আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা -১৯ | |শেয়ার করো তোমার বৃষ্টির দিনের মজার অনুভূতি | | @shimulakter

in hive-129948 •  2 years ago 

আসসালামু আলাইকুম

হ্যালো বন্ধুরা ,
আমি @shimulakter
আমি বাংলাদেশের নাগরিক । আর আমি “ আমার বাংলা ব্লগ “ এর নতুন ইউজার।

আমার বৃষ্টির দিনের মজার অনুভূতি

২৯ শে জুন ২০২২ইং
১৫ আষাঢ় ১৪২৯ বঙ্গাব্দ বুধবার

হ্যালো “ আমার বাংলা ব্লগ “ এর বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন ? আশাকরি ভাল আছেন ।আমিও আপনাদের শুভ কামনায় ভাল আছি । আজ আমি আমার বৃষ্টির দিনের একটি মন ভাল করা গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করব ।আশাকরি আপনাদের কাছে অনেক বেশি ভাল লাগবে ।

বৃষ্টির দিনে আমার আনন্দঘন মুহূর্তের কিছু অনুভূূতি.jpg

বৃষ্টির দিন নিয়ে অনেকের অনেক ভাল লাগা , মন্দ লাগা গল্প আছে । আজ “আমার বাংলা ব্লগ” কমিউনিটির এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা আমাদের ভাল লাগা গল্প গুলো নিয়ে স্মৃতিচারন করতে পারছি এবং অন্যদের সাথে তা শেয়ার করতে পারছি।এজন্য ধন্যবাদ জানাই , এই কমিউনিটির সকল সদস্যদের এবং যারা বিচারের প্যানেলে আছেন সবাইকে এত সুন্দর একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য।

গল্প -আমার বৃষ্টির দিনের মজার অনুভূতি

প্রতিটি মানুষের জীবনে চলার পথে অনেক অনেক মিষ্টি মধুর মুহূর্ত থাকে ,যা কখনও মলিন হয়ে যায় না ।অনেক ভাল লাগা অনুভূতিতে সাক্ষী হয়ে থাকে ।সেই অনুভূতি অনেক সময় মনের অজান্তে এসে নাড়া দিয়ে যায় । ভাল লাগা কিছু অনুভূতির কথা মনে হলে , অনেক বেশি ভাল লাগা ভিড় করে মনে ।এই বৃষ্টির দিন নিয়ে আমার অনেক ভাল লাগা অনুভূতি কাজ করে, সেটাই আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব।আমার অনেক ভাল লাগা অনুভূতির মধ্যে থেকে একটি মাত্র অনুভূতি আমি আজ বলতে চাই --

WhatsApp Image 2022-06-29 at 2.06.53 AM.jpeg

ছবির লোকেশন- ধানমন্ডি, ঢাকা

বেশ কয়েক বছর আগের কথা । আমি তখন ইন্টার পাশ করে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি ।

সেদিন ছিল আষাঢ়ের মাঝামাঝি একটি দিন । সকাল ৯ টায় ভার্সিটিতে গিয়েছিলাম। তখন আকাশ ভালোই পরিষ্কার ছিল। কিন্তু হঠাৎ বেলা ১টার দিকে আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গেল । কিছুক্ষন পর ই ঝুম বৃষ্টি শুরু হল।প্রায় বেশ কিছু সময় বৃষ্টি হল।বৃষ্টি শেষ হয়ে আকাশ কিছুটা পরিষ্কার হয়ে গেল।আমি ক্লাস শেষ করে কিছু সময় ভার্সিটির বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভেজা কয়েকটা কাক কে দেখছিলাম। যথারীতি ক্লাস শেষ হল আমার ৩ টায় । ফ্রেন্ডদের সাথে কথা শেষ করে বাড়ি ফিরছিলাম ।গেটের কাছে এসে দেখি , এক বুড়ো চাচা রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে।চাচাকে দেখে আমার খুব মায়া লাগছিল ।চাচা বৃষ্টিতে পুরোপুরি ভিজে গেছে । অসহায় একজন মানুষের মত চাচা দাঁড়িয়ে আছে রিকশা নিয়ে । কখন কেউ একজন এসে তার রিকশায় চড়বে এই আশায় । কিন্তু আমি দেখতে পেলাম সবাই চাচাকে পাশ কাটিয়ে অন্য রিকশা করে চলে যাচ্ছিল। তাকে কেউ জিজ্ঞেস করছিল না । যাই হোক আমি চাচার সামনে যাই আর তাকে বলি সে যাবে কিনা ? সে শুকনো একটি হাসি দিয়ে বলল, যাবে সে । আমিও রিকশায় উঠে পরি ।আসলে বয়স্কদের রিকশায় অনেকে উঠতে চায় না আমি দেখেছি ।তার দুটো কারন - প্রথমত তারা তাড়াতাড়ি টেনে যেতে পারবে না বলে ।আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে , বয়স্ক দের রিকশাতে অনেকে উঠতে চায় না ভাবে মুরুব্বিদের রিকশায় কিভাবে উঠি ? কিন্তু আমি বেছে বেছে বয়স্কদের রিকশাতেই উঠি। আর রিকশা ভাড়া দিয়েও বাড়তি টাকা দিয়ে দেই ।আমি মনে করি বয়স্কদের রিকশায় যদি কেউ না চড়ে , তবে তাদের চুলায় কি করে হাড়ি চড়বে?

যাই হোক রিকশায় ত উঠলাম। কিছু পথ যেতেই টিপ টিপ বৃষ্টি পড়া শুরু হল আবার । আমি চাচার কাছে কাগজ চাইলাম । চাচা বলল, কাগজ টা নষ্ট হয়ে গেছে । আমি বললাম বৃষ্টির দিন কাগজ না রাখলে আপনার রিকশায় কাষ্টমার কিভাবে পাবেন?কেউ ত আপনার রিকশায় উঠবে না ।চাচা বলল , সারাদিনে যা পাই , রিকশার মালিককে দেয়ার পর ত তেমন কিছুই থাকে না ।তখন আমি তাকে রিকশার সিটের নিচে আমার ব্যাগটা রাখতে বলে , হুড ফেলে দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে যাচ্ছিলাম ।আর বৃষ্টির গন্ধ নিচ্ছিলাম।চাচার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, তার এক ছেলে ছিল, মারা গেছে । তার তেমন জায়গা জমিও ছিলনা , যা দিয়ে তিনি কিছু আবাদ করে দুবেলা দুমুঠো খেতে পারবেন। এ অবস্থায় তিনি তার ওয়াইফ কে নিয়ে ঢাকা চলে আসে, কাজের সন্ধানে । কাজ তাকে কে দেবে এই শহরে ? তাই এই বয়সেও এসে , উনি রিকশা চালান।

WhatsApp Image 2022-06-29 at 2.08.42 AM.jpeg

WhatsApp Image 2022-06-29 at 2.08.55 AM.jpeg

যাই হোক কথা বলতে বলতে আমি বাসায় চলে আসি । চাচা কে বলি , চাচা আপনি রিকশা রেখে আমার সাথে আসুন । চাচা এল আমার সাথে ।তাকে সামনে বসতে বললাম। চাচা বসল। আমি ভেতরে গিয়ে আম্মুকে বলে আব্বুর একটা শার্ট, লুঙ্গি আর একটা পুরনো তাওয়াল দিয়ে তাকে পাল্টে নিতে বলে আমি ভেতরে চলে গেলাম ।আমি বৃষ্টিতে ভেজা সব কিছু পাল্টে এসে আম্মুকে বলি চাচাকে খাবার দিতে ।খুব মজার মজার খাবার আম্মু রান্না করেছিল সেদিন খিচুরি, অনেক রকমের ভর্তা, মাছ ফ্রাই , মাছ রান্না । চাচাকে খেতে ডাকলাম, দেখলাম চাচা খুব লজ্জা পাচ্ছিল। আমি তাকে কথা বলে সহজ করছিলাম, বললাম আপনার ত মনে হয় খাওয়া হয়নি ? দুপুর ত কত আগেই হয়েছে খেয়ে নিন।চাচা তখন খেতে বসল। খেতে বসে যখন তার প্লেটে ইলিশ মাছ ভাজা তুলে দিচ্ছিলাম ,তখন চাচা বলল অনেক দিন পর ইলিশ মাছ দেখলাম । অনেক দিন খাইনি।

WhatsApp Image 2022-06-29 at 2.11.49 AM.jpeg

গরীব মানুষদের কপালে ইলিশ জোটে না । তৃপ্তি নিয়ে চাচা খেয়ে নিল, আমি বসে বসে দেখছিলাম। খুব ভাল লাগছিল আমার। চাচা বলছিল , অনেক দিন পর ইলিশ মাছ খেলো। আমি আব্বুর একটা পুরনো রেইন কোর্ট চাচাকে দিলাম । আর কিছু টাকা দিলাম ।চাচাকে বললাম কাগজ কিনে নিতে ।আর একটা ইলিশ মাছ কিনে বাসায় চাচিকে দিতে বললাম। চাচা সেদিন অনেক বেশি খুশি হয়েছিল। খুশিতে তার চোখ ছলছল করছিল। আমি সেদিন আনন্দের অশ্রু দেখছিলাম তার চোখে । অনেক বেশি ভাল লাগা কাজ করছিল আমার ভেতর ।আসলে সব ভাল লাগা অনুভূতি গুলো লিখে বোঝানো যায় না । তারপরেও আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম ।সত্যি কথা বলতে সেদিন মনটা আমার কিছুটা হলেও তৃপ্তি পেয়েছিল।একজন অসহায় মানুষের পাশে থাকার যে শান্তি , আমি সেদিন চাচার চোখের আনন্দ অশ্রু দেখে বুঝেছিলাম।

একটা ব্যাপার সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম, পাওয়ার ভেতর ই শুধু আনন্দ , ভাল লাগা থাকে না ।দেয়ার মাঝে ও থাকে ভাল লাগা । ।ভালবাসা যখন বিলিয়ে দেয়া হয় ,তখন তা বহুগুণ বেড়ে যায় । আর কোন না কোন ভাবে তা ফিরে আসে। কারন প্রকৃতি সবটাই ফিরিয়ে দেয়। আমার বৃষ্টির দিনের ভাল লাগা এই গল্পটির এখানেই সমাপ্তি করছি । আপনাদের কাছে আমার এই মুহূর্তটি কতটুকু ভালো লেগেছে আমার জানা নেই ।তবে সেদিন আমার অনেক বেশি ভাল লেগেছিল, একজন অসহায় মানুষকে সাহায্য করতে পেরে ।

সবাই সুস্থ থাকবেন , ভাল থাকবেন। বৃষ্টি নিয়ে আমার ভাল লাগা গল্পটি কেমন হল, জানাবেন ।

আমার পরিচয়ঃ

আমি শিমুল আক্তার । আমি বাঙ্গালী । বাংলা আমার মাতৃভাষা বলে আমি অনেক বেশি গর্ববোধ করি । আমি একজন গৃহিণী । বই পড়তে আমি খুব পছন্দ করি ।বাংলায় লিখতে পারার মধ্যে অনেক বেশি শান্তি খুঁজে পাই। আমি ঘুরাঘুরি করতে খুব পছন্দ .jpg

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আপনার পোস্টটা পড়ে খুব ভালো লাগলো। আজকাল মানুষজন সবাই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গিয়েছে। আশেপাশের মানুষের কষ্ট তাদের চোখে পড়ে না। দরিদ্র রিক্সাওয়ালার প্রতি আপনি যে সহানুভূতি দেখিয়েছেন। সৃষ্টিকর্তা যেন আপনাকে তার সহস্র গুন ফিরিয়ে দেন। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।