"আমার শিব সন্ন্যাস জীবনে পদার্পণ"শেষ পর্ব

in hive-129948 •  2 years ago 

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন ?আশা করি,আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আমার শিব সন্ন্যাস জীবনের পদার্পন শেষ পর্বটি সবার মাঝে উপস্থাপন করছি আশা করি, সবার ভালো লাগবে তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।



পরের দিন আমরা সবাই ঠিক একই নিয়মে বেরিয়ে পড়লাম ভিক্ষা করতে। আজ আমরা পায়ে হেটে নয় ভ্যানে করে সবাই গিয়েছিলাম ভিক্ষা করতে। ভ্যানে করে প্রায় ৩০ মিনিট পথ পেরিয়ে আমরা একটি গ্রামে পৌঁছে গেলাম গ্রামটির নাম মিরা খালি। সেদিন প্রচুর গরম পড়েছিল সূর্যের তাপে ইটের রাস্তা ও পিচের রাস্তা মনে হচ্ছিল ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপে ফুটছে। খালি পায়ে হাঁটতে খুবই কষ্ট হচ্ছিল সবার আমার তো হাঁটতে হাঁটতে পায়ে নিচে ফোসকা পড়ে যায়। বাংলায় একটা কথা প্রচলিত আছে কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না। যাইহোক আমরা এখানে এসে একটি বাড়িতে ভিক্ষা করতে যাই সেখানে যেতেই আমি একটু অবাক হয়ে যাই কারণ বাড়িতে ঢুকতেই দেখতে পাই একটি পুরাতন চুন শুটকি পাথরের বাড়ি যা এখন কার সময় খুবই বিরল । আমি এখানকার একটি লোকের কাছে জিজ্ঞেস করি এই বাড়িটি কত বছরের পুরাতন? লোকটি আমাকে উত্তর দেয় এটি আজ থেকে ১০০ বছর আগে নির্মাণ করা

IMG_20230419_230440.jpg

IMG_20230419_230419.jpg

IMG_20230419_230507.jpg
তারিখ :০৭.০৪.২০২৩
সময় :১১.০৯মিনিট
স্থান:মিরা খালি।

আমি ওই লোকটির কাছে আরও একটি বিষয় জানতে চাই। সেই লোকটি আমাকে বলে তুমি কি জানতে চাও। তখন আমি বলি আপনাদের বাড়ির সামনে গোল এটি পাত্র রয়েছে এটি কি? তখন আমায় বলে এই পাত্রটি ধান রাখবার পাত্র যার নাম গ্রামের "গোলা" নামে পরিচিত। চমৎকার একটি নাম নামের সাথে কাজের ও মিল আছে। শহরের দিকে ধান বস্তায় ভরে গোডাউনে মজুদ করে রাখা হয় তেমন গ্রামের দিকে এই গলাতে ধান মজুদ করে রাখা হয়।
IMG_20230419_230523.jpg

IMG_20230419_230454.jpg
তারিখ :০৭.০৪.২০২৩
সময় :১১.১৫মিনিট
স্থান:মিরা খালি।


যাইহোক আমরা সবাই বাড়িতে বাড়িতে ভিক্ষা করতে থাকি আজ ভিক্ষার পরিমাণটা খুব ভালোই ছিল। এমন করে আমরা আরো তিন দিনের মত ঘুরতে থাকি। তিনদিন পরে আমাদের সামনে আরো কঠিন কাজ রয়েছে যেটি আমি আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করছি প্রথম আগুন সন্ন্যাস। এই আগুন সন্ন্যাস করতে হলে আপনাকে সারাদিন না খেয়ে তার মানে উপবাস করে ঈশ্বরের শরণাপন্ন হয়ে জ্বলন্ত আগুনের লাভার উপর আপনাকে হাঁটতে হবে। আমরা সেদিন সবাই উপবাস করে ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস রেখে সন্ধ্যায় আগুন জ্বালিয়ে তার উপরে সবাই একসাথে নিত্য করতে থাকি। জ্বলন্ত এই আগুনে উপর পড়লে হয়তো আমরা জানি যে কেউ পুড়ে যেতে পারে কিন্তু সত্যি কথা বলতে ঈশ্বরের আশীর্বাদে কিছুই হয়নি আমরা সবাই সুস্থ ছিলাম। আমাদের এই আগুন-সন্যাস দেখতে হাজার লোকের ভিড় জমে যায় স্থানটিতে।
IMG_20230420_195119.jpg

IMG_20230420_195057.jpg

IMG_20230420_195044.jpg

IMG_20230420_195031.jpg
তারিখ:১০.৪.২০২৩
সময় :৮.১২মিনিট
স্থান:রাজনগর।


আগুন সন্ন্যাসের পরের দিন ছিল আমাদের নির্জলা উপবাস । নির্জলা শব্দের অর্থ হল আপনি কোন খাবার জ্বালিয়ে খেতে পারবেন না আপনাকে সারাদিন ফল অথবা জল খেয়ে উপবাস করতে হবে। এই দিনটাতে আমরা শ্মশানে যে ভুত-প্রেতকে নিমন্ত্রণ যেটি দাওয়াত নামে ও অপরিচিত যাইহোক আমরা নিমন্ত্রণ ও খাবার দিয়ে আসি। সত্যি কথা বলতে আমি ভূত পেত জ্বিন পরী এসব কিছু বিশ্বাস করিনা কিন্তু সেদিন আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য হই। কারণ আমরা যখন শ্মশানে গিয়েছিলাম তখন আমার শরীরটা খুব ভার হয়ে যায় আমি সামনের দিকে আগাতে পারছিলাম না মনে হচ্ছিল কে যেন আমাকে টেনে ধরে রেখেছে। কোনরকম বাতাস হচ্ছিল না কিন্তু হঠাৎ করে কোথা থেকে প্রচন্ড হাওয়া এসে আমাদের উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। আমি দেখতে পেলাম অন্যদিনের থেকে গাছের পাতাগুলো যেন বেশি দুলছে ঝড় যেমন হয়ে থাকে তেমন গাছগুলো দুলছে ।কিন্তু অবাক করার বিষয় আমরা যখন শ্মশান থেকে চলে আসি তখন সবকিছুই আগের মতন স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসে। আমি সত্যিই অবাক হয়ে যাই আজও সেদিনের কথা মনে পড়লে আমার শরীরে কাটা দিয়ে ওঠে সেদিন যদি আমি এসব কিছু না দেখতে পেতাম অনুভব না করতাম তাহলে হয়তো আমি বিশ্বাস করতাম না যে পৃথিবীতে জিন পরী বা ভূত পেত আছে।


যাই হোক তারপরের দিন ছিল আমাদের সন্ন্যাস জীবনের সবথেকে কঠিন একটি সন্ন্যাস এটি হলো খাড়া সন্ন্যাস। এটি করতে হলে আপনাকে অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং উপবাস থাকতে হবে নতুবা আপনি কখনোই এটি করতে পারবেন না। আর মনে ঈশ্বর উপর বিশ্বাস রাখতে হবে কারণ এটি করতে হলে সামান্য ভুল হলেই আপনার মৃত্যুও হতে পারে ।তাই বুঝতে পারছেন কতটা কঠিন কাজ এটি দেখতে অনেকটাই দা অথবা কাটারি মত।আমি বোঝার জন্য আরো বিষয়টি খুলে বলছি মা কালীর হাতে দেবী দুর্গার হাতে যে অস্ত্রটি খাড়া নামে পরিচিত আমি তার কথাই বলছি। এই অস্ত্রটি খুবই ধারালো হয়ে থাকে একটু অসাবধান হলেই মৃত্যু হতে পারে কিন্তু আমরা সবাই ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস রেখে এই খাড়ার উপরে চরে থাকি।
IMG_20230421_055647.jpg

IMG_20230421_055633.jpg

IMG_20230421_055613.jpg

IMG_20230421_055538.jpg
ক্যামেরা পরিচিতি :oppo
ক্যামেরা মডেল : oppo A53s 5G
ক্যামেরা দৈর্ঘ্য :3.37mm
তারিখ :১২.০৪.২০২৩
সময় :৫.০৩মিনিট
স্থান:রাজনগর।


সন্ন্যাস জীবনে সবথেকে কঠিন সন্ন্যাস হলো এটি কারণ এখানে আপনি নিজের মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখতে পারবেন। আমরা সবাই এই কাজটি সম্পন্ন করে আমরা সবাই মহাদেবের পূজা শেষ করে। আমাদের সন্ন্যাস জীবন এখানে সমাপ্ত করে থাকি আর পরবর্তী বছরের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি এই দিনগুলোর জন্য।

আজ এখানে শেষ করছি । আপনারা সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!