|| কবিগুরুর সমাধিপ্রাঙ্গন ভ্রমণ ||

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)
◆ সকলকে নমস্কার জানিয়ে আমি আমার লেখা শুরু করছি। ◆

গত সপ্তাহের শেষে কলকাতায় আমার এক দাদার বাড়িতে সব দাদা-ভাইয়েরা মিলে একটা গেট টুগেদারের অ্যারেঞ্জমেন্ট হয়েছিল। কথা ছিল যে শুক্রবারে সন্ধ্যায় সবাই সবার অফিস থেকে ডাইরেক্ট দাদার ফ্ল্যাটে ঢুকবে। প্রসঙ্গত বলে রাখি একমাত্র আমি সেখানে স্টুডেন্ট, বাকি সবাই জব করে। সেখানে আমার সব জায়গায় ঘোরাফেরার এবং সবসময়ের যে পার্টনার দাদা আছে সেই দাদাও ইনভাইটেড ছিল। একমাত্র আমাদের বাড়ি শুধু কৃষ্ণনগরে। বাকি সবাই কলকাতার আশেপাশেই থাকে।

InShot_20220914_133654866.jpg

তো আমি আর দাদা মিলে ঠিক করি, দাদা তার কাজ কমপ্লিট করে এবং আমি আমার কলেজ থেকে ডাইরেক্ট দাদার সাথে মিট করে তারপরে একসাথে সেই দাদার ফ্ল্যাটে চলে যাব। সেদিন কে হঠাৎ করে আমার ক্লাস একটু তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। আমি দাদাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম সে কোথায়, তখন দাদা বলল দাদা মোটামুটি ফ্রি। তাই আমি আর দাদা ঠিক করলাম দুজনে একটু আগে মিট করে কলকাতায় কোথাও ঘোরাঘুরি করে, সন্ধ্যের আগে আরেক দাদার ফ্লাইটে চলে যাব। সেই মতো আমি আর আমার দাদা মিট করে আমরা ঠিক করলাম যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমাজে প্রাঙ্গনে ঘুরতে যাব। আমি দাদার সাথে দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে দেখা করি। তারপর আমরা একসাথে সেখানে যাই।

IMG_20220914_124210.jpg

যাওয়ার পথে হঠাৎ এক জায়গায় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলো, সে যেন আকাশ ভাঙ্গা বৃষ্টি। প্রায় ৩০ মিনিট একনাগাড়ে বেশ বৃষ্টি হলো। আমাদের কারোর কাছে ছাতা না থাকায় আমরা একটা দোকানে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিলাম। সেখান থেকে বেরিয়ে আমরা যথাস্থানে গেলাম।

IMG_20220914_124412.jpg

IMG_20220914_124301.jpg

প্রচন্ড বৃষ্টি হয়ে যাওয়ার কারণে জায়গাটাতে খুব একটা ভিড় ছিল না, মোটামুটি ফাঁকাই ছিল। জায়গাটিতে দাদা এর আগেও গেছিল। কিন্তু আমার ছিল এটাই প্রথম। প্রথম দেখায় জায়গাটি আমার বেশ ভালো লাগলো। তার মধ্যে অত সুন্দর একটি মেঘলা ওয়েদার পুরো জমিয়ে দিয়েছিল। সেখানে ঢুকে একটি জায়গায় দেখলাম সিমেন্টের ছাউনি করা আছে এবং তার চারপাশ দিয়ে ব্যারিকেট করা। উপরে লেখা আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমাজের স্থল। অর্থাৎ বুঝলাম সেখানেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অস্থি রয়েছে।

IMG_20220914_124243.jpg

একটা কথা না বললেই নয়,অন্ততঃ প্রত্যেকটি বাঙালির কাছে জায়গাটি একটি অসীম মূল্য রয়েছে। কিন্তু জায়গাটির সিকিউরিটি বা পরিচর্যার হার ভালো নয়। আমার ঢুকে সর্বপ্রথম যে জিনিসটি চোখে পড়ল তা হল, বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ছয়জনের একটি ফ্যামিলি তার নিচে আশ্রয় নিয়েছে। তারা রীতিমত ব্যারিকেট সরিয়ে সপরিবারে নিজেদের এবং তাদের ব্যাগ বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচাতে তার ভেতরে ঢুকে দাঁড়িয়ে রয়েছে। যেই জিনিসটা দেখতে মোটেই ভালো লাগেনি এবং সব থেকে বড় বিষয় তাদেরকে বারণ করার কেউ নেই সেখানে। গেটের মুখে একজন বয়স্ক সিকিউরিটি বসে ,তার বয়স কিছু না হলেও সত্যের কাছাকাছি। পরিবারটিকে দেখে তাদের কথা শুনে বুঝতে পারলাম তারা বাঙালি নয়। কিন্তু তাহলেও এটা তাদের জানা উচিত যে তারা কোথায় আছে। সেখানে বড় বড় করে বাংলায় এবং ইংরেজিতে লেখা আছে জায়গাটির নাম। মানলাম সেটা তাদের চোখে পড়েনি, ব্যারিকেড টা সরিয়ে তাদের ঢোকার আগে অন্তত দুবার ভাবা উচিত ছিল। এই জিনিসটা আমার খুব খারাপ লেগেছে । মানলাম যে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্য তারা সেটা করেছে, কিন্তু সেই জায়গাটি ছাড়াও তার আশেপাশে আরো অনেক ছাউনি ছিল। দুপা হাঁটলে বাইরে বেশ কয়েকটি মন্দিরও ছিল। তারা চাইলে সেখানেও আশ্রয় নিতে পারত এমনকি তাদের মতো অনেক লোক সেখানে আশ্রয় নিয়েও ছিল। আমি একবার ভাবলাম যে তাদেরকে গিয়ে কিছু বলি,অন্তত জায়গাটার মাহাত্ম্য বোঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু দাদা বারণ করল, দাদা বললো সিকিউরিটিই যখন কিছু বলছে না তখন আমাদের বলাটা শোভা পায় না। ব্যাপারটা "মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি" এরকম হয়ে যায়। তাই আমি আর তাদের কিছু বললাম না। বিষয়টা আমার পছন্দ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে সেখান থেকে সরে গেলাম।তবে আমার ব্যক্তিগত মতামত, এই বিষয় গুলিতে সরকারের আরও সচেতন হওয়া উচিৎ।

IMG_20220914_124553.jpg

IMG_20220914_124431.jpg

IMG_20220914_124319.jpg

যাই হোক, এই সমস্ত দেখে মাথাটা একটু গরম হয়ে গেছিল, ফলে মুডটাও একটু খারাপ হয়ে গেছিল। ওখানে মিনিট দশেক বসার পরে দেখলাম মুডটা পুরো পাল্টে গেল। সত্যি কথা বলতে সেখানকার পরিবেশটা ছিল এক কথায় অসাধারণ। সামনে মা গঙ্গা বয়ে চলেছে,দূরে হাওড়া ব্রীজ দেখা যাচ্ছে, আশেপাশে কোন শব্দ নেই, হালকা স্নিগ্ধ একটা ঠান্ডা ঠান্ডা ওয়েদার, আর পাশে ছিল নিমতলা শ্মশান। কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকার পর সব কেমন যেন অদ্ভুত চেঞ্জ হয়ে গেল, মনটা অদ্ভুতভাবে শান্ত হয়ে গেল।

IMG_20220914_124522.jpg

IMG_20220914_124505.jpg

🔽 এটিই হলো নিমতলা শ্মশান 🔽

IMG_20220914_124611.jpg

প্রসঙ্গত বলে রাখি আমি খুবই শান্ত প্রকৃতির একটা মানুষ। ঝুট ঝামেলা, চিৎকার-চেঁচামেচি, হৈ-হট্টগোল আমার খুব একটা পছন্দ হয় না। শান্ত পরিবেশ আমার খুবই প্রিয়। ফলে আমি জায়গাটার প্রেমে পড়ে গেলাম। আমরা প্রায় এক ঘন্টা সেখানে ছিলাম। তারপরে সেখান থেকে বেরিয়ে আমরা দাদার ফ্ল্যাটেযাওয়ার প্ল্যান করছিলাম। আমরা ঠিক করলাম রাস্তায় বেরিয়ে কিছু খাওয়া দাওয়া করে তারপর যাবো। ঠিক তখনই আমাদের একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হল। এটা আমি আপনাদের আগামী পর্বে শেয়ার করব আজকে এখানেই শেষ করছি।

IMG_20220909_154323.jpg

@samratsaha

দিন09th September,2022
ক্যামেরা পরিচিতিPOCO M3
Locationকবিগুরুর সমাধিক্ষেত্র
Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আমাদের দুজনকেই বৃষ্টি দেখি অনেক ভালোবাসে, যেখানেই যাই পিছু ছাড়ে না একদম 🥰। জায়গাটা নতুন আমার কাছে, দেখতে যেমন ভালো লাগলো লেখাগুলো পড়তেও ভালো লাগলো তেমন। তবে সবথেকে ভালো লাগছিল গঙ্গার ধার থেকে হাওড়া ব্রিজের ওই ছবিটা। এরপর গিয়ে আমিও একটা পোজ দিয়ে ছবি তুলে আসবো 😉। আর এমন একটা জায়গার নিরাপত্তা ব্যবস্থার এরকম বেহাল দশা দেখে খারাপই লাগলো ভাই।

কবিগুরুর সমাধিপ্রাঙ্গন ভ্রমণ আপনি দেখছি অসাধারণ একটি জায়গায় ভ্রমণ করেছেন সেটি হচ্ছে কবিগুরুর সমাধি প্রাঙ্গণ অনেক সুন্দর সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফির মাধ্যমে আমাদের মাঝে ফুটিয়ে তুলেছেন দেখে আমার বেশ ভালো লাগলো আসলে এমন জায়গায় বেড়াতে যেতে আমার অনেক ভালো লাগে ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

কবিগুরুর সমাধিপ্রাঙ্গন ভ্রমণ আপনি দেখছি অসাধারণ একটি জায়গায় ভ্রমণ করেছেন সেটি হচ্ছে কবিগুরুর সমাধি প্রাঙ্গণ অনেক সুন্দর সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফির মাধ্যমে আমাদের মাঝে ফুটিয়ে তুলেছেন দেখে আমার বেশ ভালো লাগলো আসলে এমন জায়গায় বেড়াতে যেতে আমার অনেক ভালো লাগে ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।