হ্যালো বন্ধুরা,
আপনার সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে এই গল্পের নবম পর্বটি উপস্থাপন করছি। আশা করি, আপনাদের সবার ভালো লাগবে তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।
সোর্স
বিজয় বাসায় আসার সঙ্গে সঙ্গে মিরা তাকে জিজ্ঞাসা করে। কোথায় গিয়েছিলে তুমি? এতবার তোমাকে ফোন করছি ফোন কেন তুলছো না? বিজয় মিরাকে বলে, আমি গ্রামে গিয়েছিলাম মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। মিরা বলে হঠাৎ মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলে কি ব্যাপার। বিজয় বলে, যেহেতু মা গ্রামে থাকে তার অনেক বয়স হয়েছে। তাই মাকে কিছু টাকা দিতে গিয়েছিলাম আর একটা লোক মাকে দেখাশোনা করার জন্য রেখে দিয়ে এলাম। মিরা বলে, বিজয় একি বলছো তুমি। আমার সংসারের টাকা তুমি তোমার মাকে দিয়ে এসেছো একটা বার আমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলে না। আচ্ছা ভালো হয়েছে কিন্তু তোমার মাকে কত টাকা দিয়ে এসেছো সেটা কি আমি জানতে পারি? বিজয় বলে, ৫০ হাজার টাকা মাকে দিয়েছি এতে মার অনেকটা দিন হয়ে যাবে। মিরা রাগান্বিত কন্ঠে বলে ওঠে বিজয় তুমি পঞ্চাশ হাজার টাকা তোমার মায়েকে দিয়ে এসেছো আমি না তোমাকে বলেছিলাম আমার কিছু কেনাকাটার আছে। বিজয় মিরাকে বলে, তোমার কেনাকাটার জন্য আমি টাকা রেখেছি। কিন্তু তুমি একটা বার চিন্তা কর আমার মায়ের বয়স হয়েছে। সে আগের মতন আর ইনকাম করতে পারেনা ছেলে হিসেবে আমার একটা কর্তব্য আছে আমি সেই কর্তব্যটা পালন করতে গিয়েছিলাম মাত্র। মিরা বলে, এরপর থেকে কাউকে কোন কিছু দিতে হলে অবশ্যই আমার অনুমতি নিবে। ভুলে যাবেনা আমি তোমাকে বিয়ে করেছি তার জন্য তুমি এত সম্পদের মালিক হতে পেরেছো নতুবা পথে-ঘাটে ঘুরে বেড়াতে। আমি যদি এখন তোমাকে ডিভোর্স দেই তুমি না খেতে পেয়ে মরা যাবে। তাই এরপর থেকে কোন কিছু করতে গেলে আমার অনুমতি নিয়ে তারপর করবে।
বিজয়ের সেদিনের পর থেকে নিজের স্বাধীন মত কিছুই করতে পারত না সব সময় তার স্ত্রীর আর শ্বশুরের কথা শুনতে হতো। আর যদি না শুনতো তাহলে তার স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা বলতো। আর এদিকে বিজয় জানে তার স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দিলে তাকে পথে পথে ঘুরতে হবে না খেয়ে মরতে হবে। তাই সে মুখ বুজে সব কিছু সহ্য করে যায়। কয়েকদিন পর বিজয়ের ফোনে ফোন আসে গ্রাম থেকে। তার মায়ের জন্য যে কাজের লোকটি রেখে ছিলো সেই লোকটি ফোন করেছিল বিজয়কে। কিন্তু বিজয় ফোনটি রিসিভ করেনা। বারবার ফোন বাজার কারণে অবশেষে বিরক্ত হয়ে ফোনটি রিসিভ করে ধমক দিয়ে বলে কি হয়েছে এত ফোন করছিস কেনো। কাজের লোকটি বলে বিজয় বাবু আপনার মা খুবই অসুস্থ আমি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। আপনার মা আপনাকে দেখতে চাচ্ছে আপনি কি আসবেন একটি বার আপনার মাকে দেখার জন্য। বিজয় লোকটিকে বলে, আমার কাজের অনেক চাপ আমি এখন মাকে দেখতে আসতে পারবো না। আর হাসপাতালে কত টাকা বিল হয় সেটা আমাকে বলবি আমি তোকে পাঠিয়ে দিব। আর মায়ের কাছে সব সময় থাকবি মাকে বলবি আমি পরে একদিন আসবো। কাজের লোকটি বলে, বাবু আপনার মা আপনাকে খুব দেখতে চাচ্ছিল সে খুবই অসুস্থ সব কাজ ফেলে একটিবার আসুন না মাকে দেখে যান। বিজয় রাগান্বিত কন্ঠে লোকটিকে বলে, বেয়াদব ছোট মুখে বড় কথা তোর কাছ থেকে কি আমার শিখতে হবে। লোকটি বলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন বাবু এই বলে কোনটি রেখে দেয়।
কাজের লোকটি বিজয়ের মাকে বলে মা আমি তোমার বিজয়কে ফোন করেছিলাম। মা খুব হাসিমুখে বলে আমার বিজয় আসছে তো আমাকে দেখতে। কতদিন আমি তাকে দেখি না। আমি জানতাম আমার অসুস্থতার কথা শুনে সে থাকতে পারবে না।সে যে প্রান্তেই থাকুক আমার কাছে ছুটে চলে আসবে আমাকে দেখার জন্য। তখন কাজের লোকটি বলে মা তোমার আশা কোনদিন পূর্ণ হবে না। মা বলে কেন তুই এমন কথা কেন বলছিস? লোকটি বলে, আমি তাকে বলেছিলাম কিন্তু সে আসতে পারবে না আমাকে বলল। আমি তাকে অনুরোধ করলাম একটিবার তোমাকে দেখে যেতে। কিন্তু সে আমাকে ধমক দিয়ে বলল তার অনেক কাজ আছে কাজ শেষ করে তারপর তোমাকে দেখতে আসবে। মা তখন বলল, ও ছোটবেলা থেকেই কাজের উপর খুব মনোযোগ। আর এখন ওর তো অনেক কাজ কোন সময় ফাঁক পায় না। ঠিক আছে তুই বাইরে যা চিন্তা করিস না ওর কাজ শেষ হয়ে গেলে ঠিকই ও আমার কাছে আসবে। লোকটি বাইরে চলে যায় তখন মায়ের বুক ফেটে চোখ থেকে জল পড়তে থাকে। কারণ এ কষ্ট কাউকে বোঝানো যায় না। যাইহোক কিছুদিন পর বিজয়ের মা সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে তখন বিজয় তার মাকে ফোন দেয়। মা ফোনটা রিসিভ করতেই বিজয় বলে কেমন আছো মা? মা উত্তর দেয়, আমি ভালো আছি তুই কেমন আছিস? বিজয় বলে ভালো আছি আমার অনেক কাজ ছিল যার জন্য আমি আসতে পারিনি। তোমার টাকা পয়সা লাগলে আমাকে বল আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি। মা মুচকি হেসে বিজয়কে বলে ওরে পাগল আমার টাকা পয়সা লাগবে না।তুই একটা বার আমার চোখের সামনে আয় তোকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। বিজয়ের তখন বলে আমি আসবো মা অনেক কাজ আছে কাজ ছেড়ে আমি একদিন তোমাকে দেখতে আসবো। এই বলে ফোনটি রেখে দেয়। আর মা চোখের জলে ভাসতে থাকে।