শুধু তোমাকেই ভালোবাসবো' গল্পের দ্বিতীয় পর্ব

in hive-129948 •  last month 

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে 'শুধু তোমাকেই ভালোবাসবো' গল্পের দ্বিতীয় পর্বটি উপস্থাপন করছি। আশা করি, আপনাদের সবার ভালো লাগবে। তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।

pexels-asadphoto-1024963.jpg
সোর্স

রাতুলের বাবার নাম ছিল রিপন আর সুলতানার বাবার নাম ছিল জিয়া। একদিন সুলতানার বাবা তার ব্যক্তিগত কাজের জন্য রাতুলদের গ্রামে যায়। তখন আচমকা রাতুলের বাবার সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। রাতুলের বাবা সাইকেল চালিয়ে বাজারে যাচ্ছিল। রাতুলের বাবাকে দেখে সুলতানার বাবা ডাক দেয়।
জিয়া: রিপন বাবু কোথায় চলেছেন?
সঙ্গে সঙ্গে রিপন বাবু সাইকেল থামিয়ে দেখতে পায় জিয়া। সে মুচকি হেসে তাকে বলে।
রিপন: আরে ইমাম সাহেব যে কোথায় চলেছেন?
জিয়া: কিছু কাজের জন্য এসেছি। আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
রিপন: আমি বাজারে যাচ্ছিলাম কিছু বাজার করতে। অনেকদিন পর আপনার সাথে দেখা হল চলুন বাজারে যেয়ে একসঙ্গে চা খাওয়া যাবে।
জিয়া: হ্যাঁ অনেকদিন পর আপনার সঙ্গে দেখা হলো কিন্তু আমার কিছু কাজ আছে। আপনি যান বাজার করে আসুন।
রিপন: আচ্ছা ইমাম সাহেব। বাজার সেরে একসাথে দুজনে চা খাওয়া যাবে।


এই বলে রিপন বাবু ও জিয়া বাবু দুজনেই যার যার কাজকাম সেরে তারা দুজনে এলাকার এক দোকানে বসে চা খায়। এর মধ্যেই পেছন থেকে রাতুল বাবা বাবা বলে ডাকতে থাকে। জিয়া বাবু রিপন বাবু কে জিজ্ঞাসা করে।
জিয়া: আপনার ছেলে বুঝি?
রিপন: হ্যাঁ আমার একমাত্র সন্তান।
জিয়া: কি নাম বাবু তোমার?
রাতুল: আমার নাম রাতুল মুখার্জি।
জিয়া: কোন ক্লাসে পড়ছো?
রাতুল: আমি ক্লাস ফাইভে।
জিয়া: রিপন বাবু আপনার ছেলে খুবই ভদ্র, সভ্য বড় হয়ে আপনার মুখ উজ্জ্বল করবে। রাতুলকে নিয়ে আপনি আমাদের বাড়িতে আসবেন।
রিপন: অবশ্যই আসব ইমাম সাহেব।
জিয়া: আজ উঠা যাক অনেক বেলা হল আমার নামাজের সময় হয়ে গেল।
রিপন: ঠিক আছে আবার দেখা হবে।
রিপন বাবু এবং জিয়া বাবু এরা দুজনেই নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যায়। দিন যত যেতে থাকে ততই তাদের বন্ধুত্বের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। এক বছর পর মাধ্যমিক পড়ার জন্য সুলতানা নতুন স্কুলে ভর্তি হয়। সুলতানা যে স্কুলে ভর্তি হয় সে স্কুলে আগে থেকেই রাতুল পড়াশোনা করত। রাতুলের বাবা ওই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। আর যেহেতু জিয়া বাবুর সঙ্গে রিপন বাবুর একটা ভালো সম্পর্ক সেই সম্পর্কে সুলতানাকে রিপনবাবুর স্কুলে ভর্তি করায় জিয়া বাবু। রিপন বাবু সুলতানাকে নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসতো। নতুন স্কুল নতুন মানুষ সুলতানার মোটেও ভালো লাগছিল না। সুলতানা সব সময় ব্রোকা পরিধান করে স্কুলে আসতো। এর জন্য ক্লাসের প্রত্যেক ছাত্রছাত্রী তাকে ক্ষ্যাপাতো। সুলতানার মোটেও এসব পছন্দ হতো না। তার জন্য খুবই মন খারাপ থাকতো সুলতানার।


এইভাবে স্কুল জীবন চলছিল হঠাৎ বেশ কিছুদিন সুলতানা স্কুলে আসে না এ বিষয়টি রিপন বাবুর চোখে পড়ে। পরবর্তীতে রিপন বাবু জিয়া বাবুকে সংবাদ পাঠায়। কিন্তু রিপন বাবুর কাছে কোন সংবাদ আসে না।তাই তখন রিপন বাবু স্কুল শেষে রাতুলকে নিয়ে জিয়া বাবুদের বাড়িতে যায়। রিপন বাবু বাড়িতে যেতেই জিয়া বাবুকে ডাক দেয় তখনই হঠাৎ এক ভদ্রমহিলা দরজার আড়াল থেকে বলে ওঠে উনি বাড়িতে নেই। আপনি অপেক্ষা করুন উনি খুব শীঘ্রই চলে আসবেন। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর জিয়া বাবু বাড়িতে আসে। এসেই দেখতে পায় রিপন বাবুকে। সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠেন


জিয়া: আরে রিপন বাবু কেমন আছেন আপনি?
রিপন: আমি খুব ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
জিয়া: আমি ভালো আছি। কিন্তু আমার মেয়েটা বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ।
রিপন: আসলে জিয়া বাবু আমি বেশ কিছুদিন ধরে খেয়াল করলাম সুলতানা স্কুলে আসছে না। আমি আপনাকে খবর পাঠিয়েছিলাম কিন্তু কোন সংবাদ আমার কাছে যায়নি। তাই বাধ্য হয়ে ছুটে চলে এলাম আপনাদের বাড়িতে যে ঘটনা কি হয়েছে সেটা জানার জন্য।
জিয়া: হঠাৎ করে স্কুল থেকে এসে মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পড়ে। ডাক্তার দেখিয়েছি ডাক্তার বলেছে কিছুদিন বিশ্রাম নিলে সুস্থ হয়ে উঠবে।
রিপন: আমি সুলতানার খবর নেওয়ার জন্য এসেছিলাম জানতে পারলাম এখন মনটা শান্ত হল।
তাহলে আজকের মতন উঠি।
জিয়া: একি বলছেন আপনি প্রথম আমাদের বাড়িতে এসেছেন কিছু না খেয়ে যাওয়া যাবে না।
রিপন: সুলতানা সুস্থ হোক তারপর একদিন এসে খাবো আজ নয়।
জিয়া: আচ্ছা আপনি যেটা ভালো মনে করেন।

কিছুদিন পর সুলতানা আবারো নিয়মিত স্কুলে যাওয়া শুরু করে। একদিন হঠাৎ সুলতানাকে পেছন থেকে রাতুল ডাক দেয়। আর ডাক দিয়ে বল।
রাতুল: তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল?
সুলতানা: আমার সাথে তোমার কি কথা।
রাতুল: তুমি অসুস্থ হলে আমি বাবার সঙ্গে তোমাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম।
সুলতানা: আমি জানি স্যারের সঙ্গে তুমি গিয়েছিলে তো কি হয়েছে।
রাতুল: আমাদের স্কুলে আমার অনেক বন্ধু আছে কিন্তু তুমি নতুন এসেছো অনেকদিন হয়ে গেল কিন্তু এখনো পর্যন্ত তোমার কোন বন্ধু নেই তুমি একা একা থাকো।
সুলতানা: আমি একা একা থাকতে পছন্দ করি।
রাতুল: দেখো আমি জানি তুমি কেন একা একা থাকো লোকে তোমায় ক্ষ্যাপায় তার জন্য তুমি লোকের থেকে দূরে থাকো। একটা কথা বলব?
সুলতানা: হ্যাঁ বলো।
রাতুল: আমি কি তোমার বন্ধু হতে পারি।
সুলতানা: আমার কোন বন্ধুর প্রয়োজন নেই।
রাতুল: আমি বাবার মুখে তোমার বাবার কথা অনেক শুনেছি তারা ভালো বন্ধু। আমরাও তো দুজন ভালো বন্ধু হতে পারি।
সুলতানা: আচ্ছা, ঠিক আছে। আজ থেকে তুমি আমার বন্ধু আর আমি তোমার বন্ধু।

সেদিনের পর থেকেই সুলতানা এবং রাতুলের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়। আর সেদিনের পর থেকে তারা স্কুলে একসঙ্গে বসতো এবং টিফিনে একসঙ্গে খাবার খেতো। স্কুল ছুটি হলে একসঙ্গেই বাড়িতে ফিরত। ক্লাসে দুজনের ভিতর একজন পড়া না পারলে অন্যজনও পড়া পারতো না। তার মানে বুঝতেই পারছেন তাদের ভিতর বন্ধুত্বটা কতটা মজবুত।

আজ গল্পের পরবর্তী এখানেই শেষ করছি।সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আপনি আজকে এই গল্পের দ্বিতীয় পর্ব অনেক সুন্দর করে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন, যেটা পড়ে আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। রিপন আর জিয়া বাবুর যেমন বন্ধুত্বের একটা সম্পর্ক হয়েছে, এখন দেখছি সুলতানা আর রাতুলের মধ্যেও সুন্দর একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয়ে গিয়েছে। দেখতে দেখতে তাদের বন্ধুত্বটা অনেক মজবুত হয়েছে। এখন দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয় এই গল্পের।

অনেক সুন্দর ছিল এই গল্পটা। আমি এই গল্পের প্রথম পর্ব টা পড়েছিলাম। আজকে দ্বিতীয় পর্ব পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আস্তে আস্তে দেখছি রাতুল আর সুলতানার মধ্যে অনেক সুন্দর একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয়ে গিয়েছে। আর তাদের বাবাদের মধ্যেও অনেক সুন্দর একটা সম্পর্ক হয়েছে। এখন অপেক্ষায় থাকলাম পরবর্তী পর্বের জন্য।