জেনারেল রাইটিংঃ পেরেন্টিং।

in hive-129948 •  11 months ago 

সবাইকে বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা।

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা, কেমন আছেন? আশাকরি সবাই ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি।বিজয়া দশমী ও দেবী দূর্গার বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গোৎসব। দুর্গোৎসব শেষ হতে না হতেই ঘূর্ণিঝড় হামুন ধেয়ে আসছে। সমুদ্র বন্দর গুলোকে সাত নম্বর বিপদসংকেত দেখানো হয়েছে। উপকূলের মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসার কাজ চলছে। আমরা আশা করবো উপকূলবর্তী মানুষ নিরাপদে থাকবেন। প্রিয় বন্ধুরা, আমার বাংলা ব্লগের নিয়মিত ব্লগিং এ আজ আমি একটি জেনারেল রাইটিং শেয়ার করবো।আমি চেষ্টা করি প্রতি সপ্তাহে একটি জেনারেল রাইটিং শেয়ার করতে ।আজ শেয়ার করবো প্যারেন্টিং বিষয়ে।

p1.jpg

source

আমরা সবাই জানি আজকের শিশু আগামী দিনের রাস্ট্রের চালিকা শক্তি। আর শিশুর সঠিক বিকাশের জন্য রাস্ট্রের যেমন ভূমিকা রয়েছে তেমনই রয়েছে পরিবারের । শিশুর বিকাশের জন্য পরিবার একটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। আমরা সবাই জানি ০-১৮ বছর পর্যন্ত সকল মানব সন্তানকে শিশু বলা হয় । কারন এই সময় তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঠিকভাবে হয় না। আর তাই তাদের সঠিকভাবে গড়ে তোলার জন্য পরিবারের বড় ভূমিকা রয়েছে।

আমরা সবাই শিশু থেকে বড় হয়েছি।আমাদের বেড়ে উঠার সময় গুলো এখনো নাড়া দেয়।সবাই সম সুযোগ নিয়ে বেড়ে উঠতে পারেনা। আমাদেরও বেড়ে উঠার গল্প একজনের একেক রকম। আমরা যখন শিশু ছিলাম আমাদের সব আবদার কি পূরণ হয়েছে? এখন যারা আমরা বাবা-মা হয়েছি আমরা কি পূরণ করছি শিশুর সব আবদার? আবার শিশুর সব আবদার কি পূরণ করা সম্ভব? বিষয়টা একটু জটিল।কিন্তু আমাদের ম্যানেজ করে চলতে হচ্ছে।

সন্তান হচ্ছে বাবা-মায়ের শ্রেষ্ঠ পাওয়া। পরম প্রিয়।সন্তানের জন্য সন্তানের ভালো থাকার জন্য কি-না করে একজন বাবা-মা।বাবা-মা সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করে তার সন্তান যেন ভালো থাকে। তাদের সবকিছুর কেন্দ্র বিন্দু সন্তান।কিন্তু সন্তানের সব আবদার পূরণ করা কি সম্ভব? আবার সব আবদারে না করাও সন্তানের জন্য মঙ্গলজনক নয়। তাতে সন্তানের মনে বিরুপ প্রভাব পড়ে, কষ্ট পায় এবং হীনমন্যতায় ভোগে। আধুনিক প্যারেন্টিং এ সন্তান লালনপালন এর জন্য বিচক্ষণতা বেশ জরুরী।সন্তানের সুষ্ঠভাবে বেড়ে উঠা বা বিকাশ তার অধিকার। এজন্য পিতা-মাতা,সমাজ, রাষ্ট্র শিশুর বেড়ে উঠা নিরাপদ ও আনন্দময় করতে তারা বাধ্য। তাহলে কি করবো আমরা শিশু বা সন্তানের আবদার পূরণে?

শিশু বা সন্তানের বেড়ে উঠার জন্য স্বাধীনতা,খাদ্য,চিকিৎসা, পড়ালেখা,খেলাধুলা, বিনোদন তাদের অধিকার। এসব অধিকার পূরণে পিতা-মাতা ও রাষ্ট্র দায়বদ্ধ। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে সক্ষমতা না থাকার কারণে দায় বর্তায় পিতা মাতার উপর। বিশেষ করে আবদার পুরণে সব বিষয়ে না হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা দেয় জটিলতা।

সেক্ষেত্রে যে সকল শিশুর শারিরিক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর সে সকল বিষয় থেকে শিশুকে দূরে রাখা। অথবা শিশুর শারিরিক ক্ষতি করতে পারে এমন কোন কাজ করতে শিশুকে বাঁধা দেয়। যদিও শিশু সেই কাজ করার জন্য আবদার করে। আমরা বাবা মারা শিশুর আবদার পূরনের জন্য নিজার সাধ্যের বাহিরে গিয়েও তা পুরনের চেস্টা। ফলে শিশুর মধ্যে যে কোন জিনিস পাওয়ার প্রবনতা তৈরি হয়। শিশু যখন দেখে যে সে যা চাচ্ছে তাই পাচ্ছে তখন সে যা তার প্রয়োজন নেই তারও আবদার করে। আর না পেলে তখন আবেগের বশবর্তি হয়ে যে কোন কাজ করতে পারে। ফলে শিশু তার নিজের জীবন যেমন ঝুকির মধ্যে ফেলে দেয় তেমনি পরিবারও আশায় হয়ে পরে। উদাহরন দিয়ে যদি বলি যেমন। কোন শিশু যদি আবদার করে যে তার মটর সাইকেল লাগবে । তবে কি কোন বাবা মা তা দিতে চাইবে । কিন্তু সে শিশু যা চেয়েছে তাই পেয়ে বড় হয়েছে। না শোনায় সে অভ্যস্ত নয় । সে ধরনের শিশু সে ইচ্ছা পুরনের জন্য যে কোন অন্যায় কাজের সাথে জড়িয়ে যেতে পারে। তাই সঠিক পেরেন্টিং বর্তমেন সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হিসাবে দেখা হচ্ছে। তাই শিশুকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার জন্য শিশুকে সেই ভাবে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে যাতে সে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

শিশু জন্মের পর থেকে বাবা-মার ভালোবাসা-মমতায় বেড়ে উঠে।শিশুরা অনুকরণ প্রিয়।সেক্ষেত্রে বাবা-মার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি কি ভাবে আপনারা বড় করবেন আপনার সন্তান কে! সন্তানের সামনে কি ধরণের আচরণ করবেন, কি কথা বলবেন,কি স্বপ্ন দেখাবেন তার উপর নির্ভর করবে সন্তানের বৈশিষ্ট্য (দু-একটা বেতিক্রম ছাড়া)।যেমন ধরুণ সন্তানের সামনে আপনারা ঝগড়া করছেন বা কোন কিছু শেয়ারিং না করে নিজের বলে দাবি করছেন, জোর করে কোন কিছু আদায় করছেন আবার সন্তানকে উপেক্ষা করে বা গেমে ব্যস্ত রেখে নিজেরা ডিভাইস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এসব কিন্তু শিশু মনে রেখাপাত করে।এসব বিষয়ে বিচক্ষণ হতে হবে বাবা-মাকে।আপনার বর্তমান সক্ষমতা বিষয়ে সন্তানকে আস্তে আস্তে ধারণা দিতে হবে, ভালো-মন্দ বুঝিয়ে দিতে হবে। এবং আপনাকেও ভালো-মন্দ হিসেব করে চলতে হবে সন্তানের সামনে।যেমন মোবাইল গেম খেলায় আপনার সন্তান আসক্ত।সেটা কিন্তু একদিনে হয়নি। আপনার আশ্রয় প্রশ্রয়ে সে কিন্তু গেমে আসক্ত হয়েছে।সবচেয়ে বড় কথা কোন কাজ কখন কত সময় করতে হবে ছোট থেকেই অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। বর্তমানে বাবা-মা ব্যস্ত থাকার কারণে সন্তানে দিকে সব সময় নজর দিতে পারেনা। আপনি যদি ছোট থেকেই সেভাবে তাকে তৈরি করতে পারেন তাহলে খুব একটা সমস্যা হবেনা।সেক্ষেত্রে বাবা-মাকে সন্তানের দেখভালের দায়িত্ব সমান ভাবে নিয়ে হবে একজনের উপর ডিপেন্ড করা চলবেনা। আপনি যদি আপনার সক্ষমতা ও বাস্তবতা আপনার সন্তানকে বুঝাতে পারেন তাহলে আপনি ৭০% নিশ্চিত হতে পারেন আপনার সন্তানের আবদার ক্ষতিকর কিছু হবে না। একটু বড় হওয়ার সাথে সাথে পিতা-মাতার সাথে দূরত্ব তৈরি হয়। এটা একদম করবেন না। সন্তানের সাথে বন্ধুর মত মিশুন,আপনাকে যেন সে ভয় না পায় সে দিকে নজর দিন।তার ভালো লাগা- মন্দ লাগার উপর গুরুত্ব দিন। আপনার ভালো লাগা তার উপর চাপিয়ে দিবেননা। ছোট হলেও পরিবারের সিদ্ধান্তে তার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুণ মতামত নিন এবং মতামতে গুরুত্ব দিন।দেখবেন আপনার সন্তান আপনাকে ছাপিয়ে যাবে।সন্তান নিয়ে গর্ব করবেন। সবার আগে শিশু। হ্যাপি প্যারেন্টিং।

পোস্ট বিবরণ

শ্রেণীজেনারেল রাইটিং
পোস্ট তৈরি@selina75
তারিখ২৪ অক্টোবর,২০২৩
লোকেশনঢাকা,বাংলাদেশ

আমার পরিচয়

সেলিনা আখতার শেলী। বর্তমানে গৃহিনী। জন্মসূত্রে বাংলাদেশী। জন্ম,বেড়ে ওঠা চট্রগ্রাম শহরে। চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স-মাস্টার্স। দীর্ঘ দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার রক্ষায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করেছি।স্বামীর বাড়ী দিনাজপুরে,বর্তমানে ঢাকায় থাকি।ঘুরে বেড়ানো,বই পাড়া,অজানাকে জানা,নিত্য নতুন রান্না ও বিভিন্ন ধরণের হাতের কাজ করা আমার শখ।দেশাত্ববোধ,দেশীয় শিল্প,সাহিত্য ও সংস্কৃতি আমার অন্যতম ভালো লাগা।এদেশে জন্মগ্রহণ করে আমি গর্বিত।

সাথে থাকার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

আমি আর শুনেছি উপকূলের মানুষকে নিরাপদে নিয়ে আসার কাজ চলছে। আর দোয়া করি যেন সবাই নিরাপদ থাকে এবং কারো কিছু না হয়। আপনি কিন্তু প্রত্যেকটা কথা একেবারে ঠিক বলেছেন। আসলে প্রত্যেকটা শিশু ভবিষ্যতের রাষ্ট্রের চালিকা শক্তি। আর তাদেরকে ভালোভাবে মানুষ করার জন্য অবশ্যই ফ্যামিলি প্রয়োজন। একটা শিশুর সব দিক কিন্তু ফ্যামিলি দেখে থাকে। সেই শিশুটা বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে ফ্যামিলির গুরুত্ব অপরিসীম।

জি আপু শিশুর বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ন।ধন্যবাদ আপু।

আপনি কিন্তু আজকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা টপিক নিয়ে পোস্ট লিখেছেন যেটা আমার কাছে খুব দারুণ লেগেছে। আসলে প্রত্যেকটা সন্তান আমাদের রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি। আর তাদেরকে অবশ্যই মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আর এর সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পরে ফ্যামিলির মধ্যে। ফ্যামিলি একটা সন্তানকে ভালোভাবে গড়িয়ে তুলতে পারবে। আজকের পোস্টটা অনেক সুন্দর করে লিখেছেন আপনি যেটা আমার কাছে দারুন লেগেছে।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপু।

খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আপু আজ আপনি পোস্টটি করেছেন। আপনার পোস্ট আমার বেশ ভালো লেগেছে।আপনি ঠিকই বলেছেন আপু,প্রতিটা সন্তানকে ঠিকমতো গড়ে তুলতে হলে সবার আগে বড় ভূমিকা হলো পরিবারের। কারণ একটি সন্তানের প্রথম স্কুল কিন্তু তার পরিবার।সে তার পরিবার থেকে প্রথমেই বেড়ে ওঠার সময় যা দেখবে তাই তার মাথায় কাজ করে যাবে ।আর এজন্য প্রতিটা পরিবারের থেকেই সন্তানকে দায়িত্বের সাথে গড়ে তোলা প্রয়োজন। ধন্যবাদ আপু আপনাকে এত সুন্দর একটি রাইটিং আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

শিশুর বেড়ে উঠার জন্য সুস্থ্য পরিবার বেশ গুরুত্বপূর্ন ।ধন্যবাদ আপু।