আজ আমি ম্যাসেনজোর ট্যুরের ষষ্ঠ তথা শেষ পর্ব আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চলেছি। পঞ্চম পর্বে আমি ক্লাতে ওঠার সম্পূর্ণ কাহিনী আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম। আজকের পর্বে আমি আপনাদের সাথে ড্যামে নামার কাহিনী শেয়ার করব।
যখন আমরা টিলা থেকে নামতে শুরু করেছিলাম তখনই আকাশে আবার হালকা হালকা মেঘ জমছিল, এবং টিলার থেকে নামার প্রায় শেষ লগ্নে এসে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়তে আরম্ভ করে। আমাদের কাছে কোন ছাতা ছিল না। আমরা একটা ছাউনি দেখে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে নিলাম যাতে আমাদের ভিজতে না হয়। দু তিন মিনিট দাঁড়ানোর পরে অবশ্য বৃষ্টি কমে যায়। এরপরে আমরা আবার ড্যামের উদ্দেশ্যে নামতে শুরু করি।ড্যামে নামার সময়ও নির্দিষ্ট কোন রাস্তা ছিল না। মাটি-পাথর এর ওপর দিয়ে ডালপালা সরিয়ে আমাদের যেতে হয়েছিল। কিছুদূর যাওয়ার পরে আমরা একটি ফাঁকা জায়গায় গিয়ে পৌঁছলাম। যেখান থেকে ড্যামের পুরো অংশটা দেখা যাচ্ছে কিন্তু সেখান থেকে আর নিচে নামা যাচ্ছে না। কিন্তু জায়গাটা ছিল খুবই সুন্দর। তাই আমরা সেখানে ৫-১০ মিনিট দাঁড়িয়ে জায়গাটা সৌন্দর্য উপভোগ করলাম এবং বেশ কিছু ফটো তুললাম।
এরপরে আমরা সেখান থেকে বেরিয়ে অন্য পথে দিয়ে নিচে নামার রাস্তা খুঁজতে লাগলাম। তার মধ্যেই হঠাৎ করে আবার বৃষ্টি পড়তে আরম্ভ করলো। এই সময়টাতে বৃষ্টি টা আগের বারের থেকে তুলনামূলক জোরেই পড়ছিল। যেহেতু আমাদের কাছে কোন ছাতা ছিল না, এবং জঙ্গলের মধ্যে কোন ছাউনিও ছিল না, তাই আমাদের অগত্যা ভিটা ছাড়া কোন উপায়ও ছিল না। হলো তো আমরা ভেবেচিন্তে দেখলাম যে ভিজতে যখন হবে তখন দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই আমরা নিচে নামতে থাকি। মিনিট পাঁচেক পর বৃষ্টির জোর আরো বেড়ে গেল। এভাবে আস্তে আস্তে অঝোরে বৃষ্টি পড়তে লাগলো। এই সময়টাতে এত জোরে বৃষ্টি পড়ছিল যে ২০-৩০ মিটার দূরের দৃশ্য দেখা যাচ্ছিল না।
প্রচন্ড বৃষ্টিতে কাদা গড়িয়ে পাথরের ওপর যথেষ্ট পিচ্ছিল হয়ে গেছিল। ফলে আমাদের খুব সাবধানে ওঠা নামা করতে হচ্ছিল। বেশ কয়েক জায়গায় আমরা পাথরের উপর স্লিপ কেটেছি। কিন্তু আমাদের প্রত্যেকের পায়ে তুলনামূলক ভালো জুতো থাকায় খুব একটা অসুবিধায় পড়তে হয়নি।
তাছাড়া আমাদের তিনজনেরই ট্রেকিং এর অভিজ্ঞতা থাকায়,তাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে চলেছি।
এভাবে আমাদের ঘুরে ঘুরে নামতে মোটামুটি মিনিট পনেরো লাগলো। এবং ততক্ষণ একনাগাড়ে বৃষ্টি হয়ে চলল। আমরা যে কিভাবে ভিজেছি সেটা হয়তো আপনাদের আর বলে বোঝাতে হবে না। বৃষ্টির জন্য মোবাইল ফোন খুব একটা আমরা বের করতে পারিনি ফলে এই অংশের ফটো বেশি ওঠেনি। কিন্তু আমাদের কাছে আরেকটি অ্যাকশন ক্যামেরা ছিল কিছু ভিডিও করার জন্য যেটি ছিল ওয়াটারপ্রুফ। সেখানে সামান্য কিছু ছবি ছিল এবং বেশ কিছু ভিডিও ছিল। এই ভিডিওটি কিছু অংশ আমি স্ক্রিনশট নিয়ে আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।
এরপর অবশেষে আমরা ড্যামের একদম মূল অংশে অর্থাৎ নিচে পৌঁছে গেলাম। এখান থেকে ওপর টা দেখতে এক কথায় অসাধারণ লাগছিল। শুধু ওপর নয় চারিপাশটা দেখতেও খুবই সুন্দর লাগছিল। প্রথমে উপর থেকে আমরা যে বড়ো বড়ো পাথর জল গুলো দেখছিলাম, এগুলি মুখ থেকে দেখার সময় তাদের রূপ যেন সম্পূর্ণ বদলে গেছিল। তিন চারটে বড় বড় পাথরের কাছাকাছি একটু বসার জায়গা দেখে আমরা সেখানে খানিকক্ষণ বসে নিলাম। আমাদের কাছে যে খাওয়া-দাওয়ার গুলো ছিল সেগুলো খেতে লাগলাম সেখানে বসে বসেই।
সেখানে কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি কমে যায়। আমরা সেখানে প্রায়ই আধঘন্টার মত সময় অতিবাহিত করলাম এবং বেশ কিছু ফটো তুললাম। তারপর আমরা অপর রাস্তা দিয়ে ড্যাম থেকে মেইন রাস্তার উপরে চলে আসলাম। আমি রাস্তায় এসে আমরা সর্বপ্রথম একটি হোটেলের খোঁজ করলাম যেখানে ভাত পাওয়া যাবে। একটা ভালো হোটেল দেখে আমরা দাঁড়িয়ে সেখান থেকে ভাত খেয়ে আমরা আবার আমাদের হোটেলে ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
এর পরের দিন আমরা সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম।
তো বন্ধুরা এই ছিল আমার আজকের কাহিনী এবং সমগ্র ম্যাসেনজোর ট্যুর এর গল্প।
দিন | 14th August,2022 |
---|---|
ক্যামেরা পরিচিতি | POCO M3,DGI Osmo Action |
Location | ম্যাসেনজোর ড্যাম,ঝাড়খণ্ড |
আমাকেও একটি ভোট দিন
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit