ক্রিয়েটিভ রাইটিংঃ-শীতকাল সিজনে মায়ের হাতের মজার পিঠা খাওয়ার স্মৃতি।

in hive-129948 •  last month 

আসসালামু আলাইকুম,


সবাই কেমন আছেন বন্ধুরা? আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে। আমিও ভালো আছি তবে আবহাওয়া পরিবর্তন এর সাথে সাথে সবার শরীরে অশান্তি শুরু হয়ে গেছে। সব জায়গায় শোনা যায় অসুস্থতা আর অসুস্থতা। যেহেতু শীত অনেক বেশি নেমে গেল এই সিজনে একটু সাবধানে থাকতে হবে। শীতকাল সিজন সবার যেমন প্রিয় তেমনি একটু কষ্ট কর হয়। কারণ শরীরে ঠান্ডা লাগলে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। বিশেষ করে যাদের ঠান্ডা জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য খুবই সমস্যা হয়ে থাকে। পরিবারের ছোটদের প্রতি একটু খেয়াল রাখবেন সবাই তাহলেই ভালো থাকা যাবে। কারণ মা-বাবারা যতই শারীরিকভাবে সুস্থ থাকুক না কেন যদি বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে অনেক খারাপ অবস্থা হয়ে যায়। বন্ধুরা আমি আবার হাজির হয়ে গেছি প্রতিদিনের ধারাবাহিকতায় আবার নতুন একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

vecteezy_ai-generated-a-cake-sitting-in-a-metal-pan-with-other-food_36731047.jpg
Image Location Source

আজকে আমি যে বিষয আপনাদের সাথে শেয়ার করব তা অবশ্যই শিরোনাম দেখে কিছুটা আন্দাজ করতে পারছেন। আমাদের শৈশব জীবনটা খুবই সুন্দর ছিল খুবই ভালো লাগতো তখন। এই শহর জীবন এই নগর জীবন খুবই বিষন্নময়। যদিও আমরা সুযোগ সুবিধার কারণে এই শহরে বসবাস করি। সে দিক থেকে অনেকটা সুবিধা বলা যায়। গ্রামের তুলনায় শহরের জীবনযাপন হাজার গুণে সুবিধা। যেমন বাচ্চাদের ভালো স্কুলে দেওয়া, বাচ্চাদেরকে কোচিংয়ে দেওয়া, ডাক্তার দেখানো, হুটহাট কোন কিছু প্রয়োজন হলে বের হয়ে নিয়ে আসা সবকিছুর দিক থেকে একটু সুবিধা। তবে সেই সুবিধা থেকে গ্রামের মানুষ অনেকটা বঞ্চিত। কারণ গ্রামের মানুষ যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন হঠাৎ করে রাত-বেরাতে ডাক্তার দেখানো খুবই সমস্যা হয়ে যায়। তাছাড়াও ভালো ডাক্তার দেখাতে হলে শহরে চলে আসতে হয়। ভালো কোন স্কুলে দেওয়া যায় না বাচ্চাদেরকে। ভালো কোন কোচিংয়ে পড়ানো যায় না বাচ্চাদেরকে এদিক থেকে একটু সমস্যা।

কিন্তু জীবন যাপন খাওয়া দাওয়া সবকিছু গ্রামে অনেক সুবিধা হয়। যখন ছোট ছিলাম তখন শীতের দিনে অনেক সুন্দর সময় কাটাতাম। বিশেষ করে অনেক সকালে ঘুম থেকে উঠতাম। এত শীত ছিল রাস্তায় হাঁটার সময় দূর থেকে মানুষ আসলে সেগুলো আমরা দেখতে পারতাম না। কারণ কুয়াশায় চারদিকে অনেকটা ঢেকে যেত। ঠিকমতো রাস্তাগুলো দেখা যেত না। যখন আমরা রাস্তা দিকে হেঁটে যেতাম তখন গায়ের পায়জামা গুলো ভিজে যেত। বিশেষ করে গ্রামের রাস্তাগুলো কাঁচা হওয়ার কারণে অনেক বেশি কুয়াশা পড়ে রাস্তাগুলো ভিজে যেত। সেই কুয়াশা ভেজা কাঁচা রাস্তায় যখন আমরা হাটতে যাই যখন পায়ের স্যান্ডেল গুলো ভিজে যেত। এক এলোমেলো অবস্থা হয়ে যেত পুরো শরীর। যখন রাত বেশি বেড়ে যেত তখন ঘরের টিনের চালে টিপ টিপ কুয়াশার আওয়াজ শোনা যেত। মাঝে মাঝে মনে হতো যে বৃষ্টি হচ্ছে।

আসলে তা বৃষ্টি হতো না কুয়াশা পড়তো একটু করে রাত বেড়ে গেলে। সেই টিপ টিপ কুয়াশার আওয়াজে অনেক ঘুম চলে আসতো। সেই গ্রামে সকাল সকাল মানুষ ঘুমিয়ে পড়তো রাত যেন শেষ হতো না। একটু করে ভোরের আলো ফুটে উঠলেই আমরা উঠে যেতাম। ঘুম থেকে উঠেই আমরা শীতের জামা কাপড় ভালোভাবে মুড়িয়ে সেই কুয়াশা ভেজা সকালটা উপভোগ করতাম। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগতো যখন সকালে রান্না ঘর থেকে পিঠার সুগন্ধ চলে আসতো। আহা! কত মজার ছিল সেই শীতের দিনে মায়ের হাতের মজার পিঠাগুলো। আমার মা শীতকালে প্রতিদিন কোন না কোন পিঠা তৈরি করতেন। মুখ হাত ধুয়ে শীতের দিনে চুলার পাশে যখন বসতাম একটু একটু গরম তাপ আসতো চুলা থেকে। সেই সাথে মায়ের হাতে বানানো গরম গরম পিঠা খাওয়ার স্বাদ যেন অন্যরকম।

প্রতিদিন মা কোন না কোন পিঠা তৈরি করতে শীতের দিনে। সেই সকালে গরম গরম মজার পিঠা খেয়ে যখন একটু একটু সূর্য উদয় হতো তখন বাড়ির আঙিনায় যেয়ে বসে পড়তাম একটা চেয়ার কিংবা সেই গ্রামের মোরা দিয়ে। যখন রোদের তাপগুলো গায়ে লাগতো কতই মধুর লাগতো। একটু একটু করে যখন সূর্য উদয় হতো তখন সবাই এসে জড়ো হয়ে যেত। এভাবে আমরা সবাই গল্পে মেতে উঠতাম। গ্রামের মহিলারা সেই আড্ডায় মেতে থাকতো একদম সকাল বেলায়। মাঝেমধ্যে যখন স্কুল বন্ধ থাকতো ছুটির দিন থাকত সেই ছুটির দিন আলাদাভাবে উপভোগ করতে পারতাম। গ্রামের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে ছুটে বেড়াতাম গ্রামের সব ছেলেমেয়েরা। একসাথে আমরা জড়ো হয়ে যেতাম। আবারও বিকেল বেলায় মা কোন না কোন পিঠা তৈরি করতেন। বলতে গেলে শীতের দিনগুলো পুরো মাস কোন না কোন পিঠা খেতেই থাকতাম।

যখন একটু বেলা হয়ে যেত রোদ উঠলেই গ্রামের রাস্তা দিয়ে হরক রকমের নাস্তা বিক্রি করার জন্য চলে আসতো বিক্রেতারা। সেখানে মোয়া মুড়ি থাকতো। তাছাড়াও গরম গরম জিলাপি নিয়ে চলে আসতো। গ্রামের মানুষেরা বিশেষ করে টাকা না থাকলে ধান দিয়ে মুড়ি কিংবা জিলাপি কিনে খেতো। সেই জিলাপি গুলো খেতে কত স্বাদের ছিল। যখন গ্রামের মানুষজন সেই গরম জিলাপি কিংবা মুড়ি নিতে দেখতো অন্যান্য মহিলারা ও ছুটে আসতো মুড়ি কিনার জন্য। এমন স্মৃতি কখনো আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিশেষ করে এখন গ্রামে ও শহরের সেই প্রভাব সমূহ অনেক বেশি অনুভব করা যায়। যেহেতু আধুনিকতার ছোঁয়া সব দিকে লেগে থাকছে তাই গ্রামেও সেই আধুনিকতার ছোঁয়া লেগে গেছে।

সেই আগের দিনের শীতের মজা গুলো এখন গ্রামে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। বিশেষ করে বাড়ির আঙ্গিনায় আগুন পোহানোর দৃশ্যটাও খুবই কম দেখা যায়। আর গ্রামের দোকান গুলোতে আড্ডাও অনেক কম দেখা যায়। গ্রামের মানুষ এখন আর মোলা মুড়ি তেমন একটা খেতে চাই না। কিন্তু শীতকাল আসলে শহরে বসে সেই অতীতের স্মৃতিগুলো অনেক বেশি মনে পড়ে যায়। আমার কাছে সবচেয়ে মজার বিষয় হল মায়ের হাতের পিঠাগুলো খাওয়া। কারণ আমার মা অনেক পিঠা তৈরি করতেন প্রতিদিন কোনো না কোনো পিঠা তৈরি করতেন। বিশেষ করে রাতে সেই পিঠা বানানোর সমস্ত কার্যক্রম প্রস্তুতি করে রাখতেন। সারারাত পিঠা তৈরি করার সেই ডো গুলো মজে যেত। সকালে উঠে যখন গরম তেলে ভাজে পিঠাগুলো ফুলে একদম তুলতুল হয়ে যেত।

খেতে অনেক ভালো লাগতো নরম নরম পিঠা গুলো। বিশেষ করে তেলে ভাজা পিঠাগুলো অনেক বেশি তৈরি করা হতো। আশা করি বন্ধুরা আমার আজকের শেয়ার করা মুহূর্ত আপনাদের কাছে ভালো লাগবে। আমি সেই ছোটবেলার স্মৃতি গুলো আপনাদেরকে স্মৃতিচারণ করলাম। এমন সুন্দর স্মৃতি বারবার ঘুরে বেড়ায় মনের মাঝে চোখের সামনে। আজকে আপনাদের সাথে সেই স্মৃতিগুলো লিখে শেয়ার করে নিলাম। আপনাদের পড়ে ভালো লাগবে নিশ্চয়ই।

268712224_305654151337735_1271309276897107472_n.png

লেখার উৎসনিজের অনুভূতি থেকে
ইমেজ সোর্সভিক্টিজি ডট কম
অবস্থানকক্সবাজার, বাংলাদেশ
ক্যাটাগরিক্রিয়েটিভ রাইটিং


সবাইকে অনেক ধন্যবাদ সময় দিয়ে আমার ব্লগটি ভিজিট করার জন্য।

268712224_305654151337735_1271309276897107472_n.png

🥀আল্লাহ হাফেজ সবাইকে🥀


আমার পরিচয়
আমি সামশুন নাহার হিরা। আমার ইউজার আইডি @samhunnahar। আমি আমার বাংলা ব্লগে কাজ করছি বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে। আমি বাংলা ভাষায় লিখতে-পড়তে অনেক ভালবাসি। রান্না করতে আমি অনেক পছন্দ করি। তাছাড়া সময় পেলে ভ্রমণ করি আর প্রকৃতিকে অনুভব করি। ফটোগ্রাফি করতে আমার ভীষণ ভাল লাগে। আমি মাঝে মাঝে মনের আবেগ দিয়ে কবিতা লেখার চেষ্টা করি। আমার প্রিয় শখের মধ্যে তো গান গাওয়া অন্যতম। আমার মনের ভাব বাংলায় প্রাকাশ করতে পেরে অনেক আনন্দিত। তার জন্য আমার প্রাণের/ভালবাসার কমিউনিটি "আমার বাংলা ব্লগ"কে অনেক ভালবাসি।

D5zH9SyxCKd9GJ4T6rkBdeqZw1coQAaQyCUzUF4FozBvW7DiLvzq9baKkST8T1mkhiizFXSFVv2PXDydTeMWpnYK2gToiY733FT9uwSdBSXWz7RnGmzsa8Pr9pGoyYaQFsuS3p.png

Banner_PUSS1.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

আসলে শীতকাল আসলে বিভিন্ন রকমের পিঠা তৈরি করার কার্যক্রম শুরু হয় গ্রামবাংলায়। আর ছোটবেলায় আপনার মত আমরা আম্মুর হাতে এমন বিভিন্ন রকমের পিঠা খাবার সুযোগ পেয়েছি। স্মৃতি স্মরণ করতে আমারও ভালো লাগে। আজকে আপনার জন্য বেশ অনেক কিছু জানতে পারলাম।

সেই মজার পিঠাগুলো এখন আর কই পাই হারিয়েছে অতীতকে হারিয়েছে মাকে সবকিছুতে বঞ্চিত!

আপু কি দিন হারালাম! এখন তো শুধু আফসোস করি! আগের সময়টাই ভালো ছিল। কোনে চিন্তা ছিল না। শীতের সময় সকাল হলেই মসজিদের মক্তবে চলে যেতাম। আর শীতকালে মায়ের পিঠার তো তুলনা হয় না। ভাপা পিঠা, তেলের পিঠা, ম্যারা পিঠা আরও কত রকমের পিঠা খেতাম তখন।

ভাইয়া সেই দিনতো হারিয়েছি সাথে মাকেও যে হারিয়েছি বেশ কষ্ট মনে।

আমার আজকের টাস্কঃ-

Screenshot_20241209-215120.png

Screenshot_20241209-214910.png

Screenshot_20241209-214740.png

Screenshot_20241209-214423.png