একটি রাতের ট্রেন ভ্রমণের কাহিনী
সকলকে শুভেচ্ছা। আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। আর আপনারা সবাই সব সময় ভালো থাকবেন,এটাই প্রত্যাশা করি।
নীলফামারী থেকে ঈশ্বরদী:
একটি রাতের ট্রেন ভ্রমণের কাহিনী
সন্ধ্যার আবহে আমরা, কয়েকজন কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পী, নীলফামারী স্টেশন থেকে ঈশ্বরদীর দিকে ট্রেন ধরতে প্রস্তুত হলাম। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল একটি আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক উৎসবে যোগদান। উৎসবের আবহে নিজেদের চিন্তা ও সৃষ্টির রসায়নকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য আমরা সবাই মুখিয়ে ছিলাম।
ট্রেনে উঠে আমরা নিজেদের মধ্যে জেগে ওঠা উন্মাদনা এবং প্রতীক্ষা নিয়ে আলোচনা শুরু করলাম। ট্রেনটি সুরক্ষিতভাবে চলতে শুরু করলে, প্রতিটি কাঁচের জানালা দিয়ে দেখতে দেখতে ভেসে উঠছিল বাংলাদেশের অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য—শস্যক্ষেত্র, ছোট ছোট গ্রামের বাড়ি, আর নদীর কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছগুলো। এই দৃশ্যগুলো আমাদের সৃষ্টির উন্মুক্ত আকাশের মতো মনে হচ্ছিল।
নিরবতা ভাঙলেন একজন কবি, যিনি আবৃত্তির মাধ্যমে পরিবেশিত করলেন একটি নতুন রচনা। তার কবিতার লয় আমাদের ভেতরে এক নতুন জাগরণ ঘটাচ্ছিল। প্রতিটি শব্দ যেন আমাদের হৃদয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল, মনকে উদ্বুদ্ধ করছিল। কিছুক্ষণ পর আরেকজন সাহিত্যিক গল্প বলতে শুরু করলেন, তার গল্পের থিম ছিল প্রেম ও বিচ্ছেদের। আমরা সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম, যেন সৃষ্টির সৌন্দর্যে নিমজ্জিত হচ্ছি।
কিছু সময় পরে, আমরা রাতের খাবার অর্ডার করলাম। স্টেশনের দোকান থেকে কেনা স্যান্ডউইচ, চা এবং কিছু স্থানীয় খাবার আমাদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে গেল। খাবারের সঙ্গে কথোপকথন চলছিল, যেখানে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। আমাদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও, এই বৈচিত্র্যই আমাদের সংলাপকে সমৃদ্ধ করছিল।
নিরবতা ভাঙার জন্য আরেকজন শিল্পী গিটার হাতে তুলে নিলেন। তার সুরের সাথে সুর মিলিয়ে আমরা গান গাইতে শুরু করলাম। ট্রেনের কামরা যেন আমাদের সৃষ্টির গ্যালারিতে পরিণত হয়েছিল। আমাদের গানটি পেরিয়ে গেল ট্রেনের কামরা, দূরে অন্য যাত্রীদের মুখেও হাসি ফুটিয়ে তুলল।
রাত গভীর হতে লাগল, আর ট্রেনটি গতির সুরে ছুটে চলল। আমাদের কথোপকথন যেন এক বিশাল বৃত্তে প্রবাহিত হচ্ছিল, যেখানে আমাদের চিন্তা, অনুভূতি এবং সৃষ্টির সবরকম বিচ্ছুরণ ছড়িয়ে পড়ছিল। আলো, ছায়া, গতি—সবই যেন আমাদের এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতার অংশ হয়ে উঠছিল।
অবশেষে, আমরা ঈশ্বরদী স্টেশনে পৌঁছলাম। স্টেশনটি উৎসবের জন্য সাজানো ছিল। মানুষের ভিড়, উজ্জ্বল বাতি এবং সবার মুখে উচ্ছ্বাস—সেই পরিবেশ আমাদের অভ্যর্থনা জানাল। আমরা নিজেদের মধ্যে কিছুক্ষণ আলাপচারিতা করে উৎসবের মূল কার্যক্রমে প্রবেশ করলাম।
ঈশ্বরদীতে প্রবেশের পর আমাদের অনুভূতি যেন এক নতুন দ্বারে প্রবেশ করেছে। সেখানকার শিল্পকর্ম, নৃত্য, সঙ্গীত—সব কিছু আমাদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছিল। আমরা বুঝতে পারছিলাম, এই ট্রেন ভ্রমণ শুধু আমাদের জন্য নয়, বরং সৃষ্টির ঐক্যের এক অনন্য চিত্র।
এভাবে, নীলফামারী থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত আমাদের ট্রেন ভ্রমণ কেবল একটি স্থানান্তর ছিল না, বরং একটি সাংস্কৃতিক ও মানবিক সংযোগের অমূল্য অধ্যায়। আমাদের অন্তরের গভীরে একটি নতুন আলোড়ন তৈরি হয়েছিল, যা আমাদের সৃষ্টির পথে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিল।
ভ্রমণের শেষে আমার অনুভূতি ছিল চিরকালীন। এই ট্রেনের যাত্রা শুধুমাত্র একটি গন্তব্যের দিকে নয়, বরং আমাদের সৃষ্টির অভিজ্ঞতা এবং বন্ধনকে আরও গভীর করেছে। কবিতা, গল্প ও সঙ্গীতের আদান-প্রদান আমাদের মধ্যে এক অদ্ভুত ঐক্য তৈরি করেছিল। সেই রাতের স্মৃতি, আলো এবং আবেগ আমাদের সৃষ্টিশীলতার নতুন অধ্যায় খুলে দিয়েছে। এটা ছিল এক চিরস্থায়ী যাত্রা, যা আমাদের হৃদয়ে রঙিন রেখাপাত করে গেছে।
🥀🌹🥀
ভ্রমণের কবিতা
রাতের আঁধারে ট্রেনের হাওয়া,
মনে বাজে কবিতার সুর।
নীলফামারীর সেই স্টেশন,
ঈশ্বরদীর দিকে চিরন্তন যাত্রা।
সুরের সঙ্গে দোলা দেয় প্রাণ,
গল্পের ধারা বয়ে চলে,
সঙ্গীতের মন্ত্র, সাহিত্যপথ,
একসাথে গড়ি নতুন গন্তব্য।
চাঁদের আলোয় ছড়িয়ে পড়ে,
আশার বীজ বুনে,
বন্ধন তৈরি হয় হৃদয়ের,
মিলে যায় সংস্কৃতির স্রোতে।
এই ভ্রমণ যেন সৃষ্টির অপূর্ব
মিলনমেলার সেতু বন্ধন ও
নতুন এক অধ্যায় উন্মোচন,
কবিতা, গান—শিল্পের খেলায় ।
বন্ধুরা আমার আজকের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা , নিশ্চয়ই আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। আর আপনাদের ভালোলাগাই আমার সার্থকতা ও পরম পাওয়া। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। পরবর্তীতে আবারো সুন্দর সুন্দর ব্লগ নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব, আমি সেলিনা সাথী...
আমি সেলিনা সাথী। ছন্দের রাজ্যে, ছন্দরাণী কাব্যময়ী-কাব্যকন্যা বর্তমান প্রজন্মের নান্দনিক ও দুই বাংলার জনপ্রিয় কবি সেলিনা সাথী। একধারে লেখক, কবি, বাচিক শিল্পী, সংগঠক, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার, মোটিভেটর ও সফল নারী উদ্যোক্তা তার পুরো নাম সেলিনা আক্তার সাথী। আর কাব্যিক নাম সেলিনা সাথী। আমি নীলফামারী সদর উপজেলায় ১৮ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। আমার বাবা পিতা মরহুম শহিদুল ইসলাম ও মাতা রওশনারা বেগম। ছড়া কবিতা, ছোট গল্প, গান, প্রবন্ধ, ব্লগ ও উপন্যাস ইত্যাদি আমার লেখার মূল উপজীব্য। আমার লেখনীর সমৃদ্ধ একক এবং যৌথ কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১৫ টি। আমার প্রথম প্রকাশিত কবিতার বই অশ্রু ভেজা রাত, উপন্যাস মিষ্টি প্রেম, যৌথ কাব্যগ্রন্থ একুশের বুকে প্রেম। জীবন যখন যেমন। সম্পাদিত বই 'ত্রিধারার মাঝি' 'নারীকণ্ঠ' 'কাব্যকলি'সহ আরো বেশ কয়েকটি বই পাঠকহমলে বেশ সমাদৃত। আমি তৃণমূল নারী নেতৃত্ব সংঘ বাংলাদেশ-এর নির্বাচিত সভাপতি। সাথী পাঠাগার, নারী সংসদ, সাথী প্রকাশন ও নীলফামারী সাহিত্য ও সংস্কৃতি একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এছাড়াও আমি জেলা শাখার সভাপতি উত্তোরন পাবনা ও বাংলাদেশ বেসরকারি গ্রন্থাগার পরিষদ নীলফামারী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছি। তিনি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৪ সালে নীলফামারী জেলা ও রংপুর বিভাগীয় পর্যায়ে সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য শ্রেষ্ঠ জয়িতা অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি। এছাড়াও সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ অবদান রাখায় আমি বহু সম্মামনা পদক অর্জন করেছি। যেমন সাহিত্যে খান মইনুদ্দিন পদক ২০১২। কবি আব্দুল হাকিম পদক ২০১৩। শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র কর্তৃক সম্ভাবনা স্মারক ২০১৩। সিনসা কাব্য সম্ভাবনা ২০১৩। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উদযাপন উপলক্ষে সম্মামনা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সম্মাননা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ১১৫ তম জন্ম জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ২০১৪। দৈনিক মানববার্তার সম্মামনার স্মারক ২০২৩। চাতক পুরস্কার চাতক অনন্যা নারী সম্মাননা ২০২৩ ওপার বাংলা মুর্শিদাবাদ থেকে মনোনীত হয়েছি।
বিষয়: ভ্রমণ
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit