তো বন্ধুরা আজকে আমি আমার ডুয়ার্স সফরের সর্বশেষ পর্বটি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি। এই সফরের শেষ দিনে আমাদের গন্তব্য ছিল গরুমারা অভয়ারণ্য।
এই গরুমারা অভয়ারণ্য পুরো ভারতে যথেষ্ট বিখ্যাত একটি স্থান। মূলত গন্ডারের জন্য স্থানটি বিখ্যাত। গন্ডার ছাড়াও এখানে হরিণ ,ময়ূর ,বাইসান ,বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ,প্রচুর পাখি ,চিতা, বক, হাতি এসমস্ত প্রাণীও রয়েছে।এটি তৃণভূমি এবং বন সহ একটি মাঝারি আকারের পার্ক।এই অভয়ারান্ন টি 79.99 কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত।এটি 1992 সালে তৈরি হয়।2009 সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রক ভারতের সংরক্ষিত এলাকার মধ্যে পার্কটিকে সেরা হিসাবে ঘোষণা করেছে। এই পার্টি অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিকে হিমালয় পর্বতের পাদদেশ ডুয়ার্স অঞ্চলে।
শেষ দিনের আমাদের সিডিউল ছিল ব্যাগ পত্র গুছিয়ে রেখে বারোটার মধ্যে সবার রুম ছেড়ে দিয়ে রেডি হয়ে থাকতে হবে। রান্নার লোকজন রান্না করবে। দুপুর ০১:৩০ এর মধ্যে আমাদের প্রত্যেককে লাঞ্চ করে নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হবে। জঙ্গল সাফারি জন্য আলাদা হুডখোলা গাড়ি ছিল। মোট ২৪ জন জঙ্গল সাফারি তে যাওয়ার। এক একটি গাড়িতে ছয়জনের করে ওঠার পারমিট। তাই আমাদের মোট চারটে গাড়ি বুক করতে হয়েছিল। তিনটে গাড়ি আমাদের রিসোর্ট থেকে এসেই নিয়ে গেছিল,এবং বাকি ছয়জনের জন্য আমাদের আলাদা যে গাড়ি ছিল সেই গাড়ি করে ওই অভয়ারণ্য অব্দি পৌঁছাতে হয়েছিল তারপরে সেখান থেকে জঙ্গল সাফারি আলাদা গাড়িতে উঠতে হয়েছিল।
এই সাফারির জন্য বিভিন্ন স্লট থাকে। আমাদের স্লট ছিল দুপুর দুটো থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত। তার মধ্যে আমাদের ঘুরে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেকটা গাড়িতে ড্রাইভার এর সাথে একজন করে গাইড ছিল। তারা আমাদের সবকিছু দেখিয়ে, বুঝিয়ে দিচ্ছিল।
তো আমরা সঠিক সময়ে ফরেস্টে পৌঁছে গেলাম। সেখানে সবার আইডি দেখে পারমিট করিয়ে তারপরে পারমিশন পেতে হলো। জঙ্গলের শুরুতেই একদিকে চা বাগান ভর্তি। যতদূর চোখ যায় চা বাগান ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ে না। এবং তার এক পাশ দিয়ে রাস্তা। অল্প একটু দূর যাওয়ার পরেই চা বাগান শেষ হয়ে শুরু হলো ঘন জঙ্গল। ড্রাইভার আমাদের বললেন যে দুই পাশে ভালোভাবে চোখ রাখতে যদি কিছু থাকে তাহলে দেখা যাবে।
গাড়ি মোটামুটি আস্তে আস্তেই চলছিল আমরা প্রত্যেকে যদি পাশে নজর রাখছিলাম কেউ কিছু দেখতে পারছিলাম না। এভাবে প্রায় ১৫ মিনিট যাওয়ার পর ড্রাইভার হঠাৎ করে গাড়ি স্লো করে দিয়ে ডান দিকে তাকাতে বলে। সেদিকে তাকিয়ে দেখি একটি ময়ূর জঙ্গল থেকে বাইরের দিকে বেরিয়ে আসছে।
আমাদের গাড়ির শব্দ শুনে সে সেখানে দাঁড়িয়ে যায় আর এই করে না। আমরা সেখানে একটুখানি দাঁড়িয়ে দেখলাম এবং কিছু ফটো তুললাম। তারপর সেখান থেকে আবার ৭-৮ মিনিট যাওয়ার পরে একটা জায়গায় গাড়ি দাঁড়ালো। পাশে একটি কাঠের ওয়াচ টাওয়ার ছিল। আমাদেরকে বলল সেখানে গিয়ে দাঁড়াতে কিছু দেখার আছে। আমরা ওয়াচ টাওয়ারে গিয়ে দাঁড়ালাম এবং থেকে যতদূর চোখ চাই বিস্তীর্ণ জঙ্গল ছাড়া কিছুই চোখে পড়ে না। ওয়াচ টাওয়ার এর কাছেই একটি নদী জঙ্গলের মধ্যে দিয়েই বয়ে গেছে কিন্তু সেটাকে দেখে নদী বলা চলে না।
কারণ জল ছিল খুবই সামান্য তবে বর্ষাকালে এই নদী তে অনেক জল থাকে এবং বেশ স্রোত থাকে। আসলে বনের সব পশুপাখি জন্তু-জানোয়াররা এইখানে জল খেতে আসে।তাই ওয়াচ টাওয়ার টা এমন জাইয়গায় করা হয়েছে যাতে সেখান থেকে তাদেরকে দেখা যায়।
আমরা সেখানে প্রায় কুড়ি পঁচিশ মিনিট ছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় সামান্য কয়েকটি হরিণ আরেকটি বাইসান ছাড়া কিছু দেখতে পেলাম না। তারপরে সেখান থেকে আমরা আবার গাড়িতে করে রওনা দিলাম।
যাওয়ার পথে একটি জায়গায় দেখলাম তিনটা হাতি দাঁড় করানো আছে এবং সেখানে কিছু লোকজন তাদেরকে সেবা সুশ্রূষা করছে ,স্নান করাচ্ছে, খাওয়াচ্ছে।
আমাদের গাইড বলল এই হাতগুলিকে কুনকি হাতি বলে। বন জঙ্গল দেখভালে দায়িত্বে যেসব কর্মীরা রয়েছে, তারা এ হাতির পিঠে চড়ে জঙ্গলের ভেতরে ঢুকে। যখন জঙ্গলের কোন প্রাণী অসুস্থ হয় বা জঙ্গল পরিচর্যা করতে যায় বা কোনো কারণবশত যখন জঙ্গলের ভেতরে ঢোকার প্রয়োজন হয় তখনই হাতে-গুলি ব্যবহৃত হয়। আমরা সেখানে অল্প কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কয়েকটা ছবি তুললাম এবং আবার রওনা দিয়ে দিলাম।
এরপর একইভাবে গাড়ি চলতে চলতে আমরা আবার যেখানদিয়ে ঢুকেছিলাম সেখানে চলে এলাম এবং বুঝতে পারলাম আমাদের জঙ্গল সাফারি শেষ হয়ে গেছে।
দেড় ঘন্টা জঙ্গল সাফারি এক ঘণ্টার মধ্যে সম্পন্ন হয়ে গেছিল। কারণ আমাদের দেখার কিছুই ছিল না। আসলে এই সময়টাতে খুব একটা প্রাণী বা জন্তু জানোয়ার চোখে পড়ে না। ওখানকার লোকজন এবং গাইড গুলি বলছিলেন, বর্ষাকালের সময় অনেক। তারা একেবারে রাস্তার উপরে উঠে চলে আসে। এবং শীতকালে অনেক হরিণ অন্যান্য প্রাণী এবং কখনো কখনো চিতা বাঘও চোখে পড়ে ওই নদীর ধারে জল খেতে বা রোদ পোহাতে।
আকর্ষণীয় সেরম কিছু দেখতে পেলাম না বলে মনটা একটু খারাপ লাগছিল ঠিকই কিন্তু কিছু করার ছিল না। এরপরে আমরা জঙ্গল সাফারি গাড়ি ছেড়ে দিয়ে আমাদের টাটা সুমোতে উঠে রিসোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। যাওয়ার পথে চালশা শহরের একটি বিখ্যাত চায়ের দোকান থেকে পরিবার পর্যন্ত জন্য বেশ কয়েক প্যাকেট চা কিনে নিয়ে এলাম।
রিসর্টে আমাদের ব্যাগ গোছানো ছিল। আমরা রিসোর্টে ফিরে ব্যাগ নিয়ে আবার আমরা নিউ মালবাজার স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আমাদের বাড়ি ফেরার ট্রেন ছিল বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। আমরা পৌনে পাঁচটারও কিছু পূর্বে স্টেশনে পৌঁছে গেলাম এবং অপেক্ষা করতে লাগছিলাম ট্রেনের জন্য।
সেদিনকে ট্রেনে উঠে পরের দিনকে সকাল দশটার মধ্যে আমরা বাড়ি পৌঁছে যাই।
তো বন্ধুরা এই ছিল আমার ডুয়ার্স সফর।
আশা করি আপনাদের ভালো লাগলো।
এরপরে আমি আরো অনেক ভ্রমণ কাহিনী আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।
আজকে এখানেই শেষ করছি।
স্থান | গরুমারা অভয়ারণ্য |
---|---|
ক্যামেরা পরিচিতি | POCO M3 |
দিন | 4th June,2022 |
অনেক সুন্দর একটি স্থান গ্রহণ করেছেন আপনি। আপনার ভ্রমণকৃত স্থানের বর্ণনা গুলো পড়ে বলতে পারলাম জায়গাটি অনেক জনপ্রিয় স্থান। আমিও ভ্রমন করতে অনেক পছন্দ করি।গরুমারা অভয়ারণ্যের বিভিন্ন স্থানের ফটোগ্রাফি গুলো অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে। দারুন একটি ভ্রমণ কাহিনী শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমার পোস্টটি পড়ে মন্তব্য করার জন্যে অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।ভালো থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Love the floofs. Resteemed!🐶🐈
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit