সময় মানুষকে সহজ করে আবার কঠিন করে দেয়। জীবনের টাইমিং কনসেপ্ট খুবই প্রভাব ফেলে যা সহজে আমরা বুঝতে পারি না। মানুষের জীবনে একটিমাত্র খবর যা তাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত করে তোলে তেমনি খুশির মুহূর্ত এনে দেয়। তেমনি আমার জীবনে কিছু কিছু সময় ছিল যেটা অনেক দুঃখ এনেছে আবার অনেক সময় খুশির জোয়ারে ভেসে দিয়েছে।
সার্থকতা এবং ব্যর্থতা দুইটাই একে অপরের উল্টা। ব্যর্থতা যখন আসে তখন এর সাথে সাথেই সফলতা উঁকি দিতে থাকে। কিন্তু বিষয়টা সহজ নয়। আমার জীবনেও এমন দিন ছিল। 2018 সালের 9 এবং 22 নভেম্বর। একটিমাত্র খবর শোনার পরে আনন্দ আমার কাছে জোয়ারের মতো চলে আসে আর হতাশা দুঃখ দুর্দশা ভাটার মতো সমুদ্রের পানির সাথে মিশে যায়।
এইচএসসি লেভেলে একটি কলেজে পড়াশোনা শেষ করার পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়। আর এই সময়ে সবার সাথে প্রতিযোগিতা মূলক বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা অংশগ্রহণ করে নিজের অবস্থানকে তৈরি করে নিতে হয়।
Image source
ছাত্রজীবনের এমন একটি সময় যখন তাদেরকে বিভিন্ন রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় । সমাজের বাঁধাধরা নিয়মের গন্ডিতে থাকতে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বিভিন্ন রকম মানসিক পীড়াদায়ক অর্থাৎ মানসিক কষ্ট পোহাতে হয় যা না পারে কাউকে বলতে, না পারে তাদের মনের দুঃখ ভরা অনুভূতি কারো কাছে শেয়ার করতে।
আর সমাজের চাপে পিতা-মাতা অর্থাৎ বাবা- মা বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। মানুষের মাধ্যমে আর যেসব পিতা-মাতার সন্তানেরা এই ভর্তি পরীক্ষা কালীন সময় অতিবাহিত করেন তারা মানুষের কথার দ্বারা হেয় এবং অবজ্ঞার পাত্র হয়ে দাঁড়ায। আর এই কথার দ্বারা দ্বারা তারা মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হতে থাকে আর এ জন্য অনেক পিতা-মাতার ব্যবহার সন্তানদের সাথে খারাপ হয়ে যায় । এটা সবার জন্য নয় কিছু কিছু পিতা-মাতার ক্ষেত্রে তারা সমাজের চাপে এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে দাঁড়ায়।
পিতা-মাতা তাদের সন্তানদেরকে নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালবাসে। কিন্তু সমাজ ও মানুষের ব্যবহারের কারণে তারা এক অদ্ভুত ও বিব্রতকর পরিস্থিতির সামনে এসে দাঁড়ায় যার কারণে পিতামাতা এবং সন্তানদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়ে যায়।
তেমনি আমার জীবনে এরকম সময় অতিবাহিত করেছি। সময়টা শুরুর দিকে খুব একটা ভালো ছিল না। বিভিন্ন রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলাম। ভর্তি পরীক্ষার সময় ঢাকায় না গিয়ে রাজশাহীতে উদ্ভাসে কোচিং করেছিলাম । অন্যান্য বড় ভাইদের কাছে শুনেছিলাম উদ্ভাস ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্য ভালো। শুরুর দিকে ভালই চলছিল কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়তে ছিলাম। পরীক্ষার প্রায় দেড় মাস আগে আমি টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হই। দীর্ঘ প্রায় এক মাস অসুস্থতার কারণে বাড়িতে থাকতে হয়েছে হয়েছিল আর সে সময় বাড়িতে থাকায় শরীরে এতটাই খারাপ ছিল যে পড়াশোনার মত মন মানসিকতা ছিল না । আর এজন্য একেবারে হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম।
তারপর আল্লাহর রহমতে যখন অসুস্থতা থেকে মুক্তি পাই তখন আবার নতুন করে আস্তে আস্তে পড়াশোনা করার চেষ্টা করছিলাম। এরইমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় ভর্তি পরীক্ষা ডেট দিয়েছিল এবং ফরম পূরণ করতে হয়েছিল। পরীক্ষার তারিখ শোনার পর থেকে হতাশার লেভেল আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে আর পরীক্ষার সময় আরো দ্রুত কাছে আসতে থাকে।
প্রথম পরীক্ষা ছিল ঢাকা ভার্সিটিতে। আর বিসমিল্লায় গলদ ,সেখানে ফেল করেছিলাম। এরপর আরও বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা দেওয়ার পর বুঝতে পারলাম আমাকে দিয়ে আর হবে না। কিন্তু অনেকগুলো ফরম তোলা হয়েছিল ।
এজন্য পরীক্ষা দিতে থাকি বাকি যেসব পরীক্ষা ছিল। কোনোটাতেই ভালো অবস্থান নেই। শেষ পরীক্ষা ছিল চট্টগ্রামের চুয়েটে। সেখানে পরীক্ষার দুইদিন আগে সেখানে যাই এবং পুরো ক্যাম্পাস ভালো করে ঘুরে দেখি। পড়াশোনার সুযোগ হবে না ভেবে ভালভাবে ঘুরে দেখতে ছিলাম আর হতাশা নিয়ে সময় কাটাচ্ছিলাম।
কিন্তু কে জানে আল্লাহ তা'আলা যা করেন মানুষের ভালোর জন্যই করেন। এরপর সেখানে পরীক্ষা দেই। পরিক্ষা দিয়ে আসার পর বড় ভাইয়ের কাছে চলে যাই। সেখান থেকে আসার সময় সেখান থেকে আসার সময় ভাইয়ের কাছে রোল নাম্বারটা দিয়ে আসি। আমার বিগত পরীক্ষাগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে বললাম, ভাই মনে হয় হবে না কিন্তু যদি ভাগ্যের জোরে হয়ে যায় একটু জানাইয়েন।
তারপর রাজশাহীতে সেদিন বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম মেসের বড় ভাইদের সাথে। সন্ধ্যা ৭টা ৪৯মিনিট এর দিকে অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসলো। ফোন দিয়ে বড় ভাই বলল তোমার মেরিটে রেজাল্ট আসছে।
তখন ফলাফল শোনার পর কিছুক্ষণ চুপ হয়ে ছিলাম। আল্লাহর রহমতে যেটা হবার ছিল না সেইটাই হয়ে গেল। দিনটা ছিল 2018 সালের 9 নভেম্বর।
আরেকটা বিষয় বলে রাখি পরীক্ষার সময় যে ভাইদের রুমে ছিলাম তারা সবাই যন্ত্রকৌশলের পড়াশোনা করতেন। আমার আগে থেকেই এই সাবজেক্ট এর প্রতি পড়াশোনার ইচ্ছা ছিল।
স্বপ্ন যখন চোখের সামনে আসে তখন অন্যরকম এক অনুভূতি হৃদয়কে নাড়া দিয়ে যায়। 22 শে নভেম্বর অর্থাৎ আজকের এই দিনে আল্লাহর রহমতে আমার ইচ্ছা মতো বিষয় যন্ত্রকৌশলে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছিলাম।
সেই দিন এর একটি মেসেজ পুরো পরিবার এবং নিজেকে আনন্দে ভরে দিয়েছিল। দোয়া রাখবেন সবাই , ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে সমাজ ও দেশের জন্য যেন ভালো কিছু করতে পারি।
এখন ভর্তি পরীক্ষা কালীন সময় যাচ্ছে। তারাও তাদের কঠিন সময় অতিক্রম করছে। আমাদের সকলের উচিত এই কঠিন সময়ে তাদেরকে সাপোর্ট করা এবং হতাশা থেকে মুক্তির জন্য এগিয়ে আসা।
পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি ভবিষ্যতে আপনাদের জন্য অন্যরকম কিছু নিয়ে আসতে পারবো।
মানুষের খারাপ সময় ভাল সময় মিলিয়েই জীবন।আকাশে কালো মেঘ জমে তাই বলে কি কখুনো সেটা পরিষ্কার হয়না অবশ্যই হয়।
আর একটা জিনিস ভাই স্বপ্ন যখনি নিজের চোখের সামনে আসে তখনের অনুভুতি আসলেই বলে বোঝানো যাইনা।।আপনার জন্য দোয়া রইলো ভাই এগিয়ে যান।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
একদম ঠিক বলেছেন ভাই। মানুষের খারাপ সময় জীবনে না আসলে ভালো সময়ের গুরুত্ব কখনো বুঝতে পারত না। আর আকাশে কালো মেঘ জমে বলেই নীল আকাশের এত সৌন্দর্য তা। স্বপ্নপূরণের আনন্দ কখনোই বলে বোঝানো যাবে না। এটা শুধুমাত্র হৃদয়ের গভীর থেকে আসে। আপনার সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
💖💖💖💖
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit