নমস্কার বন্ধুরা, আশা করি সবাই ভাল আছেন। ভগবানের আশীর্বাদে আমিও ভালো আছি। প্রায় এক মাস বাদে আমি আজকে পোস্ট করছি, এতো অনিয়মিত হওয়ার জন্য প্রথমেই আমি সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এবং এই অনিয়মিত হওয়ার কারণ কি,সেটা আমি অন্য আরেকদিন আলোচনা করবো।
যাই হোক আজকের কাহিনী শুরু করি।
আমার সর্ব শেষ পোস্টটিতে আমি 'টাকি' তে ঘুরতে যাওয়ার গল্প বলেছিলাম এবং সেটার শেষ অংশটি বলা বাকি ছিল, আজকে সেটাই আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
আগের অংশে আমার গল্প শেষ হয়েছিল দুর্গাপুজোর নবমীর দিন মিনি সুন্দরবনে গিয়ে।
তো মিনি সুন্দরবনে ঘোরার পরে সেখান থেকে বেরোনোর সময় আমরা আমাদের জমা দেওয়া আইডেন্টিটি প্রুফ ফেরত নিলাম ।তখনও আমাদের আর একবার চেক করা হলো। তারপর সেখান থেকে একই পথ দিয়ে আমরা বাইরে এসে একটু রেস্ট নিলাম এবং সেখান ডাবের জল,কেক,বিস্কুট, কোলড্রিংস এই সমস্ত খেলাম, ফলে শরীর থেকে যে এনারজি হারিয়েছিলাম তার কিছুটা পুনরুদ্ধার হল।
মোটামুটি মিনিট পনেরো কুড়ি সেখানে বসার পরে আমরা আমাদের পরের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
আমাদের পরের গন্তব্য ছিল টাকির একটি সু-বিখ্যাত জায়গা। এই জায়গাটি হয়তো আপনাদেরও অনেকে চিনে থাকতে পারেন। যারা ভারতীয় ফ্লিম ডাইরেক্টর কৌশিক গাঙ্গুলির নির্মিত "বিসর্জন" সিনেমা টি দেখেছেন, তাদের কাছে এই জায়গাটি অত্যন্ত সুপরিচিত। যারা দেখেছেন তারা হয়তো জানেন এই ছবিতে বাংলাদেশি নায়িকা জয়া এহসান ও রয়েছেন, এবং তিনি একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন।
সিনেমাটিতে যে বাড়ির টি দেখানো হয়েছে সেই বাড়িটিও এই স্থানে রয়েছে এবং তার পারিপার্শ্বিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য একই রয়েছে। এমনিতেই আমি একটু প্রকৃতিপ্রেমী প্রেমী, তার মধ্যে এই রকম একটি জায়গা দেখে আমার তো সেখান থেকে ফিরতে ইচ্ছে করছিল না।
সেখানে আমরা আধঘন্টা সময় কাটালাম এবং সেখানকার প্রাকৃতিক শোভা দেখলাম। যেদিকে তাকাই চারিদিকে শুধুই সবুজ। সেখানে একটি ছোট জলাশয় ও ছিল। সিনেমাতে যা যা দেখানো হয়েছিল, জায়গাটি এখনও একদম সেরকমই রয়েছে।
এরপর সেখান থেকে আমরা বেরিয়ে গেলাম। সেইদিন বেরোতে বেরোতে প্রায় বিকেল চারটে হয়ে গেছিল। অথচ আমাদের দুপুরের খাওয়া-দাওয়া হয়েছিল না। তাই আমরা ঠিক করলাম যেকোন একটি ভালো হোটেল দেখে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সেরে আমরা একবারে আমাদের হোটেলে ফিরে যাব। সেইমতো আমরা একটি ভালো হোটেল দেখে খেতে ঢুকলাম। সেদিন আমরা যেই হোটেলটিতে খেতে ঢুকেছিলাম সেখানে আমরা পাঁঠার মাংস নিয়েছিলাম,এবং আমাদের প্রত্যেকের সেই রান্নার স্বাদ খুবই ভালো লেগেছিল। তো আমরা চারজন মিলে ঠিক করি আগামী দিন অর্থাৎ দশমীর দিনে আমরা সেই হোটেলে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করব। কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায় দশমীর দিন তাদের হোটেল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। তারা আমাদের কথা শুনে বললেন যে পাঁঠার মাংস তারা আমাদের দিয়েছিলেন ঠিক সেই মাংসই তারা আগামী দিনের জন্য ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন কিন্তু রান্না আমাদের করে নিতে হবে।
কিন্তু আমাদের তো রান্না করে নেওয়ার মতন কোনো ব্যবস্থা ছিল না আবার পাঁঠার মাংস ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছেও ছিল না।
হোটেল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানালেন যে রাত দশটা অবধি তাদের হোটেল খোলা রয়েছে আমরা চাইলে তখন এসেও মাংস নিয়ে যেতে পারি।
সেই মুহূর্তে আমরা সেই হোটেল থেকে আমাদের থাকার হোটেলে চলে গেলাম এবং সন্ধ্যের দিকে সবাই গল্প করতে করতে আলোচনা করতে লাগলাম যে কিভাবে পাঁঠার মাংস টা রান্না করা যায়।
তখন আমাদের মধ্যে থেকে একজন বলল যে আমরা যে হোটেলে থাকছি, সেই হোটেলে দায়িত্ব দিলে তারা মাংস করে দিতে পারবে নাকি, তাহলে তাদের থেকেই করিয়ে নেব। স্বাভাবিকভাবেই আইডিয়া এটি আমাদের প্রত্যেকের খুবই ভালো লাগে। তৎক্ষণাৎ আমরা আমাদের হোটেল কর্তৃপক্ষ সাথে কথা বলি এবং তারা আমাদের সম্মতি জানায়। তাদের খালি একটাই কথা যে রান্না যিনি করবেন তাকে কিছু বকশিশ দিতে হবে। আমরাও তাদের ফিরিয়ে দিই নি। আমরা তৎক্ষণাৎ তার হাতে 500 টাকা দিয়ে মাংসের জন্য মশলাপাতি কিনে আনতে বলি এবং আগামী দিন আমাদের দুপুরে চারজনের জন্য ভাত রান্না করে ফেলতে বলি। তারপরে আমরা চারজন মিলে দুটি বাইকে সেই দুপুরের হোটেলে মাংস আনতে চলে যাই। মাংস নিয়ে এসে আমরা আমাদের হোটেলের রাঁধুনিকে দিয়ে দিই।
এরপর পরদিন সকাল অর্থাৎ দশমীর দিন আমরা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে জলখাবার খেয়ে হোটেলে বারান্দায় বসে পড়ি বিসর্জনের শোভাযাত্রা দেখার জন্য।
আমি প্রথম দিনই বলেছিলাম যে আমরা যে হোটেলে ছিলাম সেই হোটেলের গায়ে লাগানো বিসর্জনের ঘাট, তো আমাদের বিসর্জনের শোভাযাত্রা দেখতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয়নি।খুবই আরামদায়ক ভাবে আমরা শোভাযাত্রা দেখেছি।
মোটামুটি বেলা এগারোটা থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে যায়। কেউ কেউ তাদের প্রতিমা সরাসরি নদীর জলে ভাসিয়ে দেয় ,আবার কেউ কেউ তাদের প্রতিমা নৌকা করে নদীতে ঘোড়ায় এবং তারপরে নৌকা থেকে সরাসরি জলে বিসর্জন দেয়। এই পুরো শোভাযাত্রার সবথেকে আকর্ষনীয় বিষয়টি ছিল যে নদীর ওপার থেকে বাংলাদেশের লোকজন ও আমাদের শোভাযাত্রা দেখতে ভিড় করেছিল।
এবং নদীর মাঝ বরাবর ভারতীয় সেনার কিছু নৌকা একটি বর্ডার মতো তৈরি করেছিল যাতে ভুলবশত এবারে নৌকাগুলি ওপারে না চলে যায়। এভাবে দেখতে দেখতে প্রায় বিকেল চারটে থেকে সাড়ে চারটে অব্দি শোভাযাত্রা চলল মাঝখানে আমাদের দুপুরের খাওয়া সেরে নিলাম।
তারপর সন্ধ্যাবেলা আমরা সবাই মিলে বাইরে বেরিয়ে একটু কিছু খাওয়া দাওয়া করে হোটেলে ফিরে এসে আগামীদিন বাড়ি রওনা দেওয়ার জন্য ব্যাগ গোছানো শুরু করে দিলাম।
তো বন্ধুরা এই ছিল আমার পুরো টাকি সফরের কাহিনী। আশা করি আপনাদের সকলের ভাল লাগবে। যারা পুরো সফরটা পড়লেন, কমেন্টে জানাবেন কেমন লাগলো।
ভালো থাকবেন সকলে।