আসসালামু আলাইকুম
আমি @sajjadsohan from 🇧🇩.
৩১ই- মার্চ, বৃহস্পতিবার।
আ মার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় ভাল আছি।সবাই যখন গ্রীষ্মকালীন ফল নিয়ে তাদের ছোটবেলার স্মৃতি গুলো শেয়ার করছে, শেষ মুহূর্তে এসে আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না, স্মৃতির ভান্ডারে আমার কাছেও অনেক ঘটনাই জমা আছে। সেখান থেকে একটি ঘটনা আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করবো।
দেখতে দেখতে আজ আমরা ১৪ নাম্বার প্রতিযোগিতায় এসে পড়েছি। প্রথমে আমি ধন্যবাদ জানাবো কমিউনিটির ফাউন্ডার, সকল এডমিন এবং মডারেটরদের। এত সুন্দর ভাবে আমাদের কমিউনিটি পরিচালনা করার জন্য এবং এত চমৎকার কিছু প্রতিযোগিতা আমাদের মাঝে রাখার জন্য। গত সপ্তাহে @hafizullah ভাইয়ের কাছে যখন শুনতে পারলাম "আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা - ১৪ || শেয়ার করো তোমার জীবনের মজার কোন - গ্রীস্মকালীন ফলের গল্প প্রতিযোগিতার কথা তখন থেকেই ছোটবেলার অনেক স্মৃতি মাথায় ঘুরঘুর করছে।
আমার বাসায় কয়েকটি আমগাছ ছিল তাই আমার গল্পগুলো আমগাছকে ঘিরেই। একটি গাছ মানুষের মতোই আপন হতে পারে, গাছের সাথে থাকতে পারে স্মৃতিমধুর অনেক ঘটনা। আমার ছোট থেকে বড় হওয়া প্রতিদিনের সঙ্গী ওই গাছগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
মূল ঘটনায় ফেরত আসি নিজের গাছ থাকায় কখনো চুরি করা হয়নি, কিন্তু আম চোর দের সাথে কিছু স্মৃতি জড়িয়ে আছে, সেটি আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা কবো আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
আমার বাসায় তিনটি আম গাছ ছিল এবং আমার আম খুবই ভালো লাগতো, তখন আমাদের আম কিনে খাওয়ার প্রয়োজন ছিলনা এবং আমরা আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় আম পাঠাতে পারতাম। নিজেদের চাহিদা পূরণ করার পর বাড়ির আশেপাশের মানুষদের বাসা পাঠানোর পরেও আমাদের আত্মীয়দের বাসায় পাঠানোর মত এত পরিমাণ ফল গাছে হত।
গাছ গুলো যখন বৃদ্ধ হতে থাকে তখন তার ফলন দেয়া স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা কমে যায়। আমাদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তিনটি গাছের মধ্যে একটি গাছ বাড়ির মাঝখানে ছিল, এবং দুটি গাছ এমন পজিশনে ছিল যার অনেক ডাল বাড়ির বাহিরে চলে গেছে। কিন্তু চোর চাইলে সহজেই তিনটি গাছ থেকে আম চুরি করতে পারে। কারণ প্রত্যেকটি গাছের সাথে অন্য গাছের সংযোগ রয়েছে ডালপালার সাহায্যে।
আমাদের গাছগুলো এরকম ছিল, যে অংশগুলো চোখের আড়ালে ছিল সেই অংশের বড় বড় আম ধরতো। আমি সবসময় আমের দিকে লক্ষ্য রাখতাম, আমাদের বাসায় অনেকেই কাঁচা আম খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু আমি কাঁচা আম গাছ থেকে ছিড়তে নিষেধ করতাম, কিংবা আমিও ছেড়ে দিতাম না। আমি বলতাম আমার ভাগের যেই আমগুলো রয়েছে সেগুলো গাছের থাকুক আমি পাকলে খাব।
কিন্তু লক্ষ্য করতাম বাড়ির পেছনের দিকে টিনের উপরে যতগুলো বড় আম দেখে রাখতাম আমি সবগুলো আম পরের দিন আর থাকতো না। বাড়িতে গাছে উঠতে পারে এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম, বাতাসে পড়ে যাবে এমন তো হবার কথা নয় কারণ শুধু পারফেক্ট আমগুলি পড়ে যায় যেগুলো আমার পছন্দ।
বাড়ির মহিলাদের কাছে শুনেছি এবং দেখেছি ও কিছু ছেলেপেলে গাছে উঠে আম গুলোকে ছিঁড়ে নিয়ে যায় কিন্তু কখনো হাতেনাতে ধরার সুযোগ হয়নি। তাদের চুরি হওয়া শেষ হয়ে গেলে আমরা তাদেরকে দেখতে পাই। এবং বাড়ির বাহিরে ঐ রোডে যাওয়ার আগে তারা পালিয়ে যায়।
রাতের বেলা যখন কেউ আম গাছে উঠে আম চুরি করত, বাড়ির বাচ্চারা কিংবা মহিলারা যদি হঠাৎ দেখতো তারা ভয় পেয়ে যেত। চোরেরা এতই উতলা হয়ে যায় যে তারা দিনের বেলাও চুরি করা শুরু করে। এইবার আমি একটি চোর ধরার কৌশল বের করলাম। যেই গলি দিয়ে চোরগুলো পালায় সেই গলি বরাবর আমার একটি জানালা রয়েছে। আমি জানালা বরাবর আমার মোবাইলটা রাখলাম স্ক্রিন অফ থাকার কারনে মোবাইলের গ্লাস কিছুটা আয়নার মত দেখাচ্ছে। আমি এমন ভাব করে বসে আছি যেন আমি মোবাইলে কোন কিছু দেখছি কিন্তু মূলত আমি মোবাইল দিয়ে বাহিরের দিকে রাস্তার লক্ষ্য রাখছি।
দেখলাম দুটি ছেলে আমার জানালা দিয়ে দেখছে ঘরের ভেতরে কেউ আছে কিনা, প্রথমবার আমি বুঝতে পারিনি।ছেলেগুলো বারবার দেখছিল গলির দুই মাথায় লোক আছে কিনা। অথচ আমি ঘর থেকেই গলির ওপর নজর রাখছি। হঠাৎ মোবাইল স্ক্রিনে দেখলাম দুটি ছেলে বারবার গুলির মধ্যে ঘোরাঘুরি করছে। আমার জানালার বরাবর তারা কয়েকবার হাঁটাহাঁটি করলো।
বুঝতে আর দেরি রইল না তারাই আমার শখের আমগুলো নিয়ে যায়, ঘর থেকে বের হয়ে বাড়ির বাইরে এসে ওই গলির সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ছেলেগুলো যখনই দেয়াল বেয়ে টিনের উপর উঠে গেল তখনই আমি গিয়ে হাজির এবং হাতেনাতে ধরে ফেলেছি।
একটা ছেলে নিচে দাঁড়িয়ে ছিল এবং আরেকটি ছেলে গাছে উঠে আম চুরি করছে। আমাকে দেখে তারা সম্পূর্ণ অস্বীকার করল, তাদের গায়ে ময়লা নাকি লেগেছে অন্য জায়গা থেকে গাছে ওঠার জন্য নয়। তারপর যখন তাদের পকেট থেকে আমি আম বের করতে পারলাম তখন আর বলার কিছু রইল না।
যে ছেলেটি গাছে উঠেছে তাকে আমি আগে কখনো দেখিনি তাকে কিছুটা সহজ সরল মনে হচ্ছে, যে ছেলেটি নিচে দাঁড়িয়ে ছিল জানতে পারলাম সে আরো ছেলেদেরকে নিয়ে আসে এবং তাদেরকে দিয়ে আম চুরি করে। নিজে ধরাছোঁয়ার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। আমার তো রাগ হয়ে গেল আমার এত সখের আম, চোর দুটোকে বাড়ির মধ্যে নিয়ে আসলাম এবং অতিরিক্ত চালাক যে ছিল তাকে একটা থাপ্পর দিলাম।
তারপর তাদেরকে ঠান্ডা মাথায় বোঝালাম তোমাদের আম খাওয়ার প্রয়োজন হলে আমাকে বলবে, যখন দেখবে আমগুলো সব পেকে গেছে তখন তুমি বাসায় আসবে এবং আমাকে বলবে আমি তোমাদের জন্য আম দিব, কিন্তু তোমরা যদি কাঁচা থাকা অবস্থাতেই সবগুলো আম চুরি করতে থাকো তাহলে গাছের আম থাকবে না।
তারা বুঝতে পারল এবং তারা বলল আর কখনো তারা আম চুরি করতে আসবে না। তারা আর কখনো চুরি করতে এসেছিল কিনা তা জানি না। তবে আমি এই পদ্ধতিতে আরো কয়েকজনকে ধরলাম, তারপর মনে হচ্ছে কিছু পরিমাণ চুরি সংখ্যা কমে গেছে,
ফলত বাচ্চারা চুরি করবেই এতে রাগ করার কিছু নেই, কিন্তু এই বাচ্চাগুলো প্রতিদিন আসে এবং গাছের যে কোন এক পাশ শেষ করে ফেলে। কয়েকদিনের মধ্যে গাছের অর্ধেক আম তারা শেষ করে ফেলে।
এমনকি আম চুরি করতে করতে তারা বাড়ির মাঝখানে যে ডালগুলো রয়েছে সেখানে চলে আসে। তাদের অতিরিক্ত সাহস দেখার কারণে তাদেরকে কিছুটা শিক্ষা দেওয়া হল।
কিন্তু কষ্টের কথা হলো এত সখের আমার গাছগুলোকে কেটে ফেলতে হয়েছে, যখন বাড়ির কাজ ধরা হয়েছে তখন কোনোভাবেই গাছগুলোকে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। খুব খারাপ লাগছিল মানুষের প্রতি যেমন একটি ভালোবাসা থাকে ঠিক তেমনি ভালোবাসা এবং মায়া অনুভব করছিলাম সে গাছ গুলোর প্রতি। গাছগুলো যেন আমাকে বলছিল- কিরে স্বার্থ শেষ তাই বুঝি আমাকে কেটে ফেলবে?
যতদিন বাড়ির কাজ হয়েছিল আমি ততদিন আর দেখতেও যাইনি। নিজেকে কয়েক মাস বন্দি করে রেখেছিলাম ঘরের মধ্যে, দেখতে দেখতে আজ দুটি বছর পার হয়ে গেল। এই তো সেই সময় এই সময়টিতেই রাতে আমরা ঘুমাতাম না, একটু বাতাস আসলে আম পড়বে কে আগে আম কুড়াতে পারে, এই নিয়েছিল খুনসুটি। আজ হয়তো বাজার থেকে ফরমালিনযুক্ত আম কিনে খাওয়ার সামর্থ্য আছে, কিন্তু নিজের গাছের ফ্রেশ আমার খাওয়া হবে না।
সবার কাছে এটি একটি সাধারণ গল্প মনেই হতে পারেন, কিন্তু ওই গাছগুলো আমার বন্ধু ছিল, আমি আমার বন্ধুদের কে হারিয়েছি। আজ এই গ্রীষ্মকালের এই সময়টিতে আমি আমার বাল্যকালের সেই বন্ধুদের খুব মিস করছি।
শুধু এতোটুকুই বলতে চাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্যই হোক কিংবা নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্যই হোক দয়া করে সবাই বৃক্ষরোপণ করুন। আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।
আমি সাজ্জাদ সোহান
আমি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর একজন শিক্ষার্থী। আমি ঢাকাতে বসবাস করি। আমি ট্রাভেল করতে অনেক ভালোবাসি, এছাড়া অবসর সময়ে মুভি দেখি, ফটোগ্রাফি করি, গান করি। আমি একটু চাপা স্বভাবের তাই কম কথা বলি কিন্তু আমি একজন ভালো শ্রোতা। ভালোবাসি নতুন জিনিস শিখতে, মানুষকে ভালবাসি তাই মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি।
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
আপনার গল্পটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আপনি খুবই সুন্দর ভাবে গল্পটি আমাদের সাথে শেয়ার করলেন। আমাদের প্রত্যেকের জীবনে এরকম ঘটনা রয়েছে। তবে একটা বিষয় খারাপ লেগেছে, যে ওই গাছগুলো আপনার বন্ধু ছিল। কিন্তু বাড়ির কাজ করার কারণে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। যাই হোক এরকম হাজারো বন্ধু আমাদের কাছ থেকে দূরে চলে যায়। আপনার জন্য রইল শুভকামনা।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমাদের সকলেরই উচিত বৃক্ষরোপণ করা, আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি এর জন্য কাজ করার। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
টুইটার লিংক
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার গল্পটি পড়ে আমার খুবই ভালো লাগলো। আপনি চমৎকার ভাবে গল্পটি উপস্থাপন করেছেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই ধরনের গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত চমৎকার একটি মন্তব্য আমাকে উপহার দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং আপনার জন্য রইল অনেক অনেক শুভকামনা।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
পুরো গাছ টি যে গায়েব করেনি সেটাই আপনার ভাগ্য। আমাগের এলাকা হলে ও আম একটাও থাকতো না। হি হি হি।সত্যি বলতে আম কাঠাল বাচ্চারা খাবেই। আমাদের গাছের আম কত পাশের বাড়ীর ছাদের উপর থেকে পেড়ে ফেলতো। আমি তো একদিন পাশের বাড়ির ছাদের সিড়ি কোঠার দরজা একটা তালা মেরে দিয়ে চলে আসি। আম খা আর ছাদে বইয়া থাক। যাই হোক গল্পটি ভাল ছিল। ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার ঘটনাটাও বেশ চমৎকার ছিল, আমার পোস্টে মন্তব্য করার জন্য এবং আমার পোস্ট পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit