আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভালো আছেন। আজ সকাল থেকে আমার মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে। মনে হল আজ একটু মজার কিছু লেখি। এই কারণে সেন্ট-মার্টিনের সেই রাতের কথা লিখবো। এটা অবশ্য ভ্রমণ গল্প না, একটু মজার স্মৃতি।
সময়টা ২০১৭ সালের শুরুর দিকে। তখন আমি অনার্স থার্ড ইয়ারে ছিলাম। আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে কক্সবাজারে একদিন এবং সেন্টমার্টিনার দুই দিনের ট্যুর আয়োজন করা হয়। যাইহোক, ডিপার্টমেন্ট থেকে মোট ৮০ জন আমরা ট্যুরে যাই।
সেন্ট-মার্টিনে যাওয়ার অনুভূতি বা সেখানকার পরিবেশ বা সেখানকার স্মৃতিগুলো আমাকে কতটা আনন্দিত করেছিল সেসব অবশ্য আমি এখানে লিখব না। এখানে শুধু সেখানে কাটানো রাতের মজার ঘটনাটা উল্লেখ করবো।
রাত তখন আনুমানিক এগারোটা বাজে। আমরা যে হোটেলে ছিলাম তার পাশেই সুন্দর একটি প্লেস ছিল সমুদ্র দেখার। ক্লান্ত হয়ে সেখানে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। আমার এক বন্ধু আমাকে ডেকে নিয়ে আসে। দেখি আমাদের ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন বড় ভাই এবং সেকেন্ড ইয়ার, ফার্স্ট ইয়ারের জুনিয়ররা আছে সেখানে। আমাদের ব্যাচের আমরা দুজনেই ছিলাম। বড় ভাইরা আমাদেরকে বলল সেন্ট-মার্টিনের নারিকেল গাছ থেকে ডাব পেড়ে খাবে। উৎসাহী ফার্স্ট ইয়ারের দুই ছোট ভাই জানালো তারা গাছে উঠতে পারে। যাইহোক আমরা ডাব চুরি করার উদ্দেশ্যে রওনা দেই।
বিকেল বেলাতেই এখানকার এক বিক্রেতার সাথে আমাদের বড় ভাইরা কথা বলে রেখেছিল। সেই ডাব বিক্রেতাই আমাদেরকে জানিয়েছিল কোন গাছের ডাব খাওয়ার উপযুক্ত হয়েছে এবং স্বাদ খুব ভালো হবে। এমন কি ডাব কাটার জন্য আমাদেরকে দা-ও দিয়েছিলেন।
আমরা ডাব খেয়ে অনেকক্ষণ আড্ডা দিলাম। তারপর চলে গেলাম যেখানে টেকনাফ থেকে আসা জাহাজগুলো যেখানে ভিড়ে সে জাহাজ ঘাটে। প্রচুর বাতাস উপভোগ করলাম সেখানে। ততক্ষণে রাত তিনটা পার হয়ে গিয়েছে। এমনিতেই আমরা সেদিন খুব ভোরে বাসে উঠেছিলাম। আগের রাতে কক্সবাজারে থাকার সময়ও খুব একটা ঘুমায়নি। এদিকে সেন্ট-মার্টিনে এসে বিকেল বেলা বালির মধ্যে সাইকেল চালিয়ে সবাই কমবেশি ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে। অবশ্য সন্ধ্যার দিকেই আমরা অনেকেই ঘুমিয়ে নিয়েছিলাম। যাইহোক আমাদের সবারই খুব ঘুম পাচ্ছিল এবং আমরা হোটেলে ফিরে আসছিলাম। যাওয়ার সময় আমরা বীচ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে গেলেও আসার সময় আমরা রাস্তা দিয়ে ফিরে আসছিলাম। আর আমাদের হোটেলটা ছিল একদম শেষ মাথায়।
সেন্ট-মার্টিনের একটা উল্লেখযোগ্য দিক হলো সেখানে প্রচুর পরিমাণে কুকুর আছে। ঠিক কত হাজার তা আন্দাজ করতে পারব না, তবে প্রচুর কুকুর আছে সেন্ট মার্টিনে। যেহেতু আমরা ১৫-১৬ জন ছিলাম তাই কুকুর আমাদেরকে আক্রমণ করার সাহস করেনি। কিন্তু রাস্তার দুপাশ থেকে খুব ঘেউ ঘেউ করছিল। যাইহোক, আমরা ফিরে আসছিলাম। সেদিন ছিল পুরো পূর্ণিমার রাত। আমরা দূর থেকেই সবকিছু দেখতে পাচ্ছিলাম। তাছাড়া রাস্তায়ও লাইট লাগানো ছিল তাই অনেক কিছুই দেখা যাচ্ছিলো।
আমরা কিছুদূর আসার পর হঠাৎ দেখতে পেলাম চার পাঁচ জন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। তাদের হাতে বেশ বড় বড় বাঁশ ছিল। আমাদের সাথে অনেক দূরত্ব ছিল আর আমরা বেশ ভয় পেয়ে যাই। আমরা আমাদের হাঁটার গতি কমিয়ে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করতে থাকি। আমাদের বড় ভাইরা আমাদেরকে পরামর্শ দেয় নিজেদেরকে প্রস্তুত রাখতে। তারা যদি আমাদের আক্রমণ করে যেহেতু সংখ্যায় আমরা বেশি তাই আমরা তাদের সাথে মারামারি শুরু করে দেব। আমরাও সেভাবেই আমাদের প্রিপারেশন নিয়ে রাখি। ধীরে ধীরে কিন্তু সাবধানে সামনের দিকে এগিয়ে যাই।
আমরা যখন তাদের অতিক্রম করে যাচ্ছিলাম তারা হঠাৎ করে আমাদেরকে ডাক দিয়ে বলল দাঁড়ান। আমরা মোটামুটি একজোট হয়ে প্রিপারেশন নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তারা আমাদের উপর আক্রমণ করলে আমরাও পাল্টা আক্রমণ করব। তাদের মধ্যে একজন জিজ্ঞাসা করল "কোথায় যাচ্ছেন?" আমরা হোটেলের নাম বললাম। সেন্টমার্টিনে একটা বিষয় দেখলাম, বড় বহরের ট্যুরের তথ্য তাদের কাছে থাকে। অর্থাৎ তারা জানত যা আজকে সেই হোটেলে লোক উঠেছে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে।
এবার তারা সেই কাজটাই করল যে কাজটা আমরা আশা করছিলাম। তারা বাঁশ নিয়ে সামনে এগিয়ে এলো। কিন্তু এরপর যেটা করলো সেটা আমরা প্রত্যাশা করিনি। কেউ ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারিনি এমন কিছু একটা হবে। আমাদের কারো মাথাতেই বিষয়টি আসেনি। একটুর জন্যও সন্দেহ জাগেনি। সেই মুহূর্তের অনুভূতির কথা আমি ঠিক এভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবো না। সেই ঘটনাটা মনে পড়লে আমি আজও শিহরিত হয়ে যাই।
তারা আমাদেরকে বলল, বাঁশগুলো সাথে নিয়ে যান। রাস্তায় অনেক কুকুর তো! আপনাদেরকে ডিস্টার্ব করবে। হাতে বাঁশ থাকলে তারা আর ঘেউ ঘেউ করে না। সামনেও এসে দাঁড়ায় না। আপনারা হোটেলের গেটের সাথে এগুলো রেখে দেবেন আমরা সংগ্রহ করে নিয়ে আসবো। আমরা তাদের হাত থেকে বাঁশগুলো নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলাম। কিছুদূর সামনে এসে আমরা অট্টহাসিতে ফেটে পড়লাম। কি ভেবেছিলাম আর কি হলো? নিজেদের বোকামি নিয়ে হাসতে হাসতে আমরা হোটেলে চলে আসলাম দারুন একটি স্মৃতি নিয়ে।