা মিলে এমন আয়োজন প্রশংসনীয়। সময়টা আপনাদের দারুন কেটেছিলো।ধন্যবাদ ভাইয়া শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

বন্ধু বান্ধবদের সাথে ইফতার করার মজাই আলাদা। আর খোলা আকাশের নিচে এতো চমৎকার জায়গায় ইফতার করতে পারলে তো আরও বেশি ভালো লাগে। যাইহোক প্রতিবছর শেষ রমজানে একসাথে ইফতার করার আইডিয়াটা দারুণ। সম্পূর্ণ আয়োজন ঠিকঠাক মতোই হয়েছে তাহলে। মজার মজার খাবার খাওয়ার পাশাপাশি, আড্ডা দিয়ে বেশ ভালো সময় কাটিয়েছেন ভাই। যাইহোক এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Posted using SteemPro Mobile