আসসালামুওয়ালাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভালো আছেন। আজ আমি কথা বলব আমাদের দেশে সাহিত্যিক এবং পাঠকের সংখ্যা কম কেন সে বিষয়ে।
প্রাতিষ্ঠানিক বইয়ের পাশাপাশি সাহিত্যে আমার হাতেখড়ি হয়েছে আমার মায়ের কিনে দেওয়া ঠাকুরমার ঝুলি বইয়ের মাধ্যমে। আমার মা যে খুব শিক্ষিত ছিলেন এমন না। তিনি মাত্র ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। কিন্তু তিনি বই পড়তেন। বেশিরভাগই ছিল ধর্মীয় গ্রন্থ। মাঝে মাঝে কবিতার বই পড়তেন। তিনি আমাকে সর্বপ্রথম ঠাকুমার ঝুলি কিনে দিয়েছিলেন। এরপর বিভিন্ন ধরনের রূপকথা বই কিনে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমার মত বাংলাদেশের অন্যসব সন্তানরা সৌভাগ্যবান নয়। শিশুকালে হয়তো তাদের মায়েরা তাদেরকে এরকম ঠাকুরমার ঝুলি, রূপকথার বই কিনে দেয়নি। যার ফলে বড় হয়েও তারা সাহিত্যের বিশাল সমুদ্রের সাথে পরিচিত হতে পারেনি।
বর্তমান সময়ের অবস্থা তো আরো খারাপ। কেননা, এখনকার মায়েরা নিজেরাই বই পড়ে না। সারাক্ষণ মোবাইল, ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এজন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সাহিত্যে কতটা আগ্রহ দেখাবে তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। আমার বেশিরভাগ বন্ধুই প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ্যের বাহিরে হুমায়ূন আহমেদ এবং জাফর ইকবাল ছাড়া অন্য কোন সাহিত্যিকের নাম জানেনা। গুটিকয়েক যে কজন সাহিত্যিকের নাম জানে তার বেশির ভাগই তারা পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য জেনেছে। আবার যে কজন হুমায়ূন আহমেদের বই সম্পর্কে জানে তাদের বেশিরভাগই হিমু আর রূপা বাদে অন্য কোন চরিত্রের নাম জানেনা। কয়েকজন হয়তো মিছির আলির নাম বলতে পারবে। কিন্তু তাদের নাম জানা পর্যন্তই সার। কোন একটি উপন্যাসের ঘটনা তারা বলতে পারবে না।
এসবের মধ্যেও কিছু পাঠক আছে যারা হুমায়ূন আহমেদ কিংবা জাফর ইকবালের গল্পের বই পড়ে। কিন্তু প্রবন্ধ কোন গ্রন্থের কথা শুনলে তাদের যেন জ্বর চলে আসে। ফলে আমাদের দেশে তেমন রুচিশীল পাঠক খুব বেশি তৈরি হয়নি। আর যে দেশে ভালো মানের পাঠক নাই সে দেশে ভালো মানের লেখক হওয়ার কথাও না। যার কারণে আমরা এখন আর তেমন ভালো মানের লেখক পাই না। যে কজন আছে তারা আড়ালে আবডালেই থেকে গেছে। যার কারণে আমরা এখনো সেই আহমদ ছফা, সৈয়স ওয়ালীউল্লাহ, আবু ইসহাক, সৈয়দ মুজতবা আলী, জহির রায়হান, শহীদুল্লাহ কায়সার, মুনীর চৌধুরী কিংবা হুমায়ূন আহমেদের মত প্রয়াত লেখকদের সাহিত্যই এখনো পড়ছি। আমাদের মাঝে এখনো রকিব হাসান এবং নাজিম উদ্দিনরা রয়েছে। কিন্তু তাদের একজন শিশুতোষ সাহিত্য এবং একজন থ্রিলার সাহিত্য লেখে বলে তারা সর্ব মহলে ততটা প্রভাব বিস্তার করতে পারছে না। যার ফলে আমাদের সাহিত্য ভান্ডার স্থিমিত হয়ে গেছে। যার প্রভাব দেখা যায় বইমেলায়। কিছু কিছু লেখক হাইপ তৈরি করে কিন্তু তা ওই পর্যন্তই। সর্বশেষ একুশে বইমেলায় যে কয়টি বই বেস্ট সেলার তালিকায় ছিল তার অধিকাংশ লেখকই ঠিক সাহিত্যিক নয়।
সাহিত্য বিমুখ জাতি হিসেবে আমরা মানসিক প্রসারের দিক থেকে পঙ্গু হয়ে গেছি। যার প্রভাব আমাদের মূল্যবোধ এবং কমনসেন্সে পড়েছে। আমরা এমনিতেই কমনসেন্স হীন জাতি, তার ওপর এমন সাহিত্য বিমুখ, ফলে আমরা যেন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়ে বড় হচ্ছি। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তো আরো অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে। তারা এখনই কিছু অর্থব টিকটকারকে তাদের আইডল ভাবছে। তাতে আমার মনে হচ্ছে না তারা একটা সময় পাঠক হয়ে উঠবে। আগেই বলেছি যে দেশে পাঠক নেই সে দেশে লেখক ও থাকবে না। যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য খুবই ভয়াবহ।
একেবারে যথার্থ বলেছেন ভাই। দিনদিন মানুষ যেভাবে ইলেকট্রনিক ডিভাইস এর উপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে, এতে করে সামনে মনে হয় লেখকের সংখ্যা আরও কমে যাবে। যাইহোক দারুণ লিখেছেন ভাই। পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই এমন সহমর্মি মতামতের জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এটা সত্যি বেশ হতাশাজনক। বাচ্চারা তো দূরে থাক এখন প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষিত রাও সময় পেলে বই না পড়ে স্যোসাল মিডিয়া ঘাটাঘাটি করে। এখন আর আগের মতো বই উপহার দেওয়ার রীতিও নেই। এটা বেশ লজ্জাজনক। আর এমন দেশে কেউ লেখক হলে তো না খেয়ে মরবে হা হা। চমৎকার লিখেছেন আপনি। তবে এই ব্যাপার টা আমাদের জন্য লজ্জাজনক।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ঠিক বলেছেন। আগে আমাদের দেশে বই উপহার দেয়ার একটা প্রচলন ছিল। এখন আর সেটা নেই বললেই চলবে। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit