মায়ের ঋণ গল্পের অষ্টম পর্ব

in hive-129948 •  17 days ago 

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনার সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে এই গল্পের অষ্টম পর্বটি উপস্থাপন করছি। আশা করি, আপনাদের সবার ভালো লাগবে তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।

pexels-vika-glitter-392079-1650092.jpg
সোর্স


একদিন পর বিজয় মিরার বাবার কাছে যে বলে আঙ্কেল আমি আপনার প্রস্তাবে রাজি। মিরার বাবা বলে আমি জানতাম তুমি আমার কথা অমান্য হবে না কারণ তুমি একজন বুদ্ধিমান ছেলে। মিরার বাবা বিজয়কে বলে আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে গ্রাম থেকে তোমার মাকে আসতে বলো। আমি তার সঙ্গে কথা বলে বিয়ের দিন ঠিক করে ফেলি। বিজয় তখন চুপ থাকে তারপর বলে আমি মাকে এই ব্যাপারে কিছুই জানাতে চাই না। মিরার বাবা বলে এটা কেমন কথা বললে তোমার বিয়ে তে তোমার মাকে তুমি জানাবে না। না আঙ্কেল আমি মাকে কিছুই জানাতে চাই না। মাকে জানালে এই প্রস্তাবে কোনদিন রাজি হবে না কিন্তু আমি তেমনটা হতে দিব না। আমি কষ্টের ভেতর মানুষ হয়েছি কিন্তু আজ আমার সুখের দিন এই দিনটা আমি নষ্ট হতে দিতে পারি না। মা যেখানে আছে সেখানেই থাকবে আর বিয়ের পর আমি মাকে পরবর্তীতে জানাবো। মিরার বাবা বলে যখন তোমার মা জানতে পারবে তুমি তাকে না জানিয়ে বিবাহ করেছো তখন সে যদি কোন রকম বাধা সৃষ্টি করে। তখন তুমি কি করবে? বিজয় বলে আঙ্কেল তখন যদি মা আমাদের বিয়ের না মেনে নিতে চায় তাহলে মা মায়ের মতন থাকবে আমি আমার মতন থাকবো। মিনার বাবা বিজয়ের কথাগুলো শুনে একটু হাসতে থাকে তারপর বিজয়ের কাঁধের উপর হাত দিয়ে বলে আমি তো তোমার মুখ থেকে এমনটাই শুনতে চাচ্ছিলাম। তুমিই একমাত্র আমার যোগ্য জামাই।


তারপর কিছুদিন পর বিজয় এবং মিরার বিবাহ হয়। বিজয় কোম্পানির মালিক হয়ে যায়। সে এতদিন ধরে যেটা ভাবছিল সেটাই সে পেয়েছে আজ তার আনন্দের দিন। এই আনন্দের দিনে বিজয় গ্রামের বাড়িতে তার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যায় মিষ্টি নিয়ে। মা বিজয়কে দেখে খুবই আনন্দিত হয় কারণ অনেকদিন পর তার ছেলে এসেছে। আনন্দে মা বিজয়কে জড়িয়ে ধরে তখন বিজয় মাকে বলে এ কি করছো মা। বিজয়ের মা তখন বলে কেন রে কি হলো। বিজয় বলে তুমি কোথা থেকে কাজ কাম করে এসেছ হাতে পায়ে নোংরা।আমাকে এসে তুমি জড়িয়ে ধরলে আমার পোশাকটা নষ্ট হয়ে গেল না। মা বললো এ কি বলছিস বিজয় আমার হাতের ময়লাতে তোর কাপড় নষ্ট হয়ে গেলো বুঝি। বিজয় বলে, মা এত ন্যাকামি করো না তো যেটা বলার জন্য এসেছি সেটা শোনো। মা বলে তুই বল কি বলতে এসেছিস আমাকে? বিজয় বলে মা আমি বিবাহ করেছি। মা বিজয়কে বলে, তুই বিয়ে করেছিস আমাকে একটু জানালি না। বিজয় বলে না তোমাকে জানালাম না কারণ তোমাকে যদি জানাতাম তাহলে তুমি কোনদিন মেনে নিতে না। মা বলে, তা বিজয় আমার বৌমাকে অনলি না যে, দেখি আমার বৌমা কেমন দেখতে। বিজয় বলে তোমার বৌমা অনেক বড়লোকের মেয়ে সে এই গ্রামের আসলে সে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে তার জন্য আমি তাকে আনিনি। মা বলে, তাহলে কি আমার ছেলের বউকে আমি কোনদিন দেখতে পারব না? বিজয় বলে অবশ্যই তোমার ছেলের বউকে তুমি দেখতে পাবে।


বিজয় তারপর তার ফোন থেকে মিরার ছবিটি বের করে তার মাকে দেখায়। বিজয় তার মাকে বলে আমি এখন থেকে শহরেই থাকবো। আর মাঝে মাঝে আমি তোমাকে টাকা পাঠাবো। যে টাকা আমি তোমাকে পাঠাবো সেই টাকায় তোমার ভালোভাবেই একটি মাস হয়ে যাবে। আর তোমাকে দেখাশোনার জন্য একটি লোক ঠিক করে দিব। সেই লোকটি সবসময় তোমার বাজার ঘাট সবকিছু করে দেবে। মা বলে, বিজয় শহরে থাকতে থাকতে আজ তুই অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছিস। অনেক টাকার মালিক হয়ে গেছিস যার জন্য তুই তোর মাকে দেখা শুনার জন্য একটি লোক ঠিক করে রেখে দিচ্ছিস। বিজয় তোকে একটা কথা বলি। মানুষের বেঁচে থাকতে গেলে টাকার গুরুত্ব অবশ্যই আছে। কিন্তু টাকার জন্য কোন সময় নিজের ব্যক্তিত্ব বিক্রি করতে নেই। আমি সবসময় চেয়েছি তুই ভাল থাক কিন্তু এটা চাইনি কেউ আমার কাছ থেকে তোকে কেড়ে নিবে। বিজয় মায়ের কথাগুলো শুনে খুব বিরক্ত হয়। বিজয় তার মাকে ধমক দিয়ে বলে মা তখন থেকেই তুমি আজেবাজে কথা বলে চলেছ। আমি অনেক বড় হতে চেয়েছি আজ আমি সেই জায়গায় পৌঁছে গিয়েছি। তোমার সন্তান হিসেবে আমার একটা কর্তব্য আছে ।সেই কর্তব্য আমি পালন করতে এসেছি। তোমার এই বকবক শোনার জন্য আমি এখানে আসিনি। বিজয় কিছু টাকা দিয়ে সেখান থেকে বিদায় নেয়। আর মা বিজয়ের চলে যাওয়া দেখতে দেখতে চোখের জলে ভাসতে থাকে। আর বলতে থাকে তুই ভালো থাকিস এটাই আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি।

আজ এখানেই শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!