আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভাল আছেন। আজ আমি আপনাদের সাথে, শীতের রাতে রসের ক্ষীর খাওয়ার স্মৃতি শেয়ার করব।
তখন আমি কলেজে পড়তাম। সাধারণত শীতকাল আসলে আমরা প্রতিবারই ৩/৪ বার একজোটে হয়ে খেজুরের রসের ক্ষীর খেতাম। যারা গাছ কাঁটে তাদেরকে আগেই বলে দেওয়া হতো, আজ রাতে আমাদের রস লাগবে। তারা আমাদেরকে বলে দিত, কোন গাছের রস বেশি মিষ্টি হয়, আর কোন গাছে রস বেশি হয়। তারা আমাদেরকে সময়ও বলে দিত। সাধারণত বেশিরভাগই রাত এগারোটা থেকে বারোটার মধ্যে হাঁড়ি ভর্তি হয়ে যেত। উনারা ওই সময় রস সংগ্রহ করে আবার ওই হাঁড়ি গাছে ঝুলিয়ে দিত। যেহেতু আমাদের আগেই বলা থাকতো, তাই তারা সেসব গাছ থেকে রস না পেড়ে অন্য গাছ থেকে পাড়তেন আর আমাদের জন্য বরাদ্দ গাছগুলো রেখে দিতেন।
আমরা সাধারণত রাত দশটার পর থেকে যোগাড়-যন্ত্র শুরু করে দিতাম। আমাদের গ্রামে তখন সিলিন্ডার গ্যাসের প্রচলন ছিল না। থাকলেও হয়তো আমরা তা ব্যবহার করতামনা। মিথেন গ্যাসের প্রচলন তো এখনো নেই। যাইহোক, আমরা ভাগ হয়ে কাজগুলো করতাম। কেউ চুলায় জ্বালানোর জন্য লাকড়ি কুড়াতাম। কেউ যেত রস পাড়ার জন্য যেত। কেউ যেত নারিকেল এবং চাল যোগাড় করার জন্য যেত।
রসের ক্ষীরের উপকরণই ছিল তিনটি। রস, চাল, আর নারিকেল। যোগাড়-যন্ত্র হয়ে গেলে আমরা রান্নার আয়োজন করতাম। চুলা জ্বালিয়ে চারদিকে আমরা গোল হয়ে বসতাম। আগুন পোহাতাম আর গল্প করতাম। একদিন আমরা খুব জোরে জোরে হাসাহাসি করছিলাম। তখন আশেপাশের অনেকেরই ঘুম থেকে ভেঙ্গে যায়। তখন আমরা রসের ক্ষীর খাওয়ায় ব্যস্ত ছিলাম। দুজন নানু তখন সেখানে আসে। এসে এত রাত্রে জোরে হাসাহাসি করার জন্য আমাদেরকে খুব বকাঝকা করে। হঠাৎ করে আমরা খেয়াল করলাম তাদের হাতে দুটি মাঝারি সাইজের বল। তখন আমরা আবার হেসে উঠলাম। কারণ তারা জানত এখন আমরা রসের ক্ষীর খাচ্ছি। তাই নিতে এসেছে। এসে বলল, তোমাদের নানা খুব পছন্দ করে। তার জন্য কিছু দেও। আমরা অনেক পাকিয়েছিলাম। বল ভরে তাদেরকে দিয়ে দিলাম।
খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ করে আমরা দেখলাম এখনো অনেক ক্ষীর পড়ে আছে। তাই যার যার প্রয়োজন ছিল সে নিয়ে গেল। শীতকালে এমন রসের ক্ষীরের প্রোগ্রাম আমরা প্রতিবারই ৩-৪ বার করতাম। খুবই ভিন্ন এবং আনন্দময় ছিল সেদিন গুলো। দিনগুলোর কথা মনে পড়লে স্মৃতি কাতর হয়ে যাই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
শীতকালে এই ধরনের স্মৃতি গুলি খুব মজার হয় ভাই। সাধারণত এগুলি ভোলা যায় না জীবনে। আর আপনি তো খেজুর রসের ক্ষীর খাওয়ার অনুভূতি আমাদের সামনে বিশদে তুলে ধরেছেন। আপনার এই অনুভূতি পড়ে আমারও জিভে জল এসে গেল। শীতকালেলেই এইসব মজা যেন জীবনের আনন্দকে আরও অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। ভালো লাগলো আপনার এই স্মৃতিচারণমূলক পোস্ট।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ঠিক বলেছেন দাদা, এই স্মৃতিগুলো ভুলার নয়। আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম, ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার শৈশবের স্মৃতি এক কথায় অসাধারণ! রসের ক্ষীর রান্না আর শীতের রাতে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সেই উষ্ণতার আনন্দ, এ এক অনন্য অভিজ্ঞতা। পুরো গল্পটি জীবনের সরল আনন্দ আর গ্রামীণ ঐতিহ্যের চমৎকার প্রতিচ্ছবি। এমন স্মৃতি ভাগাভাগি করার জন্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গ্রামীণ জীবন অনেক সুন্দর। আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। ধন্যবাদ ভাই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনি অনেক সুন্দর স্মৃতি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। বেশ ভালো লাগলো এত সুন্দর ভাবে খেজুরের রসের ক্ষীর খাওয়ার স্মৃতি শেয়ার করেছেন দেখে। আসলে ভিন্ন ভিন্ন এই অনুভূতিগুলো যেন অনেক কিছু জানার সুযোগ করে দেয়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম সুমন ভাই। ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit