This post is made for recovering lost SBD : 1470
Recovered so far : 1346.928 SBD
গল্প (রক্ত তৃষা) - পর্ব ৩৬
Copyright Free Image Source : PixaBay
সহসা আকাশের বুক চিরে আবার বিদ্যুতের শিখা দেখা দিলো, আর তার ক্ষণেক পরেই কড় কড় কড়াৎ !! শ্মশানভূমির কোথাও যেনো বাজ পড়লো বিকট শব্দে । হাওয়ার বেগ তীব্রতর হলো । ঝিঁ ঝিঁ পোকার সেই অবিশ্রান্ত ডাক থেমে গিয়েছে, নদীতীর থেকে শোনা যাচ্ছে না আর শেয়ালের ডাকও । চারিদিক সহসা ভারী নিঃস্তব্ধ হয়ে গেলো । বিশ্রী থমথমে একটা পরিবেশ । ভয়ঙ্কর কিছু ঘটতে যাওয়ার পূর্বাভাস এটি ।
এমনভাবে সহসা শ্মশানের পরিবেশ পাল্টে যেতে দেখে বুক কেঁপে উঠলো দুর্ধর্ষ, অসীম সাহসী চন্ডেরও । চারিদিকে কেমন যেন একটা অদ্ভুত পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে । রক্ত তৃষা, হিংসা আর হননেচ্ছায় পূর্ণ এই পরিবেশে ধীরে ধীরে জন্ম নিচ্ছে এক ভয়ঙ্কর আদিম আতঙ্ক । সেই আতঙ্কের কোনো নাম নেই, সেই আতঙ্কের কোনো রূপ নেই, শুধু ভয়ার্ত শীতল হৃদপিন্ড দিয়ে এই আদিম প্রাগৈতিহাসিক আতঙ্ক অনুভব করা যায় ।
কাপালিকের বুক দুরু দুরু করছে । নিতান্তই ব্রাহ্মণ সন্তান পুজোয় বসেছে, তাই ইচ্ছে করলেও ছুটে পালাতে পারছে না সে । শ্মশান কালীর পুজো করা বড় ভয়ানক ব্যাপার, এই পুজোয় কোনো ব্যাঘাত হলে সবার আগে পুরোহিতের জীবন নিয়ে টানাটানি পড়ে যায় । তাই কাপালিকের দুই পা যেনো ইচ্ছে করছে এক ছুটে এখান থেকে পালিয়ে যায়, শুধু পারছে না পুজো অসমাপ্ত থেকে যাবে এ জন্য ।
কিছুক্ষণ বিমূঢ় অবস্থায় কাটানোর পর চন্ডর মনে আবার কিছুটা সাহসের সঞ্চার হলো । চোখের ইশারা করে কিছু জানতে চাইলো সে কাপালিকের কাছে । কাপালিক ঘাড় কাত করে মৃদু কম্পিত কণ্ঠে বললো, "সময় হয়েছে !"
চন্ড অনুচ্চ স্বরে তার দুই সঙ্গীদের কিছু নির্দেশ দিলো । সঙ্গে সঙ্গে একজন চলে গেলো বেদীর কাছে, আরেকজন গেলো খড়গের নিকট । বেদীর কাছে যে যমদূতটি গিয়েছিলো সে হঠাৎ বেদীর উপরে লাফ দিয়ে উঠে হাঁটু গেঁড়ে বসে কমলাদেবীর দুই হাত পিছমোড়া করে বেঁধে ফেললো । এরপরে চুলের মুঠি ধরে সবেগে বেদী থেকে নামিয়ে এনে হাঁড়িকাঠের দিকে নিয়ে চললো ।
যন্ত্রণার অভিঘাতে কমলাদেবীর মাথা যেন ছিঁড়ে পড়তে চাইছে, চুলের গোড়ায় রক্ত জমে যাচ্ছে, তলপেটে তীক্ষ্ণ একটা ব্যাথা মোচড় দিচ্ছে । গর্ভের শিশুটি এখন বড় বেশি নড়াচড়া করছে, পেট ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে যেনো । বাতাসের বেগ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে, আর সেই তীব্র হাওয়ায় ভেজা শাড়িতে বড্ড শীত করছে তাঁর । ঠান্ডা জলের ঝাপটে নেশার ঘোর কাটছে তাঁর ধীরে ধীরে । কিছু একটা মাথার মধ্যে অবিরত পাক খাচ্ছে । তিনি এখন কোথায় ? কী করছেন তিনি ? কিছুই ভালো করে বোধগম্য হচ্ছে না এখনও ।
চুল ধরে টানতে টানতে সেই বিশাল হাঁড়িকাঠের সামনের কোপানো মাটির উপর এনে কমলাদেবীকে টেনে হিঁচড়ে ফেলে রাখলো চন্ডের সেই প্রথম অনুচরটি । হাঁড়িকাঠের দু'পাশে দু'টো মশাল জ্বলছে । সেই মশালের আলোয় সিঁদুর মাখানো প্রকান্ড হাঁড়িকাঠটার দিকে অপলক চোখে চেয়ে রইলেন কমলাদেবী । মাথাটা কিছুটা পরিষ্কার হয়েছে এখন । হাঁড়িকাঠ চিনতে পেরেছেন তিনি । এবং এও মনে পড়েছে যে হাঁড়িকাঠ কী কাজে ব্যবহৃত হয় ! বিস্ময় মাখানো অবাক দৃষ্টিতে তিনি চেয়ে রইলেন হাঁড়িকাঠের দিকে । ধীরে ধীরে তাঁর এখন সব মনে পড়ে যাচ্ছে । তিনি কে ? কোথায় এখন তিনি ? কী জন্য এখানে এসেছেন ? সব, সঅব মনে পড়ে যাচ্ছে তাঁর । ধীরে ধীরে কমলার বিস্ময়মাখা দৃষ্টি বদলে গেলো, বিস্ময়ের জায়গায় চরম আতঙ্ক স্থান করে নিলো । চরম আতঙ্কে বিস্ফারিত হয়ে উঠলো কমলার অক্ষি দ্বয় ।
চন্ড কিন্তু কমলাদেবীর মধ্যে ঘটা এই পরিবর্তন টের পেলো । সে দ্রুত যমদূতটাকে কমলার দুই পা কষে বাঁধার নির্দেশ দিলো, সেই সাথে মুখও বাঁধতে বললো । নেশা কেটে যাচ্ছে বড় দ্রুত, এর মধ্যে কমলাদেবীর মুখে আগল দেওয়াটা বড্ড জরুরী ।
শ্মশান থেকে মাত্র কিছুটা দূরে সেই রহস্যময় মূর্তিটি এখন প্রায় বাতাসের বেগে ছুটে আসছে মন্দিরের দিকে । হাওয়ায় তার মাথার জটা থেকে সাপের ফণার মতো চুলের গোছা উড়ছে, ভীষণ ক্রোধে তার দুই চোখে আগুন ঝরছে । হাতের ভয়ঙ্কর অস্ত্রটাকে বাগিয়ে ধরে সে ঝড়ের বেগে ছুটে চলেছে মন্দির পানে ।
[চলবে]
এই পার্ট টা পড়ে মনে হচ্ছে হয়তো অভিশপ্ত রাতটা কমলাদেবীর শেষ রাত হওয়ার বদলে চন্ডের শেষ রাত হতে যাচ্ছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমার মনে হচ্ছে সেই রহস্যময় মূর্তিটি কমলাদেবীকে বাঁচাতে সক্ষম হবে। তারপর কাপালিক এবং চন্ডকে উচিত শিক্ষা দিবে। যাইহোক এই পর্বটি পড়ার সময় বেশ উত্তেজনা কাজ করেছে দাদা। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম দাদা।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এক নিমিষেই পড়ে ফেললাম, তবে এখনো কিছুটা সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে মনের ভিতরে, গল্প তো মুহুর্তে মুহূর্তে মোচড় খাচ্ছে, দেখি কি অপেক্ষা করছে পরবর্তী পর্বে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
রহস্যময় মুর্তিটিকি কি কমলাদেবীর বলির আগেই পৌঁছাতে পারবে? নাকি বড্ড দেরি হয়ে যাবে। যেকোনো মূল্যেই চন্ড তো বলি শেষ করতে চাইছে। কমলাদেবী যেন বেঁচে ফিরতে পারে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit