আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা-৫৫। আমার তৈরি চারটি ইফতারি রেসিপি।

in hive-129948 •  8 months ago 

সবাইকে শুভেছা।

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,কেমন আছেন? সবাই ভালো ও সুস্থ্য আছেন আশাকরি। সকলে ভালো থাকেন এই প্রত্যাশা করি। আমিও ভাল আছি। আজ ১২ই চৈত্র্য। বসন্তকাল ,১৪৩০ বঙ্গাব্দ। ২৭শে মার্চ,২০২৪ খ্রীস্টাব্দ।

p1.jpg

m13.jpg

c40.jpg

c9.jpg

mi7.jpg

আজ চৈত্র মাসের ১২ তারিখ। চৈত্রের তাপদাহে পুড়ছে জনজীবন বা চৈত্রের রোদে হাঁসফাস হাসপাস অবস্থা মানুষের এমন খবর এখন পর্যন্ত নেই। বরং আজও সন্ধ্যার পর একপশলা বৃষ্টি ঢাকায়। উত্তরের জেলাগুলোতে এখনও সন্ধ্যার পর শীতের আমেজ বিরাজ করছে।আবহাওয়ার বিরুপ প্রভাবেই এর কারণ। দিন দিন প্রকৃতি তার চিরচেনা রুপ বদলাচ্ছে-ঋতু বৈচিত্র হারিয়ে যাচ্ছে। যা প্রাণ-প্রকৃতির জন্য ভালো খবর নয়।

বন্ধুরা, ১৬ রোজা শেষে ১৭ রোজার প্রস্তুতি চলছে। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে মহাপবিত্র রমজান মাস।রমজান মাস ঘিরেই চলে ইফতার আর সেহরির ব্যাপক আয়োজন। মানুষ সাধ্যমত চেষ্টা করে নানা পদের আয়োজনে ইফতার করতে। বিকেল থেকেই শুরু হয় বাসা-বাড়ী, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ,ফুটপাত সবর্ত্রই হরেক পদের ইফতারের আয়োজন। আমার বাংলা ব্লগও পিছিয়ে নেই সেই আয়োজন থেকে। আমার বাংলা ব্লগ তাই এবারের প্রতিযোগিতার বিষয় ঠিক করেছে শেয়ার করো তোমার সেরা স্বাদের ইফতারি রেসিপি। বন্ধুরা, আমার বাংলা ব্লগের নিয়মিত ব্লগিংয়ে আমার তৈরি একটি ইফতারি রেসিপি শেয়ার করবো আজ, আমার বাংলা ব্লগের প্রতিযোগিতা-৫৫ তে অংশ গ্রহনের জন্য। সেরা স্বাদের ইফতারি রেসিপি প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য আমার বাংলা ব্লগ কর্তৃপক্ষকে অনেক ধন্যবাদ। আমি চেষ্টা করেছি আমার পছন্দের ইফতারি রেসিপি নাচোস, মিহিদানা,মুঠি কাবাব ও বাদামের শরবত রেসিপি তৈরি করতে ।বাকীটা আপনারা ও বিচারকরা বিচার করবেন। আসুন ধাপে ধাপে দেখে নেই কিভাবে তৈরি হলো প্রতিযোগীতা-৫৫ র জন্য আমার আজকের ইফতারি রেসিপি গুলো। আশাকরি আপনাদের ভালো লাগবে।

প্রয়োজনীয় উপকরণ

c38.jpg

c37.jpg

c36.jpg

v01.jpg

c19.jpg

উপকরণপরিমাণ
ময়দা১কাপ
লিকুইড দুধ১কাপ
মোজারেলা চিজ১/২কাপ
মুরগীর বুকের মাংস১০০গ্রাম
বাটার২টেঃ চামচ
লবনপ্রয়োজন মতো
চিনি২ টেঃ চামচ
আদা বাটা১/২ চাঃ চামচ
রসুন বাটা১/২ চাঃ চামচ
সয়া সস১ টেঃ চামচ
টমেটো সস১ টেঃ চামচ
গোল মরিচ গুড়াস্বাদ মতো
মরিচ গুড়া১/২ চাঃ চামচ
অরিগ্যানো১ টেঃ চামচ
সয়াবিন তেল৩ কাপ

নাচোস তৈরির পদ্ধতি

ধাপ-১

c35.jpg

c34.jpg

c33.jpg

প্রথমে মুরগীর মাংস ছোট ছোট টুকরো করে ধুয়ে নিয়েছি। এরপর আদা বাটা, রসুন বাটা,গোল মরিচ গুড়া,মরিচ গুড়া,লবন,সয়া সস,টমেটো সস দিয়ে মাংসগুলো ভালোভামে মেখে নিয়েছি। এবং ১ঘন্টার জন্য রেস্ট এ রেখে দিয়েছি।

ধাপ-২

c25.jpg

c24.jpg

c23.jpg

চুলায় একটি কড়াই বসিয়ে দিয়েছি। কড়াই গরম হয়ে এলে তাতে বাটার দিয়ে দিয়েছি ।এরপর তাতে মাংস গুলো দিয়ে দিয়েছি। এবং ব্রাউন করে ভেজে তুলে নিয়েছি।

ধাপ-৩

c32.jpg

c31.jpg

c30.jpg

c29.jpg

c28.jpg

এবার নাচো সের চিপস তৈরি করার জন্য একটি প্লেটে ময়দা নিয়ে নিয়েছি। তাতে পরিমাণ মতো লবন ও তেল দিয়ে প্রথমে মেখে নিয়েছি। এরপর পরিমান মতো পানি দিয়ে একটি ডো তৈরি করে নিয়েছি।

ধাপ-৪

c30.jpg

c29.jpg

c28.jpg

c27.jpg

এরপর সেই ডো থেকে পরিমাণ মতো ডো নিয়ে ৩টি লেচী কেটে নিয়েছি। এবং হাত দিয়ে একটু চেপে চেপে বড় করে নিয়েছি। এরপর প্রতিটি রুটিতে তেল লাগিয়ে নিয়েছি। তেলের উপর ময়দা দিয়ে দিয়েছি। এবং একটির উপর একটি রেখে বড় একটি রুটি বানিয়ে নিয়েছি। এবং হালকা করে ভেজে নিয়েছি।

ধাপ-৫

c22.jpg

c21.jpg

ভেজে নেয়া রুটি প্রতিটি খুলে নিয়েছি। এবং ছুরির সাহায্যে তিন কোনা করে কেটে নিয়েছি।

ধাপ-৬

c20.jpg

এরপর চিপস গুলো ডুবো তেলে ব্রাউন করে ভেজে তুলে নিয়েছি।

ধাপ-৭

c18.jpg

c17.jpg

c16.jpg

c15.jpg

এবার হোয়াট সস বানানোর জন্য চুলায় একটি কড়াই বসিয়ে দিয়েছি।এবং পরিমাণ মতো বাটার দিয়ে দিয়েছি। বাটার গলে গেলে তাতে ১ টেঃ চামচ ময়দা দিয়ে ভালোভাবে ভেজে নিয়েছি। এরপর এক কাপ লিকুইড দুধ দিয়ে দিয়েছি। এবং ভালো ভাবে মিশিয়ে নিয়েছি।

ধাপ-৮

c14.jpg

c13.jpg

c12.jpg

c11.jpg

এবার লবন।চিনি ,গোল মরিচ গুড়া,অরিগ্যানো ও গ্রেড করা মোজারেলা চিজ দিয়ে জ্বাল দিয়ে একটি ঘন সস তৈরি করে নিয়েছি।

ধাপ-৯

c39.jpg

c40.jpg

এবার একটি প্লেটে প্রথমে চিপস বিছিয়ে নিয়েছি । এর উপর ভাজা মাংস ,হোয়াট সস ও টমেটো সস দিয়ে নিয়েছি। একইভাবে কয়েকটি লেয়ার সাজিয়ে নিয়েছি। ব্যস তৈরি মজাদার মচমচে নাচোস।

মুরগীর মাংসের মুঠি কাবাব তৈরির পদ্ধতি

প্রয়োজনীয় উপকরণ

mc2.jpg

c11.jpg

mc4.jpg

উপকরণপরিমাণ
মুরগির বুকের মাংস২০০গ্রাম
ক্যাপসিকাম১টি
গাজর১টি
পিয়াজ৩টি
কাঁচা মরিচ৬-৭টি
ধনেপাতাপরিমাণ মতো
লবনপ্রয়োজন মতো
আদা বাটা১ চাঃ চামচ
রসুন বাটা১ চাঃ চামচ
সয়াবিন তেল৪ টেঃ চামচ
সয়া সস১ টেঃ চামচ
টমেটো সস১টেঃ চামচ
গোল মরিচ গুড়া১ চাঃ চামচ
টমেটো১টি

ধাপ-১

mc3.jpg

প্রথমে মুরগীর মাংস কিমা করে নিয়েছি। এবং গাজর, ক্যাপসিকাম,টমেটো ও পিয়াজ ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিয়েছি।এবং ধনেপাতা ও কাঁচা মরিচ কেটে নিয়েছি।

ধাপ-২

mc5.jpg

mc7.jpg

mc9.jpg

mc10.jpg

mc11.jpg

mc12.jpg

এবার সকল কিছু একটি বাটিতে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়েছি। এবং ২-৩ ঘন্টা রেখে দিয়েছি মেরিনেশনের জন্য।

ধাপ-৩

m15.jpg

m14.jpg

এবার সেই ম্যারিনেট করা মাংসে একটি ডিমের কুসুম মিশিয়ে নিয়েছি। চুলায় একটি তাওয়া বসিয়ে দিয়েছি পরিমাণ মতো তেল দিয়ে ।তেল গরম হয়ে এল তাতে মাংস কাবাবের শেপে দিয়ে ভালোভাবে ভেজে তুলে নিয়েছি।

ধাপ-৪

m13.jpg

এবার একটি প্লেটে পরোটা, সালাদ ও টমেটো সস দিয়ে সাজিয়ে নিয়েছি পরিবেশনের জন্য।

মুরগীর ডিমের মিহিদানা

প্রয়োজনীয় উপকরণ

c8.jpg

c7.jpg

উপকরণপরিমাণ
মুরগির ডিম৪টি
চিনি১/২ কাপ
গুড়া দুধ১ কাপ
এলাচ২টি
দারুচিনি১/২ইঞ্চি
ঘি৪টেঃ চামচ
সবুজ ফুড কালারপ্রয়োজন মতো
বিভিন্ন ধরনের বাদামপরিমাণ মতো

মিহিদানা তৈরির পদ্ধতি

ধাপ-১

c6.jpg

প্রথমে একটি বাটিতে চারটি ডিম নিয়ে নিয়েছি।

ধাপ-২

c3.jpg

একটি কাপে সামান্য পানি দিয়ে গুড়া দুধ গুলে নিয়েছি।

ধাপ-৩

c4.jpg

c2.jpg

ডিমের মধ্যে গোলানো দুধ ও চিনি দিয়ে ভালোভাবে ফেটিয়ে নিয়েছি।

ধাপ-৪

c1.jpg

c10.jpg

c9.jpg

এবার চুলায় একটি হাড়ি বসিয়ে দিয়েছি পরিমাণ ঘি দিয়ে। ঘি গরম হয়ে এলে তাতে এলাচ ও দারুচিনি দিয়ে দিয়েছি। এবং ফেটিয়ে নেয়া ডিমের মিশ্রনটি দিয়ে নেড়ে শুকিয়ে নিয়েছি। যখন পাতিল থেকে ছেড়ে আসবে তখন নামিয়ে নিয়েছি। এবং কিছু অংশে সবুজ রং দিয়ে জ্বাল দিয়ে নিয়েছি। এবার একটি বাটিতে বাদাম কুচি দিয়ে সাজিয়ে নিয়েছি পরিবেশনের জন্য।

বাদামের শরবত

প্রয়োজনীয় উপকরণ

mi2.jpg

উপকরণপরিমাণ
জ্বাল দেয়া লিকুইড দুধ১ কাপ
চিনি১টেঃ চামচ
খেজুর২টি
কাজু বাদাম৫-৬টি
আমন্ড৫-৬টি
পেস্তা৫-৬টি
আইস ক্রিম৩ টেঃ চামচ

বাদামের শরবত তৈরির পদ্ধতি

ধাপ-১

mi3.jpg

প্রথমে খেজুরগুলো পানিতে ভিজিয়ে রেখেছি নরম হওয়ার জন্য, এবং বিচি ফেলে নিয়েছি।

ধাপ-২

mi5.jpg

mi6.jpg

এবার একটি ব্লেন্ডার জারে সকল উপকরণ দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিয়েছি।

ধাপ-৩

mi7.jpg

এবার বানানো বাদামের শরবত একটি গ্লাসে নিয়ে নিয়েছি। এবং আইসক্রিম ও বাদাম কুচি দিয়ে সাজিয়ে নিয়েছি পরিবেশনের জন্য।

উপস্থাপনা

p3.jpg

c40.jpg

c9.jpg

mi7.jpg

আশাকরি, আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা-৫৫ র জন্য আমার করা ইফতারের চারটি রেসিপি আপনাদের ভালো লেগেছে।আর হ্যাঁ, খেতে কিন্তু খুব মজার হয়েছিল। নাচোসটি বেশ মুচমুচে ও বেশ মজার হয়েছিল।আর অন্য রেসিপিগুলোও বেশ হয়েছিল খেতে। আমার বাংলা ব্লগকে আবারো ধন্যবাদ, প্রতিযোগিতার এই সুন্দর আইডিয়ার জন্য। সেই সাথে ধন্যবাদ সকল অংশগ্রহণকারি বন্ধুদের। সবাই ভালো থাকুন। আজ এই পর্যন্তই। আবার দেখা হবে অন্য কোন ব্লগ নিয়ে। শুভ রাত্রি।

পোস্ট বিবরণ

পোস্টরেসিপি
পোস্ট তৈরিselina 75
ডিভাইসRedmi Note A5
তারিখ২৭ মার্চ, ২০২৪ইং
লোকেশনঢাকা

আমার পরিচয়

আমি সেলিনা আখতার শেলী। বর্তমানে গৃহিনী। জন্মসূত্রে বাংলাদেশী। জন্ম,বেড়ে ওঠা চট্রগ্রাম শহরে। চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স-মাস্টার্স। দীর্ঘ দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার রক্ষায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করেছি।স্বামীর বাড়ী দিনাজপুরে,বর্তমানে ঢাকায় থাকি।ঘুরে বেড়ানো,বই পড়া,অজানাকে জানা,নিত্য নতুন রান্না ও বিভিন্ন ধরণের হাতের কাজ করা আমার শখ।দেশাত্ববোধ,দেশীয় শিল্প,সাহিত্য ও সংস্কৃতি আমার অন্যতম ভালো লাগা।এদেশে জন্মগ্রহণ করে আমি গর্বিত।

সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

image.png

আপনিও তো দেখছি কিছু স্পেশাল এবং ভাইরাল রেসিপি নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করলেন। আপনার অংশ গ্রহণ দেখে বেশ ‍মুগ্ধ হলাম। আজকের প্রতিটি রেসিপি বেশ ভালো লাগলো। শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।

আপনি স্পেশাল ইফতারি রেসিপি তৈরি করেছেন দেখে খুব ভালো লেগেছে। ৪টা ভিন্ন রকমের এবং আপনার পছন্দ ইফতারি রেসিপি তৈরি করেছেন এই প্রতিযোগিতার জন্য, যেটা দেখে তো অনেক ভালো লেগেছে। প্রত্যেকটা রেসিপি দেখতে এত বেশি লোভনীয় লাগতেছে আমার তো দেখেই লোভ লেগে গিয়েছে। নাচোসটি দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটা অনেক মুচমুচে ছিল আর খেতেও ভালো লেগেছে। কয়েকটা রেসিপি আপনার মাধ্যমে শিখতে পেরেছি, সময় পেলে এগুলো তৈরি করবো আমি।

অবশ্যই তোইরি করবেন আপু। বেশ মজা খেতে রেসিপিগুলো। ধন্যবাদ আপু মতামতের জন্য।

প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন দেখে সত্যি অনেক ভালো লাগলো। তবে আপনি খুব চমৎকার চারটি রেসিপি তৈরি করেছেন ইফতারির। আপনার রেসিপি গুলো দেখে অনেক ভালো লাগলো। প্রতিযোগিতা আসলে আমাদের দুই ধরনের লাভ হয়। ভালোমতে রেসিপিগুলো খাওয়া যায় এবং সুন্দর পোস্ট করা যায়। আপনার থেকে নতুন রেসিপি শিখতে পারলাম। রেসিপি গুলো সুন্দর করে আমাদের মাঝে উপস্থাপনা করেছেন তাই ধন্যবাদ আপনাকে।

ঠিক বলেছেন ভাইয়া রেসিপি প্রতিযোগিতা মানেই নতুন নতুন রেসিপি খাওয়া ও শেখা। ধন্যবাদ ভাইয়া মতামতের জন্য।