আসসালামুআলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি ভালো আছেন। আমি কদিন ধরেই কমিউনিটিতে লেখালেখি করিনি। আসলে মন-দিল ভালো না থাকলে লেখার মতো সৃষ্টিশীল জিনিস আসেনা। অন্তত আমাকে দিয়ে হয়না। মন খারাপের কারন হল আমার মাত্র তিন মাস বয়সী ছেলেটা অসুস্থ।
গত কদিন ধরে তার খাওয়াদাওয়া এবং ঘুমের সমস্যা আমরা খেয়াল করেছি। রাতে কোন রকম ৪/৫ ঘন্টা ঘুমালেও, দিনে মোটেও ঘুমাতো না। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের জন্য ন্যুনতম ৬ ঘন্টা ঘুম জরুরি। নবজাতকের জন্য তার প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু সে ঘুমাচ্ছেও আরও কম! গতকাল হঠাৎ করেই সকাল থেকে তার গাল ফুলে গেছে। সন্দেহ হওয়ায় পর্যবেক্ষণে রাখি। দুপুরের পর ফুলা কিছু কমে যায়। সিদ্ধান্ত নেই বিকালে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার।
আমার বাসা জামগড়া হওয়ায় আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতাল খুব কাছেই আমাদের। আমরা জানি এখানে গর্ভবতী নারী ও শিশুদের ভালো ট্রিটমেন্ট হয়। এজন্য, বিকাল হতেই আমি আর আমার সহধর্মিণী বাচ্চাকে নিয়ে চলে আসি নারী-শিশুতে। এই নামটা আমরা শর্টকাটে ব্যবহার করি। কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে অপেক্ষা করছিলাম আমরা। তখন একজন শিশু ডাক্তারই ছিলো। এখানে সকাল থেকে ডাক্তাররা রোগী দেখলেও বিকাল হলে কেবল জরুরি বিভাগ ছাড়া বাকি সব চেম্বার বন্ধ হয়ে যায়। যাইহোক, ডাঃ নাহিদ ফারজানার জন্যই অপেক্ষা করতে লাগলাম। আমাদের সিরিয়াল ছিল ১০।
প্রায় এক ঘন্টা অপেক্ষার পর আমাদের পর্ব আসলো। ডাক্তারকে সমস্যা এবং লক্ষণ বলার পর উনি কিছুটা গম্ভীর হয়ে গেলেন এবং কিডনি বিষয়ক কিছু টেস্ট করাতে বলেন। একজন ফার্মাসিস্ট হিসাবে আমি এসবের গুরুত্ব বুঝি। তদানুসারে টেস্ট করার জন্য যাই। ডাক্তার দুটি ইউরিন টেস্টও দিয়েছে। কিন্তু তিন মাসের বাচ্চাকে তো আর বলে কয়ে ইউরিনেশন করানো যায় না। এজন্য এদুটো বাদে বাকি সব করার জন্য ব্লাড কালেকশন রুমে যাই। ছেলের হাত থেকে রক্ত নেয়ার সময় খুবই খারাপ লাগে। কিন্তু আমি জানি এই মুহূর্তে তাদেরকে সহযোগিতা করাই আমার করণীয়। এরপর, আমরা ফিরে আসি। এরমধ্যে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় বাইরে বেশ শীতল পরিবেশ ছিল।।আমার ছেলেও বাইরে ঘুরতে পছন্দ করে এই বয়সেই। যতবারই তাকে নিয়ে বের হয়েছি, কখনই সে কান্না করেনি। বরং তার ভাবভঙ্গিতে মনে হয়েছে সে উপভোগ করছে।
এসব করে আমার কর্মস্থলে যেতে বেশ দেরি হয়ে যায়। অবশ্য এসব ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ থেকে যথেষ্ট ছাড় রয়েছে। তাছাড়া কর্মে অবহেলা করিনা বলে আমার সুনাম আছে। যাইহোক, আজ লাঞ্চ ব্রেকে রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারকে রিপোর্ট দেখাতে আসলাম। আমার লাঞ্চ আওয়ার অবশ্য শুরুই হয় বিকাল তিনটা থেকে। সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত থাকে আমার ব্রেক। এই সময়ের মধ্যেই কাজটি শেষ করার ইচ্ছা ছিল আমার।
কিন্তু অপেক্ষা করতে করতে আমার সিরিয়াল আসে ৫ঃ২০ মিনিটে। বেশিক্ষণ লাগেনি। ডাক্তার বললো রিপোর্টে কোন সমস্যা নেই। তবে ইউরিন টেস্টের রিপোর্টও তাকে দেখাতে। সেই রিপোর্ট বের হতে ন্যুনতম দুইদিন লাগবে। আমি ফেরার পথ দরলাম। মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে যায়। শতহোক, ছেলের মারাত্মক কোন সমস্যা হয়নি। রিকশাওয়ালাকে ঠিকানা বললাম। উনি নিয়ে আসছে। হঠাৎ করেই অন্য একটা পথে ঢুকলো। জিজ্ঞাসা করলাম এদিকে যাচ্ছেন কেন? বললঃ শর্টকাট। আমি আর কথা বাড়ালাম না। কিন্তু উনি এমন এক জায়গায় নামালো যা আমি চিনি না। আর সেটা এতই দূরে যে অন্য কেউ আসতেও চাচ্ছিলো না। উনি বেশ দুঃখ প্রকাশ করলো। আমিও মন ভালো থাকায় কিছু বলিনি। ভাড়া দিলাম। অবশ্য তিনি নিতে চাচ্ছিলো না। বাধ্য হয়ে আধাঘন্টার মত হেটে পরিচিত একটি জায়গায় আসি আর রিকশা নিয়ে ফিরে আসি। সর্ব পরি, ছেলের রিপোর্ট পাওয়ায় মনটা কিছুটা হালকা হয়েছে। সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।
|