নিঝুম রাত ভুতের গল্পের শেষ পর্ব

in hive-129948 •  last month 

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন?আশা করি, আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে নিঝুম রাত ভূতের গল্পের শেষ পর্বটি উপস্থাপন করছি।আশা করি, গল্পটি আপনাদের সবার ভালো লাগবে। তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।

pexels-seydahho-18512747.jpg
সোর্স


অন্তর হাসপাতালে যাওয়ার পর যে অসুস্থতা বোধ করে। সঙ্গে সঙ্গে চলে যায় ওয়াশ রুমে। অন্তর ওয়াশ রুমে যে হাত মুখে জল দিচ্ছিল তখন আয়নায় দেখতে পায় তার গলায় কিসের যেন একটা দাগ হয়ে আছে। সে সঙ্গে সঙ্গে ঘাড়ে হাত দেয় দেখতে পায় কিছুটা রক্ত লেগে আছে। সে বুঝতে পারে না এটা কার রক্ত। অন্তর বাসা থেকে যখন সে বের হয়েছে তখন তার ঘাড়ে কোন কিছুই ছিল না কিন্তু হাসপাতালে আসার পর ঘাড়ে এ রক্ত কোথা থেকে এল। অনেক চিন্তাভাবনা করার পর খুঁজে বের করল হাসপাতালে আসার সময় যে মেয়েটিকে সে লিফট দিয়েছিল সেই মেয়েটির হতে পারে। ততক্ষণিক বুঝতে পারে কে হতে পারে। রাগান্বিত কন্ঠে চিৎকার করতে থাকে আমাকে পিছন থেকে কেন মারছিস সাহস থাকলে সামনে এসে মোকাবেলা কর। তারপর সে ঘাড়ের রক্ত জল দিয়ে মুছে ফেলে।


কিছুক্ষণ পর হঠাৎ ওয়াশ রুমে দরজায় জোরে জোরে কেউ আঘাত করছে। অন্তর বলে কে? একটু ওয়েট কর। কিন্তু অন্তরের কথা শুনছিল না আবারও জোরে জোরে আঘাত করতে থাকে। অবশেষে অন্তর দরজাটি খুলে দেয়। খুলে দিতেই সে ছিটকে পড়ে যায় ওয়াশ রুমে। কারণ তার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল বিকট চেহারার একটি মহিলা। চোখ দুটো বড় বড় লাল বন্য ধারণ করা। অনেক বড় বড় দাঁত। হাতের নখ গুলো ১০ ইঞ্চির মত লম্বা লম্বা। অন্তর ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে সে বলতে থাকে কে কে তুমি?তখন সেই ব্যক্তিটি বলে আমাকে চিনতে পারছিস না যাকে তুই ভালোবেসে নষ্ট করেছিস। অন্তর বলে তুমি পায়েল। তখন সে হাসতে থাকে আর বলতে থাকে হ্যাঁ আমি সেই পায়েল। আমার নিষ্পাপ ভালবাসাকে তুই কলঙ্কিত করেছিস। আমি তোকে অনেকবার মারার জন্য চেষ্টা করেছি কিন্তু তোর ভাগ্য আমার হাত থেকে তোকে বাঁচিয়ে নিয়েছে। অন্তর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলতে থাকে আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমাকে ক্ষমা করে দাও। পায়েল বিকট কন্ঠে হাসতে থাকে আর অন্তরের কাছে যেতে থাকে।


অন্তরের কাছে যে পায়েল তার একটি হাত দিয়ে অন্তরের মাথার চুল ধরে অন্তরকে উঁচু করে ধরে রাখে। আর অন্তর চিৎকার করতে থাকে। সে বাঁচার জন্য চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু আজ অন্তরের ভাগ্য সহায় হলো না। চিৎকার শুনে হাসপাতালের গার্ডম্যান চলে আসে। এসেই দেখতে পায় অন্তর রক্তাক্তভাবে মোড়ে পড়ে আছে মেঝের উপর। তার সমস্ত শরীরে বড় বড় নখের দাগ। আর দেয়ালে বড় বড় করে রক্ত দিয়ে লেখা ছিল বিশ্বাস ঘাতক। এরপর পায়েল চলে যায় তার বাবার বেডরুমে। তার মা সেখানে ছিল না কারণ কিয়ার অসুস্থতার কথা শুনে সে চলে যায় কিয়া কে দেখতে। আর এই সুযোগটা পায়েল কাজে লাগায়। সে তার বাবার কাছে যে বাবা বাবা বলে ডাকতে থাকে। তার বাবা ঘুমিয়ে ছিল পায়েলের ডাক শুনে সে চোখ মেলে তাকায়। তার বাবা পায়েলের দিকে তাকাতেই তার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়। কারণ পায়েলের যে বিকট চেহারা সেটি সামনাসামনি কেউ দেখতে পারবে না। তার বাবা ভয়ে চিৎকার করতে যায় ঠিক তখনই পায়েল তার হাত দিয়ে তার বাবার গলা চেপে ধরে। আর বলতে থাকে চিৎকার করো না বাবা আজ তোমাকে মরতে হবে। এই কথা শুনে তার বাবা হাতজোড় করে বাঁচার জন্য। তখন পায়েল বলে আমার কি দোষ ছিল বাবা যার জন্য তুমি আমাকে মেরে ফেললে। তুমি আমার সন্তানকে মেরে ফেললে, আমি আমার সন্তানকে হারালাম, সবকিছু হারিয়ে ফেললাম। আমি তো বাঁচতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে বাঁচতে দিলে না। আর আজ আমি তোমাকে বাঁচতে দিব না।


সকাল হলে কিয়ার মা তার বাবার কাছে আসে। রুমের দরজা খুলতেই দেখতে পায় তার স্বামী বেডের নিচে রক্তাক্তভাবে শুয়ে আছে। চিৎকার করে ওঠে তার চিৎকারের শব্দ শুনে ডাক্তার নার্স সবাই ছুটে চলে আসে। তারা এসে দেখতে পায় কিয়ার বাবা রক্তাক্তভাবে মেঝের উপর শুয়ে আছে। ডাক্তার এসে কিয়ার মাকে বলে সে আর বেছে নেই। কিয়ার বাবাকে ডাক্তাররা দেখে অবাক হয়ে যায় কারণ তাদের হাসপাতালে আজ পর্যন্ত এখনো এমনভাবে কেউ মারা যায়নি। কিয়ার বাবার সমস্ত শরীরে অন্তরের মতন বড় বড় নখের ক্ষত ছিল। পরবর্তীতে কিয়ার বাবা ও অন্তরের সৎকাজ করা হয়। এক দিন রাতে কিয়া ও তার মা বসেছিল। হঠাৎ বাইরে প্রচন্ড হাওয়া বইতে শুরু করলো। তারা কিছুই বুঝতে পারছিল না হঠাৎ দেখে সাদা কাপড় পরিধান করা একটি ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে। কিয়া ভয়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরে। সাদা কাপড় পরিধান করা ব্যক্তিটি বলে মা আমি তোমার মেয়ে পায়েল। মায়ের মন বড়ই ব্যাকুল হয় কারণ সে মা। তার মা পায়েলকে বলে আজ তোর বাবা মারা গিয়েছে। তখন পায়েল বলে আমি আমার বাবাকে মেরেছি।


মা বলে তুই মেরেছিস তোর বাবাকে কেন? তখন পায়েল বলে মা তুমি জানো না। আমি আত্মহত্যা করেনি আমাকে হত্যা করা হয়েছে। মা বলে কি সব বলছিস কে হত্যা করেছে তোকে? পায়েল বলে বাবা। মায়ের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল মেয়ের কথা শুনে। পায়েল বলে মা আমি অন্তরকে ভালোবাসতাম সে আমার নিষ্পাপ ভালবাসাকে কলঙ্কিত করেছে। আমি তার সন্তানের মা হতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু অন্তর এ কথাটি শোনার পর আমাকে মেনে নেয় না। তখন খুব কষ্ট পেয়ে আমি বাবাকে সব কিছু বলি। সব কথা শোনার পর বাবা আমাকে বলে আমি সবকিছু সহ্য করতে পারি কিন্তু মান সম্মান হারানোটা এটা আমি সহ্য করব না। বাবা আমার গলা চেপে ধরে আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না মা। আমি হাতজোড় করে বাবাকে অনুরোধ করতে থাকি আমাকে বাঁচতে দাও আমাকে মেরো না। মা আমি খুব কষ্ট পেয়ে মারা গেছি। তারপর বাবা আমার লাশ নিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে দেয়। যাতে সবাই জানতে পারে যে আমি আত্মহত্যা করেছি। আমি কিয়াকে খুব ভালবাসতাম আমি কিয়াকে দেখতে আসতাম কিন্তু কিয়া ভয় পেত। আমি আমার খুনিদের হত্যা করেছি আর আজ আমি মুক্ত মা আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি তোমার সোনার মেয়ে হতে পারলাম না। তখন তার মা কান্নায় ভেঙে পড়ে কারণ সে ভাবতে পারিনি তার স্বামী তারা মেয়ের সঙ্গে এমন কাজটি করবে। তার মা পায়েলের কাছে ছুটে যায় ঠিক তখনই পায়েল বাতাসের সঙ্গে বিলীন হয়ে যায়। আর সেদিনের পর থেকে পায়েল আর কোনদিন কাউকে দেখা দেয়নি।

আজ এখানেই শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

ভুতের গল্প পড়তে আমার খুবই ভালো লাগে। আপনি বেশ সুন্দর একটি ভূতের গল্প লিখেছেন ভাইয়া।পায়েলকে অন্যায় ভাবে তার বাবা মেরেছিল।তাই পায়েলের আত্মা প্রতিশোধ নিতে এতদিন ঘুরে বেড়াচ্ছিল।যখন তার প্রতিশোধ নেওয়া শেষ হয়েছিল সে বাতাসের সাথে বিলীন হয়ে গিয়েছিল।খুবই চমৎকারভাবে গল্পের প্রতিটা লাইন তুলে ধরেছেন ভাইয়া। যা পড়ে খুবই ভালো লাগলো। ধন্যবাদ ভাই সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

"আমি খুব ভালবাসতাম। কিয়াকে দেখতে আসতাম, কিন্তু কিয়া ভয় পেত। আমি আমার খুনিদের হত্যা করেছি, আর আজ আমি মুক্ত। মা আমাকে ক্ষমা করে দিও। তখন তার মা কান্নায় ভেঙে পড়ে, সে ভাবতে পারিনি তার স্বামী তারা মেয়ের সঙ্গে এমন কাজটি করবে। তার মা পায়েলের কাছে ছুটে যায়, ঠিক তখনই পায়েল বাতাসের সঙ্গে বিলীন হয়ে যায়। আর সেদিনের পর থেকে পায়েল আর কোনদিন কাউকে দেখা দেয়নি।

আজ এখানেই শেষ করছি।