"বাবার ভালোবাসা" শেষ পর্ব

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)

হ্যালো বন্ধুরা,


আপনারা সবাই কেমন আছেন?আশা করি, আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি "বাবার ভালোবাসার"গল্পের শেষ অংশটি আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করছি আশা করি, আপনাদের সবার ভালো লাগবে তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি ।

pexels-negative-space-139389.jpg
www.pexels.com

বিজয় বাড়ি থেকে বের হয়ে তার বন্ধু আকাশকে ফোন দিল।



বিজয়: আকাশ তোর কাছে কিছু টাকা হবে?
আকাশ: কত টাকা লাগবে?
বিজয়: সামান্য কিছু টাকা এই ১০০০ টাকার মত আমি তোকে পরে দিয়ে দেব।
আকাশ :কেন রে তোর বাবার কাছ থেকেই তো নিয়ে নিতে পারিস?
বিজয়: না বাবা দিবে না বাবা আমাকে এখন থেকে নিজে ইনকাম করে টাকা খরচ করতে বলেছে। তোর কাছে হবে আমি তোকে পরে দিয়ে দেব?

এসব কথা শোনার পর আকাশ বুঝতে পারে যে বিজয়কে এখন ১ হাজার টাকা দিলে ও কোনদিন দিতে পারবে না কারণ ও নিজে কোনদিন ইনকাম করতে পারবেনা তাই আকাশ বিজয়কে বলল।

আকাশ: দেখ বিজয় আমার কাছে এখন এই মুহূর্তে এত টাকা নেই তুই অন্যদের কাছে চেয়ে দেখ।
বিজয় :আচ্ছা ঠিক আছে

তারপর এক এক করে তার বন্ধুদের ফোন দিতে লাগে তারাও আকাশের মত একই কথাই বলে কারো কাছ থেকে বিজয় টাকা পায় না। বিজয় ভাবতে থাকে তার বাবা ঠিকই বলেছে টাকা থাকলে সবাইকে পাওয়া যায় টাকা না থাকলে কাউকে পাওয়া যায় না। সে চিন্তা করে সে বাবাকে কথা দিয়েছে টাকা ইনকাম করে তার হাতে দিবে তাই সে কাজ খুঁজতে লাগে। সে হঠাৎ দেখতে পায় কিছু লোক কাজ করছে। বিজয় সেখানে যে কাজের মালিকের সাথে কথা বলে।



বিজয় :আপনার কাজের লোক লাগবে?
মানিক : হ্যাঁ আজ একটা কাজের লোক লাগবে।
বিজয় :আমি আপনার কাজটা করতে পারি আপনি আমাকে কত টাকা দিবেন।
মালিক :তোমাকে আমি ৪০০ টাকা দিব।
বিজয়: মাত্র ৪০০ টাকা কিন্তু আমার ১০০০ টাকা লাগবে।
মানিক :একদিনে তোমাকে আমি এক হাজার টাকা দিতে পারব না তুমি অন্য কাজ দেখতে পারো।

সেখান থেকে বিজয় চলে আসে অনেকটা বেলা হয়ে গেছে তাই তার খুদা লেগে যায়। সামনে একদিন খাবারের দোকান দেখতে পাই সঙ্গে সঙ্গে খাবারের দোকানে যেয়ে খাবার খেতে শুরু করে। খাবার শেষ হওয়ার পর হোটেলের মালিক যখন তাকে খাবারের বিল দিতে বলে। বিজয় পকেটে হাত দিয়ে বুঝতে পারে তার পকেটে টাকা নেই তার মুখটা গম্ভীর হয়ে যায়। হোটেলের মালিক বুঝতে পারে কিন্তু তার কিছু করার ছিল না বিজয়কে মানবতা দেখিয়ে হোটেলে খাবারের প্লেট গুলো পরিষ্কার করে দিতে বলে। বিজয় ভাবতে থাকে আজ আমার কাছে টাকা নেই তাই আজ মানুষের খাবারের প্লেট আমাকে পরিষ্কার করে দিতে হচ্ছে। কিছুই করার ছিল না বিজয়ের সেখান থেকে খাবারের প্লেট পরিষ্কার করে সে আবার বেরিয়ে পড়ে কাজের সন্ধানে।


কিছু দূর যেতেই দেখতে পায় একটি লোক ভ্যান গাড়িতে মাল নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সে চলতে পারছে না তাই বিজয় তার কাছে বলে।

বিজয়: আমি কি আপনাকে সাহায্য করতে পারি?
ভ্যান মালিক:হ্যাঁ
বিজয় : আমি আপনার ভ্যান ঠেলে দিব আপনি আমাকে কত টাকা দিবেন।
ভ্যান মালিক: তোমাকে আমি ৩০০ টাকা দেব।
বিজয় :হ্যাঁ এটা দিলেই হবে।

বিজয়ের কিছু করার ছিল না সে বাবাকে কথা দিয়েছে একদিনের ভেতর সে ১ হাজার টাকা ইনকাম করে তার হাতে তুলে দেবে। সে বুঝতে পেরেছে টাকা ছাড়া সে চলতে পারবে না আর সন্ধ্যা হয়ে আসছিল।তাই তার কিছুই করার ছিল না সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যায়। সারাদিন কষ্ট করে ৩০০টাকা ইনকাম করে তার বাবার হাতে তুলে দেয়। তার বাবা দেখতে পায় একদিনে তার ছেলের চেহারা কতটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। তার খুবই খারাপ লাগে কিন্তু জীবনে টাকার গুরুত্ব কত সেটা বোঝানোর জন্য বিজয়কে নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। নদীর পারে যে বিজয়ের ইনকাম করা সেই ৩০০ টাকা ১০ টাকা ২০ টাকা করে নদীর জলে ফেলতে লাগে। বিজয় দেখে খুবই খারাপ লাগতে শুরু করে তার বুকটা ফেটে যাচ্ছিল কিন্তু কিছুই বলতে পারছিল না। এমন করে যখন তার বাবা সব টাকা ফেলে দিচ্ছিল শেষ মুহূর্তে বিজয় তার বাবার হাতটি ধরে ফেলে আর বলতে থাকে।



বিজয় :বাবা তুমি এমন কেন করছ? আমার কষ্টের টাকা তুমি এমন করে জলে ফেলে দিচ্ছো।
বাবা:তোমার ইনকাম করা সামান্য ৩০০ টাকা আমি নষ্ট করছি বলে তোমার এতটা খারাপ লাগছে। আর তুমি এত বছর ধরে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যে বাজে খরচ করেছো তখন কি আমার খারাপ লাগেনি কষ্ট লাগেনি।


তখন বিজয় বুঝতে পারে আমার ইনকাম সামান্য ৩০০ টাকা বাবা নষ্ট করছে বলে আমার এতটা খারাপ লাগছে।আর আমি এত বছর ধরে বাবা টাকা নষ্ট করেছি না জানি তার কতটা কষ্ট লেগেছে এই ভেবে বিজয় কাঁদতে থাকে ।তখন তার বাবা বিজয়কে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে তুমি আমার ছেলে আমার হাজার কষ্ট হলেও আমি তোমাকে কোনদিনও বুঝতে দেইনি। কিন্তু আজ যখন তুমি নিজেই বুঝতে পেরেছ টাকা ইনকাম করতে কতটা কষ্ট হয় আজ আমি তোমার প্রতি অনেক খুশি।


এটুকুই বলবো হাজার কষ্ট হলেও বাবারা আমাদের আশাগুলো পূরণ করে থাকে। তারা নিজেরা না খেয়ে আমাদের মুখে খাবার তুলে দেয় নিজের একটা ভালো পোশাক না কিনে আমাদেরকে কিনে দেয়। আমাদের সুখের জন্য বাবারা নিজেদের কষ্টগুলো বুকে চেপে রাখে ।আর যখন সামনে এসে দাঁড়ায় তখন হালকা মিষ্টি হাসি দিয়ে বুঝিয়ে দেয় তাদের কোন কষ্টই হয়নি এটাই হল বাবা। পৃথিবীর সব বাবারাই সন্তানদের জন্য তাদের সুখটাকে বিসর্জন দেয়। ভালবাসি সব বাবাদের।

আজ এতটুকুই লিখছি। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
  ·  2 years ago (edited)

বাবা এমন একটি বট বৃক্ষের মতো যা মাথার উপর থাকলে মনে হয় পুরো পৃথিবীটাই আমার।
যে হারিয়েছে আসলে সেই বলতে পারবে পৃথিবীতে বাবা না থাকার কতটা যন্ত্রণা আর কতটা প্রতিকূল পরিবেশ পার হতে হয়।।
আসলে বাবার ভালোবাসার বর্ণনা দিয়ে কখনো শেষ করা যাবেনা।।
এই পর্বে আপনি অনেক সুন্দর সুন্দর এবং মূল্যবান কথা আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন ধন্যবাদ আপনাকে।।

আপনাকেও ধন্যবাদ আপনার কিছু মূল্যবান কথা আমাকে বলার জন্য

বাবা মা আমাদের জন্য অনেক কিছুই করে কিন্তু তারা কখনো বুঝতে দেয় না আমাদেরকে ভালো রেখে তারা খুবই কষ্ট হয়ে রয়েছে। আসলে সবাই ছোটবেলা থেকে বাবার কষ্টের টাকাগুলো এভাবে আজেবাজে জায়গায় খরচ করে কিন্তু কখনো তার কষ্টের ব্যাপারে কেউ জিজ্ঞেস করে না। বিজয়ের ৩০০ টাকা এভাবে জলে ফেলে দেওয়াতে বিজয় পরে বুঝতে পারল। এই গল্পটি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমার পোস্টটি পড়ার জন্য ।

বাবার ভালোবাসার গল্পটির শেষ পর্ব পড়ে সত্যিই ভীষণ ভালো লেগেছে আমার কাছে।আসলে বাবারা টাকা উপার্জন করার জন্য অনেক কষ্ট করে কিন্তু সন্তানরা এগুলো অপচয় করতে একটুও দ্বিধাবোধ করে না। বিজয়ের বাবা বিজয়কে টাকার সম্পর্কে এই বিষয়টি বুঝাতে চেয়েছিল অবশেষে বিজয় বিষয়টি বুঝতে পারল এটা জেনে ভালো লাগলো। আপনার গল্পটির শেষ পর্ব খুবই সুন্দরভাবেই শেয়ার করলেন। অসম্ভব ভালো ছিল সম্পূর্ণ গল্পটা।

ধন্যবাদ আপু সময় করে আমার পোষ্ট করার জন্য।

বাবার ভালোবাসার গল্পটির শেষ পর্ব পড়ে আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। মা বাবা সন্তানের জন্য অনেক কষ্ট স্বীকার করে। সন্তানের কোন ইচ্ছা পূরণ করতে হাজার কষ্ট হলেও তারা সন্তানকে তা বুঝতে দেয় না। বিজয়ের কষ্টে টাকাগুলো যখন তার বাবা নদীতে ফেলতে লাগলো তখন বিজয়ের কাছে খুবই খারাপ লেগেছে এবং তখনই সে বুঝেছে যে টাকা ইনকাম করা এবং তা বাজে খরচ করা কত কষ্টের। এত সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ আপু সময় করে আমার পোস্টটি পড়ার জন্য।

ছবির সোর্স উল্লেখ করুন।

বাবার হাজার কষ্টের পরও সন্তানকে কখনো কষ্ট দিতে চায় না। হয়তো বিজয়ের বাবা বিজয়কে বোঝার জন্য এক হাজার টাকা ইনকাম করে দেখানোর জন্য বলল। বিজয় মনে করলেন ১ হাজার টাকা কোন ব্যাপার না। কিন্তু সে বন্ধুগুলোর সাথে চলেছে তারা তাকে ১০০০ টাকা ধার দিল না। আসলে বিজয় এর মত এমন অনেক ছেলে আছে যেগুলো ভাবার টাকা নষ্ট করে। হয়তো বা বিজয়ের বাবার কষ্টটা বিজয় শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারল। বাবারা তো এই কষ্ট করে কখনো ছেলেকে কষ্ট দিতে চায় না। শত কষ্টের মাঝেও তাদের মুখে হাসি ফুরাতে চাই। অনেক সুন্দর একটি পোস্ট করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনাকে ও ধন্যবাদ আপু