জেনারেল রাইটিংঃমে দিবস ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম।

in hive-129948 •  5 months ago  (edited)

সবাইকে মহান মে দিবসের শুভেচ্ছা।

বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,কেমন আছেন? আশাকরি প্রচন্ড গরমের মধ্যেও সবাই ভালো থাকার চেষ্টা করছেন।সবাই ভালো থাকুন এই প্রত্যাশা করি সবসময়। আমিও ভালো আছি।আজ ১৮ই বৈশাখ, গ্রীষ্মকাল,১৪৩১বঙ্গাব্দ। ১লা মে,২০২৪ খ্রীস্টাব্দ।

cl1.jpg

source

আজ মহান মে দিবস। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। এই একটি দিন সারা পৃথিবীর শ্রমিকদের একান্ত নিজের দিন।সারা বিশ্বের শ্রমিকদের ভাষা এক মজুরি-কর্ম পরিবেশ-অধিকার। সারা বিশ্বের ন্যায় আমাদের দেশেও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে দিনটি। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, রাজনৈতিক দল,সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সরকারি বেসরকারি নানা উদ্যোগ আজকের দিনটিকে ঘিরে। শ্রমিক অধিকার, মর্যাদা, মজুরিসহ নানা আলোচনা -র‍্যালি-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেশব্যাপী। আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন দিনটিকে ঘিরে। মে দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য "শ্রমিক–মালিক গড়বো দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ’"।বন্ধুরা,আমার বাংলা ব্লগের নিয়মিত ব্লগিংয়ে আমার আজকের উপস্থাপন মহান মে দিবস ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম।

যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে ১৩৮ বছর আগে ১৮৮৬ সালে শ্রমিকরা কাজের সময়সীমা ৮ ঘন্টা নির্ধারণ, কাজের পরিবেশ ও মজুরি নিয়ে যে লড়াই শুরু করেছিল তা আজও বিভিন্ন দেশে দেশে বিদ্যমান। আমার আজকের লেখায় মে দিবসের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা নয়। মে দিবসের যে চেতনা তার সঙ্গে আমাদের দেশের শিশুশ্রম কতটা সাংঘর্ষিক তারেই আলোকপাতের চেষ্টা।

আমরা জানি ১৮ বছরের নীচে সব মানব সন্তান শিশু। সরকারি ভাবে বা বিভিন্ন আইনে আমাদের দেশে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ। এই নিষিদ্ধ শুধু কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ। বাস্তবে আমাদের চারপাশেই শিশুশ্রমিকের ছড়াছড়ি। সরকারি বেসরকারি নানা প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে শিশুশ্রম নিরসনে কাজ করে আসলেও কোনভাবেই শিশুশ্রম বন্ধ হচ্ছেনা। বরং দিন দিন বেড়েই চলছে। সরকারি এক হিসেবে বর্তমানে ৩৫ লক্ষ শিশু শ্রমিক কর্মরত। গ্রামীণ শিশু শ্রমিক ও গৃহকর্মীদের যদি হিসেবে ধরা হয়, তাহলে সংখ্যা আরো অনেক বড় হবে। আমাদের দেশের বাস্তবতায় তর্কের খাতিরে সহজ বা ঝুঁকিহীন কোন কাজে শিশুশ্রম মেনে নেওয়া গেলেও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম কোন যুক্তিতেই কাম্য নয়।

যে সময় শিশুদের বিকশিত হওয়ার সময়, পড়ালেখা করার সময়,খেলাধুলা করার সময়, সে সময়ে পরিবারের অভাব বা নানা কারণে শিশুশ্রমে যুক্ত হচ্ছে। মালিকরা অধিক মুনাফার লোভে, কম মজুরিতে শিশু শ্রমিক ব্যবহার করছে।আন্তর্জাতিক ও দেশীয় আইন উপেক্ষা করে। মে দিবসের চেতনায় কল কারখানায় যে কর্ম পরিবেশ থাকার কথা তা শিশুদের সাথে একদম যায়না।তা ছাড়া ১৮ বছরের আগে কেউ শ্রমিক হিসেবে কাজে যোগদান করতে পারেনা। কল কারখানা আইনেও তা নেই।

ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রম কি? খুব সহজে বললে বলা যায়, যে শ্রম শিশুর বিকাশে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে, নানা রোগব্যাধিতে ভোগে ও জীবননাশের শংকা থাকে তাই শিশুশ্রম। আপনারা লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন আমাদের চারপাশেই অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সাথে শিশুরা জড়িত। যেমন বিভিন্ন গ্যারেজ,ওয়েল্ডিং কারখানা, লেগুনার ড্রাইভার -হেলপার,বিভিন্ন ক্যামিক্যাল কারখানা, ডকইয়ার্ড,ইট-পাথর ভাঙ্গা ও ক্ষুদ্র নানা শিল্প কল কারখানা শিশুশ্রম বিদ্যমান। অথচ আন্তর্জাতিক, দেশীয় আইন ও মে দিবসের চেতনার সাথে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম একদম সাংঘর্ষিক। এখনেই বন্ধ করা উচিত ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম।


আমাদের দেশের বাস্তবতায় ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে সমন্বিত কার্যকর উদ্যোগ দরকার। যে উদ্যোগ শুধু কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। ঐকান্তিক প্রচেষ্টা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য অবিভাবক,মালিক,শ্রমিক ও শিশুদের সচেতন করে তুলতে হবে। শিশুদের বৃত্তিসহ নানা রকম ঝুঁকিহীন- কারিগরি কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ ঘটাতে হবে। তাহলেই আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে।

পোস্ট বিবরণ

পোস্টজেনারেল রাইটিং
পোস্ট তৈরিselina 75
ডিভাইসRedmi Note A5
তারিখ১লা মে,২০২৪
লোকেশনঢাকা

আমার পরিচয়

আমি সেলিনা আখতার শেলী। বর্তমানে গৃহিনী। জন্মসূত্রে বাংলাদেশী। জন্ম,বেড়ে ওঠা চট্রগ্রাম শহরে। চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স-মাস্টার্স। দীর্ঘ দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার রক্ষায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করেছি।স্বামীর বাড়ী দিনাজপুরে,বর্তমানে ঢাকায় থাকি।ঘুরে বেড়ানো,বই পড়া,অজানাকে জানা,নিত্য নতুন রান্না ও বিভিন্ন ধরণের হাতের কাজ করা আমার শখ।দেশাত্ববোধ,দেশীয় শিল্প,সাহিত্য ও সংস্কৃতি আমার অন্যতম ভালো লাগা।এদেশে জন্মগ্রহণ করে আমি গর্বিত।

সাথে থাকার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

শ্রমিক–মালিক গড়বো দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ’"

এরকম কথা গুলো যেমন শুধুমাত্র একটা দিনের স্লোগানেই সীমাবদ্ধ থাকে তেমনি ,শিশুশ্রম নিরসন নানাবিধ আইন প্রণয়ন করলেও সেগুলো শুধুমাত্র আইনের বইতেই সীমাবদ্ধ থাকে।কিন্তু বাস্তবিকভাবে শিশুশ্রম বেড়েই চলেছে।এই বিষয়টি খুবই দুঃখজনক আপু।তবে আপনি যেভাবে শিশুশ্রম নিরসনে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন সেভাবেও যদি উদ্যোগ নেওয়া যেতো তবে তাহলে হয়তো ঝুকিপূর্ণ শিশুশ্রম কে হ্রাস করা যেতো।ধন্যবাদ আপু ,আপনি আজকে গতানুগতিক একটি পোস্ট তুলে ধরেছেন আমাদের মাঝে মহান মে দিবস উপলক্ষে।

আমরা সবাই যদি উদ্যোগ নেই তবেই শিশুশ্রম বন্ধ হবে। ধন্যবাদ ভাইয়া মতামতের জন্য।

মে দিবস ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিয়ে চমৎকার একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন আপু।আপনার পোস্টের মাধ্যমে এই দিনটির তাৎপর্য ও শিশু শ্রম ঝুকিপূর্ণ এই বিষয়ে চমৎকার লিখেছেন।ঝুকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে শুধু কাগজে -কলমে থাকলেই চলবেনা। সবাইকে যথেষ্ট উদ্যোগ নিতে হবে।

জি আপু সবার উদ্যোগেই শিশুশ্রম বন্ধ হবে। ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।

মে দিবস শুধুমাত্র শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার একটি আন্তর্জাতিকভাবে পালিত দিন নয়, এর তাৎপর্য সারা বছরজুড়ে বিশ্বব্যাপী নিপীড়িত মজলুমদের জন্য নিবেদিত একটি দিন।

আজ আমার খুব করে মনে পড়ছে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর কথা।

তিনি সারাজীবন খেটে খাওয়া সুবিধাবঞ্চিত অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষের কথা বলেছেন। পথ দেখিয়েছেন আর একটি বিশাল জনসমাজকে বুঝিয়েছেন কিভাবে জাতীয় জীবনে সবচেয়ে বেশি অবদান তারা রেখেছে। অথচ সুযোগপ্রাপ্তির বেলায় সবচে পিছিয়ে তারাই।

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে দেশের তরে জীবনবাজি রাখা মহামানব তারাই, এত অবদানের পরেও আজ শ্রমিক ইউনিয়নের অবস্থা দেখুন?

বিশ্বের শ্রমের ঘামের বুনিয়াদ তারাই গড়ে দিয়ে চলেন প্রতিনিয়ত আর আমরা মানবতার গুণ গেয়ে চলি। মাটির মানুষদের জন্য আশা রাখি একদিন ভালো কিছু করা সম্ভব হবে।

এরকম সময়োপযোগী পোস্ট করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই। 💐

ধন্যবাদ ভাইয়া মন্তব্যের জন্য।

আসলে এরকম ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে৷ শিশুশ্রম কোনভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না৷ এই শিশুশ্রম বন্ধ করার জন্য অনেক নিয়ম কানুন রয়েছে৷ তবে সে নিয়মগুলো শুধুমাত্র খাতা কলমে সীমাবদ্ধ৷ নিয়মের প্রয়োগ করা হয় বলে আমার মনে হয় না৷ এর ফলে এই ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পেয়ে যাচ্ছে৷ শিশুদের এই সমস্যা নিরসনে আমাদের সকলের কাজ করা উচিত৷