মায়ের ঋণ গল্পের প্রথম পর্ব

in hive-129948 •  2 months ago 

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনার সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন সুস্থ আছেন আজ আমি আপনাদের মাঝে একটি গল্প উপস্থাপন করছি। আশা করি, আপনাদের সবার ভালো লাগবে তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।

pexels-cottonbro-3171118.jpg

সোর্স


সোনারপুর নাম করে একটি গ্রামে বসবাস করত একটি পরিবার। পরিবারে ছিল দুজন ব্যক্তি স্বামী আর স্ত্রী তারা দুজনেই দিনমজুরি কাজ করত। সেই সকালে বের হতো দুজনে আর সন্ধ্যা হলে বাড়িতে ফিরত। বাড়িতে ফিরে দৈনন্দিন যে কাজগুলো থাকে সেই কাজগুলো সেরে তারা আবারও সকাল হলে বেরিয়ে পড়তো কাজের সন্ধানে। এইভাবে তাদের জীবন চলতে থাকে। হঠাৎ একদিন স্ত্রী স্বামীকে বলে তাদের সংসারে আর একজন নতুন সদস্য আসতে চলেছে। স্বামী এই কথাটি শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে স্ত্রীকে বলে আজ থেকে তোমার আর কাজে যেতে হবে না। এখন থেকে আমি নিজেই কাজ করব তুমি নিজের খেয়াল রাখবে সবসময়। যতদিন যায় মা আর কিছুই খেতে পারে না যা খায় তাই বমি হয়ে বের হয়ে যায়। রাতে ঠিকভাবে ঘুমাতে পারে না পেটের ব্যাথাতে ঘুম ভেঙে যায়। যেহেতু গ্রাম ছিল তাই কাছাকাছি কোন হাসপাতাল ছিল না। হাসপাতালে যেতে হলে দু ঘন্টা লেগে যেত হাসপাতালে পৌঁছাতে।


সন্তানের বয়স যখন সাত মাস তখনই ঘটে যায় এক দুর্ঘটনা। সেদিন সকালে সন্তানকে চুম্বন করে কাজ করতে বের হয়ে যায় স্বামী। সন্ধ্যা হয়ে যায় স্বামী আর বাড়িতে ফিরে না। স্ত্রী তখন দিশাহারা হয়ে পড়ে কারণ এমনটি কোনদিনও হয়নি। সকালে বের হয়েছে কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে গেছে এখনো বাড়ি ফিরছে না এটা আজ প্রথম হয়েছে। স্ত্রীর মুখে টেনশনের একটি ছাপ লেগে রয়েছে। স্ত্রীর অবস্থা তেমন ভালো ছিল না এসে কোথাও বের হতে পারছিল না। ঘরের দরজার কাছে বসে বসে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। হঠাৎ একটা লোক এসে তাকে জানায় তার স্বামীর একটি দুর্ঘটনা হয়েছে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই সে মারা গিয়েছে। এই কথাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রীর মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। সে কিছুতেই এই কথাটা বিশ্বাস করতে পারছিল না। কিন্তু বাস্তবটাকে তো মেনে নিতেই হবে যে তার স্বামী আর কোনদিন বাড়িতে ফিরবে না। গ্রামে লোকজন তার স্বামীকে আনে। স্ত্রী ছুটতে ছুটতে চলে আসে তার স্বামীকে দেখতে। স্বামীর মুখটা দেখতে সে কান্নায় ভেঙে পড়ে স্ত্রী।


গ্রামের কয়জন মহিলা তাকে সামলানো চেষ্টা করে কিন্তু সেই কিছুতেই শান্ত করতে পারে না কারণ তার স্বামী ছাড়া তার যে আর কেহ নাই।তার পেটে ও একটি বাচ্চা তাকে সে কিভাবে মানুষ করবে তাই ভেবে আরো ভেঙে পড়ে। ঠিক তখনই তার পাশে এসে দাঁড়ায় তার এক দাদু। দাদু তাকে দিদি ভাই বলে ডাকে। দাদু এসে তাকে ডাক দিয়ে বলে দিদিভাই তুমি কোন চিন্তা করো না আমি তোমার সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে তুলবো। সময় যেতে যেতে তার ভেতর শোকের মাত্রা একটু কম হতে শুরু করলো। তার পেটের সন্তানের বয়স যখন ১০ মাস হল তখন তার প্রচন্ড ব্যথা উঠল। দাদু তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। ফুটফুটে একটি সন্তান হল সন্তানকে দেখে মা তার দুঃখ কষ্ট সবকিছু ভুলে গেল। ১০ দিনের মত হাসপাতালে ছিল তারা। হাসপাতলে অনেক টাকা বিল হয়ে গিয়েছিল। মায়ের নাম ছিল মায়া। মায়া যখন শুনতে পেল হাসপাতালে অনেক টাকা বিল হয়ে গিয়েছে তখন সে একটু টেনশনে পড়ে যায়। কারণ সে ছিল গরিব এত টাকা সে কোথা থেকে জোগাড় করবে। জমিয়ে রাখা কোন টাকা ছিল না, নাই কোন জমি শুধু আছে থাকার মতন একটি কুঁড়েঘর। তখন সেই দাদু এসে মায়াকে বলে দিদিভাই কেন এত টেনশন করছো আমি তো রয়েছি। আমি সব টাকা পরিষদ করে দিব তুমি এত চিন্তা করো না।মায়া বলে দাদু আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে তুমি আমাকে দেখে আসছো। আর কত করবে?


দাদু বলে আমার এই দুনিয়াতে তোমরা ছাড়া কেউ নেই। আর আমি যা করছি আমি তো আমার দিদি ভাইয়ের জন্যই করছি। মায়া বলে দাদু আমি তোমার ঋণ কোনদিনও শোধ করতে পারবো না। দাদু বলে আরে পাগলি ঋণ কেন বলছিস তুই তো আমার নাতনির মত। বহু বছর আগে ভয়াবহ এক্সিডেন্টে আমার সবকিছু হারিয়ে যায় আমার ফুটফুটে দাদুভাইও আমাকে ছেড়ে চলে যায়। তোর মত দেখতে ছিল আমার দাদু ভাই। আমি যখন তোকে প্রথম দেখেছি আমার মনে হয়েছে আমার দাদু ভাইকে ফিরে পেয়েছি। এই বলতে বলতে দাদু কান্নায় ভেঙে পড়ে তখন মায়া কাছে এসে তার দুচোখ মুছিয়ে দেয়। মায়া তার সন্তানকে নিয়ে সেই দাদু কাছে চলে যায়। দাদুর একটি সিট কাপড়ের দোকান ছিল সেখানে মায়া সেলাই মেশিন চালাতো। এইভাবে চলতে চলতে ছয় মাস পার হয়ে যায়। তার সন্তানও অনেকটা বড় হয়ে যায় তখন একটু আনুষ্ঠানিকভাবে তার নামকরণ করা হয়। সন্তানের নাম দেওয়া হয় বিজয়। বিজয়কে নিয়ে মায়া দোকানে কাজ করতো। তেমন একটা দোকানে কেনাবেচা হতো না কিন্তু যা হত তাই দিয়ে তাদের তিনজনের ভালোভাবে দিন কেটে যেত। মায়া চিন্তা করে সে দোকানের পাশাপাশি অন্যের বাড়িতে কাজ করবে। কিন্তু এতে দাদুর সম্মতি ছিল না কারণ দাদু মায়াকে বলে বিজয় অনেক ছোট তাকে একা রেখে কাজ করতে হবে না। আমাদের তো ভালোভাবে দিন কেটে যাচ্ছে তাহলে কেন এত কষ্ট করতে হবে? মায়া বলে বিজয় আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে তার ভবিষ্যতের জন্য আমাকে তো কষ্ট করতেই হবে। আর তুমি তো বলেছ তুমি আমার সন্তানকে মানুষের মত মানুষ করবে তার জন্য তো দাদুর টাকার দরকার। অবশেষে দাদু মায়ার কথায় রাজি হয়। মায়া সেদিনের পর থেকে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে থাকে আর বিজয়কে দাদু সামলাতে থাকে।

আজ গল্পের পর্বটি এখানেই শেষ করছি। বাকি পর্ব খুব শীঘ্রই আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করব। আশা করি, আপনাদের সবার ভালো লাগবে। সেই পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

একজন স্ত্রী যদি তার স্বামীকে জীবন থেকে হারিয়ে ফেলে, তার জীবনটা একেবারে এলোমেলো হয়ে যায়। তবে মায়ার ভাগ্য অনেক ভালো, কারণ সে দাদুকে তার পাশে পেয়েছে। যাইহোক বিজয় বড় হয়ে মায়ার সব দুঃখ কষ্ট দূর করে দিবে, সেই কামনা করছি। গল্পটা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।