মৃত্যু বার্ষিকীতে মায়ের স্মৃতিচারণা।steemCreated with Sketch.

in hive-129948 •  6 days ago 

আসসালামুয়ালাইকুম। আজ গ্রেগরীয় পত্রিকা অনুযায়ী জুন মাসের ২৮ তারিখ। ২০০৭ সালের আজকের এই দিনে আমার মা ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাবেক পিজি হাসতাপাল) ডি-ব্লকের কোন এক রুমে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। আমার মা দীর্ঘদিন যাবৎ অনিরাময়যোগ্য লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত ছিলেন। প্রায়শই ঢাকায় এসে ডাক্তার দেখানো লাগত। এজন্য যাতায়ত সুবিধা এবং আমাদের পড়াশোনার কথা ভেবে আমার প্রবাসী বাবা আমাদেরকে নিয়ে মিরপুর চলে আসে। তখন আমার বয়স ছিল সাড়ে এগারো আর আমার বোনের বয়স ছিল নয়।

Mother and baby.jpg

Photo by Pixabay from Pexel.

আমার মা ছিল খুবই আধুনিকমনা। উনি স্কুলে গিয়েছিলেন, এটা জানি। তবে ক্লাস ফাইভ পাশ করেছেন বলে জানিনা। কিন্তু তিনি চিঠি লিখতে পারতেন। উনার জন্মদিন কবে তা উনার অজানা থাকলেও আমার ও আমার বোনের জন্মদিন তিনি লিখে রেখেছিলেন। আমার বাবা-মায়ের ম্যারেজ-ডে, আমার দাদার মৃত্যু দিবস, সব কিছুই তিনি টুকে রেখেছেন। আমার নিজের জন্মদিন নিয়ে যেটুকু এক্সাইটমেন্ট কাজ করে তার কারন হল, এটা আমার মা টুকে রেখেছিল। এজন্য, স্কুলে রেজিস্ট্রেশন করার সময় অনেকেই বয়স বদল করলেও আমি তা করতে সবসময় অস্বীকার করেছি।

আমার মায়ের বই পড়ার অভ্যাস ছিল। ইতিহাস নির্ভর বই তিনি পড়তেন আর রাতে ঘুমানোর সময় সেসব গল্প আমাদের শুনাতেন। বেশিরভাগ নবী-রাসুলের জীবন সম্পর্কে আমরা মায়ের কাছ থেকেই জেনেছি। অনেক মনীষী সম্পর্কে তিনি আমাদের বলেছেন। ছোটবেলায়, আমার হাতে তিনি ঠাকুমার ঝুলি তুলে দিয়েছিলেন বলেই আজ আমার মধ্যে পড়ার অভ্যাস রয়েছে।

আমার মায়ের প্রিয় সঙ্গীত শিল্পি ছিল এন্ড্র কিশোর। সেকালে চাচা-মামারা ব্যান্ডের গান শুনতো বিধায় আমারও প্রিয় তালিকায় ছিল বিল্পব, জেমস, আসিফ আকবরদের নাম। কিন্তু এই বেলায় এসে যখন এন্ড্র কিশোরের গান শুনি, বুঝতে পারি কতটা উন্নত রুচি ছিল আমার মায়ের। যেখানে সবার পছন্দ ছিল সালমান শাহ, জসিম না হয় তরুণ মাসুদ পারভেজ রুবেল; সেখানে আমার মা পছন্দ করত আলমগীরকে। বড় হওয়ার পর বুঝতে পারি, আলমগীর তার প্রতিটা সিনেমাতেই নিজেকে মার্জিত, স্মার্ট, হ্যান্ডসাম হিসাবে প্রেজেন্ট করেছেন। যেখানে উল্লেখিত নায়কদের মধ্যে এই বিষয়টার উপস্থিত কম ছিল।

মাকে হারানোর বেদনা বিশাল রকমের। যার হারায়নি সে কখনও তা টের পাবেনা। আমার বাবা অবশ্য আমাদের জন্য আরেকজন মা এনেছে। তিনিও যথেষ্ট ভালো। কিন্তু, তবুও মাঝেমধ্যে মনে পড়ে যায়, আমার মা নেই। এজন্য সবকিছুতে আমার অধিকারও নেই। এই অনুভূতিটা বেশ ভারী। কিশোর বয়সে যখন মায়ের সবচেয়ে প্রয়োজন ছিল, সে সময়টা একা একা কাটাতে হয়েছে আমাদের। কিন্তু, তার অনুপস্থিতি পৃথিবীর অমানবিকতাকে বুঝতে শিখিয়েছে বেশ ভালো ভাবেই। পৃথিবীতে মায়ের মত যে কেউ আপন নয়, তা বেশ ভালো করেই বুঝে গিয়েছি আমি আর আমার বোন দুইজনই। এজন্য আমরা কেউই খুব সহজে হতাশ হই না, দুঃখ করিনা। মানসিক ভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী হয়েছি আমরা।

আমাদের পরিবারে দিবস পালন নিয়ে কারও আগ্রহ নেই। তবে, আমি দিনটাকে পালন করি নিরবে। দূরে থাকলেও চেষ্টা করি মায়ের কবর জিয়ারত করতে। উনার নামে কিছু দান-সদকা করি। সামর্থ্য থাকলে অনাহারীকে খাওয়ানোর চেষ্টা করি। মায়ের জন্য দোয়া করি। আপনারা অবশ্যই আপনাদের মায়ের সাথে সুন্দর আচরণ করবেন। একবার হারালে বুঝতে পারবেন কি হারিয়েছেন। ভালো থাকুক পৃথিবীর সব মা।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আপনার পোস্ট টি পড়তে গিয়ে চোখের কোণে জল চলে এসেছে ভাইয়া।মা থাকলে আমরা সত্যি তার মর্যাদা বুঝতে পারি না একবার হারিয়ে গেলে বোঝা যায় পৃথিবী টা কতো কঠিন পৃথিবীর মানুষ গুলো কতোটা নিষ্ঠুর। যারা মা হারিয়েছে তারাই বোঝে এর মর্ম।আন্টি স্বর্গ লাভ করেছেন তিনি যেন সেখানে উপযুক্ত মর্যদা লাভ করেন সেই কামনা করছি।ধন্যবাদ ভাইয়া আবেগঘন পোস্ট টি আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য।

ধন্যবাদ দিদি আপনার সহানুভূতিশীল মন্তব্যের জন্য।