জীবনে প্রথম মেট্রোরেলে ভ্রমনের অভিজ্ঞতা।

in hive-129948 •  last year 

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


বাংলাদেশে মেট্রোরেল চালু হয়েছে কয়েক মাস হয়ে গেলো। মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর থেকে আমার ইচ্ছা ছিল ঢাকা গেলে একবার মেট্রোতে চড়ার। বাংলাদেশের বর্তমান এই সরকারের যতগুলো প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে তার ভেতরে যে দুটি প্রজেক্ট আমার কাছে সবচাইতে বেশি পছন্দ হয়েছে তার একটা হচ্ছে এই মেট্রোরেল। কারণ ঢাকা শহর আমি যে দুটো কারণে সবচাইতে বেশি অপছন্দ করি তার ভেতর একটা হচ্ছে রাস্তা ঘাটের ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যাম। তবে মেট্রো রেল চালু হলে এই ট্রাফিক জ্যাম অনেকটাই কমে আসবে। তাছাড়া নতুন যে কোন জিনিসের প্রতি মানুষের একটা আগ্রহ থাকে। আমারও ঠিক তেমনি আগ্রহ ছিলো। তাই এবার ঢাকা যাওয়ার পর থেকেই আমি মেট্রোতে চড়ার সুযোগ খুঁজছিলাম। তবে আমি যে এলাকাতে ছিলাম তার আশেপাশে মেট্রোর কোন স্টেশন ছিলো না। যার ফলে মেট্রোতে চড়া হয়ে উঠছিলো না।

IMG_20231205_173832.jpg

কিন্তু আসার একদিন আগে আমি পরিবার নিয়ে গিয়েছিলাম বাংলাদেশ বিমান বাহিনী মিউজিয়ামে। বিমান বাহিনীর মিউজিয়ামের অবস্থান ঢাকার আগারগাঁওয়ে। আর বিমানবাহিনীর মিউজিয়ামের গেট থেকে বের হওয়ার পরেই সেখানে একটা মেট্রো স্টেশন রয়েছে। যাই হোক আমরা বিমান বাহিনী মিউজিয়ামের ভেতরে ঘোরাফেরা শেষ করে সন্ধ্যার দিকে যখন সেখান থেকে বের হলাম। বের হয়েই দেখি মেট্রো স্টেশনের সিঁড়ি। এত কাছাকাছি মেট্রোর দেখা পেয়ে চিন্তা করলাম একবার মেট্রোতে চড়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে নেই। তাছাড়া পরিবারের বাদবাকি সবারও আগ্রহ ছিলো মেট্রোতে চড়ার জন্য। যদিও আমাদের যেদিকে গন্তব্য মেট্রো সেদিকে ছিলো না। তাই আমরা চিন্তা করলাম কাছাকাছি কোন একটা স্টেশন থেকে ঘুরে আবার আগারগাঁওয়ে চলে আসি। তারপর সেখান থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেবো সিএনজিতে করে।


IMG_20231205_180841.jpg

পরিকল্পনা ঠিক করেই আমি আমার স্ত্রী সাথে আমার কন্যা আর ভাগ্নে চারজন মেট্রো স্টেশনে প্রবেশ করলাম। মেট্রো স্টেশনটা নতুনদের জন্য কিছুটা ঝামেলা পূর্ণ মনে হতে পারে। কারণ এখানে বাস বা অন্য পরিবহনের মত আপনি কাউন্টার থেকে টিকিট কেটেই উঠে যেতে পারবেন না। প্রথমে স্টেশনে প্রবেশ করার পরে আপনাকে টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট নিতে হবে। তারপর সেই টিকেট নিয়ে নির্ধারিত প্লাটফর্মে গিয়ে মেট্রোর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। মেট্রো স্টেশনে আসার পর খুব অল্প সময়ের জন্য থামে। যার ফলে সবাই বেশ হুড়োহুড়ি করে মেট্রোতে ওঠে। এই বিষয়টা বাদে মেট্রোর বাদবাকি বিষয়গুলো আমার কাছে বেশ ভালই লেগেছে। যাই হোক আমরা চারজনের জন্য টিকেট নিয়ে নির্ধারিত প্লাটফর্মে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। তবে নিজের কাছে কিছুটা সন্দেহ মনে হচ্ছিলো যে সঠিক প্লাটফর্মে এসেছি কিনা। এই জন্য আশেপাশের কয়েকজনের কাছ থেকে ব্যাপারটা কনফার্ম হয়ে নিয়েছিলাম। টিকেট নিয়ে প্লাটফর্মে যাওয়ার অল্প কিছুক্ষণের ভেতরেই মেট্রো এসে স্টেশনে প্রবেশ করলো। তার আগে আমরা ছবি তোলার কাজ সেরে নিয়েছিলাম।


IMG_20231205_175641.jpg

অনেকেই মেট্রো আসার আগে গেটের কাছাকাছি চলে যাচ্ছিলো। এজন্য সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত লোকজন তাদেরকে পিছনে সরে যেতে বলছিলো। কিন্তু বাঙ্গালীর যা কাজ সেটাই তারা বারবার করছিলো। সরে যাওয়ার কিছুক্ষণের ভেতরে আবার তারা এসে সেখানে জড়ো হচ্ছিলো। যাই হোক এভাবে কিছুক্ষণ চলার পরে মেট্রোরেল এসে স্টেশনে থামলো। থামার পরেই ভেতর থেকে যারা বাইরে বের হবে তারা বের হওয়ার আগেই বাইরের লোকজন হুরমুড় করে ভেতরে ঢুকে পড়তে লাগলো। আমি অবশ্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেছিলাম। তারপর সবাইকে নিয়ে মেট্রোতে প্রবেশ করলাম। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি মাত্র একটি সিট ফাঁকা রয়েছে। আমরা চারজনের ভেতর তিনজন দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম। অবশ্য তাতে খুব একটা সমস্যা হয়নি। কারণ মেট্রোর জার্নিটা বেশ আরামদায়ক। আর এত দ্রুত সময়ে যে কোন গন্তব্যে পৌঁছে যায় যে আপনার কাছে দাঁড়িয়ে থাকাটা মোটেও কষ্টকর মনে হবে না।


আমরা সম্ভবত মিরপুর ১০ পর্যন্ত গিয়েছিলাম। সেখানে যেতে সর্বসাকুল্যে আমাদের মিনিট দশেক মতো সময় লেগেছিলো। নির্ধারিত স্টেশনে গিয়ে আমরা নেমে চিন্তা করতে লাগলাম এখন কি করবো? যেহেতু করার তেমন কিছু ছিলো না তাই আবার সেই স্টেশন থেকে টিকিট কেটে আগারগাঁও গামী মেট্রোরেলের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। মাত্র কয়েক মিনিটের ভেতরে আগারগাঁও গামী মেট্রো রেল চলে এলো। তারপর আমরা সেটাতে চেপে অল্প কয়েক মিনিটের ভেতরেই আগারগাঁও এসে পৌছালাম। ফেরার সময় অবশ্য সিট খালি পেয়ে বসেই ফিরতে পেরেছিলাম। তবে যারা প্রথম মেট্রোরেলে চড়তে যাবেন তারা একটা জিনিস খেয়াল রাখবেন। যে টিকিটটা আপনাকে দেয়া হবে আপনি স্টেশন থেকে বের হওয়ার আগে সেই টিকিটটা অটোমেটিক গেটে ডিপোজিট করতে হবে বা জমা দিতে হবে। অবশ্য আপনি টিকিট জমা না দিয়ে সেখান থেকে বের হতেও পারবেন না। কারণ গেট আপনাকে টিকেট না পেলে ঠিকই আটকে দেবে। মেট্রোরেলে চড়ার অভিজ্ঞতাটা ছিল আসলেই দারুন। ঢাকার জন্য সবচাইতে সময়োপযোগী প্রজেক্ট হয়েছে এই মেট্রোরেল। কারণ যেখানে যেতে আপনার আগে এক ঘন্টা সময় লাগতো মেট্রোরেলে করে সেখানে যেতে আপনার সর্বোচ্চ ১০ মিনিট সময় লাগবে। ঢাকায় বসবাসকারীদের জন্য এটা তো রীতিমত স্বপ্নের একটা প্রজেক্ট। আমি আশা করবো বাংলাদেশ সরকার ভবিষ্যতে মেট্রোর রুট আরো বাড়াবে। যাতে আরো বিভিন্ন এলাকার লোকজন মেট্রোরেলের সাহায্যে অতি অল্প সময়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে যেতে পারে। জীবনের প্রথম মেট্রোরেলে চলার অভিজ্ঞতা নিয়ে সেদিনের মতো খুশি মনে বাসায় ফিরে এলাম।


আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানফরিদপুর

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

ভাই ঠিক বলেছেন এই মেট্রোরেল ঢাকার মতো এতো ব্যাস্ত শহরের জন্য সময় উপযোগী একটি প্রজেক্ট। এই মেট্রোরেল এর কারণে কতো সময়যে বেঁচে যাচ্ছে। ঢাকা শহরের মানুষের ভোগান্তি কিছুটা হলেও কম করেছে এই মেট্রোরেল। ধন্যবাদ আপনাকে আপনার প্রথম মেট্রোরেল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

যে সমস্ত এলাকা দিয়ে মেট্রোরেল চলাচল করবে। সে সমস্ত এলাকার লোকজনের আসলেই অনেক উপকার হয়েছে।

যানজটের এই শহরে মেট্রোরেলের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের দেশের সরকারের উচিত যত দ্রুত সম্ভব মেট্রো রুট বৃদ্ধি করা। মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে খুবই ভালো লাগে। আমি দক্ষিণ কোরিয়াতে অসংখ্য বার এবং বিভিন্ন দেশে ঘুরতে গিয়ে মেট্রোরেলে চড়েছি। মেট্রোরেলে বেশিক্ষণ চড়লেও বিরক্ত লাগে না। যাইহোক ঢাকায় এসে মেট্রোরেলে চড়ে দারুণ অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন ভাই। আগারগাঁও থেকে খুবই অল্প সময়ে মিরপুর ১০ নম্বর চলে যেতে পেরেছেন। এতো চমৎকার অনুভূতি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Posted using SteemPro Mobile

আমি আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত। মেট্রোরেলের আরো রুট বাড়ানো উচিত। তবে সমস্যা হচ্ছে মেট্রোরেল অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটা প্রজেক্ট। আবার এটা অর্থনৈতিকভাবেও সরাসরি লাভজনক না। যার ফলে সরকার এই ধরনের প্রজেক্টে ইনভেস্ট করার আগে একাধিকবার চিন্তা করে।

এটা জেনে খুবই ভালো লাগলো যে প্রথমবারের মতো মেট্রোরেলে উঠেছেন পরিবারের সকলের সাথে নিয়ে। আসলে এই সরকার কিছু কিছু কাজ করেছে যে কাজগুলো সত্যিই আমাদের মত জনসাধারণের জন্য অনেক বেশি উপকারী মেট্রোলের মত একটা প্রজেক্ট আসলেই অনেক বেশি প্রয়োজন ছিল। ঢাকা শহরে এত বেশি জ্যাম যে গাড়িতে চড়তেই মন চায় না আর মেট্রোলের কারণে খুব দ্রুতই আগারগা থেকে উত্তরা পর্যন্ত চলে যাওয়া যায় ভালোভাবেই। মেট্রোল ভ্রমণের পুরো অভিজ্ঞতাটা আপনি আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন পরে ভালো লাগল, আমি একবার উঠেছি মেট্রোরে বেশ ভালই লেগেছিল। আপনার মেট্রল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ।

Posted using SteemPro Mobile

হ্যাঁ এই সরকার এমন কিছু কাজ করেছে যেগুলো আসলেই অনেক প্রয়োজন ছিলো। ঢাকার মানুষজনের জন্য মেট্রোরেল একটা আশীর্বাদ।