মৎস্য শিকারীদের মাছ ধরা দেখার অনুভূতি।

in hive-129948 •  last year 

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


ফেরদৌস ফরিদপুর থেকে চলে যাওয়ার পর থেকে আমি ঘরেই বসে রয়েছি। বিশেষ কোনো কাজ ছাড়া বাইরে খুব একটা যাওয়া হয়নি। তবে ঘরে বসে থাকতে থাকতে আমি রীতিমতো বিরক্ত হয়ে পড়েছি। কয়েকদিন থেকে চিন্তা করছিলাম আর কাউকে সাথে না পেলে একা একাই ঘুরতে বের হবো। কিন্তু যাব কোথায় সেটাই চিন্তা করছিলাম। এর ভিতরে আজ জুম্মার নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার পথে শুনতে পেলাম টেপাখোলা লেকে মানুষ টিকেট কেটে মাছ ধরছে। আমাদের শহরে এটা অনেক পুরনো ব্যাপার। শহরে কিছু বড় জলাশয় আছে। সেখানে মানুষ টিকেট কেটে মাছ ধরতে পারে। সেজন্য ব্যাপক আয়োজন করা হয়।

IMG_20230519_164442.jpg

IMG_20230519_165501.jpg

ব্যাপারটা শোনার পরেই ঠিক করে ফেলেছিলাম যে বিকালে মাছ ধরা দেখতে যাবো। মাছ ধরা দেখতে সবাই খুব পছন্দ করে। আমার কাছেও খুব ভালো লাগে মাছ ধরা দেখতে। সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বন্ধু প্রদীপকে ফোন দিলাম। দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম যে বিকেলে ওর কোন জরুরী কাজ আছে কিনা? ও জানালো কোন জরুরী কাজ নেই। তখন আমি ওকে বললাম বিকেলে দুজনে মিলে টেপাখোলা লেকে মাছ ধরা দেখব ও আশেপাশে কোথাও ঘুরে বেড়াবো। প্রস্তাব দেয়ার সাথে সাথেই ও রাজি হয়ে গেলো। আমি ওকে বলেছিলাম ঠিক চারটার দিকে আমি পৌঁছাব। কিন্তু আমার বাসা থেকে বের হতে কিছুটা দেরি হয়েছিল। অবশ্য আমি বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বন্ধু প্রদীপকে ফোন দিয়ে বলেছিলাম যে আমি এখন বাসা থেকে বের হচ্ছি তুই লেকপাড়ে চলে আয়।

IMG_20230519_164700.jpg

IMG_20230519_165455.jpg

আমার বাসা থেকে লেকপারের দূরত্ব আড়াই কিলোমিটার মতো। বাসা থেকে বের হয়ে অটো রিক্সায় করে খুব সহজে সেখানে আমি পৌঁছে গিয়েছিলাম। সেখানে পৌঁছে আমি মাছ ধরা দেখতে লাগলাম। এর ভেতর বন্ধু প্রদীপ আমাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করল আমি কোথায় আছি ? আমি আমার অবস্থান বলার কিছুক্ষণ পরে সেখানে প্রদীপ উপস্থিত হলো। তারপর দুই বন্ধু মিলে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে লাগলাম ও মাছ ধরা দেখতে লাগলাম। আমাদের শহরের এই লেকটি অনেক পুরনো। এক সময় এখানে অনেক বড় বড় মাছ ধরা পড়তো। যদিও এখন কালের পরিক্রমায় সেই বড় মাছের দেখা আর সহজে পাওয়া যায় না। তাছাড়া প্রতিবছরই এমন টিকেট বিক্রির মাধ্যমে এখানে মাছ ধরার আয়োজন করা হয়।

IMG_20230519_165905.jpg

IMG_20230519_165852.jpg

এই লেকটি একটি সরকারি লেক। এই লেকের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রয়েছে জেলা প্রশাসন। তারাই এই মাছ ধরার আয়োজন করে থাকে। আর এখান থেকে টিকেট বিক্রির প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে এই এলাকার রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। লেক পাড়ে পৌঁছে দেখে পেলাম লেকের তিন পাশ জুড়ে এক ধরনের মাচা তৈরি করা হয়েছে মাছ ধরার জন্য। এক একটি স্থান মৎস্য শিকারীদের কাছে ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। সেখানে দেখলাম বিভিন্ন রকমের মৎস্য শিকারি রয়েছে। কেউ রয়েছে একেবারেই সৌখিন যারা শুধু শখের বসে মাছ ধরতে এসেছে। আবার কেউ রয়েছে মাছ ব্যবসায়ী এখান থেকে পাওয়া মাছ তারা বাজার নিয়ে বিক্রি করবে। তবে শহরের সৌখিন ব্যবসায়ীদের পরিমাণই সেখানে বেশি দেখলাম। আবার বাইরের জেলার থেকে কিছু লোকও এসেছিল মাছ ধরতে।

IMG_20230519_164918.jpg

IMG_20230519_164950.jpg

এক ভদ্রলোককে দেখতে পেলাম বেশ আয়োজন করে মাছ ধরতে এসেছেন। ভদ্রলোক যে বেশ ধনী সেটা তার আয়োজন দেখে বোঝা যাচ্ছিল। আর তারা যেখানে মাছ ধরছিল তার ঠিক পাশেই সে ভদ্রলোকের প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা ছিলো। যেখানে তারা মাছ ধরছিল সেখানেই লেকের পারে তারা একটি তাবু টানিয়েছিল রেস্ট নেয়ার জন্য। আমার কাছে তাদের তাবুটা বেশ পছন্দ হয়েছিলো। আমরা দুই বন্ধু ঘুরেফিরে বিভিন্ন প্রান্তে মাছ ধরা দেখতে লাগলাম। তবে যখনই কোন মাছ কেউ ধরছিল সেদিকে গিয়ে আমরা দেখার চেষ্টা করছিলাম কি মাছ ওঠে? আমি লেকের পাড়ে পৌঁছানোর কিছুক্ষণের ভেতরেই এক ভদ্রলোক দেখলাম বেশ বড় সাইজের একটি কার্প মাছ ধরলো। এভাবে মৎস শিকারীরা বিভিন্ন রকম মাছ ধরছিলো।

IMG_20230519_171851.jpg

তবে আমি যতটা আশা করেছিলাম দেখলাম ততটা মাছ মানুষ পাচ্ছে না। পরে স্থানীয় একজনের সাথে কথাবার্তা বলে জানতে পারলাম এর আগে আরও দুই দফায় টিকেট কেটে মানুষ মাছ ধরেছে। এবার চলছিল তৃতীয় দফার মাছ ধরা। সেই লোক আরো জানালো প্রথমবার মৎস্য শিকারিরা অনেক মাছ পেয়েছে। তার ভেতরে অনেক বড় বড় মাছ ও ছিলো। কিন্তু এবার দেখলাম বড় মাছের সংখ্যা একেবারেই কম। যাইহোক তারপরও সবাই উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে মাছ ধরছিলো। তবে আমি যখন লেক পাড়ে গিয়েছিলাম তখন তাদের নির্ধারিত সময়ের আর খুব বেশি সময় অবশিষ্ট ছিল না মাছ ধরার জন্য। শুনতে পেলাম তারা নাকি আগের দিন বিকাল থেকে মাছ ধরা শুরু করেছে। প্রথমে আমি মনে করেছিলাম সকাল থেকে মনে হয় সবাই মাছ ধরা শুরু করেছে।

IMG_20230519_171953.jpg

IMG_20230519_171145.jpg

পরবর্তীতে আমি জানতে পারলাম সবাই তার আগের দিন বিকাল পাঁচটা থেকে মাছ ধরা শুরু করেছে। মূলত টিকিট বিক্রি করা হয়েছে ২৪ ঘন্টার জন্য। কথাটা শুনে আমি খুবই অবাক হলাম। কারণ এই ২৪ ঘন্টা এই মৎস্য শিকারীরা কিভাবে এত ধৈর্য নিয়ে বসে থাকছে সেটাই আমি চিন্তা করছিলাম। মাছ ধরা এমনিতেই অনেক ধৈর্যের কাজ। সেখানেই পুরো ২৪ ঘন্টা ধরে মাছ ধরা তো আমার কাছে রীতিমত অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিলো। যাই হোক এদিকে প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছিলো আর একে একে মৎস্য শিকারিরা সবাই তাদের জিনিসপত্র গুটিয়ে চলে যাচ্ছিলো। যখন মৎস্য শিকারীরা তাদের সবকিছু নিয়ে চলে যাচ্ছিল তখন আমরা অনেকের কাছে তাদের এই পুরো একদিনে ধরা মাছগুলো দেখতে পেলাম। দেখলাম কেউ অনেক মাছ ধরতে পেরেছে। আবার অনেকেই দেখলাম বেশি মাছ না পাওয়াতে বেশ হতাশ। শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যার একটু আগ দিয়ে আমরা লেকপাড় থেকে অন্যদিকে রওনা দিলাম।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানটেপাখোলা লেকপাড়

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

fishing the best @rupok....

WhereIn Android

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

মাছ শিকার করতে এবং মাছ শিকার করা দেখতে আমার খুবই ভালো।।
ফটোগ্রাফি গুলা দেখেই বুঝতে পারছি রীতিমতো আয়োজন করে মাছ ধরা চলছে।।
তৃতীয়বারের মতো আয়োজন চলছে এজন্যই হয়তো মাছের সংখ্যা কম।।
তবে আপনার ফটোগ্রাফিতে দেখতে পেলাম একজনই তো অনেকগুলো মাছ পেয়েছে।।
ধন্যবাদ ভাইয়া মাছ শিকারের দৃশ্য এবং আপনার অনুভূতি আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য।।

ভাইয়া, আমাদের এদিকেও একটা বড় পুকুর আছে, যেখানে টিকিটের মাধ্যমে মাছ ধরতে দেয়া হয়। আর যখন কেউ বড় মাছ ধরতে পারতো, তখন সেখানে খুবই হৈ-হুল্লোড় পড়ে যেত। আর এই দৃশ্যগুলো আমি খুব কাছ থেকেই দেখেছি। আমার কাছে এরকম আয়োজন খুব ভালো লাগে। ভাইয়া আপনার পোস্টে থাকা ধনী ব্যক্তিটির তাবুটা আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে। আমার মনে হয় তিনি শখের বশবর্তী হয়ে মাছ ধরতে এসেছিলেন। আর এই টিকিট কেটে মাছ ধরাটা হচ্ছে একপ্রকার লটারির মত। ভাগ্যে থাকলে অনেকগুলো মাছ ধরতে পারবে, আর ভাগ্যে না থাকলে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। ভাইয়া,মৎস্য শিকারিদের মাছ ধরা দেখার অনুভূতিটুকু আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।