তখন আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তেঁজগা কলেজে অনার্সে পড়ি। থাকতাম মোহাম্মদপুর। গ্রামের ছোট ভাই কামরুল, যে তখনই গায়ে-গতরে আমার চেয়ে বড় ছিল; কাওরান বাজার একটা অফিসে ছোটখাটো চাকরি করত। কামরুলের কাজ ছিল আরামের। প্রথম প্রথম প্রতি শুক্রবার সকালে আমার মেসের বাসায় আসত। ছয়তলায় থাকতাম, বাসায় লিফট ছিল না। এজন্য তারে বইলা দেয়া ছিল, তুই আসার সময় সিঙ্গারা নিয়া আইস। বিল ভাইয়ে দিয়া দিমুনে। তার আনা সিঙ্গারার বিল আমিই দিতাম। খাইতাম দুই ভাই মিলেই।
কামরুল সেই রাত থেকে পরদিন সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গার আগেই চলে যেত। কিছু মনে করতাম না। তার চাকরি আছে। সেটা আগে। আর আমার ঘুম ভাঙ্গায় বিদায় নিতে গেলে তারে ঠ্যাঙ্গাইতেও পারি। এভাবেই চলছিল। এক শুক্রবার কামরুল আসে নাই। আমি অবশ্য তাতে কিছু মনে করি নাই। না আসতেই পারে। এটা কোন বড় ইস্যু না।
পরের শুক্রবার কামরুল আমারে ফোন দিয়া কইল,
ভাই, বাড়িত্তে ফোন দিলে কইয়েন আমি আপনের কাছে আছি।
আমি জিগাইলাম,
তা কমুনে। কিন্তু তুই কই আসলে?
কামরুলের তখন ফেসবুকের কল্যাণে কিছু বন্ধু হইছে। সে তাগোর লগে হাতিরঝিল গেছে ঘুরবার জন্য। পরের শুক্রবারও তার দেখা নাই। মাসের শেষ শুক্রবার সে আইসা হাজির রীতিমতো। যাওয়ার টাইমে কিছু টাকাও নিয়া গেল। ছোট ভাইয়ের অধিকার আছে। নিতেই পারে।
এভাবেই চলতে লাগলো। মাঝেমধ্যে ওর বাড়ি থেকে কল আসে। আমিও দেদারসে মিথ্যা কথা বলি এমন, আরে আমি আর কামরুল তো এক লগে চা খাইতেছি। আদতে আমি জানিও না সে কোন ঝিলে ডুবাইতেছে। তাতে অবশ্য আমার অসুবিধা নাই। এসব নিয়া মাথা ঘামানোর সময় আমার কোন কালেই ছিলোনা।
এক শুক্রবার দেখি কামরুল ফটো আপলোড দিছে এমন ক্যাপশনে যে সে স্টার সিনেপ্লেক্সে যাইয়া নতুন আসা মুভিটা দেইখা আসছে। খুব খুশি হইলাম। নিজে জীবনেও সিনেপ্লেক্সের ছাঁয়ায় যাই না খরচের ভয়ে। কিন্তু ছোট ভাই একদম ভিতরে চইলা গেছে। পরের শুক্রবার দেখি একই কাণ্ড। কামরুল এইবার আরেকটা মুভি দেখতে গেছে। এইভাবে সে প্রতি শুক্রবারই সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখতে গেল। আমার এবার রাগ শুরু হইল।
পরের বৃহস্পতিবার রাইতেই তারে ফোন দিয়া জানাইলাম আমি চাই সে আগামীকাল সকালে আমার বাসায় থাকবে। রীতিমতো সে সকালে আসলো আর কারও সাথে গ্রুপ কলে মগ্ন হইয়া গেল। এহেন অবস্থায় ঘুম ভাইঙ্গা যাওয়ায় আমি বিরক্ত হইয়া গেলাম। কিন্তু অনেকদিন পর তারে দেইখা রাগ করতে পারলাম না। জানতে পারলাম সে তখন মাইরালা নামক ফেসবুক গ্রুপের মর্ডারেটর। একটু একটিভ থাকলে এডমিন হইতে পারবে। উৎসাহ দিলাম। তুই পারবি! কিন্তু আদতে সেটা কিসের এবং কেমন গ্রুপ তা জানতাম না।
সেদিনও কামরুল আগেকার মত আমার পিসিতে থাকা মুভি তার মোবাইলে নেয়া শুরু করল। আমারে জিগাইলো নতুন কয়েকটা মুভি আমার কাছে আছে কিনা? আমি কিছু সিলেক্টিভ মুভি দেখি বলে আমার কাছে ছিল না। বললাম,
সার্ভারে আছে। ডাউনলোড কইরা নে।
কামরুল তখন ইংরেজি টাইপিং-য়ে ততটা সিদ্ধহস্ত ছিলো না। বাধ্যহয়ে আমারই খুঁজে দিতে হইতেছে। কামরুল এমন এমন মুভির নাম বলতেছে যা আমি জানি সে গত মাসখানেক আগেই সিনেপ্লেক্সে দেখে এসেছে বন্ধুদের সাথে।
ঘটনাটা মনে পড়ায় তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে তারে ঝারলাম,
নবাব হইয়া গেছস? কয় টাকা বেতন পাস যে মাসে ২ হাজার টাকা খরচ কইরা তোর সিনেমা দেখা লাগবো সিনেপ্লেক্সে? ব্লা ব্লা ব্লা!
কামরুল এই কথা শুইনা অনেকক্ষণ হাসলো। আমার অবস্থা তখন সুপ্ত হয়ে থাকা আগ্নেয়গিরির জেগে ওঠার মত। পোলাডা কার কার লগে মিশে এত বেয়াদব হইয়া গেছে যে এমন একটা সিরিয়াস প্রশ্নে এমন ফ্যালফ্যালায়া হাসতেছে। আমার অবস্থা অনুমান কইরা সে থামলো আর আমারে উত্তর দিল। উত্তর শুইনা তাজ্জব হইয়া গেলাম। কামরুল কইল,
হুর ভাই! আমি কিয়ের প্রতি শুক্রবারে মুভি দেখতে যাই? আমার বাসার কাছে এডাতো জানেনই। প্রতি শুক্রবারে বন্ধুবান্ধব মিল্লা সেখানে ঘুরতে যাইয়া সামনে থাকা পোস্টারের সামনে দাঁড়াইয়া ছবি তুলি শুধু। ভাব এমন যে দেইখা আসছি। আসলে কিছুই না! একদম ফাও। শো-অফ করি ভাই। আমি মাইরালা গ্রুপের এডমিন না!
সেদিন শো-অফ সম্পর্কে অনেক কিছু শিখলাম। শো-অফ নিয়া নতুন কইরা ভাবনা শুরু করলাম। আসলেই তো! এক কালে মোহাম্মদপুরের যত বার্গার শপ ছিল, সবখানেই খাইসি কোনটার স্বাদ কেমন তা বুঝার জন্য। কোনদিন মাথায় আসে নাই একটা ছবি তুইলা আপলোড দেই। টুইটারের সাজি ভাই আর ফিরোজ ভাই যতবার বনানী স্টার কাবাবে ট্রিট দিছে ফাওফাও সেগুলার ছবিও কখনও তোলার প্রয়োজন মনে করিনি। কিন্তু এখন থেকে এসব তুলে রাখতে হবে। আপলোড দিতে হবে। আমি যদিও মাইরালা গ্রুপের এডমিন না!
পাঠক, কেমন লাগলো সত্য গল্পখানা তা জানালে কৃতজ্ঞ থাকবো। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, এই কামনা রইল।
|
|
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Walaikum Assalam
I really enjoyed your story too much It gives me a great fun.
Keep sharing more stories like this. Thank u for entertained us!!
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Thank you very much. I tried in this story to put some humour so people can enjoy it. So glad you liked it.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
🌟👍 ভাইয়া, সুন্দর ফোটো! 😊 মেঘলা-কলি-শিপারসের মতো বনানী স্টার কাবাবগুলোর ছবি আপলোড করতে হবে! 😄
ভাই, চমড়কে যতটা অন্দারে ঢুকানো সেখানেই গিয়েছি, কিন্তু ভুল থাকলেও আরবিগোলা-পৃথিবিগোলা! 😊
ধন্যবাদ, মনে রেখে ভাইয়া! 👍
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit