আসসালামুয়ালাইকুম। আমি @sabbirakib এবং আমার বাংলা ব্লগে আমি ফার্মেসি বা ঔষধ ব্যবসার যাবতীয় বিষয় নিয়ে একটি সিরিজ লেখার আগ্রহ প্রকাশ করছি। আজকে তার প্রথম পর্ব লিখছি। আপনি যদি ফার্মেসি ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চান কিংবা মেডিসিনের গোমর নিয়ে আগ্রহ থাকে, তবে এই লেখাগুলো আপনার জন্য।
ফার্মেসির ধরণ
ফার্মেসি ব্যবসা সম্পর্কে জানতে হলে সবার আগে আমাদেরকে ফার্মেসির ধরণ সম্পর্কে সুষ্পষ্ট ধারণা থাকবে হবে। মোটাদাগে ফার্মেসিকে তিন ভাবে বিভক্ত করা যায়।
- পাইকারি।
- খুচরা এবং পাইকারি সংমিশ্রণ।
- খুচরা।
পাইকারি
যেকোন মানু্ষ মাত্রই পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসার পার্থক্য বুঝতে পারেন। কিন্তু ব্যবসাটা যেহেতু মেডিসিনের; এখানে একটু জটিলতা আছেই। একজন পাইকারি বা হোলসেলার ফার্মেসি কেবল খুচরা বিক্রেতাদের কাছেই মেডিসিন বিক্রি করে থাকেন। সচরাচর এই ধরণের ব্যবসায়ীরা সাধারণ ক্রেতার কাছে ঔষধ বিক্রি করেন না। যেটুকু করেন, তা খুবই যৎসামান্য। হিসাবটা এমন, তিনি যদি প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকার পাইকারি ঔষধ বিক্রি করে থাকেন, তবে খুচরা বিক্রির পরিমাণ থাকে ১০ হাজার। শতকরা হিসাবে এই সংখ্যাটা খুবই নগণ্য। কিন্তু একজন খুচরা বিক্রেতার কাছে সংখ্যাটা আবার অনেক বড়।
পাইকারি ব্যবসাটা খুবই এডভান্স লেভেলের বাণিজ্য। প্রচুর অর্থের পাশাপাশি এখানে দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। যদি আপনার ন্যূনতম ২০ বছরের অভিজ্ঞতা না থাকে তবে এসবের চিন্তা না করাই ভালো। একজন পাইকারের যেমন প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয়, তেমনি তিনি যে এরিয়ায় ব্যবসা করতে চাচ্ছেন সে এলাকা সম্পর্কেও তার পর্যাপ্ত ধারণা থাকতে হয়। যেমনঃ কোন পেশার, শ্রেণির মানুষ সেখানে বাস করে? ডাক্তাররা কোন ধরণের মেডিসিন বেশি প্রেসক্রাইব করে? Over The Counter বা OTC প্রোডাক্ট কোনগুলো এসব সম্পর্কে প্রচুর জ্ঞান থাকতে হয়। তাছাড়া, মেডিসিনের কেনার সময় সর্বোচ্চ লাভে কিনতে হয়। কারন, পাইকারি বিক্রেতাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তার খুচরা বিক্রেতা কাস্টমারদের নিকট সবচেয়ে ভালো রেটে মেডিসিন বিক্রি করা। যে যত কম রেট দিবে, তার সেল তত বেশি হবে। একজন জেনুইন পাইকার প্রতিদিন ন্যূনতম ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকার মেডিসিন বিক্রির টার্গেট নিয়ে থাকেন। এসব ফার্মেসির জন্য আপনার কমপক্ষে ২-৩ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে।
খুচরা ও পাইকারি মিশ্রণ
আমার মতে এগুলো হচ্ছে আদর্শ ফার্মেসি। ছোট গণ্ডিতে উনারা কিছু পাইকারি মেডিসিন বিক্রির পাশাপাশি খুচরা মেডিসিন বিক্রি করে থাকে। খুচরা বিক্রিই উনাদের প্রধান ফোকাস থাকে। সাথে টুকটাক পাইকারি বিক্রি তাদের জন্য উপরি পাওনা। এদের বাণিজ্যর মূল ভিত্তি হচ্ছে প্রেসক্রিপশন। এজন্য এসব ফার্মেসিতে সকল প্রকার মেডিসিনেরই জোগান থাকে। চাহিদা অনুযায়ী কোন মেডিসিন বেশি, কোন মেডিসিন কম। এখানে স্বল্প পরিসরে জোগান থাকে। প্রতিদিনই মেডিসিন কোম্পানি থেকে ক্রয় এবং কাস্টমারদের কাছে বিক্রয় চলতেই থাকে। স্থানভেদে এমন ধরণের একটি দোকানে প্রতিদিন ৫০ হাজার থেকে ৫ লক্ষ টাকা বিক্রির টার্গেট থাকে। ৫০ লক্ষ টাকা মূলধন থাকলে এমন একটি ফার্মেসি দেয়া যেতে পারে।
খুচরা
দুই ধরণের খুচরা ফার্মেসি রয়েছে।
প্রেসক্রিপশন ও ট্রিটমেন্ট
এসব ফার্মেসি মূলত একই সাথে প্রেসক্রিপশন ও ট্রিটমেন্ট; দুটি বিষয়ের উপরেই নজর দিয়ে থাকে। একজন রোগী কিংবা কাস্টমারকে সার্ভিস দেয়ার দিক থেকে এরা সবচেয়ে ভালো। এসব ফার্মেসির কিছু নির্ধারিত কাস্টমার থাকা যারা সবসময় এখান থেকে ঔষধ নিয়ে থাকে। এছাড়া, রোগীদেরকে সেবা বা ট্রিটমেন্টও দেয়া হয় এখান থেকে। প্রতিদিন স্থান অনুযায়ী ২০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা বিক্রির টার্গেট থাকে এখানে। মোটামুটি ১০ লক্ষ টাকা মূলধন থাকলেই এমন একটি ফার্মেসি কেউ দিতে পারে।
ট্রিটমেন্ট
সর্বোচ্চ লাভবান ফার্মেসি হচ্ছে যেসব ফার্মেসিগুলো কেবল ট্রিটমেন্টের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে। এখানে আপনি যাবতীয় খরচ বাদে কেবল ১ লক্ষ টাকা মূলধন থাকলেই এমন একটি ফার্মেসি দিতে পারবেন। কিন্তু এখানে আপনার ট্রিটমেন্ট বিষয়ে ব্যপক অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অন্যথায় আপনি টিকতে পারবেন না। নিজের চাহিদা অনুযায়ী কোম্পানির সাথে নানারকমের চুক্তি করা থাকে বলে এধরণের ফার্মেসিগুলো তুলনামূলক কম বিক্রি করেও সমান প্রফিট করতে পারে একটি প্রেসক্রিপশন ও ট্রিটমেন্ট ক্যাটাগরির মত ফার্মেসির।
আজকের পর্ব এপর্যন্তই। আগামী পর্ব লেখা সম্পূর্ণ হলে এখানে লিংক দেয়া থাকবে। আগামী পর্বে আমি আলোচনা করব খুচরা ব্যবসা টার্গেট করা ফার্মেসিগুলোর আরও বিস্তারিত বিষয় নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ্য থাকবেন এই কামনা রইল।
নিজের সম্পর্কে |
আমি মুহাম্মাদ সাব্বির আকিব। ডাকনাম আকিব। পেশায় একজন ফার্মাসিস্ট। রসায়ন বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স সম্পন্ন করেছি। এরপর মনেহলো আর প্রয়োজন নেই। যার জন্য আর পড়াশুনা করিনি। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর এবং এজন্য একটা গর্ব কাজ করে। থাকি রাজধানী ঢাকা জেলার সাভার উপজেলারত আশুলিয়া থানাধীন দক্ষিণ গাজীরচট নামক স্থানে। |
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit