আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভাল আছেন। ফেব্রুয়ারি মাসে চলছে একুশে বইমেলা। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি পুরো মাসে আমি আমার বাংলা ব্লগে শুধুমাত্র বই নিয়ে লিখব। তারই ধারাবাহিকতায় আজ লেখব আমার ছোট বেলার প্রিয় একটি গল্প জোঁক নিয়ে।

জোঁক গল্পটি সর্বপ্রথম আমি পড়েছি সপ্তম শ্রেণীতে থাকতে। তখন আমাদের বাংলা পাঠ্য বইতে গল্পটি অন্তর্ভুক্ত ছিল। আবু ইসহাকের অনবদ্য হাত থেকে জন্ম হওয়া অনবদ্য গল্প হচ্ছে জোঁক। যে গল্পটি সেই বয়সেই আমার ছোট মাথায় সমাজ নিয়ে চিন্তা করার বিষয়ে ভাবাতে সার্থক হয়। অল্প বয়সেই আমাকে ভাবতে বাধ্য করে। পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন হতে সাহায্য করে।
পরবর্তীতে আবু ইসহাকের আরো বেশ কয়েকটি গল্প পড়েছি। যেখানে তিনি রূপক ভাবে সমাজের বিভিন্ন সমস্যা গল্পচ্ছলে তুলে ধরতেন। আবু ইসহাকের সবচেয়ে বড় শক্তি জায়গা হল, গল্পের মাধ্যমে সমাজের সমস্যাগুলো, সমাজের বিধ্যমান অন্যায়গুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারতেন। এ কারণেই তার গল্পগুলো আমার বেশি ভালো লাগতো। জোঁক গল্পটিও এর ব্যতিক্রম নয়।
ওসমান নামে এক দরিদ্র কৃষককে প্রধান উপজীব্য করে তিনি গল্পটি রচনা করেন। গল্পে দেখা যায়, দরিদ্র কৃষক ওসমান কোনরকমে খেয়ে না খেয়ে অর্ধভুক্ত থেকে জমিতে চাষ-বাস করেন। তার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হিসেবে জমিতে ভালো ফলন হয়। ফসল যখন তিনি ঘরে তুলে আনেন, তার পুরোটা তিনি ভোগ করতে পারেন না। কারণ জমিদার তিন ভাগের দুই ভাগই নিজের দখলে নিয়ে নেয়। কারণ হিসেবে জানতে পারেন, গত বছর তিনি নাকি কর্য নিয়েছিলেন। একই ভাবে অন্য আরও অনেক কৃষকই এই শোষণের শিকার হয়। শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, ওসমান এবং অন্যান্য কৃষকরা এর একটা বিহিত করার জন্য জমিদারকে আক্রমণ করার জন্য যায়।
লেখক এই গল্পে রূপক অর্থে বুঝিয়েছেন যারা মানুষকে ফাঁকি দিয়ে মানুষের অগোচরে তাদের রক্ত চুষে খায়। তাদের এই অন্যায়, অন্যায্য চাহিদার কাছে হার মানে সমাজের দুর্বল, নিপীড়িত, শোষিত মানুষরা। লেখক শেষ দিকে দারুন একটি সমাধানের রাস্তা দেখিয়েছেন। যেহেতু এই মানুষগুলোর এদিকে নেই ওদিকও নেই, তাই তাদের যে কোন একটি পথ অবলম্বন করতেই হবে। সে পথটি হবে জোঁকে উগড়ানোর পথ। মানুষ যখন এই অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে, তখনই অন্যায় দমিত হবে।
তার সব লেখাতেই এরকম সমস্যাকে তুলে ধরা, যারা সমস্যায় জর্জরিত হয় তাদের কথা তুলে ধরা, এবং সমস্যা সমাধানের রাস্তা তুলে ধরা হয়। এসব কারণেই তার লেখা আমার বেশ ভালো লাগে। বিশেষ করে জোঁক গল্পটি তার প্রথম লেখা যা আমি পড়েছিলাম। একারণে তার প্রতি অন্যরকম শ্রদ্ধা চলে আসে। আবু ইসহাক বাংলাদেশের গতানুগতিক লেখক থেকে ভিন্ন। তা তিনি বরাবরই প্রমাণ করেছেন।

Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit