পর্দার নাটকের জনপ্রিয়তা থাকলেও থিয়েটার এবং বইয়ের নাটকে মনযোগ নেই।

in hive-129948 •  12 days ago 

আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভাল আছেন। ফেব্রুয়ারি মাসে চলছে একুশে বইমেলা। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি পুরো মাসে আমি আমার বাংলা ব্লগে শুধুমাত্র বই নিয়ে লিখব। তারই ধারাবাহিকতায় আজ লেখব বাংলা নাটক নিয়ে।


books-2463779_1280.jpg

Image by Ahmad Ardity from Pixabay


আমি একটি বিষয় খেয়াল করেছি। গত কয়েক বছর ধরে, বলা ভালো কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের নতুন কোন নাটক রচনা হয়েছে বলে শুনিনি। হ্যাঁ হয়েছে, তবে সেটা সাহিত্য অঙ্গনে নয়। সাহিত্যের অন্যতম প্রধান এবং প্রাচীন একটি ধারা বাংলাদেশে এখন আর সৃষ্টি হচ্ছে না, এটা ভেবে আমি বেশ হয়রান। অবশ্য হবেই বা কিভাবে? নাটকের যে পাঠক নেই। আমাদের এখন এমন একটি দশা হয়েছে, নাটক পড়ার চেয়ে মানুষ দেখতে ভালোবাসে। সেটা আবার থিয়েটারে নয়, টিভির পর্দায়। আরো একটা বড় কারন হচ্ছে নাটক বুঝতে না পারা।

ছোটবেলায় সর্বপ্রথম নাটক পড়েছিলাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের খ্যাতির বিড়ম্বনা। ঠিক কোন ক্লাসে মনে নেই, তবে প্রাইমারি লেভেলের কোন একটি ক্লাসে নাটকটি আমাদের বইতে সংক্ষিপ্ত আকারে উল্লেখ করা ছিল। সেই বয়সে নাটকের কিছুই বুঝিনি। বড় হয়ে একবার পড়েছিলাম এবং খুব মজা পেয়েছিলাম নাটকটির রসাত্মকতার কারণে।

বলা বাহুল্য, এরপর আর মাত্র দুটি নাটক পড়েছিলাম আমি। দুটিই আমাদের পাঠ্য বইয়ের কল্যাণে। একটি হচ্ছে মুনির চৌধুরীর কবর, অন্যটির নাম আমার মনে নেই। তবে সেটার নায়ক ছিলেন ইব্রাহিম কার্দি নামের একজন। যে ছিলো মুসলমান, এবং মারাঠা সেনাপতি। আমার মত একজন পাঠক, যে মূলত প্রায় সব রকমের বই গিলতেই অভ্যস্ত; সেই আমিও নাটকের প্রতি খুব একটা আকর্ষণ বোধ করিনা।

স্বাভাবিকভাবেই নাটকের পাঠক খুব কম। যার কারণে বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনে নাট্যকার আর জন্মায়নি। আগেকার সময়ে যারা নাটক লিখেছেন, হিসেব করলে দেখা যায়, তাদের সারা জীবনে নাট্যকর্ম মাত্র ওই একটি। তাদের বেশিরভাগই ছিল উপন্যাস, গল্পগ্রন্থ কিংবা কবিতার বই। পাঠক না থাকলে কি আর পাঠ রচনা চলে? এসব কারণে বাংলা নাটকের ক্ষেত্রে দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পন আর মীর মোশাররফের জমিদার দর্পন নাম জানা পর্যন্তই সার। কখনো সেগুলো আমি নিজেও পড়ার চেষ্টা করিনি, খুঁজিওনি।

কিন্তু চোখে দেখা নাটক এবং বইয়ের নাটক- এ দুটির মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। চোখে দেখা নাটকে অনেক কিছুই আমাদের দৃষ্টির অগোচরে চলে যায়। যেমন ধরুন, নাটকে যেমনটা লেখা থাকে, ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকবে একটি শান বাঁধানো পুকুর ঘাট। যেই পুকুরে ঘাটে একজন তার বিড়ালটিকে পাশে বসিয়ে আকাশ দেখছে। এই বিষয়টি যখন আমরা পড়বো তখন আমরা উপলব্ধি করতে পারব পিছনে এমন কিছু একটা ঘটছে। কিন্তু যখন আমরা তা রঙিন পর্দায় দেখব, হয়তো এই বিষয়টি আমরা খেয়ালই করতে পারবনা। এ কারণে, নাটকে যেভাবে প্রতিটি তথ্য উপস্থাপন করা হয়ে থাকে, সেটা পর্দার নাটকে হয়তো উপেক্ষিত থাকে অথবা দর্শক সেটা উপেক্ষা করে যেটা পাঠকের ক্ষেত্রে হয়না।

এখন আর পড়ার তেমন সুযোগ পাই না। সুযোগ পেলেও হয়তো কোন বিশ্লেষণ ধর্মী লেখাপড়ব না হয় কোন উপন্যাস। নাটক হয়তো পড়ব না। তবুও চাই নাটক চর্চা বাড়ুক। থিয়েটারে নাটকের প্রদর্শন বাড়ুক।


IMG_5055.jpg

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
az_recorder_20250210_212726.jpgaz_recorder_20250210_212648.jpgaz_recorder_20250210_212557.jpgaz_recorder_20250210_212424.jpg
Twitter PromotionCMC PromotionDEXScreen Vote#CoinGem# Vote

আপনি ঠিক বলেছেন ভাই, এখন আর কেউ বইয়ের নাটকে মনযোগ দেয় না । সবাই এখন পর্দার নাটকের জনপ্রিয়তা নিয়ে বেশ ব্যস্ত। আসলে বলা যায় যে সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে। বইয়ের নাটকের প্রতি এখন এক ধরনের অবহেলা চলে এসেছে। ধন্যবাদ আপনাকে ভাই পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

আপনাকেও ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য