আসসালামুআলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি ভালো আছেন। আজ আপনাদের সাথে একটি গল্প শেয়ার করবো। গল্পের মূল চরিত্রগুলো বাস্তবিক। যদিও নামগুলো আমি ইচ্ছামত দিয়েছি। তবে লেখা বড় করার স্বার্থে কিছুটা কল্পনার আশ্রয় নেয়া হয়েছে। লেখাটি বড় হয়ে গিয়েছে বিধায় পর্ব আকারে প্রকাশ করত হলো।
মতি গ্রামের অবস্থা সম্পন্ন কৃষক। অবশ্য জমিদার টাইপের না, নিজের জমিতে চাষাবাদ করেন, পুকুরে মাছ আছে, গোলাভরা ধান আছে, মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, ছেলেটা তার সাথে মাঠে কাজ করে, বউ বিকাল হলে অন্যের বাড়িতে গল্প করতে যায়, বসে বসে পান চিবোয়। তার এক শালী, নাম আকলিমা। আকলিমার স্বামী মনসুর বিদেশ থাকে। দুবাই। দুই ভায়রার মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। বিদেশি টাকা আছে বলে আকলিমা বা মনসুর, কেউই তাদের দুলাভাইকে উপেক্ষা করেনা। দুলাভাই তাজা মাছ পাঠায়, চাল পাঠায়, সময়ে সময়ে সবজি, ভুট্টা এসবও দেয়।
মনসুর দেশে আসবে। মতির অবশ্য তাতে কিছু যায় আসেনা। ভায়রা তাকে প্রতি বছরই কিছুনা কিছু এনে দেয়। গতবার দিয়েছে ঘড়ি, আগের ফির দিয়েছে বিশাল বড় চার্জার লাইট। সেটা দিয়ে সে রাতের বেলায় পুকুর পাহারা দেয়। বর্ষাকালে রাতের বেলায় বিলে জমে থাকা পানিতে মাছ শিকার করে। ঘড়ি অবশ্য তার কাজে লাগেনা। সে সময় চিনেনা। একবার একটা দামী কেডস দিয়েছিলো। মতি পরে লুঙ্গি। লুঙ্গির সাথে কেডস পরায় অনেকেই হাসাহাসি করেছে। তাই সে বিরক্ত হয়ে ছোট ভায়রাকে বলেছে কিছু না আনতে তার জন্য। তবুও ভায়রা আনে। আসলে, তাদের শ্বাশুড়ি মারা যাওয়ার পর আকলিমার দেখাশোনা সেই করেছে। এজন্য আকলিমা আর মনসুর মতির প্রতি কৃতজ্ঞ। এবার মতির শখ হয়েছে ঢাকায় যাবে। কখনই যায়নি আগে। ইনিয়ে বিনিয়ে ছোট ভায়রাকে তা জানিয়েছে সে। ঠিক হয়েছে, এবার এয়ারপোর্টে তাকে রিসিভ করতে যাবে মতি আর মনসুরের ভাই মফিজ।
গঞ্জে গিয়ে তারা সিএনজিতে চড়ে লঞ্চঘাটে যাওয়ার জন্য। মতি একটা সাদা পাঞ্জাবি গায়ে দিয়েছে। যেনতেন পোষাক পরে তো আর ঢাকায় যাওয়া যায়না। সিএনজিতে মতি আগেও চড়েছে। তার মেয়ে যখন হাসপাতালে ছিল, সে আর তার বউ সিএনজিতে চড়েই গিয়েছিলো জেলা সদরে। তার ছেলে নাতী হয়েছিলো তখন। এবার অবশ্য ঢাকায় যাবে সে। স্বপ্নের ঢাকা। লঞ্চ ঘাটে গিয়ে সে অবাক হয়। এত মানুষ ঢাকায় যাচ্ছে! হয়ত তার মত অনেকেই প্রথম ঢাকায় যাচ্ছে।
যথা সময়ে লঞ্চ ছাড়লো। তারা নিচ তলার চেয়ার সিটে বসেছে। ফ্যান ঘুরতেছে। অবশ্য এমনিই বাতাস আসছে। কিছুক্ষণ পর তার চা খেতে মন চাইলো। সে দেখেছে লঞ্চে চায়ের দোকান আছে একটা। সেখানে গিয়ে দেখলো বসার জায়গা নাই। এটা আবার কেমন চায়ের দোকান? টুল নাই! তার গ্রামের হিরনের দোকানে তারা সারাদিন বসে থাকে। কিন্তু এখানে তেমন সুযোগ নাই। এখানে আবার আগে বিল দিতে হয়! বিল ১৫ টাকা! এক কাপ চা পনেরো টাকা? তার বেশ রাগ হয়। কিন্তু সে যেহেতু প্রথম ঢাকায় যাচ্ছে, মনটা ভালো ছিলো। পনেরো টাকা বিল দিয়েই চা নিলো হাতে। কাগজের কাপে চা! সে মনে মনে রেগে যায়। চা মুখে দিয়ে তো তার রাগ আরও চড়ে যায়! ১৫ টাকা দামের চা, কিন্তু মুখে দেয়া দায়। তার উপর ইঞ্জিনের গুড়ুম গুড়ুম শব্দ! তার মোটামুটি রাগ মাথায় চড়ে যায়। কোন মতে ১৫ টাকার চায়ের ১০ টাকা সে গিলতে পেরেছে। বাকিটা নদীর জলে ভাসিয়ে সে চলে আসে। আর খাবেনা কিছু এই লঞ্চে। এক সময় ঘুমিয়ে যায় মতি।
মানুষের হইহুল্লোড় আর মফিজের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে মতির। নাকে একটা বিভৎস গন্ধ আসে তার। মফিজ ব্যাখ্যা করে এটা বুড়িগঙ্গার পানির গন্ধ। মতির বুঝে আসেনা নদীর পানির এমন বিশ্রী গন্ধ হবে কেন? তাদের বাড়ির পাশের মেঘনা নদীর পানিতে তো এত গন্ধ নাই। মফিজ জানায় এখন তাদের নামতে হবে। তার হাতে টিকিট ধরিয়ে দেয়। মানুষ আর মানুষ লঞ্চের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এমন ভীড় সে যখন সরকারি সার আনতে যায় তখন পায়। একসময় মৃদু একটা ধাক্কা অনুভব করে সে। ধীরে ধীরে মানুষ বের হতে থাকে। সেও বের হয়। মতি মিয়ার প্রথম ঢাকা দেখা! সদরঘাট থেকে বের হয়ে দেখে রাজ্যের মানুষ এখানে! এত্ত মানুষ এই শহরে? সারি সারি রিকশা আর সিএনজি দাঁড়িয়ে আছে। কেবল জানতে চায় তারা কোথায় যাবে? এত খেয়াল রাখে শহরের মানুষ গ্রামের মানুষের? সে খুব খুশি হয়। কিন্তু পরক্ষণেই বুঝতে পারে, এরা সিএনজির ড্রাইভার! মফিজ সোজা হেটে যায়। তার পিছনে পিছনে যায় মতি। সে এত জোরে হাটতে পারেনা। ইতিমধ্যে অনেকের ধাক্কা খেয়েছে সে। গ্রামে হলে একটা লঙ্কাকাণ্ড বাধিয়ে ফেলতো। কিন্তু এখানে সে বুঝতেই পারছেনা কে তাকে ধাক্কা দিচ্ছে আর কে দেয়নি। সবাই কেবল হেটে যাচ্ছে। হেটে তো না, দৌড়ে যাচ্ছে যেন। তারাও এগিয়ে যায়।
গল্পের বাকি অংশ পরবর্তী পর্বে তুলে ধরবো। মতির মত বোধকরি পাঠকও বেশিক্ষণ ধৈর্য ধরে থাকতে পারছেন না। পরবর্তী পর্বে দেখা হবে।