সত্যি ঘটনা অবলম্বনে গল্প দাদীর ভালোবাসা❤️

in hive-129948 •  20 days ago  (edited)

হ্যালো,

আমার বাংলা ব্লগ বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই। আশা করছি ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি আপনাদের আশীর্বাদ ও সৃষ্টিকর্তার কৃপায়।
আমি @shapladatta বাংলাদেশ থেকে। আমার বাংলা ব্লগের একজন ভেরিফাই নিয়মিত ইউজার। আমি গাইবান্ধা জেলা থেকে আপনাদের সঙ্গে যুক্ত আছি।
আজ আমি আপনাদেরকে সাথে ভাগ করে নেবো আমার গ্রামের এক অসহায় দাদীও নাতির গল্প নিয়ে গল্প দাদীর ভালোবাসা।

IMG20241130082726.jpg

দাদীর ভালোবাসা মায়ের পরেই হয়ে থাকে।দাদী প্রতিটা মানুষের জীবনে মায়ের ভুমিকা পালন করে।নাতি,নাতনিকে প্রচন্ড রকমের ভালো বাসেন দাদী বা ঠাকুমারা।যদি মা,বাবা কোন সন্তানকে শাসন করতে চায় তখন দাদী নাতি,নাতনির পক্ষ নিয়ে ঢাল হয়ে দারায়।

যাদের দাদী বা ঠাকুমা আছেন বা ছিলেন তারাই বুঝবে এই ভালোবাসা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের গ্রামে এক পরিবার আছে গ্রামে বলতে তাদের নিজস্ব কোন জায়গাজমি নাই। থাকেন নালার সরকারি জায়গায়।পরিবারে নাতিও দাদী।মুসলিম পরিবার।ছোট একটা এনজিওতে জব করতেন দাদী।তিন দুই মেয়ে এল ছেলে ওনার।

ওনাকে দেখতাম প্রতিদিন প্রতি বাড়িতে গিয়ে টাকা তুলতে কিন্তুু সেভাবে পরিচিত ছিলাম না।রাস্তা কিংবা আমাদের বাড়ির সামন দিয়ে যাওয়া আসা করতেন। কথা হতো মাঝে মধ্যে।

আমার মেয়ের জন্মের পর ওনার সাথে বেশ ভালো পরিচয়।কারণ আমার মেয়েকে যখন থেকে বাড়তি খাবার দিতাম সকালে প্রতিদিন একটি করে দেশি মুরগির ডিম দিতাম এবং এখনো দেই।আমার মেয়েকে এখনো প্রতিদিন সকালে ডিম ও ঘি দিয়ে ভাত দিতে হয়। সকালে তরকারি খাওয়া যায় না তার ধারনা।আসলে ছোটবেলা থেকে ডিম ভাত খেয়ে অভ্যাসে পারিনিত হয়েছে।

যাই হোক একদিন মেয়েকে নিয়ে দাড়িয়ে ছিলাম বাইরে ওনি অফিস শেষ করে বাড়ির পথে যাচ্ছে আমাদের বাড়ির সামন দিয়ে। হঠাৎ আমাকে দেখে এগিয়ে আসলেন এবং বলতে লাগলেন দেশি মুরগির ডিম কেনো না তুমি।আমি বল্লাম হ্যাঁ কিনি তো আমার মেয়েকে প্রতিদিন খাওয়াতে হয়।একথা শোনার সাথে সাথে বল্লেন আমার অনেক মুরগি ডিম দেয় তুমি চাইলে নিতে পারো।আমি বল্লাম আমাকে বাড়িতে এনে দিতে হবে। ওনি বল্লেন সমস্যা নাই আমি দিয়ে যাবো।

তখন থেকে ওনি ডিম দিয়ে যেতেন এবং অগ্রীম ডিমের টাকা নিয়ে যেতেন। মাঝে মাঝে হাওলাদ করতে আসতেন টাকা। এতো টাকার চাহিদা ছিলো কারণ ওনি ওনার নাতীকে পড়াশুনার খরচ চালাতেন। হ্যাঁ ওনার একমাত্র ছেলের একমাত্র নাতী।মা,বাবা মারা গেছে তিনমাসের বাচ্চা টিকে রেখে।কারণ জানতে চাইলাম কিচ্ছু বল্লো না চুপ করে দাড়িয়ে রইলো চোখে জল।চোখে জল দেখে আমি ঘাবরে গেলাম এবং আর কোন প্রশ্ন করলাম না।

আমার শ্বশুড়িকে বল্লাম কি হয়ে মারা গেছেন ওনার ছেলে বৌমা একই দিনে।তখন জানলা লোমহর্ষক কথাটি যে ওনার ছেলে গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে এবং স্বামীকে ফাঁসের দড়িতে ঝুলতে দেখে বউও গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কি মরমান্তিক কাহিনি। শরীরে কাটা দেয়ার মতো।কারণ হিসেবে প্রচার স্বামি,স্ত্রীর ঝগরা কি কারণে তা কেউ জানেন না।

মনকে প্রশ্ন করলাম একটা মেয়ে তার তিন মাসের বাচ্চা রেখে সুইসাইড করলো কি শুধুই স্বামির শোকে না কি অন্য কোন কাহিনি লুকিয়ে আছে তাদের মাঝে।আমরা নয় তা সৃষ্টি কর্তা বলতে পারবেন শুধু।আমার শ্বশুড় বাড়ির এলাকায় এরকম আত্মহত্যার ঘটনা নতুন নয় একই গ্রামে দশ জন কিংবা তারও অধিক মহিলা,পুরুষ আত্মহত্যা করেছে। কখনো গলায় গড়ি দিয়ে কিংবা কখনো বিষ পানে।তাদের মধ্যে ৭০ বছরের বৃদ্ধ থেকে ১৬ বছরের কিশোর ও আছে।জামি না কেন এরকম হয়েছে। কি এমন কষ্ট যে নিজের জীবনকে নিজেই শেষ করে দেয়।

যে তিন মাসের বাচ্চা রেখে তার মা,বাবা আত্মহত্যা করলো সে এখন কলেজ পড়ুয়া।দাদী কষ্ট করে তাকে খাইয়েছেন পড়িয়েছেন। ছেলেটি একটি মেয়েকে ভালোবেসে পালিয়ে বিয়েও করে ফেলেছে। মেয়ের বাড়ি থেকে প্রথমে মেনে নেয়নি পারিবারিক পরিস্থিতি দেখে।ছেলেটি সুন্দর তাই ছেলেকে মেনে নিয়েছে এবং ছেলেকে তারা ঘর জামাই হিসেবে রেখে দিয়েছে।

যে দাদী খেয়ে না খেয়ে নাতীকে এতো ভালোবাসা আদর যত্ন দিয়ে বড়ো করে তুলেছে সে দাদী আজ একা। এখন আমার আমার কাছে টাকা ধার করতে আসে না।আগের মতো মুরগিও পোষে না কারণ এখন তার টাকার চাহিদা নাই।নাতি আজ বড়ো হয়ে গেছে।বড়োলোক শ্বশুর বাড়িতে সুখে আছে। এমনো হয়েছে কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে দাদীর কাছে টাকার বায়না ধরেছে।দাদী কারো কাছে না পেয়ে আমার কাছে এসেছে কখনো এসে আমার কাছে পেয়েছে আবার কোনদিন হয়তো আমি বাড়িতে ছিলাম না জন্য হতাশ হয়ে ফিরে গেছে।

দাদীর খবর নেয়ার হয়তো কোন সময় নেই তার।জানি না দাদী কতোটা কষ্ট পাচ্ছে তবে তার অসহায় মুখটা দেখলে বুঝতে পারি দাদী ভালো নেই। চাপা কষ্ট তার চোখে মুখে স্পষ্ট। এই কষ্ট উপলব্দি করাট মতো মন থাকা চাই।

আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।আবারও দেখা হবে অন্য কোন পোষ্টের মাধ্যমে।সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।

টাটা

পোস্টবিবরণ
পোস্ট তৈরি@shapladatta
শ্রেণীজেনারেল রাইটিং
ডিভাইসOppoA95
লোকেশনবাংলাদেশ

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230826_182241.jpg

আমি হৈমন্তী দত্ত। আমার স্টিমিট আইডিরঃshapladatta. জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। শখঃবাগান করাও নিরবে গান শোনা,শপিং করা। ভালো লাগে নীল দিগন্তে কিংবা জোস্না স্নাত খোলা আকাশের নিচে বসে থাকতে।কেউ কটূক্তি করলে হাসি মুখে উড়িয়ে দেই গায়ে মাখি না।পিছু লোকে কিছু বলে এই কথাটি বিশ্বাস করি ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।বিপদকে ও অসুস্থতার সাথে মোকাবেলা করার সাহস রাখি সহজে ভেঙ্গে পরি না। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি পর হিংসা আপন ক্ষয়। ধন্যবাদ ।

A5tMjLhTTnj4UJ3Q17DFR9PmiB5HnomwsPZ1BrfGqKbjddgXFQSs49C4STfzSVsuC3FFbePnB7C4GwVRpxUB36KEVxnuiA7vu67jQLLSEq12SJV1etMVkHVQBGVm1AfT2S916muAvY3e7MD1QYJxHDFjsxQDqXN3pTeN2wYBz7e62LRaU5P1fzAajXC55fSNAVZp1Z3Jsjpc4.gif



6VvuHGsoU2QBt9MXeXNdDuyd4Bmd63j7zJymDTWgdcJjo1P2b8TFnHAXJZz4yTkRky1WRY9Vk9TAHyLGLeyh1MbqsZonPr2gkYD2tXt46LCF9Yn5Gk9dgMj3RWnWXp.png

LUCYMssPjPkNSqA4R8GVisGuWmEiTbcWLWDufxa8iJ53FWAc9u8UL5qkERyCARdyuGdv36EPPgT9wJkVvkkAyr1Hx9G1H4Xvvi1mVoYy19...vtkDy7mpVPcckyGhJYRYfiAqMQpZAtrvZHLspJwsk9VzQemYw47ATtyLRSBRLDbuUhgUXefAkCkYv7bLLYuXZVfYMWQqp3sxWR2ZH1iXwCqeaxTecywkPUQ6J.jpeg

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Screenshot_2024-12-02-12-21-05-33_0b2fce7a16bf2b728d6ffa28c8d60efb.jpg

Screenshot_2024-12-02-11-47-50-32_40deb401b9ffe8e1df2f1cc5ba480b12.jpg

Screenshot_2024-12-02-11-46-05-19_40deb401b9ffe8e1df2f1cc5ba480b12.jpg

Screenshot_2024-12-02-11-45-40-18_40deb401b9ffe8e1df2f1cc5ba480b12.jpg

এটা ঠিক বলেছেন আপু বাবা মার পরে যদি কেউ ভালোবেসে থাকেন সেটা হচ্ছে দাদি। আমি আমার দাদিকে আমার জীবনের চৌদ্দটা বছর কাছে পেয়েছি। আমি আমার দাদির কাছে খেয়েছি থেখেছি ঘুমিয়েছি।বড্ড মিস করি আমি আমার দাদিকে। আমর গল্পটি পড়ে বেশ খারাপ লাগলো। আসলে বাচ্চাটার বাবা মায়ের মৃত্যুর রহস্যটা থেকেই গেল আর বেচারির বয়স্ক মহিলার ঘাড়ে এসে পড়ল।

ঠিক বলেছেন মায়ের পরেই দাদি।আপনার দাদিকে কাছে পেয়েছেন বেশি সময় জেনে ভালো লাগলো।ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।