শান্তিনিকেতন পৌষ মেলা ভ্রমণ পর্ব: ৩

in hive-129948 •  9 days ago 

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি,আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে শান্তিনিকেতন পৌষ মেলা ভ্রমণের তৃতীয় পর্বটি উপস্থাপন করছি। আশা করি, আপনাদের সবার ভালো লাগবে। তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।



শান্তিঘর থেকে আমরা ৪৫ মিনিট গাড়ি চালানোর পর আপনার ঢুকে পড়লাম একটি গ্রামের রাস্তায়। গ্রামের হাওয়া লাগতেই মনটা আনন্দে ভরে গেল। এই রাস্তার দু'পাশে ফসলের জমি আর মাঝে মাঝে কিছু বাড়িঘর দেখতে পারছিলাম। এখানে বেশিরভাগ ঘর বাড়ি মাটির তৈরি। কিন্তু এখানে প্রত্যেকটা বাড়ির সামনে ধান মাড়াই করা রয়েছে। দেখে বুঝলাম এখানে বেশিরভাগ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে কৃষিকাজ করে। রাস্তার পাশে যে জমির কথা বলছি এই জমিগুলো এতটাই বড় যে, এক প্রান্ত থেকে তাকালে অন্য প্রান্ত দেখা যাবে না। এখানে বেশিরভাগ মানুষকে জমিতেই বেশি দেখেছি। ধান উঠে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার জমির চাষ করে সেখানে রোপন করা হচ্ছে আলু। বেশিরভাগ জমিতে দেখলাম আলুর চাষ করতে। কেউবা জমির আল কেটে জল আনছে, কেউবা জমিতে সার প্রয়োগ করছে, কেউবা ওষুধ প্রয়োগ করছে। একটা বিষয় গ্রামের মানুষ তারা কোন সময় বসে থাকতে পারে না। তারা কোনো না কোনো কাজ করতেই থাকে। আর তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি থাকে। গ্রামের মানুষ গুলো তারা কালো হয়ে থাকে কারণ হলো সকালে ঘুম থেকে পান্তা ভাত খেয়ে মাথায় গামছা বেঁধে কাঁধে কোদাল নিয়ে চলে যেতে হয় জমিতে। সারাদিন হাড় খাটনি কেটে ফলাতে হয় সোনার ফসল।


যাইহোক, গ্রামের পরিবেশ উপভোগ করতে করতে আমরা যেতে লাগলাম। দেড় ঘন্টার মতন গ্রামের পথে বাইক চালানোর পর আমরা শহরের রাস্তায় উঠলাম। এখান থেকে আমরা যে হোটেলে যাব তার দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার ছিল। আমরা হোটেলে পৌঁছেছিলাম সাড়ে দশটার দিকে। হোটেলে পৌঁছে আপনারা গাড়িটি পার্কিং করে হোটেলের যে, নিয়ম-কানুন থাকে সেই কাগজগুলো পূরণ করে নিলাম। আমাদের তেমন একটা সমস্যা হয়নি কারণ আগে থেকে যেহেতু বুক করা ছিল তার জন্য আমাদের ওয়েট করতে হয়নি রুমে জন্য। একটি লোক আমাদের রুমটি দেখিয়ে দিল আমরা রুমের ভেতরে যে সবকিছু ভালোভাবে দেখে নিলাম কারণ কোন অসুবিধা থাকলে যাতে আগে থেকে সবকিছু বলতে পারি। কারণ কোন প্রবলেম থাকলে পরবর্তীতে যখন আমরা হোটেলটি ছেড়ে দিব আমাদের জরিমানা দিতে হবে। এটি আমার সঙ্গে একবার হয়েছিল তার জন্য সবকিছু ভালোভাবে আমি চেক করে নিলাম কারণ এক ভুল বারবার করা ঠিক নয়।


রুমে ঢুকে একটু রেস্ট নিয়ে জামাকাপড় ছেড়ে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে কারণ অনেকটা পথ জার্নি করেছি। দাদাকে বললাম ফ্রেশ হওয়ার পর তারপরে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে কখন আমরা বের হবো মেলা দেখতে। আমরা দুজনেই ফ্রেশ হয়ে এলাম।তারপর দাদা বলল অনেকটা পথ যাননি করা হয়েছে কিছুটা সময় রেস্ট নেওয়া যাক। আমরা হোটেল থেকে কোন খাবার অর্ডার করলাম না কারণটা হলো হোটেলের খাবার অনেকটাই দাম ছিল। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বাইরে থেকে কোন হোটেল থেকে খেয়ে নেব। দেড় ঘন্টার মতন রেস্ট নেওয়ার পর আমরা বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম মেলা দেখার উদ্দেশ্যে। আমরা যেখানে যাচ্ছি সেখান কার নাম সোনাঝুরি। এখানে কিন্তু আদিবাসীদের দেখা যায় আর পৌষ মেলায় এখানে বড় হাট বসে থাকে। হাটটির নাম হচ্ছে সোনাঝুরি হাট। হোটেল থেকে আমাদের সেই জায়গায় যেতে সময় লেগেছিল মাত্র ২০ মিনিট। রাস্তায় অনেক পর্যটক দেখতে পেলাম যারা এখানে এসেছে ঘুরতে।


যাইহোক,আমরা হাটের কাছে এসে এখানে গাড়ি পার্কিং করে ভেতরে প্রবেশ করলাম। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখতে পেলাম আদিবাসী সাঁওতালদের। তারা বিভিন্ন পোশাক পড়ে নাচ-গান করছে। প্রত্যেকটি দলে দেখতে পেলাম একজন করে পুরুষ মানুষ রয়েছে। উনি সবাইকে পরিচালনা করছে। প্রথমে ঢুকেই আমরা আখের রস খেলাম কারণ অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি শরীরে এনার্জি টাও অনেকটাই কমে গিয়েছিল। তাই ভাবলাম আখের রস খাওয়া যাক। আমরা দুজনেই দু গেলাস আখের রস খেলাম। এরপর আমরা হাটের ভেতরের গেলাম। দেখতে পেলাম এখানে বাঁশের তৈরি অনেক জিনিসপত্র, বিভিন্ন ধরনের মালা, নকশী কাঁথা, নকশী কাপড়, কাঠের টুকরার উপর বিভিন্ন ধরনের খোদাই করা নাম ইত্যাদি। কিন্তু এখানে বেশিরভাগ দোকান ছিল জামা কাপড়ের। যেগুলোর উপর বিভিন্ন ধরনের নকশা করা ছিল। আর পৌষ মেলায় আসলে বিভিন্ন ধরনের নকশা করা কাপড় চোপড় পাওয়া যায়। আমি নকশী কাঁথায় ছোটবেলায় শীতকালে গায়ে দিয়ে ঘুমাতাম যেগুলো আমার ঠাকুমা তৈরি করত। শহরে কিন্তু এগুলো পাওয়া যাবে না গ্রামের দিকে এলে এরকমের নকশী কাঁথা পাওয়া যায়। এখানে বেশিরভাগ লোক কলকাতা থেকে এসেছে যারা কিন্তু এখানকার পোশাক প্রচুর পরিমাণে কিনছে। অনেক পর্যটক সাঁওতাল আদিবাসীদের সঙ্গে নাচ গান করছে। উনারা একটা ভাষায় গান করছিল কিন্তু উনারা যে কোন ভাষায় গান করছিল কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। মনে হল তাদের নিজস্ব কোন ভাষায় তারা গান করছে। এখানে যারা স্থানীয় তাদের ভাষা আমাদের বুঝতে অনেকটাই কষ্ট হচ্ছিল। কারণ আমাদের মতন তাদের ভাষাটা নয় অনেকটাই পরিবর্তন। যার কারণে একটু অসুবিধা হচ্ছিল যখন তাদের সাথে কথা বলছিলাম। যাইহোক, এখানে অনেক ফটোগ্রাফি করেছিলাম যেগুলো নিচে আমি প্রকাশ করছি।

IMG20241224141844.jpg

IMG20241224143055.jpg

IMG20241224142148.jpg

IMG20241224143218.jpg

IMG20241224142810.jpg

IMG20241224142845.jpg

IMG20241224141824.jpg

IMG20241224142717.jpg

IMG20241224142135.jpg
ক্যামেরা পরিচিতি: oppo
ক্যামেরা মডেল: oppo A53s 5G
ক্যামেরা দৈর্ঘ্য:3.37mm
তারিখ:২৪.১২.২০২৪
সময়:০৩.১০মিনিট
স্থান:শান্তিনিকেতন

আজ ভ্রমণ পর্বটি এখানে শেষ করছি। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

অনেক ভালো লাগলো দাদা আপনার আজকের এই শান্তিনিকেতন পৌষ মেলা ভ্রমণ এর পূর্ব মুহূর্ত এবং পরবর্তী মুহূর্তগুলো দারুণভাবে উপস্থাপন করেছেন দেখে। অনেক সুন্দর ভাবে আপনি বিস্তারিত তুলে ধরেছেন ফটোগ্রাফির মাধ্যমে। বেশ অনেক কিছু দেখা ও জানার সুযোগ পেলাম।

শান্তিনিকেতন পৌষ মেলায় ভ্রমণ করতে গিয়েছিলেন শুনে অনেক ভালো লাগলো। মেলার অপরূপ সৌন্দর্যময় দৃশ্য গুলো দেখে আমার অনেক ভালো লেগেছে। আপনি মেলায় সুন্দর মুহূর্ত কাটানোর সময় অনেক সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফি করেছেন। যেগুলো খুব দারুন ছিল। এখন তো অপেক্ষায় থাকলাম পরবর্তী পর্ব টা দেখার জন্য।

দূরে কোথাও ঘুরতে গেলে,আগে থেকে যদি হোটেল বুকিং দেওয়া থাকে,তাহলে অনেক সুবিধা হয়। কারণ জার্নি করে হোটেল খোঁজাখুঁজি করতে বেশ ঝামেলা লাগে। যাইহোক আপনারা হোটেলে রেস্ট নিয়ে, সোনাঝুরি হাটের দিকে গিয়েছেন,জেনে খুব ভালো লাগলো। সোনাঝুরি হাটের নাম অনেক শুনেছি। বেশ ভালো লাগলো ফটোগ্রাফি গুলো দেখে। এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।