সবাইকে শুভ সন্ধ্যা,
প্রিয় বন্ধুরা আশা করি সবাই ভালো আছেন। নিশ্চয়ই পরিবারের সবাইকে নিয়ে বেশ ভালো সময় কাটাচ্ছেন এবং পরিবারের সবাই সুস্থ আছেন। বন্ধুরা আজকে আমি অনেক ক্লান্ত। যেহেতু পুরো দিন বাইরে ছিলাম কোন কাজ করার সুযোগ হলো না। প্রথমে বাচ্চাদেরকে নিয়ে স্কুলে গেছিলাম সেখানে খেলাধুলার প্র্যাকটিস করা হচ্ছে। সেখান থেকে বাসায় আসলাম আসার পরে দুপুরের জন্য রান্না বান্না করে খেলাম। আবার আজকে শব্দায়ন একাডেমিতে ৪০ তম জন্মদিন ছিল। তো সেখানে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে যেতে হলে পিঠার আইটেম তৈরি করতে হবে। কিন্তু কিছুই করতে ইচ্ছে করছিল না। কোন রকম ঝটপট একটি পিঠার আইটেম তৈরি করে কোনরকম চলে গেছিলাম চারটার দিকে। এত ব্যস্ত ছিলাম পুরো দিন পোস্ট লেখা সম্ভব হয়নি।
অবশেষে সেখান থেকে সন্ধ্যা সাতটার দিকে বাসায় ফিরলাম। বাসায় ফিরে এসে একটু ক্লান্ত লাগছিল কিছু ভালো লাগছিল না। একটু করে শুয়ে আবারো পোস্ট লেখা শুরু করে দিলাম। যদিও বেশ ক্লান্ত লাগছিল কিন্তু পোস্ট লেখা শুরু করে দিলাম। তবে সমস্যা হচ্ছে কি পোস্ট করব সেটা নিয়ে বেশ চিন্তায় ছিলাম। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম আপনাদেরকে আজকে একটি জেনারেল রাইটিং শেয়ার করি। সেটা হচ্ছে যে গত পরশুদিন আমার মামা মারা গেল। আমার মায়ের আপন চাচাতো ভাই। যখন আমার আম্মু মারা যায় এক বছর আগে তখন সেই মামাটি বিদেশ থেকে দেশে সফরে আসেন। তবে বিদেশে থাকতে তার একটু অসুস্থ লাগছিল সেজন্য দেশে আসলো। কিন্তু দেশে আসার পরে জানতে পারলো তার লিভারের সমস্যা।
অর্থাৎ লিভার একটু ক্যান্সারের মত আলামত ছিল। যদিও সেগুলো প্রথমদিকে ক্যান্সারের মতো করে ধরা দেয় না। প্রথমত একটু ফুটু ছিল অর্থাৎ আলসারের মতো ছিল। সেই মামাকে ডাক্তারের নিষেধ করেছিল সিগারেট না খাওয়ার জন্য। ধূমপান না করার জন্য একেবারে নিষেধ করেছিল। কিন্তু পরিবারের সবার অজানতে সেই প্রচুর পরিমাণ সিগারেট পান করতেন। যেহেতু সেই অভ্যাসটা আমার মামার আগে থেকেই ছিল তাই সহজে ছাড়তে পারেনি। যদিও উনি জানতে পেরেছেন আসলে উনি বেশি দিন বাঁচবেন না। মোটামুটি পারিবারিক অবস্থা ভালো ছিল। মামা যেহেতু বিদেশে ছিল ভালো টাকা পয়সা ইনকাম করেছিলেন। আর বড় ছেলে আছে সেই বিজনেস করে। দুইটা মেয়ে আছে এক মেয়ে বিয়ে হয়ে গেছে আরেক মেয়ে ঘরে আছে।
ছোট একটি সংসারে তাদের সুন্দর সময় কাটছিল। এভাবে যেতে যেতে তার সেই পেটের সমস্যাটা বিরাট আকার ধারণ করে দিল। যখন আমার আম্মা মারা গেল ২০০৩ সালের নভেম্বর মাসে তখন জানতে পারলাম যে সেই মামার রোগটা অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা চট্টগ্রামে গিয়ে চিকিৎসা করেছে। যদিও বিদেশে যেয়ে চিকিৎসা করবে এত বেশি টাকা ছিল না। কিন্তু দেশের ভিতরে যা ছিল তা এদিক ওদিক দৌড়া দৌড়ি করতে করতে টাকাগুলো শেষ করে দিয়েছিল। তারা অনেক দামী দামী ইনজেকশন করেছিলেন একবার একটা ৫০ হাজার টাকা করে। আসলে মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এমন খরচ মোটেও কাম্য নয়। যেহেতু হাতে যে টাকাগুলো ছিল সেগুলো মোটামুটি দেশের ভিতরেই দৌড়াদৌড়ি করতে করতে শেষ হয়ে গেল। অবশেষে একদম নিঃস্ব হয়ে গেল। বাবার স্বাস্থ্য এবং বারবার হায়াত বাড়ানোর জন্য ছেলে তার ব্যবসাতেও অনেক লস করতে লাগলো।
সেখান থেকে টাকা নিয়ে বাবার চিকিৎসার জন্য খরচ করে দিল। এরকম করতে করতে অবশেষে ছেলের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু কি আর করার জন্মদাতা পিতা বলে কথা। কিভাবে একজন অসুস্থ মানুষকে চেয়ে থাকা যায়। সারা জীবন যে মানুষটি পরিবারের জন্য খরচ বহন করেছে সেই মানুষ যদি অসুস্থ হয় তাহলে পরিবারের স্ত্রী সন্তানরা কিছুতেই চেয়ে থাকতে পারে না। অবশেষে বিলের ধান জমি বিক্রি করে দিল। এভাবে যেতে যেতে পুরো বছর দুই একের মধ্যেই পুরো জায়গা সম্পত্তি সব শেষ হয়ে গেল। যা ছিল সব শেষ অবশেষে একটু আশ্রয়স্থল ছিল যেটা ঘর এবং তাদের ভিটে বাড়ি। ভিটে বাড়ির জায়গায় বেশি পায়নি যেহেতু চার ভাই ছিলেন তাদের মধ্যে ভাগ বন্টন হয়ে যা পেয়েছিলেন।
কিন্তু নিরুপায় হয়ে ঘরের আশেপাশে যে ভিটেবাড়িগুলো ছিল সেগুলো বড় ভাইকে বিক্রি করে দিল। এখন শেষ পর্যায়ে আর টাকা না থাকাই আর ভালোভাবে চলছিল না। কয়েকদিন আগে শুনছিলাম মামার অসুস্থতা অনেক বেশি বেড়ে গেল। যেহেতু সবদিক থেকেই টাকা-পয়সা একদম খরচ করে ফেলল তারা এখন নিরুপায়। অবশেষে অসুস্থতা বেশি বেড়ে গেলে ঘরের মধ্যে অক্সিজেন এনে রাখল বেশ কয়েকদিন পর্যন্ত। যেহেতু উনার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ ছিল গালা পানি নামছিল না। যেগুলো খাওয়াতো সব বের করে দিত। এমন অবস্থা হয়ে গেছিল বেশ কয়েকদিন।
শারীরিক অবস্থা এত খারাপ হয়ে গেছিল তার চেহারা একদম চেনাই যাচ্ছিল না। শুধুমাত্র শরীরের চামড়া এবং হাড় গুলো নিয়ে এভাবে শুয়া অবস্থায় বেশ কয়েকদিন ছিলেন। গত পরশু হঠাৎ করে জানতে পারলাম সে মামা আর নেই এই পৃথিবীর সফর শেষ করে বিদায় নিলেন। খুবই খারাপ লাগছিল শুনে। বেচারা অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছেন এই কয়দিন। যখন কয়েক মাস আগে বাড়িতে গেছিলাম তখন মামাকে দেখছিলাম একদম ভালো ছিল। কয়েক মাসের মধ্যে উনার অবস্থা খুবই অবনতি হয়ে গেল। সবাই দেখতে গিয়েছিল যদিও আমি দেখতে যেতে পারি নাই শারীরিক অবস্থার কারণে। কিন্তু মৃত্যুর সংবাদে খুবই খারাপ লাগলো আমার কাছে।
ক্যান্সার এমন একটি রোগ যা একটি পরিবারকে একেবারেই ধ্বংস করে দেয়। এমন একটি রোগ ক্যান্সার যা পুরো পরিবারের সারা বছরের ইনকাম পুরো শেষ করে দেই। এমনটাই হয়েছিল আমার সেই মামার। যখন খরচ করতে করতে একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে আসলেন তখন ওনার আর কোন রক্ষা হলো না। যতক্ষণ পর্যন্ত টাকা খরচ করতে পারছিলেন ততক্ষণ পর্যন্ত উনার একটু সুস্থতা ছিল। যখন সবকিছু নিঃশেষ হয়ে গেল আল্লাহ উনাকে নিয়ে গেলেন। দোয়া করি ওনাকে যেন সৃষ্টিকর্তা বেহেস্ত নসিব করেন। দুনিয়াতে বেচারা অনেক কষ্ট পেলেন। আল্লাহ উনাকে জান্নাত দান করুক আমিন।
লেখার উৎস | নিজের অনুভূতি থেকে |
---|---|
ইমেজ সোর্স | ভিক্টিজি ডট কম |
অবস্থান | কক্সবাজার, বাংলাদেশ |
ক্যাটাগরি | ক্রিয়েটিভ রাইটিং |
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ সময় দিয়ে আমার ব্লগটি ভিজিট করার জন্য।
![268712224_305654151337735_1271309276897107472_n.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmUD3WR1TT66vwU4urXWaDDDT53AxDyK2LK8qqZmeDdiKb/268712224_305654151337735_1271309276897107472_n.png)
🥀আল্লাহ হাফেজ সবাইকে🥀
আমি সামশুন নাহার হিরা। আমার ইউজার আইডি @samhunnahar। আমি আমার বাংলা ব্লগে কাজ করছি বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে। আমি বাংলা ভাষায় লিখতে-পড়তে অনেক ভালবাসি। রান্না করতে আমি অনেক পছন্দ করি। তাছাড়া সময় পেলে ভ্রমণ করি আর প্রকৃতিকে অনুভব করি। ফটোগ্রাফি করতে আমার ভীষণ ভাল লাগে। আমি মাঝে মাঝে মনের আবেগ দিয়ে কবিতা লেখার চেষ্টা করি। আমার প্রিয় শখের মধ্যে তো গান গাওয়া অন্যতম। আমার মনের ভাব বাংলায় প্রাকাশ করতে পেরে অনেক আনন্দিত। তার জন্য আমার প্রাণের/ভালবাসার কমিউনিটি "আমার বাংলা ব্লগ"কে অনেক ভালবাসি।
কোথায় আছে, ক্যান্সারের কোন অ্যান্সার নেই। আসলে ক্যান্সার নামক রোগ টি যার শরীরের মধ্যে একবার আক্রমণ করে, একমাত্র সেই বুঝে কতটুকু যন্ত্রণা।সব রোগের চিকিৎসা বের হলেও ক্যান্সারের নেই কোন চিকিৎসা। এটা আসলেই আমাদের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক একটি ব্যাপার।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এই রোগ যার কাছে ধরা পড়েছে সেই জীবনে নিঃস্ব হয়ে গেছে অবশেষে মৃত্যুবরণ করতে হয়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এই ক্যান্সারের কারণে আমি আমার আপুকে হারিয়েছি। এ রোগে যে ভুগে চিকিৎসা করাতে প্রচুর টাকা খরচ করতে হয়। খরচ করলেও সিউর না, ভালো হবে কি না! আপনার পিছনে তো দেখছি অনেক টাকা খরচ করেছে। তবে শেষ অবধি মৃত্যুবরণ করেছে। আসলে যার হায়াত যতদিন ততদিনই থাকে পৃথিবীতে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি আপনার আপুর সেই ঘটনাটি আপনি অনেকবার আলোচনা করেছিলেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমার আজকের টাস্ক:-
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
https://x.com/heranahar148614/status/1885756147828990461?t=pogm-2A8pl-N8SAo70yXwg&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
পৃথিবীতে অনেক বড় বড় রোগ রয়েছে আমার তার মধ্যে ক্যান্সার অন্যতম। ক্যান্সারের চিকিৎসা এখনো একেবারে ভালোভাবে কেউ বের করতে পারেনি৷ তবে একটা সময় ছিল যে এই ক্যান্সার যার ধরা পরতো সে একেবারে নিশ্চিত মারা যেত। এই রোগ মানুষের একেবারে ধ্বংস করে দেয়৷ এখন এই চিকিৎসার কারণে মানুষজন যখন তাদের সকল অর্থ খরচ করার পরেও যখন মানুষটিকে বাচিঁয়ে রাখতে পারে না তখন এর থেকে কষ্টের আর কিছু হতে পারে না এবং এর ফলে মানুষ সব ক্ষেত্রে একেবারে নিঃস্ব হয়ে যায়৷
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এত ব্যয়বহুল ইঞ্জেকশন আর চিকিৎসার জন্য মানুষ মৃত্যুবরণ করে। তবে অনেকেই হাজারের মধ্যে একজন বেঁচে যায়। আবার অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে থাকেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপু আমার খালাতো বোনের হাজবেন্ড এভাবেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে। এই ক্যান্সার নিরবঘাতী রোগ। যা অল্প সময়ে সব শেষ করে দেয়। আমার দুলাভাইয়ের লিভারে ক্যান্সার হয়ে লিভার ফেটে যায়। কয়েক মাসের ব্যবধানে তাদের সব শেষ হয়ে যায়। আপনার মামার জন্য তো খারাপ লাগছেই তারচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে যারা বেঁচে রয়েছে তাদের জন্য। একজন মানুষকে সুস্থ করতে পরিবারের বাকি মানুষ গুলো পথে বসেছে তারপরও শেষ রক্ষা করতে পারলো না। এটাই হয়তো তাদের নিয়তি ছিল। ক্যান্সার হলে সেখান থেকে মৃত্যু ছাড়া কখনও পরিত্রাণ পাওয়া যায় না।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ আপু সবকিছু নিঃস্ব করে গেছে। তবে যারা এখন পরিবারের লোকজন আছেন তাদের আসলেই ভিটে বাড়ি ছাড়া আর কিছু রইল না।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit