আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভালো আছেন। আজ আমি একটু সেনসেটিভ ইস্যু নিয়ে কথা বলব। সেটা হচ্ছে ব্রেন ওয়াশ। আমার নিজের সাথে ঘটা কয়েকটি বিষয় আপনাদের সামনে তুলে ধরব।
আমি যখন ছোট ছিলাম অর্থাৎ প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম তখন আমাদের পাঠ্য বইতে বেশ কয়েকজন কবির কবিতা ছিল। কেউ একজন আমাদের বারণ করেছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা না পড়ার জন্য। কারণ তিনি একে তো ভিনদেশী, তার উপর ভিন্ন ধর্মের। সে।মতে আমিও তাকে উপেক্ষা করেছি। কোন কবিতাই তার আসলে পড়িনি। যখন কলেজে উঠলাম তখন আমাদের পাঠ্যবইতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত সোনার তরী কবিতাটি ছিল। যেদিন আমাদের বাংলা শিক্ষক সোনার তরী কবিতাটি আবৃত্তি করে শুনালেন এবং ব্যাখ্যা করলেন, আমি একই সাথে অভিভূত হলাম এবং হতাশ হলাম। সোনার তরী কবিতাটি আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছিল। আফসোস হল কেন আমি এতগুলো বছর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোন কবিতা পড়িনি। তারপর বিশ্বকবির অনেকগুলো কবিতা আমি পড়েছি। ছোট গল্প পড়েছি। তার লেখা হৈমন্তী গল্প আমি অন্তরে ধারণ করেছি।
একই রকম ঘটনা ঘটেছে হুমায়ুন আজাদের ক্ষেত্রেও। ছোটবেলায় আমাদের মগজে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল, তিনি একজন নাস্তিক এবং এজন্য তার লেখা পড়া যাবে না। সে মতে আমি তার লেখাও উপেক্ষা করেছি। কিন্তু একটা সময় আসলো যখন আমি তার লেখায় মুগ্ধ হয়ে যাই। একই ঘটনা ঘটেছে তসলিমা নাসরিনের ক্ষেত্রেও। বিশেষ করে তার আমার মেয়ে বেলা বইটি। বইয়ের ঘটনাগুলোতে মূলত আমাদের সমাজে মেয়েদের উপেক্ষিত জীবনের ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। এত বিস্তর সমালোচনা চারদিকে ছিলে যে, যখন আমি পড়েছিলাম তখন লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তে হয়েছে। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের কল্যাণে আমি তসলিমা নাসরিনের নাম না জানা আরো কয়েকটি বই পড়েছি। যেখান থেকে আমি কিছু বিশ্বাস নিজের মধ্যে গেঁথে নিয়েছি।
সময়ের অন্যতম সেরা দুই ক্রিকেটার ভারতীয় ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি এবং ফাস্ট বোলার জসপ্রিত বুমরাহ; এরাও আমার অপছন্দের তালিকায় ছিল। দুর্ভাগ্যবশত আমি ক্রিকেট খেলা খুব কম দেখি। যার কারণে তাদের খেলা খুব একটা দেখা হয়নি। আমি ইংল্যান্ডের একজন পাঁড় ভক্ত। রাত জেগে তাদের টেস্ট খেলাও দেখতাম। একবার হয়েছে, ভারত ইংল্যান্ড সফরে গিয়েছিল টেস্ট খেলার জন্য। সেই সিরিজে বিরাট কোহলির ব্যাটিং এবং বুমরাহর বোলিং আমাকে এতটাই মুগ্ধ করেছে যে আমি এখন তাদেরও তার ভক্ত হয়ে গিয়েছি।
এসব কথা বলার মূল কারণ হচ্ছে,আমরা নানা কারণেই বিভিন্ন মানুষধারা ব্রেন ওয়াশের শিকার হই। তখন আমাদের এমন অবস্থা হয় যে আমরা ভালো-মন্দের ফারাক উপলব্ধি করতে পারি না। খুব অল্প কজন মানুষই আমার মত এই সীমানা ভেদ করে বের হতে পেরেছে। আসলে, কাউকে ঘৃণা করার জন্য নিজের যুক্তিযুক্ত কারণ বের করতে হবে। অন্য কারো কথায়, অন্য কারো প্ররোচনায়, আমরা যদি কোন ব্যক্তি, দেশ বা জাতিকে ঘৃণা করি সেটা হবে অন্ধের মত কাজ। আল্লাহ আমাদের বিবেক দিয়েছে, বুদ্ধি দিয়েছে, জ্ঞান দিয়েছে। এসব দিয়ে আমরা বিবেচনা করে আমাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেব। কাকে আমরা ভালোবাসবো এবং কাকে আমরা ঘৃণা করব।
অন্যের কথায় প্ররোচিত হয়ে কাউকে ভালোবাসা কিংবা ঘৃণা করা; এখানে আমাদের নিজস্ব স্বকীয়তা বলতে কিছু থাকে না। এই বাধা ডিঙিয়ে আমাদের সামনে এগোতে হবে। তবেই আমরা পৃথিবীর প্রকৃত সত্য এবং প্রকৃত সৌন্দর্য সঠিকভাবে উপভোগ করতে পারব।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit