মায়ের ঋণ গল্পের দ্বিতীয় পর্ব

in hive-129948 •  2 months ago 

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনার সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে এই গল্পের দ্বিতীয় পর্বটি উপস্থাপন করছি। আশা করি, আপনাদের সবার ভালো লাগবে তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।

pexels-pixabay-51953.jpg

সোর্স



মায়া অন্যদের বাড়িতে কাজ করতে থাকে আর সময় পেলে তার দাদুর দোকানে সময় দিয়ে থাকে। এইভাবে তাদের জীবনটা চলছিল বিজয়ে ও আস্তে আস্তে বড় হতে শুরু করে। বিজয়ের যখন ৫ বছর বয়স তখন মায়া থাকে স্কুলে ভর্তি করায়। বিজয় খুব মা ভক্ত ছিল সে মাকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না। মায়া যখন বিজয়কে স্কুলে দিয়ে যেত তখন সে কান্নাকাটি করত। মায়ার কোন কিছু করার ছিল না কারণ তার তো সন্তানের কাছে বসে থাকলে চলবে না। তাকে অন্যের বাড়ি কাজ করে টাকা ইনকাম করতে হবে। কিছুদিন পর বিজয়ের নতুন স্কুলে নতুন বন্ধ তৈরি হয়। তখন আর বিজয় কান্নাকাটি করত না তার বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটা তো। বিজয় আস্তে আস্তে বড় হতে শুরু করে। একদিন মায়া প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন বিজয় ইস্কুলে ছিল। বিজয় হঠাৎ করে শুনতে পায় তার মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বিজয় ইস্কুল থেকে সোজা চলে যায় তার মায়ের কাছে। হাসপাতালে যে বিজয়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরে আর মা মা বলে কান্না করতে থাকে। মায়া তখন বিজয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে থাকে ওরে পাগল আমার কিছু হয়নি এমন করে কান্না কেনো করছ। তখন বিজয় বলে এই দুনিয়াতে তুমি ছাড়া আমার আর কেউ নেই তুমি আমাকে ছেড়ে কোনদিন যেও না মা। আমি যে থাকতে পারবো না তোমাকে ছাড়া আমি তোমাকে খুবই ভালোবাসি। আমার জন্মের পর থেকে আমি বাবাকে দেখতে পাইনি বাবার অভাবটা তুমি পূরণ করেছ। জানো মা আমি স্কুলে থাকি কিন্তু সব সময় তোমার কথা মনে করি।


তখন মায়া বলে আমার পাগল ছেলে আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। মায়া এরপর বিজয়কে আদর করতে থাকে। ডাক্তার বাবু মায়াকে দেখতে আসে তখন বিজয় ডাক্তার বাবু কে বলে। আচ্ছা ডাক্তার বাবু আমার মায়ের কিছু হয়নি তো? ডাক্তার বলে না খোকা তোমার মায়ের কিছু হয়নি। তখন বিজয় বলে তাহলে আমার মাকে বাড়িতে নিয়ে যাই? ডাক্তারবাবু বলে না খোকা কিছুদিন তোমার মা আমাদের কাছেই থাকবে। তুমি চিন্তা করো না আমরা তোমার মাকে খুব ভালো রাখবো। তখন বিজয় বলে আমি মায়ের কাছে থাকবো। ডাক্তারবাবু বলে আচ্ছা ঠিক আছে তুমি তোমার মায়ের কাছেই থাকবে। এই বলে ডাক্তার মায়াকে দেখে কিছু ওষুধ লিখে দেয়। সেগুলো দাদু আনতে যায়। দাদু এসে বিজয়কে বলে চলো বিজয় আমরা বাড়িতে যাই আমরা আবার আসবো মায়ের কাছে? বিজয় বলে, আমি মাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না তুমি যাও। তখন মায়া বলে তুমি দাদুর সাথে বাড়িতে যাও। তখন বিজয় বলে মা আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। আমি তোমার কাছেই থাকতে চাই যতদিন পর্যন্ত তুমি এখান থেকে বাড়িতে না যাবে। তখন দাদু বলে মায়া তোর ছেলে মা ভক্ত আমি ওকে নিতে পারবো না ও তোর কাছে থাক। এই বলে দাদু চলে যায় আর বিজয় তার মায়ের কাছে থেকে যায়।


মায়া বিজয়কে বলে বাবু আমি যদি কখনো মারা যাই তখন তো তোমার একাই থাকতে হবে? বিজয় মায়ের মুখে এই কথাটা শুনে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে। আর বলতে থাকে তুমি যেখানেই যাবে আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবে আমি যে তোমাকে ছাড়া থাকতে পারিনা মা। মায়া বিজয়ের চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে তার বুকে জড়িয়ে ধরে। বিজয় তার মাকে আদর করে মায়ের বুকে ঘুমিয়ে পড়ে। পরের দিন সকালে ডাক্তার বাবু এসে মায়াকে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দেয়। বিজয় আনন্দে তার পকেট থেকে একটি চকলেট বেরিয়ে ডাক্তার বাবুকে খেতে দেয়। ডাক্তারবাবু বলে তুমি আমাকে চকলেট দিলে কেনো? তখন বিজয় বলে আমার মাকে দ্রুত সুস্থ করে দেওয়ার জন্য আপনাকে চকলেট দিলাম? তখন ডাক্তার বাবু বিজয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে আশীর্বাদ করে। বিজয় ও তার মা আর দাদু তারা সবাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বাড়িতে এসেই বিজয় তার মায়ের বিছানা ঠিক করে মাকে বিশ্রাম করতে বলে। মায়া তার দাদুকে বলতে থাকে দাদু ছেলেটা আমার অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। দাদু বলে হ্যাঁরে দিদিভাই। আমাদের বিজয় দায়িত্ব নিতে শিখে গেছে। আমি বিজয়কে আশীর্বাদ করি সে যেন সারা জীবন মায়ের সেবায় নিয়োজিত থাকতে পারে।

আজ গল্পের পর্বটি এখানেই শেষ করছি। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

বিজয়ের মা সুস্থ হয়ে গিয়েছে, এটা জেনে খুব ভালো লাগলো। বিজয় তার মা'কে সত্যিই খুব ভালোবাসে। তাইতো বিজয় তার মা'কে হসপিটালে রেখে বাসায় চলে যায়নি। আশা করি বিজয় বড় হয়ে তার মায়ের সব দুঃখ কষ্ট দূর করে দিবে। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ভাই।

ধন্যবাদ দাদা