সম্পর্ক, সম্পর্কের যত্ন,এখনকার সময়ের যত্নহীন সম্পর্ক ও তার ফলাফল,প্রতিকার ও পরিশেষ।03/23/202.

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)

প্রিয় স্টিমিট বাসি ,সকলকে আমার তরফ থেকে আসসালামু ওয়ালাইকুম।আশা করি সবাই ভালো আছেন।আজ আমি আমাদের সবার পারিপার্শ্বিক সম্পর্ক নিয়ে কিছু কথা লিখতে চাই যেটা আমি প্রতিনিয়ত দেখি আমাদের আশে-পাশে।
সম্পর্কঃ
সম্পর্ক হল একে অপরের প্রতি ভালবাসা,সম্মান ,স্নেহ, আন্তরিকতা, দ্বায়িত্ববোধের বিনা সুতায় বাধা একটা মালার মত। আর সম্পর্কের এই উপাদান গুলো যখন সতেজ থাকে তখন সম্পর্ক ও সুন্দর ও সতেজ থাকে । আমারা প্রত্যেকেই জন্ম থেকেই একে অপরের সাথে কোনো না কোনো সম্পর্কে বাধা থাকি ।

জন্মগত সম্পর্কঃ
মায়ের কোলে জন্ম নেই,বাবার পরিচয়ে বড়ো হই।তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক সন্তান ও বাবা-মায়ের। আমরা একটা পরিবারে জন্ম নেই সেখানে থাকে আরো অনেকে।তাদের সাথে আমাদের অনেক রকম সম্পর্ক থাকে।কেউ দাদি,কেউ দাদা,কেউ ভাই ,কেউ বোন ,কেউ ফুপু,কেউ চাচা,কেউ মামা,কেউ খালা । এছারা ও আরো অনেক সম্পর্ক রয়েছে এই সমাজে আমাদের একে অপরের সাথে। আমরা মানুষ ,বাস করি সমাযে।এই সমাজেও আমাদের একে অপরের সাথে অনেক প্রকার সম্পর্ক রয়েছে।

পরিপূর্ণ সম্পর্কঃ
আবার আমরা যখন বড় হই তখন আমাদের নতুন একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। তার নাম ভালোবাসার সম্পর্ক ।যেখানে আমরা আমাদের বিপরিত জেন্ডারের মানুষের সাথে ভালোবাসার মানুষের সাথে বিবাহর সম্পর্কে আবদ্ধ হই। আর এটাই একজন নাড়ী ও একজন পুরুষ চেস্টা করে আজীবন ঠীক রাখতে(বাংলা দেশের প্রেক্ষাপটে)।আর এই দুজনের মাধ্যমেই নতুন জীবনের সৃষ্টি হয়।আর এই সম্পর্কে প্রতিটি নাড়ী - পুরুষ ই কোনো না কোনো সময় বাধা পরবেই।আসলে এই সম্পর্ক ছাড়া আমরা অপূর্ণ।
সম্পর্কের যত্নঃ
আমরা আমাদের মধ্য একটা সুন্দর সম্পর্ক গরি ঠিকই,কিন্তু একটা সময়ের পরে এসে তা ঠিক আগের মতো সুন্দর থাকেনা।আর এর কারন যত্নের অভাব।
একটা গাছ লাগালে যেমন লাগিয়েই তার কাজ শেষ হয় না ,সেই গাছটাকে যত্ন করে পানি দিয়ে,সার দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে ধিরে ধিরে তাকে বড় করতে হয়।তেমনি কারো সাথে একটা সম্পর্ক বানালেই হবেনা!তার সঠিক যত্ন করতে হবে ,তবেই সেই সম্পর্ক সঠিক ভাবে বড় হবে।ধিরে ধিরে একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা বাড়বে ,সম্মান বাড়বে,দায়িত্ববোধ বাড়বে। তবেইনা একটা সম্পর্ক পূর্ণতা পাবে ।
কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে হয় উল্টা।আমাদের সম্পর্ক গুলো আস্তে আস্তে নস্ট হয়ে যায়,যত্নের অভাবে।আমরা আমাদের বাসায় একটা দামি শোপিস কিনে আনলে তাকে খুব যত্ন করে রাখি,কিন্তু শোপিস টাকে যতোটুকু যত্ন করে রাখি তার ১০ ভাগের ২ ভাগ ও আমরা আমাদের সম্পর্ক গুলাকে করিনা।
কারন আমরা এটা বুজতেই পারিনা যে আমাদের কাছের মানুষ গুলার সাথে আমাদের যে সম্পর্ক তার যে যত্ন করতে হবে।আমদের পাশের - কাছের মানুষ গুলোর সাথে সম্পর্ক ভালো রাখতে হলে আগে আমাদের তাদের প্রতি যত্ন, খেয়াল রাখতে হবে।তাদের সাথে একান্ত সময় কাটাতে হবে।তাদেরকে সময় দিতে হবে। তাদের ভালোলাগা ,মন্দ লাগার খেয়াল রাখতে হবে ।এটা আমাদের দায়ীত্ব।আমরা যদি আমাদের কাছের মানুষ গুলার ছোটো ছোটো অনুভুতি গুলোর খেয়াল রাখি ,তাহলে তারা আমাদের অনেক বড় বড় অনুভুতি গুলোর খেয়াল রাখতে পারবে।এভাবেই আমাদের সম্পর্ক গুলা ভালোভাবে বেচে
উঠবে।ভালোবাসার আর একটা নাম যত্ন।যত্নহীন ভালোবাসা অনেকটা পানিছারা পুকুরে মাছ বাচেথাকার মতো।তাই সবাইলে নিয়ে ভালো থাকতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে আমাদের সম্পর্ক গুলাকে যত্ন নিতে হবে।
আজকের সময়ে আমদের পারস্পারিক সম্পর্কঃ
আমরা ২০২৩ এ বাস করছি।এক কথায় বলতে গেলে আমরা সবাই এখন যান্ত্রিক জীবন জাপন করছি।এখনে আমরা একে অপরের সাথে কথা বলার থেকে যন্ত্রের সাথেই বেশি কথা বলি বা সময় কাটাই। আধুনিকতার জোয়ারে গা ভাসাতে গিয়ে আমাদের একে অপরের সাথে যে সম্পর্ক গুলাই যে ভেসে জাচ্ছে অনেক দূরে তার খেয়াল আমরা কেউ রাখছিনা।আগে কোনো খুশির খবর বা মন খারাপ হলে আমরা আমাদের কাছের মানুষ দেরকে বলতাম,এতে করে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা বাড়তো।আর এখন আমরা ফেইসবুক,টুইটার, ইনস্টাগ্রাম,হোয়াটস এপ্স,ইত্যাদি প্রফাইলে শেয়ার করি।তাতে করে সমবেদনা বা আনন্দের বহি প্রকাশ ও অই ভারচুয়াল ভাবেই হয়।একি ঘরে আমরা এখন ৪-৫ জন লোক বাস করি (আর যৌথ পরিবার তো সেই কবেই ভেংগে গেছে),সেখানে বলতে গেলে ছোটোবড় সবার কাছেই স্মার্ট ফোন থাকে ।জারা দিন মজুর তাদের কাছেও এখন স্মার্ট ফোন আছে ,হ্যা যদিও এটা কোনো দোষের কথা না ।কিন্তু আমার কথা হচ্ছে এই ফোন হাতে থাকার কারনে আমরা একে অন্যের সাথে কথা বলা ভুলে জাচ্ছি।আগের (১০ বছর প্রায়) দিনে বাচ্চারা মায়েদের কাছে বকা খেতো বাইরে যাওয়া নিয়ে আর আজকের দিনে বকা খায় বাইরে না যাওয়া নিয়ে ।সারা দিন ঘরে বসে টিভি, ফোন দেখে বেরায়।তাদের খেলা-ধুলার প্রতি কোনো আগ্রহ ই নেই ।আর এ জন্য দায়ি কে বাচ্চারা ? না দায়ি আমাদের পরিবেশ।দায়ী আমরা ।৯০ দশকের আমরা জারা আছি তারা তো এখনো আমাদের বড়দের সামনে দারিয়ে কথা বলতে ভয়/সংকোজ বোধ করি,কিন্তু বর্তমান সময়ের ৭/৮ বছরের বাচ্চারা বড়দের সম্মান করতে জানেনা।কারন বাচ্চারা খারাপ ? না ! খারাপ আমাদের পরিবেশ।খারাপ আমরা ।কারন আমরা আমাদের বাচ্চাদের সেই সুন্দর পরিবেশ দিতে পারছিনা।আমরা আমদের সম্পর্ক গুলাকে যত্ন করছিনা । আমাদের এখনকার বাচ্চারা প্রায় প্রতিটা ঘরেই এটা দেখে বর হচ্ছে ,আমরা সবাই ব্যাস্ত কাজ নিয়ে ।কারো জন্য কারো সময় নাই ,কারো প্রতি কারো সম্মান নাই ( কোথাও কোথাও এর ব্যতিক্রম ও হয় )।আমরা তাদের ব্যহিক চাহিদা পূরন করছি ঠিকি কিন্তু তাদের মনের চাহিদা কি পুরন করছি!আমরা আমাদের বাচ্চাদের সাথে সঠিক সম্পর্ক গরে তুলতে পারছি না ।
আমি তাদের কথা বলছিনা যারা সচেতন ও সম্পর্ক,বাচ্চাদের প্রতি দায়িত্বশিল,আমি তাদের কথা বলছি জারা যত্নশিল না ।
যত্নহীন সম্পর্কের ফলাফলঃ
বর্তমানের এই যত্নহীন সম্পর্কের ফলাফল খুবি খারাপ।আমরা আজ প্রায় অভিবাবকের কাছে শুনি ,বাচ্চারা কথা শোনেনা,স্বামি বাইরে অন্যমেয়েদের কে সময় দেয় ,ঘরে স্ত্রি কে সময় দেয়না,আবার স্ত্রির ক্ষেত্রেও একি অবস্থা।সংসারে অশান্তি লেগেই থাকে।শাশুরি বউ কে পছন্দ করছেনা ,বউ শাশুরেকে ।কারোর কারো প্রতি কোনো সম্মান শ্রদ্ধ্যা নেই। কারন আমরা সম্পর্কের যত্ন নিতে ভুলে গেছি।আমরা নিজেদেরকে ভুলে গেছি।
প্রতিকারঃ
এখনকার সময়ে আমরা সবাই অনেক ব্যাস্ত। গৃহিণী থেকে শুরু করে চাকরিজীবি,কুলি থেকে শুরু করে প্রথম ক্লাস কর্মকর্তা।সবাই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি।আর এই ব্যাস্ততার মাঝেই আমাদেরকে আমাদের সম্পর্ক গুলোর সঠিক মর্যাদা দিতে হবে ও যত্ন নিতে হবে। আমাদের নিজের কে একটা সময় তালিকায় আনতে হবে।আমরা আমাদের কাজের বাইরে গিয়েও আমাদের জন্য একটা সুন্দর সময় তালিকা বানাতে পারি।যেখানে আমরা আমদের নিজেদের জন্য কিছু সময় রাখবো,বাচ্চাদের জন্য কিছু সময় রাখবো ,কাছের প্রিয় মানুষটির জন্য কিছু সময় রাখব,পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য কিছু সময় রাখবো। আমদের সকলের সবসময় সম্ভব হয়না অর্থ দিয়ে পরিবারের সকলের চাহিদা পুরন করা কিন্তু সে ক্ষেত্রেও আমাদের উচিৎ আমদের কাছের মানুষ গুলাকে ভালোবেসে আগলে রাখা ।তাদের সাথে নিজেদের ভালো মন্দ টুকু ভাগাভাগি করা।
মেয়েদের নিজেদের প্রতি খেয়েল রাখাঃ
এখনকার সময়ে আমারা জারা মা (জাদের বাচ্চাদের বয়ষ ২-৮ বছর)আছি ( আমি তাদের কথা বলছি জারা সংসার নিয়ে অনেক বেশি উৎসুক)তারা সংসারে সময় দিচ্ছি সন্তান,স্বামি পরিবারের বাকি সদস্যদের নিয়ে অনেক ভাবি।কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখাযায় যে আমাদের নিয়ে ভাবার কেউ নাই।এতে হতাশ হতে বলছিনা ,এখানে আমাদের জা করনিয়, আমরা আমাদের যত্ন নিজেরাই নিবো ।নাহলে আমরা নিজেদেরকে হারিয়ে ফেলব তখন প্রিয়মুখ গুলাই অপ্রিয় হয়ে জাবে।তাই কাছের মানুষদের জন্য হলেও আমাদেরকে নিজেদের যত্ন নিতে হবে। আমরা মেয়েরা ভালোথাকলেই ভালোথাকবে আমাদের কাছের মানুষ গুলো।আমাদের প্রিয় সন্তানেরা।
উপসংহারঃ
পরিশেষে বলতে চাই আমরা আমদে সম্পর্কের যত্ন নেই আর ,পৃথিবীতে যতদিন বেচে থাকবো ভালোভাবে বেচে থাকবো । আমার লেখায় যদি কেউ ব্যাক্তিগতো ভাবে আঘাত পেয়ে থাকেন তাহলে আমি দুক্ষিত।আমার উদ্যেশ্য একেবারেই কাউকে আঘাত করা না ।আমি সবার সাথে একান্তই আমার মতামত ভাগাভাগি করলাম। আমার চিন্তা ভুলও হতে পারে ।যদি ভুল হয় তাহলে দয়াকরে আমাকে মাফ করে দিবেন।সবার সুস্থতা কামনা করে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি।আল্লাহ হাফেজ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!