চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার।

in hive-129948 •  6 months ago 

শুভেচ্ছা সবাইকে।

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা, কেমন আছেন?এই গরমে সবাই ভালো ও সুস্থ্য আছেন,আশাকরি। সকলে ভালো থাকেন এই প্রত্যাশা করি।আজ১২ই আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬ শে জুন ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ।আজ আপনাদের সাথে সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত ও আতংকিত বিষয়ে একটি বিষয়ে জেনারেল রাইটিং শেয়ার করবো।

s1.jpg

source

চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার বর্তমান সময়ের একটি আলোচিত ও আতংকের নাম। আড্ডা ও সোশ্যাল মিডিয়ার বড় একটি অংশ দখল করে আছে এই রাসেলস ভাইপার সাপ।আমি চেষ্টা করি প্রতি সপ্তাহে সমসাময়িক বিষয়ের উপর একটি আর্টিকেল আপনাদের সাথে শেয়ার করতে। তারেই অংশ হিসেবে আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুদের জন্য, জেনারেল রাইটিং ক্যাটাগরিতে আমার আজকের উপস্থাপন চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার।

`
আমরা বেশ গুজব প্রিয়। সত্য মিথ্যা যাচাই না করেই কানকথা ও গুজবে বিশ্বাস আমাদের। সব কিছুর পরিবর্তন হলেও কান কথা ও গুজব বিশ্বাসে আমাদের পরিবর্তন হয়নি।পুরাতনকেই আঁকড়ে আছি আমরা। রাসেলস ভাইপার ভারতীয় সাপ। ভারত থেকে এসেছে। এই সাপ কামড়ালে মানুষ বাঁচে না। এই সাপ মানুষ ও প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর।মানুষ দেখলেই আক্রমণ করে বসে। এখানে পাওয়া গেছে,ওখানে পাওয়া গেছে। ওমুকের বাসায় পাওয়া গেছে। কত গুজব!গুজব আর আতংকের নাম চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার।

হঠাৎ আসেনি। বিদেশ বা ভারত থেকে আসেনি। চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার আদিকাল থেকেই আছে। এটি ভারতীয় সাপ নয়, ভারতীয় উপমহাদেশের সাপ। মিডিয়ার কল্যাণে রাসেলস ভাইপার নামটি প্রচারিত হওয়ায় মানুষ মনে করেছে এটি বিদেশী সাপ।এটি আসলে আমাদের বরেন্দ্র অঞ্চলের সাপ।এর দেশীয় বা আদি নাম চন্দ্রবোড়া। এই সাপটি বিচরণ করতে পছন্দ করে।এদের বিচরণের পছন্দের বাহন কচুরিপানা।কচুরিপানায় ভেসে ভেসে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে যায়। অন্যান্য বিষধর সাপের মত রাসেল ভাইপারও বিষধর। তবে এই সাপ কাটলে মানুষ বাঁচে না এটা ঠিক নয়।যথাযথ চিকিৎসায় মানুষ বাঁচে। আর হ্যাঁ রাসেল ভাইপার শুধু নয় যেকোন সাপে কাটলে ওঝার কাছে না গিয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান।

চন্রবোড়া গরমকালে রাতে ও সন্ধ্যায় এবং শীতকালে দিনে বেশি দেখা যায়।ঝোপঝাড়, ক্ষেতখামারে, ফসলি জমি,টিলা, বেশি ঘাসযুক্ত মাঠে দেখা যায়।চন্দ্রোবোড়া বছরে দু'বার বাচ্চা দেয়। একবারে ৬-৬৩টি বাচ্চা পর্যন্ত বাচ্চা দিতে পারে।

মুলত; পতিত জমি,ঝোপঝাড়, বনজঙ্গল কমে যাওয়ায় ক্ষেতে আশ্রয় নেয় চন্দ্রবোড়া।এক্ষেত্রে কৃষিকাজের সাথে যুক্তদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে। রাতে চলাফেরা করার সময় টর্চ ব্যবহার করতে হবে।সাপের দেখা বা সাড়া পেলে নিরাপদে সড়ে যেতে হবে।এবং কেউ সাপের কামড়ে আক্রান্ত হলে অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।


বিষধর সাপও প্রকৃতির সম্পদ। অযথা মাড়বেন না। হুজুগে মাতবেন না। গুজবে কান না দিয়ে আমাদের আশপাশের ঝোপঝাড় পরিস্কার রাখতে হবে। প্রয়োজনে বন বিভাগের সহায়ত নিতে হবে।আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি চন্দ্রবোড়ার উপদ্রব রাজশাহী অঞ্চলে।পত্রিকায় প্রকাশিত রাজশাহী মেডিকেলের তথ্য মতে, ২০১৩ থেকে ২০২৪ সালের ৭ জুন পর্যন্ত ২৩৫ জন রাসেলস ভাইপার দংশনের রোগী রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি হয়েছিল।তাদের মধ্যে মারা যায় ৬৯ জন। অর্থাৎ ২৯.৩৬ শতাংশ। তাই অযথা গুজবে কান দিয়ে,আতংকিত না হয়ে, আসুন নিজে সতর্ক হই এবং অপরকে সচেতন করি।

পোস্ট বিবরণ

পোস্টজেনারেল রাইটিং
পোস্ট তৈরিselina 75
তারিখ২৬ শে জুন ,২০২৪
লোকেশনচট্টগ্রাম,বাংলাদেশ

আমার পরিচয়

আমি সেলিনা আখতার শেলী। বর্তমানে গৃহিনী। জন্মসূত্রে বাংলাদেশী। জন্ম,বেড়ে ওঠা চট্রগ্রাম শহরে। চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স-মাস্টার্স। দীর্ঘ দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার রক্ষায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করেছি।স্বামীর বাড়ী দিনাজপুরে,বর্তমানে ঢাকায় থাকি।ঘুরে বেড়ানো,বই পড়া,অজানাকে জানা,নিত্য নতুন রান্না ও বিভিন্ন ধরণের হাতের কাজ করা আমার শখ।দেশাত্ববোধ,দেশীয় শিল্প,সাহিত্য ও সংস্কৃতি আমার অন্যতম ভালো লাগা।এদেশে জন্মগ্রহণ করে আমি গর্বিত।

সাথে থাকার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

image.png

এই চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার সাপের জন্য বাংলাদেশের অনেক মানুষই আতঙ্কে রয়েছে । তবে তারা সাধারণত বিভিন্ন ধরনের গুজবে কান দিয়ে এই আতঙ্কে রয়েছে। যাইহোক, আপনি এই পোস্টের মাধ্যমে অনেক সচেতন মূলক কিছু বার্তা আমাদের মাঝে পৌঁছে দিয়েছেন আপু। এই সাপ সম্পর্কে কিছু নতুন নতুন তথ্যও জানতে পারলাম আপনার এই পোস্টের মাধ্যমে। এই ধরনের বিষধর সাপে কামড়ালে অবশ্যই তাকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে, তাহলেই তার বাঁচার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

ঠিক বলেছেন রাসেল ভাইপার সাপ নিয়ে বেশ গুজব ছড়াচ্ছে বাংলাদেশে। ফলে মানুষ আতংকিত হয়ে পরেছে। পোস্টটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।

যা রটে তা তা কিছু টা হলেও বটে তবে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা এই সাপ সম্পর্কে বেশি জানতে পারছি এবং আতংকিত হচ্ছি।একদমই ঠিক বলেছেন আপনি গুজবে কান না দিয়ে সচেতনতা প্রয়োজন। রাসেল ভাইপার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেলাম আপনার পোস্টে। ধন্যবাদ সুন্দর পোস্ট টি আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য।

মানুষ রাসেল ভাইপার সাপ নিয়ে অনেক সত্য মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, ভিউ বাড়ানোর জন্য। সচেতনতাই পারে এই সাপে কাটা থেকে রক্ষা করতে। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপু।

মেডিকেলের তথ্য মতে, ২০১৩ থেকে ২০২৪ সালের ৭ জুন পর্যন্ত ২৩৫ জন রাসেলস ভাইপার দংশনের রোগী রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি হয়েছিল।তাদের মধ্যে মারা যায় ৬৯ জন। অর্থাৎ ২৯.৩৬ শতাংশ।

সুন্দর একটা তথ‍্য দিয়েছেন আপু। কিন্তু এই বাঙালি কে বোঝাবে কে বলেন। অযথা এরা এটা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করছে। আপনার পোস্ট টা বেশ সচেতনমূলক ছিল। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর লিখেছেন।

ঠিক তাই হুজুকে বাঙ্গালী বলে কথা। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।