অপেক্ষার প্রহর।|| 10% Beneficiaries @shy-fox ||

in hive-129948 •  3 years ago 

সবার সুস্থতা ও ভালো থাকা কামনা করার সাথে শুরু করছি আজকের গল্পটি।সবার সঙ্গেই থাকবেন কিন্তু।


আজ @amarbanglablog কমিউনিটিতে আমি নিজের লেখা একটি গল্প আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি।আশা করতে পারি আপনাদের মন্দ লাগবেনা।


|গল্প|⏳অপেক্ষার প্রহর⏳


IMG_20211024_193158.jpg


আমার আর সুমনার প্রেম প্রায় ক্লাশ ৮ থেকে।যেদিন আমি তাকে প্রেম পত্র দিয়েছিলাম সেদিনকার কথা খুব মনে পড়ে।সেদিন সে লাল টুকটুকে একটা জামা পড়েছিলো।হয়তো সেদিনকার সেই সৌন্দর্য আমি এখনো ভুলতে পারিনা।সেও সেদিন খুব সহজেই আমাকে গ্রহণ করেছিলো।এরপর থেকে একসাথে স্কুল,কলেজ,ভার্সিটি পার করলাম।আমাদের প্রেমটা আর দশটা প্রেমের মতো সাধারণ ছিলোনা,একটি অসাধারণ ই ছিলো।কারণ,আমাদের সম্পর্কে আর দশটা প্রেমের মতো নিয়ম করে গিফট দিতে হতোনা,নিয়ম করে ভেলেন্টাইন ডে পালন করতে হতোনা।সুমনা খুব ম্যাচুউর ছিলো।খুব বেশি,আমার অগোছালো জীবনকে সে খুব করে গুছিয়ে রাখতো।আমাদের প্রেম এতোটাই গভীর ছিলো যে আমাদের দুই পরিবার ও মানতে বাধ্য হয়েছিলো। এরপর যখন প্রেমের প্রায় আট বছর তখন আমরা খুব তোড়জোড়ের সাথেই বিয়ে করি।ছোট ঘরে আমার বিশাল পরিমাণের সুখ ছিলো।সে তখন ভার্সিটির স্টুডেন্ট এবং আমার ঘরের গিন্নিমা আর আমি চাকরিজীবি কর্তা।কর্তা আমি হলেও ঘরে কতৃত্ব চলতো আমার গিন্নীর।এক্কেবারে পান থেকে চুনটিও খসতে পারবেনা আমার খেয়াল রাখাতে।ঘরের কাজের মেয়েটা আমার লাল শার্টের সাথে সাদা শার্ট ভিজাতে দিলে বা সন্ধ্যে ছটার বদলে আমাকে সাতটায় চা দিলেও একেবারে শোরগোল ফেলে দিতো ঘরে আমার গিন্নি।আমি তার এই পাগলামো থামাতে গেলে বলতাম আমার মরলে তখন করবে কি!আর সেও গাল ফুলিয়ে বলতো " বালাইষাট!! এ কেমন কথা!এসব যদি আর বলেছো তাহলে আমি আর কক্ষনো তোমার মুখ দেখবোনা, একেবারে বাপের বাড়ি চলে যাবো।আর এসব বলে লাভ নেই গো,তোমার আগে আমিই যাচ্ছি! দেখে নিও তুমি।" এরপর আমি পরম আদরে জড়িয়ে ধরলেই সে সব রাগ নিমিষেই ভুলে যেতো।এভাবে আমাদের সংসারের যখন প্রায় ছয় কি নয় মাস তখন সে আমাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখের খবরটা দিয়েছিলো।আমি অফিস থেকে ফিরতেই গলা জড়িয়ে বললো," জানো!তুমি না বাবা হতে চলেছো। " আমি সেদিনটায় কেমন খুশি হয়েছিলাম তা এখনো ভাবতে পারি না।এরপর থেকে তার খুব খেয়াল রাখতে শুরু করলাম।সে প্রায় বলতো আমি চলে গেলে আমার বাচ্চাটাকে দেখো কিন্তু আমি তখন খুব বকতাম তাকে আর সে মিটমিট করে হাসতো।সে প্রায় বলতো তার পেট ব্যথা করছে আমি ডাক্তারের কাছে যেতে বললেই বলতো মাত্র তো দেড় মাস,কিছুদিন পর থেকেই যাবো।আমিও এতো পারদর্শী ছিলাম না আর অন্যদিকে আমাদেএ বাবামা ও আমাদের কাছ থেকে অনেক দূরে গ্রামে থাকে,সুমনার বাবামা ও তাই।তো একদিন রাতে আমরা ডিনার করতে বের হই হঠাৎ তার প্রচন্ড বমি শুরু হয়। আমি তখন এতোকিছু বুঝিনা ভাবতেই পারিনি আমার সামনে খুব খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে।তাকে নিয়ে দৌড়ে হাসপাতালে গেলাম। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, চিকিৎসা,কাটাছেড়াঁর বল ডাক্তার বললো," মিস্টার অভি আপনার ওয়াইফ তো প্রেগন্যান্ট ছিলোই না!তার পেটে অনেক বড় মাপের একটি টিউমার হয়েছিলো আর সেটার কারণে আপনাদের মিস অান্ডার্সটেন্ড হয়েছে যে রুগী প্রেগন্যান্ট। " এরপর অনেক ফর্মালিটিস পূরণ করার পর যখন টিউমারটির অপারেশন করতে গেলো তখনই সুমনা আমাকে ছেড়ে চলে যায়।ভালোই হয়েছে চলে গেলো,খুব কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা।

আমার বয়স এখন প্রায় ৬০ এর কাছাকাছি, একটা বন্ধুদের আড্ডায় গল্পটা বলছিলাম।সবাই চুপ করে শুনছিলো, শুধু একটা ক্ষীণ শব্দ হচ্ছিলো, আমার কান্নাচেপে ঢোক গেলার অসম্ভব একটা প্রয়াশ!!তাও,চেষ্টা করেই যাচ্ছিলাম কারণ, পুরুষমানুষের তো আবার কাঁদতে নেই যে।

এখন আমার চুলে হাল্কা পাক ধরেছে।চোখেও একটু ঝাপসা দেখি। কিন্তু কাজ থেকে ফেরার সময় নিয়ম করে আস্তে আস্তে হেটে বাড়ির পাশের কবরটায় ফুল দিয়ে আসি।এরপর রাতের জন্য চুলায় ভাত চড়াই।একাই থাকি, কারণ এখনো তো অপেক্ষার প্রহর গুণছি আমি!!সুমনা ফিরে আসার নয়,সুমনার কাছে যাওয়ার অপেক্ষার প্রহর........


                                                    -  শাহাদাত হোসেন।
Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

অনেক ভালো লেগেছে আপনার নিজের হাতের লেখা এই গল্পটি ।

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

আপনি অনেক সুন্দর ভাবে যত্ন সহকারে আপনার নিজ হাতে লেখা গল্পটি আমাদের সাথে উপস্থাপনা করেছেন। তাই আমার পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। ধন্যবাদ আপনাকে।

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

আপনার জীবনের গল্প টি অনেক সুন্দর ও অনেক ভালো হয়েছে।
ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর করে লেখার জন্য।

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

আপনার গল্পটি সুন্দর লিখেছেন ।তবে শেষটা কিছুটা মর্মান্তিক।খারাপ লাগলো।ধন্যবাদ আপনাকে।

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

অনেক ভালো লাগলো আপনার নিজের হাতের এই গল্পটি পড়ে।

শুভকামনা

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।