ছোটবেলা যখন ঈদ উদযাপন করতাম তখন ঈদের আনন্দ থাকতো ঈদের দিনের সন্ধ্যা পর্যন্ত বা ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত। তবে আস্তে আস্তে বড় হওয়ার সাথে সাথে ঈদের এই আনন্দ উদযাপনের সময়টা পরিবর্তিত হতে লাগলো। এখন আমার কাছে মনে হয় ঈদের আগের রাত অর্থাৎ চাঁদ রাত হচ্ছে উদযাপনের সবচাইতে ভালো সময়। বিশেষ করে যারা একটু বড় হয়েছে তাদের জন্য। এই চাঁদ রাতে বিভিন্ন এলাকার বন্ধুবান্ধবরা সব এক জায়গায় একত্রিত হয়ে আমরা আড্ডা দেই। এখন আসলে আড্ডা দিতেই সবচাইতে বেশি ভালো লাগে।
অন্যান্য বারের মতো এবারও আমরা ঠিক করেছিলাম চাঁদরাতে বন্ধুবান্ধব এক জায়গায় একত্রিত হয়ে তারপর আড্ডা দেবো। সেই উদ্দেশ্যেই আমি সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পরে আমাদের বন্ধুরা যেখানে থাকে সেখানকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। রওনা দিয়ে কিছুক্ষণের ভেতরেই আমি সেখানে পৌঁছে গেলাম। কিন্তু সেখানে পৌঁছে দেখি মাত্র ২-৩ জন বন্ধু-বান্ধব সেখানে এসেছে। বাকিরা এখনো এসে পৌঁছায়নি। যাই হোক সেই দুই তিন জনের সাথে গল্প জুড়ে দিলাম। তবে এর ভিতর খেয়াল করে দেখলাম আমাদের আড্ডাস্থলের পাশেই একটি ছোট্ট মাঠ রয়েছে। সেই মাঠের একটি গাছে চমৎকার আলোকসজ্জা করা হয়েছে। আর এলাকার স্থানীয় ছোট ছোট ছেলেরা বেশ বড় বড় সাইজের কিছু সাউন্ড বক্স এনেছে বাজানোর জন্য। অনেকের হাতে আবার আতশ বাজি দেখতে পেলাম।
যদিও এবার ফরিদপুরের প্রশাসনের পক্ষ থেকে উচ্চস্বরে সাউন্ড বক্স বাজানো এবং আতশবাজি পোড়ানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু উৎসবের এই রাতে সেই নিষেধাজ্ঞা মানার দিকে কারোর আগ্রহ ছিল না। অবশ্য আমিও বিকট শব্দে এই সাউন্ড বক্সগুলো বাজানোর ঘোর বিরোধী। আর এবার দেশে এত পরিমাণ অগ্নিকাণ্ড হয়েছে যে আতশবাজি গুলো একরকম মূর্তিমান বিভীষিকা হয়ে দেখা দিয়েছে। কখন কোথায় আগুন লেগে যায় সব সময় সেই চিন্তাতে থাকতে হয়। আমি তাদের আয়োজন দেখে বন্ধুদের সাথে আলাপ করছিলাম যে এবার তো প্রশাসন এগুলো নিষিদ্ধ করেছে। তারপরও ছেলেপেলেরা এগুলো কেন করছে? আমার এক বন্ধু উত্তর দিল এই সব নিষেধাজ্ঞা লোক দেখানো মাত্র। এগুলো করে ছেলেপেলেদের আনন্দ উদযাপন আটকানো যাবে না।
যাইহোক আমরা কিছুক্ষণ এই প্রসঙ্গে কথা বলে তারপর অন্য প্রসঙ্গে কথা বলতে লাগলাম। কথা বলার মাঝখানে হঠাৎ করে আমাদের পাশে এসে একটি গাড়ি থামল। গাড়িটি থামার সঙ্গে সেই গাড়ি থেকে কয়েকজন পুলিশ লাফ দিয়ে নামলো। সেই সাথে গাড়ির সামনে থেকে বের হল একজন ম্যাজিস্ট্রেট। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম তার কাছেই এই সমস্ত আয়োজন ছিল। আমি চিন্তা করছিলাম ওখানে তো কোন বড় মানুষ নেই। পাশেই আমরা দাঁড়িয়ে আছি। এখন যদি পুলিশ ভুল বুঝে আমাদেরকে ধরে নিয়ে যায়? বাংলাদেশের পুলিশ উল্টাপাল্টা কাজ করার জন্য রীতিমতো বিখ্যাত।
যাইহোক মনে কিছুটা ভয় এবং সংশয় নিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলাম দেখছিলাম কি হয়। তবে আমাদের ভাগ্য ভালো বলতে হবে। কারণ পুলিশ আমাদের কাছে না থেমে সরাসরি চলে গেল সাউন্ড বক্স গুলির কাছে। তারপর সেখানে গিয়ে আশেপাশে যে কয়েকটা ছেলে পেলে ছিল তাদেরকে এক জায়গায় জড়ো করল। তারপর তাদের সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে সেই ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ সহ আবার ফিরে চলল। কি কথাবার্তা বলেছে সেটা অবশ্য শোনার চেষ্টা করিনি। তবে ধারণা করতে পারি ছেলেপেলেদেরকে সাউন্ড বক্স বাজাতে আর আতশবাজি পোড়াতে নিষেধ করেছে। পুলিশ সেখান থেকে চলে যাওয়ার পর আমরা রীতিমতো হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। তারপর আমরা পুলিশের এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করতে লাগলাম। আমরা চিন্তা করে দেখলাম সাউন্ড বক্সগুলোর কাছে একেবারেই ছোট ছোট কিছু বাচ্চা ছেলে ছিল। সেই কারণে পুলিশ তেমন কিছু করেনি। যদি একটু বড় আকারের কেউ থাকতো তাহলে তাকে পুলিশ আজকে অবশ্যই এরেস্ট করে নিয়ে যেত।
এই ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর আমরা আস্তে আস্তে করে সেখান থেকে সরে একটি চায়ের দোকানে গিয়ে বসলাম। তবে একটি জিনিস আমার কাছে কিছুটা খারাপ লেগেছে। প্রশাসনের এত প্রচার-প্রচারণা সত্ত্বেও কেউই এই বিষয়গুলি মানছে না। সকলেই বড় বড় আকারে সাউন্ড বক্স এনে বিকট শব্দে নানারকম গান বাজাচ্ছিল। সেই সাথে চলছিল নেশার ছড়াছড়ি। এখনকার দিনের ছেলেপেলেদের নেশা না করলে যেন তাদের কোন উৎসব উদযাপন পরিপূর্ণ হয় না। এই বিষয়টা আমাকে খুবই ব্যথিত করে। দেশের যুবসমাজের বড় একটা অংশ আজ মাদকাসক্ত। ভারত থেকে আসা ফেনসিডিল আর মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবা নামক মাদকগুলো আমাদের দেশের যুবসমাজ প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে। অল্প কিছু ছেলেপেলে আছে যারা এই মাদকমুক্ত। আর আমি এই উচ্চস্বরে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে উৎসব উদযাপনের ঘোর বিরোধী। বিরোধিতা করার মূল কারণ হচ্ছে এই সমস্ত জায়গায় যে সমস্ত ছেলেপেলেরা থাকে। তাদের বেশিরভাগই নেশা করে। আমার মতে উৎসব উদযাপন হতে হবে সুস্থভাবে নেশা মুক্ত অবস্থায়।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | ফরিদপুর |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
@rupok দাদা আপনার লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো, আর আপনার তোলা ছবি গুলোও খুব সুন্দর।😊😊
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমার কাছেও ঈদের দিনের চেয়ে চাঁদ রাতে বেশি ভালো লাগে। আপনারা কয়েকজন বন্ধু বান্ধব চাঁদ রাতে একসাথে জড়ো হয়ে আড্ডা দিয়েছেন জেনে খুব ভালো লাগলো। আতশবাজি এবং বক্স বাজানো আমিও সাপোর্ট করি না। এক বছর আগে শবে বরাতের রাতে আমাদের এলাকার বাজারে আতশবাজি থেকে আগুন লেগে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। যাইহোক পুলিশ গিয়ে আপনাদেরকে কিছু বলেনি এটাই অনেক। পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাইয়া। শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে ভাইয়া চাঁদনী রাতে বন্ধুদের সাথে গল্প করার মজাই আলাদা। আর ঈদ উপলক্ষে যেহেতু উচ্চ শব্দে সাউন্ড বক্স বাজানো নিষেধ, তাই এ নিষেধ আমাদের সকলেরই মেনে চলা উচিত। তবে বর্তমান সময়ে বেশ কিছু বকাটে ছেলেদের উদ্ভব ঘটেছে। তারা কোন নিয়ম মানতে চায় না। রাতের বেলায় সাউন্ড বক্স বাজানোর মধ্য দিয়ে তারা গাজা, ফেনসিডিল ও ইয়াবা নামক মাদকদ্রব্য সেবন করছে। যেটা আমাদের সমাজের জন্য ও দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। এসব বিষয়ে আমাদের প্রত্যেক পরিবারের অভিভাবকদের এবং দেশের প্রশাসনকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। দারুন একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার লিখাগুলো বাস্তবসম্মত দাদা। পড়ে অনেক ভালো লাগলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
একদমই ঠিক বলেছেন ভাই, এখনকার যুবসমাজ এমন হয়ে গেছে যে নেশা না করলে যেন তাদের উৎসব পালন ঠিকঠাক ভাবে হয় না। আপনার তো দেখছি চাঁদ রাতে বেশ কিছুটা সময় তাহলে অপ্রস্তত ভাবে কেটেছে। হয়তো সত্যিই ছেলেগুলো ছোট ছিল বলে তাদেরকে পুলিশ এরেস্ট করেনি। তবে "বাংলাদেশের পুলিশ উল্টোপাল্টা কাজ করার জন্য রীতিমতো বিখ্যাত" লাইনটি পড়ে অনেক মজা পেয়েছি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
একদমই ঠিক বলেছেন ভাই, এখনকার যুবসমাজ এমন হয়ে গেছে যে নেশা না করলে যেন তাদের উৎসব পালন ঠিকঠাক ভাবে হয় না। আপনার তো দেখছি চাঁদ রাতে বেশ কিছুটা সময় তাহলে অপ্রস্তত ভাবে কেটেছে। হয়তো সত্যিই ছেলেগুলো ছোট ছিল বলে তাদেরকে পুলিশ এরেস্ট করেনি। তবে "বাংলাদেশের পুলিশ উল্টোপাল্টা কাজ করার জন্য রীতিমতো বিখ্যাত" লাইনটি পড়ে অনেক মজা পেয়েছি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজে এরকম ঘটনা ঘটছে। যে প্রচারণা হচ্ছে এটা করা যাবে না সেটা করা যাবে না কিন্তু আমরা দ্বিগুণ সেই কাজে উৎসাহ বোধ করছি এবং আমরা বেশি বেশি সেই সব কাজ করে যাচ্ছি। এতে আমাদের সমাজের জন্য অনেক বড় একটি বোঝা হয়ে যাচ্ছে আমাদের এই সমাজে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit