জেনারেল রাইটিংঃ বাংলাদেশের ফুসফুস সুন্দরবন।

in hive-129948 •  8 months ago 

সবাইকে শুভেচ্ছা।

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,আশাকরি সবাই ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি । প্রত্যাশা করি সবসময় ভালো থাকেন সবাই। আজ ১৫ ই জ্যৈষ্ঠ,১৪৩১ বঙ্গাব্দ। ২৯ শে মে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ।

g1.jpg
source

আজ সন্ধ্যা ৬.৪৩ মিনিটে ঢাকা,চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের অধিকাংশ স্থানে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পের উৎপত্তি স্থল ছিল মিয়ানমারে। তাই ঢাকার তুলনায় চট্রগ্রাম ও সিলেট অনুভূত হয়েছে বেশী।রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.৬। ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ পাওয়া না গেলেও চট্রগ্রাম ও সিলেটের মানুষ আতংকে ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন। ঘূর্ণিঝড়ের পর আরেক প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেল দেশের মানুষ।


বন্ধুরা,আমার বাংলা ব্লগের নিয়মিত ব্লগিংয়ে আজ হাজির হয়েছি একটি জেনারেল রাইটিং নিয়ে। প্রতি সপ্তাহের ন্যায় আজও সমসাময়িক বিষয়ের উপর লেখা আজকের জেনারেল রাইটিং এর বিষয় 'বাংলাদেশের ফুসফুস সুন্দরবন'। আপনারা জানেন গত দু'দিন আগে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল তান্ডব চালিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী ১৬ জন মানুষের প্রাণহানিসহ ঘরবাড়ি -ক্ষেত-খামার,পুকুর -ঘেরসহ গাছপালা, পশুপাখির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশের ফুসফুস বলে খ্যাত, বিশ্বের অন্যতম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ও বিশ্বের বৃহত্তর শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবন।বুক চেতিয়ে ঘূর্ণিঝড় রিমালের হাত থেকে খুলনা বিভাগের উপকূলীয় মানুষকে রক্ষা করেছে বরাবরের মত। যার ফলে সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। যা সারিয়ে উঠতে প্রায় ৪০ বছর সময় লাগবে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

এর আগের ঘূর্ণিঝড়েও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুন্দরবনের। কিন্তু লাস্ট দুটি ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ও আম্পানের তুলনায় এবার সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই-তিন গুণ বেশি। বন বিভাগের তথ্য মতে এবার ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে পুরো সুন্দরবন ৩ থেকে ৯ ফুট পানির নীচে তলিয়ে ছিল ৪৮ ঘন্টা। যা নিকট অতীতের যে কোন ঘূর্ণিঝড়ে এত দীর্ঘ সময় পানির নীচে তলিয়ে ছিল না সুন্দরবন। পানির নীচে দীর্ঘ ৪৮ ঘন্টা তলিয়ে থাকার কারণে বনের জীববৈচিত্র্য ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে হরিণ,শুকর,গুইসাপ,সাপ ও বিভিন্ন প্রকার কীটপতঙ্গ ও প্রাণীর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।এছাড়া পাখির বাসা,ডিম,ছানার মারাত্নক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এবং বনের পুকুর গুলো তলিয়ে যাওয়ায় লবনাক্ত হয়ে গেছে যার ফলে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে।৷যা পশু পাখির জন্য হুমকিস্বরূপ। বন বিভাগ এখন পর্যন্ত ৩০ টি মৃত হরিণ উদ্ধার করেছে। এছাড়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য পশুপাখির মৃত্যুদেহ।

শুধু পশু-পাখির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে না নয়। গোলপাতার ১১ কিলোমিটার বাগানসহ অসংখ্য গাছ পালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছি। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন অবকাঠামোরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন বিভাগের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল, আম্পান, আইলা ও সিডরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও রিমালের মত এত দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।আর রিমালের দুর্যোগ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণ জোয়ার-ভাটার চক্র। এবার দীর্ঘ ৪৮ ঘণ্টা ভাটা পড়েনি।

প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ে মায়ের মত আগলে রেখেছে মানুষকে সুন্দরবন। সুন্দরবনকে রক্ষার দায়িত্বে আমাদের। এবার বড় করে দেখা দিয়েছে সুন্দরবনকে রক্ষার। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে খুলনা অঞ্চলের মানুষকে বাঁচাতে সুন্দরবনকে রক্ষার বিকল্প নেই। এজন্য বনকে বনের মত বেড়ে উঠার সুযোগ দিতে হবে। মনুষ্যসৃষ্ট যেকোনো কর্মকান্ড থেকে সুন্দরবনকে দূরে রাখতে হবে। সুন্দরবনের ক্ষতি হয় এমন কার্যক্রম বন্ধ করে, বনের পশু-পাখি,গাছপালাও কীটপতঙ্গ উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।বাংলাদেশের ফুসফুস সুন্দরবন আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে। সুন্দরবন বাঁচলে ঘূর্ণিঝড়ের হাত থেকে মানুষ বাঁচবে।

পোস্ট বিবরণ

পোস্টজেনারেল রাইটিং
পোস্ট তৈরিselina 75
তারিখ২৯শে মে,২০২৪
লোকেশনঢাকা

আমার পরিচয়

আমি সেলিনা আখতার শেলী। বর্তমানে গৃহিনী। জন্মসূত্রে বাংলাদেশী। জন্ম,বেড়ে ওঠা চট্রগ্রাম শহরে। চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স-মাস্টার্স। দীর্ঘ দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার রক্ষায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করেছি।স্বামীর বাড়ী দিনাজপুরে,বর্তমানে ঢাকায় থাকি।ঘুরে বেড়ানো,বই পড়া,অজানাকে জানা,নিত্য নতুন রান্না ও বিভিন্ন ধরণের হাতের কাজ করা আমার শখ।দেশাত্ববোধ,দেশীয় শিল্প,সাহিত্য ও সংস্কৃতি আমার অন্যতম ভালো লাগা।এদেশে জন্মগ্রহণ করে আমি গর্বিত।

সাথে থাকার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

image.png

আসলেই বাংলাদেশ কে সকল উপকূলীয় ঝড় ঝাপটা থেকে মায়ের মতোনই যত্নে বাঁচিয়ে রাখছে সুন্দরবন। তবে এবারে রেমালে অনেক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। নিউজে মৃত হরিণ এবং অন্যান্য পশুপাখির ছবি দেখে ভীষণ ই মন খারাপ হয়েছে আমারো! এই ক্ষয়ক্ষতি পূরণ হতে গবেষণা বললে ৪০ বছর লাগবে, তবে আমার মনে হয় তাতেও এই ক্ষয়ক্ষতি পূরণ হবার নয়!

ঠিক বলেছেন এবারের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি । এর কারন আবহাওয়ার পরিবর্তন। ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।

আসলে ভূমিকম্প হয়েছে এটা আমি অনুভব করতে পারিনি পরে নিউজ দেখে জানতে পারলাম যাইহোক সুন্দরবন আমাদেরকে প্রতিনিয়ত রক্ষা করে। বিশেষ করে খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষগুলো কে একদম মায়ের মতই আগলে রাখে। কেননা যেকোনো দুর্যোগের ক্ষেত্রে সুন্দরবন সেটা প্রটেক্ট করে।

ঠিক তাই বার বার সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করছে। তবুও আমারা সুন্দরবন এর যত্ন নেই না। মতামতের জন্য ধন্যবাদ।

সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে খুব সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন আপনি। বেশ অনেক তথ্য বহন করেছেন আপনার আজকের এই পোষ্টের মাঝে। তবে সৌভাগ্যের বিষয়ে আমিও একদিন সুন্দরবন ভ্রমণ করতে গিয়েছিলাম সাতক্ষীরা শ্যামনগর হয়ে। যাই হোক খুবই ভালো লাগলো এত সুন্দর একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন দেখে।

আমি চেস্টা করেছি কিছু কিছু তথ্য শেয়ার করতে।ধন্যবাদ ভাইয়া।

গতকাল ফেসবুকে ভুমিকম্পের বিষয়টি দেখেছিলাম। তবে আমি কিন্তু অনূভব করিনি। সুন্দরবন সৃষ্টিকর্তার পক্ষে থেকে বাংলাদেশের জন্য নিয়ামত স্বরুপ। ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ যায় সুন্দরবনের উপর দিয়ে। এটা যেন প্রতিবার দূর্যোগ থেকে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি থেকে আমাদের রক্ষা করছে। তবে এবার ক্ষতির পরিমাণ বেশিই হয়ে গিয়েছে। দেখলাম অনেক হরিণ মারা গিয়েছে জলোচ্ছাসের পানিতে।

জি ভাইয়া এবারের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি।তা পূরন হতে অনেক সময় লাগবে। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।