শুধু তোমাকেই ভালোবাসবো' গল্পের ত্রয়োদশ পর্ব

in hive-129948 •  2 days ago 

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে 'শুধু তোমাকেই ভালোবাসবো' গল্পের ত্রয়োদশ পর্বটি উপস্থাপন করছি। আশা করি, আপনাদের সবার ভালো লাগবে। তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।



pexels-cottonbro-3692609.jpg
সোর্স


সুইটি কাছে আসতেই রাতুল তাকে বলে, তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে? সুইটি বলে, কি এমন কথা বলো আমি শুনছি। রাতুল অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর সুইটিকে বলে, আমি তোমাকে বিবাহ করতে চাই। কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে সুইটি নিস্তব্ধ হয়ে যায়। কারণ সুইটি কোনদিনও ভাবতে পারেনি রাতুল তাকে এমন একটি কথা বলবে। রাতুল বলে, তুমি কিছু বলছো না তুমি কি আমার প্রস্তাবে রাজি না?সুইটি বলে তুমি কি সত্যিই আমাকে বিবাহ করতে চাও না আমার সাথে মজা করছো? রাতুল বলে,আমি সত্যিই তোমাকে বিবাহ করতে চাই সারাটা জীবন তোমার সঙ্গে থাকতে চাই। তুমি আমাকে বল তুমি কি আমাকে বিবাহ করতে রাজি আছো? সুইটি বলে আমি তো সেই কবে থেকে বসে আছি তোমার মুখে এই কথাটা শোনার জন্য। আমি রাজি তোমার এই প্রস্তাবে কিন্তু আমার একটি কথা আছে এই কথা তোমাকে রাখতে হবে। যদি তুমি আমার এই কথাটি রাখতে পারো তাহলে আমি তোমাকে বিবাহ করতে রাজি আছি। আর যদি তুমি আমার এই কথাটা না রাখো তাহলে আমি তোমাকে বিবাহ করতে পারব না। রাতুল বলে, কি এমন কথা তুমি বলতে চাও আমাকে যে কথা না রাখলে তুমি আমাকে বিবাহ করবে না। আচ্ছা সুইটি ঠিক আছে আমি অবশ্যই তোমার সেই কথাটি রাখবো তুমি বলো কি এমন কথা। তখন সুইটি রাতুলকে বলে, আমাদের বিবাহের পর আমরা কোন সন্তান নিব না। যদি তুমি আমার এই প্রস্তাবে রাজি থাকো তাহলে আমি তোমাকে বিবাহ করতে রাজি আছি। রাতুল বলে, এ তুমি কেমন কথা রাখতে বললে আমাকে। আমরা যদি সন্তান না নেই তাহলে আমাদের উত্তরাধিকার কে হবে? তখন সুইটি বলে, উত্তরাধিকার হবে ফাতেমা। রাতুল বলে, এ তুমি কি বলছো তুমি যা বলছ ভেবে চিন্তে বলছো তো। সুইটি বলে,আমি যা বলছি সব কিছু ভেবে চিন্তে বলছি। তোমার কি মনে নাই সুলতানা মৃত্যুর সময় বলেছিল ফাতেমা কে দেখে শুনে রাখতে,তাকে মানুষের মত মানুষ করতে, সে কথা কি তুমি কি ভুলে গেছো।


রাতুল বলে, সুলতানার কথা আমি ভুলিনি আমি তাকে কথা দিয়েছিলাম ফাতেমাকে আমি মানুষের মতো মানুষ করব। তখন সুইটি বলে, রাতুল তুমি একবার ভেবে দেখো আমরা সন্তান নিলে ফাতেমার প্রতি ভালোবাসা আমাদের কমে যাবে। আমি চাই ফাতেমাকে আমরা আমাদের মেয়ের মতোই মানুষ করব সে আমাদের পরিচয় বাজবে। আমরা দুজন ওর মা বাবা হব। রাতুল বলে, সুইটি তুমি যে ত্যাগ স্বীকার করলে এখন কার সময় এত বড় ত্যাগ কেহ স্বীকার করে না। কিন্তু তুমি আরো একবার ভেবে দেখো তুমি যে ত্যাগ যার জন্য করছো সে যদি তোমাকে মেনে না নেয়। তোমাকে যদি মায়ের জায়গাতে আসুন না দেয়। তখন কি করবে? পারবে তো তখন সে আঘাতটা সহ্য করতে? তখন সুইটি বলে, আমার কোন আপত্তি নেই আমি সব সহ্য করে নিব। আমি ওকে খুব ভালোবাসি আমি ওকে নিজের মেয়ের মতন মানুষ করব। রাতুল বলে, তুমি হয়তো একটা কথা ভুলে যাচ্ছ, কি সেই কথা? রাতুল তখন বলে, ফাতেমা জন্মসূত্রে মুসলমান আর আমরা হিন্দু। তুমি একবার ভেবে দেখো তাকে তুমি কি পরিচয় দিয়ে মানুষ করবে? তার ধর্ম পরিবর্তন করলে সেটা মহা পাপ হবে আর যখন ফাতেমা বড় হয়ে তার সত্যিটা জানতে পারবে তখন কি হবে ভেবে দেখেছো? কি বলবে তখন তাকে? সুইটি বলে, আমি জানি ও মুসলমান ঘরের মেয়ে। আমি তাকে কোনদিন তার ধর্ম পরিবর্তন করবো না সে তার ধর্মকে নিয়ে বড় হয়ে উঠবে। ফাতেমা যদি আমাকে মা না বলে ডাকে তবুও আমি তাকে সারাটি জীবন নিজের মেয়ে মনে করব। রাতুল কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর বলে, জানিনা পরবর্তীতে কি হবে আমি তোমার কথায় রাজি আমিও তাকে নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসবো। ঈশ্বর আমাদের জীবনে যা লিখে রেখেছে সেটা না হয় মেনে নিব। আমি ফাতেমার জীবনে কোন ঝড় আসতে দেবো না ওকে সব সময় বাবার স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে সারাটা জীবন আগলে রাখবো।


এরপরে সুইটি এবং রাতুল বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হয়। সেদিনের পর থেকে তারা তাদের নতুন জীবন শুরু করে। সুইটি তার জব ছেড়ে দেয় সে এখন সব সময় ফাতেমার খেয়াল রাখে এবং সংসার পরিচালনা করে। ফাতেমা সুইটিকে পেয়ে সে তার মায়ের কথা অনেকটাই ভুলে যায় সব সময় সুইটির সঙ্গেই সুন্দর একটি সময় কাটায়। সুইটি ফাতেমাকে সব সময় মেয়ের মত আগলে রাখে। সুইটির একদিন হঠাৎ করে প্রচন্ড জ্বর হয়। তখন সুইটি সারারাত ফাতেমাকে জলপটি দিতে থাকে। জল পটি দিতে দিতে মাঝরাতে ফাতেমার শরীরের জ্বর কমতে থাকে। সুইটি তখন ফাতেমার পাশে বসে মাথায় হাত রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল হতেই ফাতেমা দেখে সুইটি তার মাথার পাশে তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। ফাতেমা সুইটিকে আন্টি বলে ডাক দেয়। ফাতেমার ডাক শুনে সুইটির ঘুম ভেঙে যায়। সুইটি ফাতেমাকে বলে, কি হয়েছে খুকু তোমার কিছু লাগবে? কিছু হয়নি তোমার রাতে সামান্য জ্বর এসেছিল এখন ঠিক হয়ে গেছে। ফাতেমা বলে, আন্টি তুমি সারারাত আমার কাছে ছিলে? সুইটি বলে, হ্যাঁ খুকু আমি তোমার পাশেই ছিলাম। ফাতেমা বলে, জানো আন্টি তুমি যখন আমার মাথায় জল পটি দিচ্ছিলে তখন আমার মনে হচ্ছিল আমার মা আমার মাথায় জল পটি দিচ্ছে। তুমি আমার জন্য সারারাত জেগে রয়েছো কত কষ্ট করেছ। তুমি আমাকে খুব ভালোবাসো তাই না আন্টি? সুইটি বলে, হ্যাঁ খুকু আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। ফাতেমা বলে, আন্টি তুমি আমার মাথায় যখন হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলে তখন জানো আন্টি আবার তখন মনে হচ্ছিল আমার মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সুইটি বলে, আমি যে তোমার মায়ের মত তুমি শুয়ে থাকো আমি তোমার জন্য গরম দুধ নিয়ে আসছি। এই বলে সুইটি ফাতেমার কপালে চুম্বন করে চলে যেতে লাগে। তখন ফাতেমা আচমকা সুইটিকে মা বলে ডাক দেয়। সুইটি মা ডাক শুনে সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে যায়। পেছন ঘুরে ফাতেমাকে বলে, খুকু তুমি আমাকে কি বললে আর একবার বল? ফাতেমা আবার তাকে মা বলে ডাক দেয়। ফাতেমা বলে, আমার এক মা আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে তাতে কি হয়েছে আমি তো নতুন মাকে পেয়েছি। কথাগুলো শোনার সঙ্গে সঙ্গে সুইটি ফাতেমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। তখন ফাতেমা তার দুহাত দিয়ে সুইটির চোখের জল মুছিয়ে দেয়। আর বলতে থাকে তুমি কেঁদো না মা তোমার চোখের জল আমি যে সহ্য করতে পারি না।

আজ গল্পের পর্বটি এখানে শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

এই গল্পের অনেক গুলো পর্ব পড়েছিলাম আর ভালোও লেগেছে। সুইটির মহানুভবতা দেখে খুব ভালো লাগলো। অন্যের মেয়ের জন্য কয়জন আছে এমন ত্যাগ স্বীকার করে। ধর্ম যাই হোক একটি সন্তান কে লালন পালন করে বড় করে তোলা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আমার কাছে গল্পের এই পর্বটা পড়তে অনেক বেশি ভালো লেগেছে। ফাতেমার জন্য সুইটি অনেক বড় একটা ত্যাগ করেছে। ফাতেমা প্রথমে সুইটিকে আন্টি ডাকলেও শেষে তাকে মা ডেকেছে এটা দেখে অনেক ভালো লাগলো। দেখা যাক পরে কি হতে চলেছে। আশা করি তাদের জীবনটা অনেক বেশি সুন্দর ভাবে চলবে।

এই গল্পের প্রতিটা পর্ব আমার পড়া হয়েছে। আমার কাছে গল্পটা অনেক ভালো লাগে। সুলতানা মারা যাওয়ার পর ফাতেমা ভালোই আছে দেখছি। কারণ রাতুল তার দায়িত্ব নিয়েছে। আর সুইটির সাথে রাতুল বিয়ে করবে বলেছে দেখে ভালো লাগলো। অন্যদিকে সুইটি ফাতেমার জন্য নিজের সন্তান নেবে না বলে দিয়েছে। আসলে এরকম মা খুব কম হয়। যে কিনা অন্যের সন্তানের জন্য নিজের সন্তান ত্যাগ করে। ফাতেমা তাকে মা বলে ডেকেছে এটা অনেক ভালো লেগেছে। সুইটি ও এটা দেখে অনেক আনন্দিত হয়েছে।