দুই ছেলেকে এগিয়ে নিতে, প্রচেষ্টা থাকবে অব্যাহত|||~~

in hive-129948 •  2 years ago 


আসসালামু আলাইকুম/আদাব


সকলকে শুভেচ্ছা। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও বেশ ভাল আছি। আর আপনারা সব সময়ই সবাই ভালো থাকবেন, এটাই প্রত্যাশা করি।

IMG_20230127_194215.jpg


বন্ধুরা 25-1-2023 রোজ বুধবার।দুপুরবেলা খাওয়া-দাওয়া করে একটু রেস্ট নিচ্ছিলাম।হঠাৎ করে একটি খারাপ স্বপ্ন দেখি।দেখলাম সিয়াম খুব অসুস্থ।স্বপ্নটা ভেঙে যাওয়ার পর বুকটা দুরু দুরু কাঁপছিল।কেমন যেন একটা অসহ্য যন্ত্রণা আমাকে ঘিরে ধরল।আমি ধড়পড় করে সিয়ামাকে ফোন দিলাম এবং জানতে চাইলাম ও কেমন আছে?? ও তখন নিজের মুখে স্বীকার করল ওর খুব জ্বর।তার আগে মুহূর্ত পর্যন্ত সে আমার কাছে স্বীকার করেনি তার মানে সে অনেক কিছু লুকায় আমার কাছে।আমি তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিলাম ঢাকায় যাব।সিয়াম শিপু দু ভাইকে দেখে আসব। অলরেডি তখন বিকেল বেলা।ভাবলাম খালি হাতে যাব ঝটপট পোলাও মাংস রান্না করে নিলাম।এবং ওদের পছন্দের কিছু শুকনা খাবার কিনে নিলাম। এবং রাতের গাড়িতে রওনা দিলাম।বিশ্বাস করুন সারাটা রাস্তা আমার খুব কষ্টে কাটছিল। অপেক্ষার পথ যেন ফুরায়না।তাছাড়া এত পরিমাণ জ্যাম কি আর বলবো।


IMG_20230127_200122.jpg


প্রায় 11 ঘণ্টা পর ঢাকা গাবতলীতে পৌছালাম।এরপর শিপুর সাথে যোগাযোগ করে ওর হোস্টেলে উঠলাম। এবং সিয়াম কেও শিপুর হোস্টেলে নিয়ে আসলাম। সেখানে দুই ভাইকে একসাথে বসে খাওয়ালাম।এরপর ওষুধ খাইয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম। ততক্ষণে সিয়ামের জ্বর কমেছে।ভালো করে ওর গা মুছিয়ে দিয়ে, আমি নিজেও গোসল সেরে নিলাম।এবার ভাবলাম ওদের কে নিয়ে কোথা থেকে একটু ঘুরে আসি তাহলে হয়তো আরো ভালো লাগবে।তাই সবাই মিলে বসুন্ধরা সিটিতে গেলাম।সেখানে আমার পরিচিত আরো দুই ভাই আসলো। পুরো বসুন্ধরা সিটি আমরা খুব ভালো করে ঘোরাফেরা করলাম এবং সামান্য কিছু কেনাকাটা শেষে ভুরি ভোজন করলাম।নানা স্টাইলে ফটোগ্রাফি করলাম।বিশ্বাস করুন এক মিনিটের জন্যও শিপু আমার হাত ছাড়ে নি। মনে হচ্ছিল একটি চুম্বকিয় আকর্ষণ।এদিকে সিয়ামের নাগ মুখ ঘেমে যাচ্ছে বুঝতে পারছি ওর খারাপ লাগতেছে।নিউমার্কেট সহ আরো বেশ কয়েকটি জায়গায় ঘোরার কথা ছিল।খুব ইচ্ছে ছিল ওদেরকে কিছু কেনাকাটা করিয়ে দিতে।একদিকে সিয়ামের খারাপ লাগতে ছিল অন্যদিকে সময়ের বড় অভাব ছিল।সব মিলিয়ে সিয়ামকে নিয়ে যখন ডাক্তারের কাছে যেতে চাচ্ছিলাম তখন ও কিছুতেই যাচ্ছিল না।এবং আমার ফ্রেন্ড সুমন বলল ও নাকি কালকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে।


IMG_20230127_133628.jpg

IMG_20230127_133401.jpg

IMG_20230126_161107.jpg


দুই ছেলেকে এগিয়ে নিতে, প্রচেষ্টা থাকবে অব্যাহত,যতদিন এ দেহে প্রাণ আছে।


যাই হোক আমি বৃহস্পতিবার ঢাকায় থেকে ওকে ডাক্তার দেখাতে চেয়েছিলাম।কিন্তু সিয়াম বারবার বলতে ছিলে মা আমি ঠিক আছি। তাই বাধ্য হয়ে আবার গাবতলী কাউন্টার এ চলে আসলাম।নীলফামারী ফেরার উদ্যেশ্যে।যখন শিপুর হোস্টেল থেকে বের হচ্ছিলাম,ঠিক সেই মুহুর্তে সে এমনভাবে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিচ্ছিল বিশ্বাস করুন ছেড়ে আসতে যে কি কষ্ট।এদিকে সিয়াম আমার হাত ধরে,চোখে ছলছল অশ্রুজল।কিন্তু কিছুই করার নেই।ভেজা ভেজা চোখ নিয়ে এগিয়ে গেলাম গাবতলী।মজার বিষয় বৃহস্পতিবার হওয়ার কারণে টিকিট পাচ্ছিলাম না কোন গাড়িতেও।শেষমেষ শ্যামলী পরিবহনের টিকিট পেলাম রংপুর পর্যন্ত।এরপর কিছুক্ষন অপেক্ষা করলাম।গাড়ি আসলেই উঠে বসলাম। এদিকে হ্যাংআউট শুরু হয়ে গেছে।সিটে বসে বসে হ্যাংআউট শুনছিলাম।যখন সবার কথা শুনছিলাম তখন বেশ ভালো লাগছিল।তার পরেও একটা উৎকণ্ঠা মনে ছুঁয়ে যাচ্ছিল বারবার।এখন আমার ইচ্ছে করে ঢাকায় একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে দুই ছেলেকে সঙ্গে করে একসাথে থাকি। কিন্তু করোনার পর থেকে আমি একদম কোন বিজনেস করছি না। এতদিন থেকে যা জমিয়েছিলাম ইনকাম করে সেগুলোই খরচ করছিলাম।কিন্তু ইদানীং খুব হিমশিম খাচ্ছি।প্রতিমাসে এত টাকার যোগান দিতে আমার বেশ কষ্ট হচ্ছে। দুই ছেলের থাকা-খাওয়া লেখা পড়া, চিকিৎসা এদিকে বাড়ির সার্বিক খরচসহ আমি বেশ বিচলিত।দুই ছেলেকে আজ এতদূর পর্যন্ত নিয়ে এসেছি একান্ত নিজের প্রচেষ্টায়।জীবনে কোনদিন কখনো কারো কাছে একটি কলম ও সহযোগিতা পায়নি। এমন কি নেইনি।আপনারা সবাই দোয়া করবেন আমি যেন তরীতে এসে ডুবে না যাই।শিপুর কোচিংয়ের পিছনে অনেক ব্যয় হচ্ছে।ওকে কোচিং করাতে গিয়ে আমার একটি স্বপ্নকে বিসর্জন দিলাম। এবার একুশে বইমেলায় আমার একটি একক কাব্য গ্রন্থ প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল।সেটিকে স্থগিত রাখলাম।শুধুই টাকার জন্য।এমন অভাব হওয়ার কথা ছিল না কারণ আমি যে টাকা আয় করেছি তার বেশিরভাগ টাকা দিয়েই একটি জমি ক্রয় করে ছিলাম যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে বাসায় বসে আছি তাই,এমন দিনও দেখতে হচ্ছে আমাকে।তবে আমার বাংলা ব্লগে যেদিন সাই ফক্স এর ভোট প্রথম পেয়েছিলাম সেদিন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ছিলাম আমার বাংলা ব্লগে কাজ করি। আর বাইরে ছুটোছুটি করবো না। এদিকে অবহেলিত মানুষদের জন্য কাজ করতে গিয়ে ও আমার বাংলা ব্লগে ও সঠিকভাবে সময় দিতে পারছি না।এবার বুঝুন আমার মানসিক অবস্থা।তবে আমার সাহস এবং আত্মবিশ্বাস ব্যাপক।এই বিশ্বাসটুকু আছে আল্লাহ তাআলা আমাকে ঠেকাবে না নিশ্চয়ই কোনো না কোনোভাবে এই পরীক্ষা থেকে উত্তরণ পাবো।সকলেই দোয়া করবেন আমাদের সপরিবারের জন্য।আমি আপনাদের সকলের জন্যই দোয়া করি মন প্রাণ থেকে।অতঃপর আবারও প্রায় 11 ঘণ্টা জার্নি করে বাসায় ফিরলাম।পরপর দু রাত টানা জার্নি করার ফলে আজ শরীরটা খুব বেশি ম্যাচ ম্যাচ করছে।যেহেতু গত দুদিন পোস্ট করিনি তাই ভাবলাম কষ্ট করে হলেও পোস্ট করি।তো বন্ধুরা আজকের মত এখানেই। আগামীতে আবারো ফিরে আসব নতুন কোন বিষয় নিয়ে আপনাদের মাঝে,,।


IMG_20230127_133221.jpg

IMG20230126150346.jpg

IMG_20230127_194102.jpg

দুই ছেলেকে এগিয়ে নিতে, প্রচেষ্টা থাকবে অব্যাহত,যতদিন এ দেহে প্রাণ আছে।


dropshadow_1629707620635.jpg

আমি সেলিনা সাথী। আমার প্রফেশন, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার ও মোটিভেটর। আমি একজন সমাজ কর্মি ও সংগঠক। এছারা ও তৃনমূল নারী নেতৃত্ব সংঘের নির্বাচিত সভাপতি বাংলাদেশ। আমি "নারীসংসদ"
এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি "সাথী পাঠাগার"। আমার লেখা মোট ১০ টি একক ও যৌথ কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। একুশে বই মেলায় প্রতি বছর একটি করে কাব্য গ্রন্থ প্রকাশের চেস্টা করি। আমার লেখা কাব্যগ্রন্থের মধ্যে "মিস্টি প্রেম" (উপন্যাস), "অশ্রু ভেজা রাত" (কবিতা), "জীবন যখন যেমন" (কবিতা), "একুশের বুকে প্রেম" (কবিতা), "নারীকন্ঠ" (ম্যাগাজিন) অন্যতম।




New_Benner_ABB.png


🌼ধন্যবাদ🌼

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

মা, সত্যি জগতের শ্রেষ্ঠ কিছু। সেটা আপনি আবারও প্রমাণ করলেন। আপনার ধৈর্য এবং সাহসিকতা প্রশংসার দাবী রাখে। দোয়া করি আপনার সন্তানরা আপনার স্বপ্নগুলোকে সফল করে তুলুক।

তাই যেন হয় প্রিয় ভাইয়া। কারণ এই বাচ্চাদের জন্য সারা জীবন টাকে সেক্রিফাইস করেছি।উৎসর্গ করেছি মানব কল্যানের জন্য নিজেকে। বাচ্চাদের সফলতা দেখতে পারলে অনেক বেশি খুশি হতে পারব।এবং তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও লড়ে যাব ইনশাআল্লাহ।♥♥

আপু আপনি সত্যিই একজন সংগ্রামী মানুষ। আরেকজন সংগ্রামী মা। নিজের ছেলেদের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। আসলে একজন মা তার সন্তানকে অনেক ভালবাসে। সিয়াম ভাইয়ের অসুস্থতার কথা আমরা সকলেই জানি। আপনি তার অসুস্থতার সময়ে সেখানে ছুটে গিয়েছেন এবং সেবা করে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করেছেন এটা সত্যি অনেক ভালোলাগার একটি বিষয়। আসলে অনেক সময় পরিবার নিয়ে হিমশিম খেতে হয়। হয়তো চাইলেও একসাথে থাকা হয়ে ওঠে না। যাই হোক আপনি যেহেতু একজন সংগ্রামী মানুষ আশা করছি সব কিছুই সামলে নিতে পারবেন। আপনার ছেলেদের স্বপ্ন পূরণ হোক এবং আপনার স্বপ্ন পূরণ হোক এই কামনাই করি আপু।

আপু সংগ্রাম করতে করতে আজ এ পর্যন্ত।তবে এই কথাটি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি জীবন হলো একটি পরীক্ষা আর পরীক্ষা কখনো সহজ হয় না।পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে গেলে সংগ্রামের বিকল্প নেই।
♥♥

আসলে মা-রা এমনই হয় কারণ সন্তানদের যে কোন সমস্যা হোক না কেন সেটা যেভাবেই হোক মা-রা বুঝতে পারবেই।এটাকেই বলে মায়ের ভালোবাসা।

একদম ঠিক বলেছেন আপু মায়ের মন সব সময় এমনই হয়। তাছাড়া ছেলে দুটোই আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন।♥♥

২ছেলেকে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন এটাই প্রত্যাশা করি।তবে জীবন মানেই ভালো খারাপ থাকবে। সবকিছুকে পিছনে ফেলে নিজের লক্ষ্য সামনে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। সিয়াম ভাই এবং শিপু দুজনকে আপনি নিজের থেকে আলাদা করে দিয়েছেন তবে তাদের ভালোর জন্যই। আপনারা যদি একসাথে থাকতে পারতেন তাহলে হয়তো সবাই ভালো থাকবেন মানসিকভাবে।

আসলে আমরা তিনজন যদি একসাথে থাকতে পারতাম,, তাহলে তো অনেক ভালো লাগতো। কিন্তু এখন সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, শিপুর কোন ভার্সিটিতে চান্স পাবে,, আর কোথায় ভর্তি হবে,, তা এখনও আমরা নিশ্চিত নই।♥♥

আসলে আপু আপনার লেখাগুলো পড়ে কমেন্ট করার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আপনিই আবার প্রমান করলেন সন্তানের অসুস্থ্যতায় সবার আগে কুহু ডাকে মায়ের মন। আর আপনি দু ছেলেকে এগিয়ে নিতে যে সংগ্রামে নেমেছেন তা আসলে ইতিহাস হয়ে রয়ে যাবে। বুঝাই যাচ্ছে অনেক সংগ্রামী জীবন। দোয়া রইল আপনার প্রতি। আর শিপু ও সিয়াম ভাইয়ের জন্য।

দোয়া করবেন আপু। আমি যেন আমার জীবনে সফল হতে পারি। ছেলে দুটোকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আমার শরীরে এক ফোঁটা রক্তবিন্দু থাকা অবস্থায়ও আমার প্রচেষ্টার কমতি থাকবে না।,,,