হ্যালো,
কেমন আছেন সবাই। আশা করছি ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি। আমি শাপলা দত্ত বাংলাদেশ থেকে।আজ আপনাদের সাথে ভাগ করে নেবো একটি খুনের সত্যি ঘটনা অবলম্বনে গল্প খুন।
ইমেজ সোর্স
আমি এই খুনের গল্পটি আমার দিদুর কাছে শুনেছি ও এলাকার সব লোকের মুখে শুনেছি।এমন কি ওই লোকের নাম অনুযায়ী নবেজউল্লার বাড়ির নাম ও গ্রামের নাম হয় গলা কাটা নবেজের বাড়ি।আমি নবেজউল্লার বাড়ির পাশ দিয়ে স্কুল যেতাম আর গলাকাটা নবেজের বাড়ি ছিলে একদমই রাস্তার সাথে তাই বাড়ির সামনে গেলেই মনে তো কি নির্মম ভাবে খুন করেছে এই বাড়িতেই।
নবেজউল্লার ছেলেকে ও বউকে দেখলে ভয় পেতাম এই ভেবে যে এনারা গলা কেটে মানুষ খুন করেছে।
আমাদের বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে মুসলিম পরিবার। ওই পরিবারের প্রধানের নাম নাবেজ উল্লাহ।নবেজ উল্লাহর একটু নারীর প্রতি দুর্বলতা ছিলো।বহু বিবাহ করতেন তিনি। বিয়ে করতেন আর কিছুদিন পর বনিবানা না হলে বউ ছেড়ে চলে যেতো।প্রথম বউের সংসারে দুই ছেলে এক মেয়ে ছিলো।
অত্যাচারী নবেজ উল্লাহ। প্রথম স্ত্রী তাই গলায় ফাঁস দিয়া আত্মহত্যা করে মারা গেছেন। বাচ্চারা তখন ছোট ছিল তবে খুব বেশি ছোট না। অন্য বাচ্চাগুলো ছোট থাকলেও প্রথম ছেলেটি ছিল ১৮ বছরের এরপর নবেজউল্লাহ বিয়ে করে প্রথম ঘরের বউয়ের বোনকে। নবেজউল্লাহ মেয়েদের কে কেমন করে যেন পটাতে পারতো ভালো তাই অত্যাচারী জানার পরেও মেয়েরা খুব সহজেই বিয়ে করে ফেলতো।
নবেজ উল্লাহ তার শালিকে বিয়ে করার কিছুদিন পরেই আবারো বিয়ের ডাক তোলে।
এবার এই বউ কিছুতেই তার বিয়েকে মেনে নিতে পারবে না বলে দেয়। বিয়েতে বাঁধা দেন। যেন বদলা অনেক জমি জামার মালিক হওয়ার কারণে মেয়ের বাবাদেরকে লোভে ফেলিয়ে জমি লিখে দেওয়ার নাম করে বিয়ে করতে পারে খুব সহজেই। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। মেয়ের বাবার কাছে প্রস্তাব দেয় ছয় বিঘা জমি মেয়ের নামে লিখে দেওয়ার বিনিময়ে সে বিয়ে করবে। মেয়ের বাবাও রাজি হয়ে যায় কারণ ছয় বিঘা জমির বাজার মূল্য অনেক।
নবেজ উল্লাহ আবার বেশ কয়েকটা চেলা চামুন্ডা ও ছিলেন নাবেজ উল্লাহ কে সব সময় কু বুদ্ধি দিতো। যেমন আপনি তো অনেক জমির মালিক আপনি বিয়ে করবেন না তো কে বিয়ে করবে । পুরুষ মানুষের দু-তিন খানা বউ না থাকলে সংসার খালি খালি লাগে। এসব কথা নবীজুল্লাহর মনে ধরতোএবং তার চেলা চামুন্ডাদেরকে খুশি করতো টাকা-পয়সা দিয়ে। ঘটক ও ওত পেতে বসে থাকতো কখন নবেজউল্লাকে একটি বিয়ের খবর দেয়া যাবে এবং মোটা অংকের টাকা হাসিল করে নেয়া যাবে।
বিয়ের জন্য তোর জোর চলছে পরদিন সকালেই বিয়ে করতে যাবে নবীজুল্লাহ দলবল নিয়ে। বর্তমান বউ তাকে বাধা দেয় এবং এই নিয়ে বেশ কিছুদিন থেকে ঝামেলা চলতে থাকে। নবেজউল্লার বর্তমান বউয়ের কথা সে কিছুতেই বিয়ে করতে দেবেনা। এদিকে আবিদুল্লার কথা সে যে কোন কিছুর বিনিময়ে বিয়ে করবেই করবে। এই নিয়ে বেশ ঝামেলা মারামারি চলছিল বাড়িতে বউ ও ছেলের সাথে। পরদিন সকালবেলা বিয়ে করতে যাবে নবেজউল্লাহ।
নবেজউল্লা তার চেলা চামুণ্ডা নিয়ে বাড়ির সামনের মাচায় বসে বিয়ের গল্পে মশগুল। এদিকে বর্তমান বউ তার বোনের ছেলে মানে নবেজউল্লার বড় বউ এর ছেলেকে নিয়ে নবেজউল্লাকে খুন করার পরিকল্পনা করেন।যেহেতু নবেজউল্লার বড়ো বউ এর বড়ো ছেলের বয়স কম তাই খুব সহজেই তার মগজ ধোলাই করে ফলে।ছেলেকে বলে তোর বাবার জন্য তোর মা আত্মহত্যা করেছে এখন তোদের কে সব সম্পত্তির ভাগ থেকে বঞ্চিত করবে।বিয়ে করে আনবে ছয় বিঘা জমি লিখে দিয়ে বিয়ের পর ঐ মহিলা পুরাজমি হাতিয়ে নেবে।এসব বলে বলে বড়ো ছেলের মাথা বিগরে দেয়।
যখন বড়ো ছেলে এর সমাধান চায় তখনই সৎ মা বলে তোর বাবাকে আজ রাতেই শেষ করতে হবে এ ছারা আর কোন উপায় নেই।ছেলেও রাজি হয়ে যায় এবং বাবাকে খুন করার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে এবং বেশ কিছু ভারাটিয়া খুনিকে ভারা করে ফেলে নিমিষেই। এরপর যখন নবেজউল্লাহ বাজার শেষ বাড়িতে এসে বউ এর সাথে আর এক দফা ঝামেলা করে এবং খেয়ে ঘরে ঘুমিয়ে পড়ে।এদিকে সৎ ছেলে তার ভারাটিয়া খুনিদের কে ঘরে আগে থেকেই নিয়ে থাকে।
যখন নবেজ উল্লা ঘুমিয়ে পড়ে তখনই সৎ মা বড়ো ছেলের জানালার পাশে গিয়ে জানায় ঘুমিয়ে গেছে। তখন ভারাটিয়া খুনিদেরকে নিয়ে দেশিও অস্ত্র নিয়ে বাবার ঘরে প্রবেশ করে ছেলে।ঘুমন্ত বানার কেউ হাত, কেউ পা ধরে এবং ততক্ষণে বাবা জাগা পেয়ে বউকে ডাকতে থাকে কিন্তুু সে তো আসল খুনের পরিকল্পনা কারী। তিনি তো ঘরের দরজা খুলে দিয়েছে। বউ ঘরের পিছবেন দাড়িয়ে বাইরের পরিবেশ পরিস্থিতি লক্ষ্য করতে থাকে।এদিকে ছেলে ভারাটিয়া খুনিদের কে নিয়ে বাবার গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
বাড়ির পিছনের পুকুরে গিয়ে খুনিরা স্নান সেরে অস্ত্র ধুয়ে তবেই যে যার মতো চলে যায়। এদিকে খুনিরা চলে যাওয়ার পর নবেজের বউও ছেলে চিৎকার চেচামেচি করতে থাকে ডাকাত ডাকাত বলে।গ্রামের মানুষজন আসলে বলে ডাকাত এসে খুন করে চলে গেছে। এদিকে গ্রামের মানুষের সন্দেহ হয় যে করো কিছু হলো না এমন কি মা,ছেলে, মেয়েরা সবাই সুস্থ স্বাভাবিক কিন্তুু শুধু নবেজউল্লাকেই খুন করলেন। তাছারা তাদের নিত্যদিনের ঝামেলার কথা তো সবাই জানতেনই। ।এদিকে নবেজের গলা কাটা রক্তমাখা লাশ দেখে নবেজের ছোট ছেলে যার বয়স ১০ বছর ছিলো সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।মেয়ে দুটো একদমই ছোট ছিলো তাই বুঝতে পারে না কিছু।
ডাকাতি ও খুনের ঘটনা তাই থানায় খবর দেয়া হয়। থানা থেকে পুলিশ এসে লাশ ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে যায়।আগের দিনে আইন ব্যাবস্থা এতো দ্রত হতো না কিছুটা সময় লাগতো।তাই লাশ নিয়ে গিয়ে ময়না তদন্ত শেষ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে এবং গোয়েন্দা পুলিশ পাঠায়।ওই সময় না কি সারা এলাকা জুড়ে পাগলের আনাগোনা ছিলো।আসলে পাগল ছিলো না গোয়েন্দা পুলিশ ছিলো তারা।এরপর উপযুক্ত প্রমান নিয়ে প্রথমে ছেলেকে গ্রেফতার করেন এবং তার বয়ান অনুযায়ী তার সৎ মা খুনের আসল পরিকল্পনাকারী খুনি নবেজউল্লার বউকে গ্রেপ্তারের করেন পুলিশ।
এরপর নবেজের ছেলে দুই যুগ জল খাটার পর জেল থেকে বেরিয়ে এসে বিয়ে করেন এবং সংসার করেন।নবেজের বউ ১২বছর জেলে থাকেন এবং তিনি যখন জেলে ছিলেন তখন সন্তানসম্ভবা ছিলেন। জেলেই একটি পুত্র সন্তানের জন্মদেয়। তিনিও ছেলেকে নিয়ে গারদের বাইরে এসে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকেন। দ্বতীয় বিয়ে আর করেন নি নবেজের বউ।ওদিকে ছোট ছেলে মানসিক রুগি হয়ে এখনো জীবন যাপন করছেন। কথিত আছেন পুলিশ কে নাকি বড়ো ভাইও মায়ের খুনের কথা বলে দিয়েছিলেন তিনি তবে গুছিয়ে বলতে পারেন নি এলোমেলো ভাবে বলে দিয়েছেন।
আজ নবেজউল্লা নেই তবে তার খুনিরা নিজের রক্ত খুনি ছেলে ও নিজের বউ তার সব সম্পদ ভোগ করেছে। মেয়ে দুটো সুশিক্ষিত হয়েছে আইনজীবী পেশায় নিয়জিত রয়েছেন। শুধু নবেজউল্লা নেই বিয়ের ভুতচেপে বসার কারণে জিবন দিতে হলো।এদিকে ছেলেওবউ কি পেলো রক্তের সাথে বেইমানি করে। তারা কি ভালো থাকতে পেরেছে। এখনো কি তারা ভালো আছে।তাদের কি অপরাধ বোধ হচ্ছে না এরকম নানা রকম প্রশ্ন আমার নিজের কাছে।
এই ছিলো আমার আজকের এক সময়ের ভংয়কর বাবাও বউ দাঁড়া বাবাকে খুনের ঘটনা।আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।আবারও দেখা হবে অন্যকোন পোস্টের মাধ্যমে সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।
টাটা
পোস্ট | বিবরণ |
---|---|
পোস্ট তৈরি | @shapladatta |
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং |
ডিভাইস | OppoA95 |
লোকেশন | বাংলাদেশ |
আমি হৈমন্তী দত্ত। আমার স্টিমিট আইডিরঃshapladatta. জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। শখঃবাগান করাও নিরবে গান শোনা,শপিং করা। ভালো লাগে নীল দিগন্তে কিংবা জোস্না স্নাত খোলা আকাশের নিচে বসে থাকতে।কেউ কটূক্তি করলে হাসি মুখে উড়িয়ে দেই গায়ে মাখি না।পিছু লোকে কিছু বলে এই কথাটি বিশ্বাস করি ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।বিপদকে ও অসুস্থতার সাথে মোকাবেলা করার সাহস রাখি সহজে ভেঙ্গে পরি না। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি পর হিংসা আপন ক্ষয়। ধন্যবাদ ।