আমরা এতটাই অলস হয়ে গেছি যে, আধুনিক যুগের ছেলে মেয়ে খেলাধুলার কথা শুনলেই মোবাইলের মাধ্যমে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে(পাবজি, ফ্রী ফায়ার, রেসিং) খেলাকে বুঝি।
Image Source
অনেকদিন পর,বিকেলের দিকে বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম এর দিকে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আর সেখানে গিয়ে তাদের খেলাধুলা দেখে খুবই আনন্দিত এবং অপরদিকে নিজের প্রতি খুব খারাপ লাগতেছিল। খারাপ লাগার কারণ ছিলো আমি বা আমার মত বয়সের ছেলেমেয়েদের খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ না থাকা।
শারীরিক সুস্থতাই সকল সুখের মূল। শরীর সুস্থ না থাকলে দুনিয়ার কোনো কিছুই ভালো লাগে না এবং কোন কিছুতেই মন বসে না।
আমরা দিন দিন অলস এবং উর্বর বিহীন জাতিতে পরিণত হচ্ছি। ১০ বছর পূর্বের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায় প্রযুক্তিগত ভাবে দেশ তেমন উন্নতি ছিল না কিন্তু কিশোর বয়স থেকে যৌবনের মধ্যবর্তী সময়ের মানুষগুলো তাদের অবসর সময়ে খেলাধুলাকে বেছে নিত সময় কাটানোর জন্য। সেই খেলাধুলার প্রতি এখনকার ছেলেমেয়েদের চাহিদা নেই বললেই চলে। আর যা আছে সেখানে খুবই অল্প পরিসরে।
শরীরকে ভালোভাবে সুস্থ রাখতে হলে দিনের একটা সময়ে শারীরিক ব্যায়াম বা পরিশ্রম করতে হয়। এর মাধ্যমে শরীরের গতিবিধি ভালো থাকে এবং শারীরিক সুস্থতা চলে আসে।
বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম এর মাধ্যমে শরীরের উপকার হয়। ব্যায়াম বা শারীরিক ভাবে পরিশ্রম বিভিন্নভাবে হতে পারে। খেলাধুলার মাধ্যমে হতে পারে বা অন্য কোন কঠিন কাজের মাধ্যম হতে পারে। তবে খেলাধুলার মাধ্যমে শরীরের প্রায় প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়া করতে হয় এবং এর কারণে শরীরের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক ভাবে বিভিন্ন ধরনের উপকার হয়। যেমন:
১.শরীরের মধ্যে সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থাকে এবং এই খেলাধুলার মাধ্যমে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুষম ভাবে উন্নতি হয় এবং কোষগুলো সুসমন্বিত সুশৃংখলভাবে বাড়তে থাকে।
২. আর শুধু যে শারীরিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উন্নতি হয় সেটি নয় বরং সকলের মনকে সতেজ রাখে।
৩.ব্যায়াম করার ফলে শরীরের মধ্যে রক্ত থাকে সেই রক্ত গুলোর চলাচল বেড়ে যায় এই বেড়ে যাওয়ার কারণে শরীরের ভেতরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পেতে থাকে।
৪.জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় পড়াশোনার মধ্যে দিয়ে কাটিয়ে দিতে হয়।আর আর ছোটবেলা থেকে পড়াশোনা অর্থাৎ একই ধরনের কাজ করার ফলে বিরক্তির ভাব চলে আসে। প্রতিনিয়ত খেলাধুলা করতে থাকলে বা খেলাধুলার মধ্যে দিয়ে অবসর সময় কাটিয়ে দিলে পড়াশোনায় মন বসে এবং মানসিক ও শারীরিক ভাবে যে সব ক্লান্তি থাকে সে সব দূর হয়ে যায়।
৫.নিয়মিত খেলাধুলা করার মাধ্যমে অন্যদের তুলনায় যারা খেলাধুলা করে না তাদের তুলনায় সর্বদিক থেকে শক্তিশালী এবং মানসিকভাবে ভারসাম্য বজায় রেখে চলাফেরা করতে পারে।
৬.গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমাদের বয়সের প্রায় চল্লিশ পার হলেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে না। কিন্তু কৈশোর কাল থেকে নিয়মিত খেলাধুলা করে থাকলে ওজন ঠিক থাকবে এবং ডায়াবেটিস নামক রোগটি নিয়ন্ত্রণে ঢাকার সম্ভাবনা থাকে।
৭.খেলাধুলা করার সময় অনেক লোক একসাথে একটি কাজ করতে হয়। আর একসাথে কাজ করা অর্থাৎ দলগত ভাবে কাজ করার ক্ষমতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আয়ত্তে চলে আসে। এই গুণটি ছাত্র জীবন এবং কর্ম জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৮.আর নিয়মিত খেলাধুলা করার কারণে শরীর ও মনের মধ্যে সবসময় খুশি ও শান্তি বিরাজ করে। আর খুশি থাকলে শরীরের হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক থাকে। হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক থাকলে হার্ট ভালো থাকবে।
৯.খেলাধুলার মধ্যে এক দল আরেক দলের সাথে অনেক সময় বিভিন্ন ঝামেলা হলেও বিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রনে রাখার অভিজ্ঞতা বেড়ে যায়। আর এই অভিজ্ঞতা মানুষ মানুষের মধ্যে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
১১.এছাড়াও খেলাধুলার মাধ্যমে নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলী বৃদ্ধি পায় যা পরবর্তীতে কর্মজীবনে ভালো প্রভাব ফেলে।
নিজের কথা বলি, আমি যখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়তাম অর্থাৎ পঞ্চম শ্রেণি পড়া পর্যন্ত বিকেলবেলা অবসর সময়ে খেলাধুলা করার যথেষ্ট সুযোগ পেতাম। যখনই শহরের দিকে পড়াশোনার জন্য চলে আসি তখন বিকেলের অবসর সময়গুলো প্রাইভেট পড়ার মাধ্যমে খেলাধুলার তেমন সুযোগ হয়ে ওঠে নি। শহরের ছেলেমেয়েদের শারীরিকভাবে মাঠে খেলাধুলা করার প্রবণতা পূর্বের তুলনায় আরো অবনতির দিকে চলে যাচ্ছে।
অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে যুব সমাজের এতটাই পরিবর্তন ঘটেছে যে পরবর্তী যুগে তারা মাঠে খেলার সুযোগই পাবে না বললেই চলে। কারণ এখন থেকে বিগত ১০ বছরে যুব সমাজের খেলাধুলার চাহিদা দিন দিন কমে যাচ্ছে এবং আগামী সময়ে কমে যাওয়ার মত পরিস্থিতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়ে যাচ্ছে।
আগে আমরা ফুটবল ক্রিকেট মাঠে খেলতাম কিন্তু আধুনিক যুগের ছেলেমেয়েরা কম্পিউটার বা মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে সেই খেলা ভোগ করে থাকে।
সর্বসাকুল্যে বিবেচনা করে আমাদেরকে শারীরিকভাবে ও মানসিকভাবে সুস্থ সবল ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করার জন্য দিনের 24 ঘন্টার মধ্যে কিছু সময় নির্ধারণ করা উচিত যখন শারীরিকভাবে ব্যায়াম করা বা খেলাধুলার জন্য বরাদ্দ রাখা এবং তাকে ঠিক রেখে অন্যান্য কাজগুলোর পরিকল্পনা করা। তা না হলে আগামী প্রজন্মের মানুষের মধ্যে শুধুমাত্র শারীরিক পরিশ্রম না করার কারণে জটিল রোগের আবির্ভাব ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
সুস্থতা কে সামনে রেখে আমাদের প্রত্যেক পিতা-মাতার উচিত তাদের সন্তানদেরকে ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি অভ্যাস করানো এবং সেই অনুযায়ী জীবন কে সহজভাবে পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।
আমি মোঃ সামাউন আলী। পড়াশোনা করছি প্রকৌশলবিদ্যায়। আপনাদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত। আপনাদের সকলের কাছে দোয়া প্রার্থী।
আসলে বর্তমান যুগের ছেলেমেয়েরা তেমন একটা খেলাধুলা করে না বললেই চলে। খেলাধুলা করলে শরীর এবং মন উভয়ই সতেজ থাকে। এজন্য প্রতিদিন আমাদের নিয়ম করে নির্দিষ্ট সময় খেলাধুলা করা উচিত। বর্তমান ছেলে-মেয়েদের খেলাধুলার প্রতি অনীহার দিকটি ফুটে তুলেছেন। সেইসঙ্গে খেলাধুলার উপকারিতা গুলো ভালোভাবেই তুলে ধরেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ঠিকই বলেছেন ভাই। অন্তত নিজের শরীর ও মনকে সুস্থ স্বাভাবিক রাখতে হলে অবশ্যই শারীরিকভাবে কিছু না কিছু পরিশ্রম করতে হবে। সুন্দর মন্তব্য করেছেন ভাই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বর্তমানে খেলাধুলা মাঠ পর্যায়ে নেই বললেই চলে। এখন সবাই অনলাইন নিয়ে গেম খেলা নিয়ে ব্যস্ত। নিজের শরীরের প্রতি তাদের কোনো গুরুত্বই নেই। আপনি অনেক সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। তবে একটি বিষয় লক্ষ করবেন আপনি আপনার ফোন দিয়ে তোলা ছবি যখন ব্যবহার করবেন তখন অবশ্যই সেই ছবিগুলো লোকেশন ব্যবহার করবেন এবং কোন ডিভাইস থেকে তোলা হয়েছে সেটা উল্লেখ করবেন, ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সবাই প্রযুক্তির ছোঁয়া পেয়ে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ অনেক কমে গেছে। জি ভাই এর পরবর্তী পোস্টগুলো থেকে মোবাইল দিয়ে যেসব ছবি তুলবো সেগুলোর লোকেশন এবং ডিভাইসের নাম দেওয়ার চেষ্টা করব। বিষয়টি দেখিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit