প্রবন্ধ
সকলকে শুভেচ্ছা। আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। আর আপনারা সবাই সব সময় ভালো থাকবেন,এটাই প্রত্যাশা করি।
বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের জন্য রংপুরের আঞ্চলিক ভাষার একটি প্রবন্ধ নিয়ে হাজির হয়েছি। আশা করছি আমার আজকের এই তথ্যবহুল পোস্টটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।।
রংপুরের আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে প্রবন্ধ ---
"রংপুরি ভাষা"
সেলিনা সাথী
রংপুর শহর বাংলাদেশে উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এখানে মূলত রংপুরি ভাষা বা আঞ্চলিক বাংলা ব্যবহৃত হয়। রংপুরের আঞ্চলিক ভাষা বাংলা ভাষার একটি উপভাষা, তবে এর মধ্যে কিছু বিশেষ শব্দ, উচ্চারণ ও ব্যাকরণগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সাধারণ বাংলার তুলনায় আলাদা। রংপুরের মানুষের জীবনযাপন, সংস্কৃতি, এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে এই ভাষা গভীরভাবে জড়িত।
রংপুরি ভাষার মূল বৈশিষ্ট্য হলো এর উচ্চারণ ও শব্দের ভিন্নতা। উদাহরণস্বরূপ, সাধারণ বাংলা ভাষায় 'তুমি' বললেও রংপুরে 'তু্ই' ব্যবহার করা হয়। 'খাইবা' (খাবে), 'যাইবা' (যাবে) ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করাও রংপুরি ভাষার একটি পরিচিত বৈশিষ্ট্য। এছাড়া, স্থানীয় কিছু শব্দ যেমন 'বইলা' (বলতে), 'হইল' (হয়ে গেল) ইত্যাদি সাধারণ বাংলায় ব্যবহৃত হয় না, কিন্তু রংপুর অঞ্চলে খুবই জনপ্রিয়।
রংপুরি ভাষা শুধুমাত্র একটি যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি রংপুর অঞ্চলের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং মানুষের চিন্তা-ভাবনার প্রতিফলন। এখানকার লোকসাহিত্য, গান, কবিতা, এবং কাব্যও এই ভাষায় রচিত হয়, যা স্থানীয় জনগণের চেতনা ও অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ। রংপুরি ভাষার মাধ্যমে এখানকার মানুষের আত্মপরিচয় এবং সামাজিক সম্পর্ক দৃঢ় হয়।
এছাড়া, রংপুরের কৃষিজীবী সমাজের সঙ্গে এই ভাষার সম্পর্ক অঙ্গাঙ্গী। কৃষি ও পরিবেশ সম্পর্কিত অনেক শব্দ ও অভিব্যক্তি রংপুরি ভাষায় ব্যবহৃত হয়। যেমন, 'ধানি জমি', 'বেলাপাতা', 'চাল ভাঁজ', 'বাড়ি সাফ' ইত্যাদি স্থানীয় কৃষি জীবনের পরিচিত শব্দসমূহ রংপুরি ভাষার অঙ্গ।
বর্তমানে, রংপুরি ভাষার গুরুত্ব কিছুটা কমে যাচ্ছে, বিশেষত নগরায়ন এবং আধুনিক যোগাযোগের মাধ্যমের কারণে। তবে স্থানীয় সাংস্কৃতিক উৎসব, সাহিত্য ও লোকসংস্কৃতির মধ্যে রংপুরি ভাষার ব্যবহার বাড়ানো এবং সংরক্ষণের চেষ্টা চলছে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে রংপুরি ভাষার গুরুত্ব বোঝানো এবং তা সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি।
রংপুরের আঞ্চলিক ভাষা আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং সমাজের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অঙ্গ। তাই আমাদের উচিত রংপুরি ভাষার সংরক্ষণ, চর্চা এবং প্রচার করা, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এটি জানতে ও ব্যবহার করতে পারে।
রংপুরাঞ্চলের ভাওয়াইয়া গান বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বিশেষ লোকসংগীত ধারার একটি জনপ্রিয় শাখা। এই গানগুলি মূলত রংপুর, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন উত্তরাঞ্চলের অঞ্চলের লোকসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভাওয়াইয়া গানে সাধারণত প্রেম, বিরহ, প্রকৃতি, সংগ্রাম এবং মানবিক অনুভূতির নানা দিক তুলে ধরা হয়।
ভাওয়াইয়া গানের সুর সাধারণত স্নিগ্ধ, মিষ্টি ও মনোমুগ্ধকর, যা শোনা অনেকটাই আরামদায়ক। গানের ভাষায় সাদাসিধে কিন্তু গভীর অনুভূতি থাকে, যা শ্রোতাদের মনে দাগ কাটে। এই গানের মাধ্যমে রংপুরাঞ্চলের মানুষের দুঃখ-কষ্ট, সুখ-দুঃখ এবং জীবনের নানা বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়।
বন্ধুরা আমার আজকের প্রবন্ধটি, নিশ্চয়ই আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। আর আপনাদের ভালোলাগাই আমার সার্থকতা ও পরম পাওয়া। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। পরবর্তীতে আবারো সুন্দর সুন্দর কবিতা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব, আমি সেলিনা সাথী...
আমি সেলিনা সাথী। ছন্দের রাজ্যে, ছন্দরাণী কাব্যময়ী-কাব্যকন্যা বর্তমান প্রজন্মের নান্দনিক ও দুই বাংলার জনপ্রিয় কবি সেলিনা সাথী। একধারে লেখক, কবি, বাচিক শিল্পী, সংগঠক, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার, মোটিভেটর ও সফল নারী উদ্যোক্তা তার পুরো নাম সেলিনা আক্তার সাথী। আর কাব্যিক নাম সেলিনা সাথী। আমি নীলফামারী সদর উপজেলায় ১৮ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। আমার বাবা পিতা মরহুম শহিদুল ইসলাম ও মাতা রওশনারা বেগম। ছড়া কবিতা, ছোট গল্প, গান, প্রবন্ধ, ব্লগ ও উপন্যাস ইত্যাদি আমার লেখার মূল উপজীব্য। আমার লেখনীর সমৃদ্ধ একক এবং যৌথ কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১৫ টি। আমার প্রথম প্রকাশিত কবিতার বই অশ্রু ভেজা রাত, উপন্যাস মিষ্টি প্রেম, যৌথ কাব্যগ্রন্থ একুশের বুকে প্রেম। জীবন যখন যেমন। সম্পাদিত বই 'ত্রিধারার মাঝি' 'নারীকণ্ঠ' 'কাব্যকলি'সহ আরো বেশ কয়েকটি বই পাঠকহমলে বেশ সমাদৃত। আমি তৃণমূল নারী নেতৃত্ব সংঘ বাংলাদেশ-এর নির্বাচিত সভাপতি। সাথী পাঠাগার, নারী সংসদ, সাথী প্রকাশন ও নীলফামারী সাহিত্য ও সংস্কৃতি একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এছাড়াও আমি জেলা শাখার সভাপতি উত্তোরন পাবনা ও বাংলাদেশ বেসরকারি গ্রন্থাগার পরিষদ নীলফামারী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছি। তিনি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৪ সালে নীলফামারী জেলা ও রংপুর বিভাগীয় পর্যায়ে সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য শ্রেষ্ঠ জয়িতা অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি। এছাড়াও সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ অবদান রাখায় আমি বহু সম্মামনা পদক অর্জন করেছি। যেমন সাহিত্যে খান মইনুদ্দিন পদক ২০১২। কবি আব্দুল হাকিম পদক ২০১৩। শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র কর্তৃক সম্ভাবনা স্মারক ২০১৩। সিনসা কাব্য সম্ভাবনা ২০১৩। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উদযাপন উপলক্ষে সম্মামনা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সম্মাননা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ১১৫ তম জন্ম জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ২০১৪। দৈনিক মানববার্তার সম্মামনার স্মারক ২০২৩। চাতক পুরস্কার চাতক অনন্যা নারী সম্মাননা ২০২৩ ওপার বাংলা মুর্শিদাবাদ থেকে মনোনীত হয়েছি।
বিষয়: ক্রিয়েটিভ রাইটিং
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......
খুব সুন্দর লিখেছ রংপুরি ভাষা নিয়ে৷ পশ্চিমবঙ্গেও এখন আঞ্চলিক উপভাষা নিয়ে অনেক লেখালিখি হচ্ছে৷ কারণ ভাষাগুলো টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনীয়তা এসে গেছে৷ তার একটাই কারণ নগরায়ণ৷ শহরের মানুষরা নিজেদের অনেক উন্নত মনে করে সে ভাষার দিক দিয়েও৷ তাই তাদের মতোই গ্রামের মানুষরা কথা বলতে চায়৷ ভাষায় উন্নত হতে চায়৷ ফলত মাটির ভাষা দিন দিন মাটিতেই মিলিয়ে যাচ্ছে৷
তোমার লেখায় সমৃদ্ধ হলাম।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit